ওয়াশিংটন ডিসিতে হোয়াইট হাউসের কয়েক ব্লক দূরে ন্যাশনাল গার্ডের দুই সদস্যের ওপর গুলিবর্ষণের ঘটনার উদ্দেশ্য অনুসন্ধানে নেমেছে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (এফবিআই) যৌথ সন্ত্রাসবাদ দমনকারী টাস্কফোর্স। থ্যাঙ্কস গিভিং দিবসের আগের দিন এই হামলাকে “টার্গেটেড অ্যাটাক” বা লক্ষ্যভিত্তিক হামলা বলে উল্লেখ করেছেন কর্মকর্তারা। গুলিবিনিময়ে আহত হয়ে আটক হওয়া হামলাকারী একজন আফগান অভিবাসী।
ঘটনাস্থল ও প্রথম প্রতিক্রিয়া
২৬ নভেম্বর দুপুরে ওয়াশিংটনের ব্যস্ত বাণিজ্যিক এলাকার একটি সাবওয়ে স্টেশনের বাইরে হঠাৎ গুলির শব্দ শোনা যায়। দুই ন্যাশনাল গার্ড সদস্য সেখানে “হাই-ভিজিবিলিটি প্যাট্রোল”-এ ছিলেন। পুলিশের মতে, হামলাকারী হঠাৎ কোণ ঘুরে সামনে এসে তাদের ওপর গুলি চালিয়ে “অ্যামবুশ” করে। গুলি বিনিময়ের পর অন্য সৈন্যরা তাকে দমন করে।
ঘটনার পর সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে সিক্রেট সার্ভিস হোয়াইট হাউসকে সাময়িকভাবে লকডাউন করে। আহত দুই সদস্যের অবস্থা ছিল সংকটজনক।
হামলাকারীর পরিচয় ও তদন্তের অগ্রগতি
ডিপার্টমেন্ট অব হোমল্যান্ড সিকিউরিটি (ডিএইচএস) জানিয়েছে, হামলাকারী ২৯ বছর বয়সী রহমতুল্লা লাকানওয়াল, যিনি আফগানিস্তান থেকে এসেছেন। তিনি ২০২১ সালে ‘অপারেশন অ্যালাইজ ওয়েলকাম’ কর্মসূচির মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করেন। এই কর্মসূচি মূলত আফগানদের পুনর্বাসনের জন্য নেওয়া হয়েছিল, যারা মার্কিন সেনাদের সহায়তা করেছিলেন এবং তালেবানের প্রতিশোধের আশঙ্কায় দেশ ছাড়েন।
এনবিসি নিউজের খবরে জানা গেছে, লাকানওয়াল ১০ বছর আফগান সেনাবাহিনীতে কর্মরত ছিলেন এবং কান্দাহারে অবস্থানকালে মার্কিন স্পেশাল ফোর্সের সঙ্গে কাজ করেছেন। কিছু মাস আগে তিনি অ্যামাজনে কাজ করছিলেন বলে তার এক স্বজন জানিয়েছেন। তার কোনো পূর্ব অপরাধের রেকর্ড নেই বলে জানা গেছে।
ট্রাম্প প্রশাসনের এক কর্মকর্তা জানান, লাকানওয়াল ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে আশ্রয়ের আবেদন করেন এবং ২০২৫ সালের ২৩ এপ্রিল আশ্রয় অনুমোদন পান।
রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া ও প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত
হামলার সময় ফ্লোরিডায় থাকা সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এক ভিডিওবার্তায় এই ঘটনাকে “অশুভ ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড” বলে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, বাইডেন সরকারের সময় যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করা সব আফগানদের পুনরায় যাচাই করা হবে।
ঘটনার পরপরই যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব ও অভিবাসন সেবা সংস্থা (ইউএসসিআইএস) আফগান নাগরিকদের সব ধরনের অভিবাসন আবেদন “অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত” করার ঘোষণা দেয়।
প্রতিরক্ষা সচিব পিট হেগসেথ জানান, প্রেসিডেন্ট আরও ৫০০ ন্যাশনাল গার্ড সদস্যকে ওয়াশিংটনে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন। আগে থেকেই ২ হাজারের বেশি গার্ড সদস্য রাজধানীতে মোতায়েন ছিলেন।
উপ-রাষ্ট্রপতি জেডি ভ্যান্স এক্স-এ লিখেছেন, এই ঘটনা প্রমাণ করে যে প্রশাসনের অভিবাসন নীতি সঠিক ছিল। তার মতে, “যাদের থাকার অধিকার নেই, তাদের দেশ থেকে বের করে দেওয়ার প্রচেষ্টা দ্বিগুণ করতে হবে।”
সমালোচকরা বলেন, ট্রাম্প প্রশাসনের অভিবাসননীতি অমানবিক ও নির্বিচারভাবে প্রয়োগ করা হচ্ছে, যেখানে অপরাধবিহীন বা বৈধ কাগজপত্র থাকা অভিবাসীদেরও টার্গেট করা হচ্ছে।
স্থানীয় প্রশাসনের অবস্থান
ওয়াশিংটনের মেয়র মুরিয়েল বাউজার, যিনি ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েন নিয়ে ট্রাম্পের সঙ্গে আগে থেকেই বিরোধে ছিলেন, বলেন এই হামলা ছিল “টার্গেটেড শুটিং”।
ওয়াশিংটন মেট্রোপলিটন পুলিশ বিভাগের সহকারী প্রধান জেফ ক্যারল বলেন, হামলা ছিল অ্যামবুশ এবং হামলাকারী একাই এই কাজটি করেছে।
আদালতের প্রেক্ষাপট ও রাজনৈতিক উত্তেজনা
হামলার ঘটনার মাত্র পাঁচ দিন আগে এক ফেডারেল বিচারক রায় দেন যে, মেয়রের অনুমতি ছাড়া ওয়াশিংটনে ন্যাশনাল গার্ডকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার কাজে ব্যবহার করা যাবে না। তবে এই রায় ডিসেম্বর পর্যন্ত কার্যকর না করে স্থগিত রাখা হয়েছে, যাতে ট্রাম্প প্রশাসন আপিল করতে পারে।
ট্রাম্প ইতোমধ্যেই লস অ্যাঞ্জেলেস, শিকাগো, পোর্টল্যান্ড ও মেমফিস সহ বিভিন্ন ডেমোক্র্যাট-নিয়ন্ত্রিত শহরে সেনা মোতায়েন করেছেন। তার দাবি, এসব শহরের আইনহীনতা ও সহিংসতা বেড়েছে অবৈধ অভিবাসন দমনের কারণে। ডেমোক্র্যাট নেতারা অভিযোগ করেন, ট্রাম্প রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে শাস্তি দিতে সামরিক শক্তি ব্যবহারের অজুহাত তৈরি করছেন।
হোয়াইট হাউসের নিকটে ন্যাশনাল গার্ডের ওপর এই হামলা যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন নীতি, নিরাপত্তা ব্যবস্থা এবং রাজনীতি ঘিরে নতুন বিতর্ক সৃষ্টি করেছে। হামলাকারীর উদ্দেশ্য সম্পর্কে তদন্ত চলছে এবং রাজনৈতিক অঙ্গনে এ নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে।
#words #news #USA #attack #Washington #Afghanistan #NationalGuard
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















