ভ্যাঙ্কুভারের শেষ রাত এখন ডিজনি প্লাসে
টেলর সুইফট তার বহুল আলোচিত এরাস ট্যুরের শেষ রাতকে এবার রূপ দিচ্ছেন পূর্ণাঙ্গ কনসার্ট ফিল্মে। “Taylor Swift | The Eras Tour | The Final Show” শিরোনামের নতুন স্পেশালের অফিসিয়াল ট্রেলার প্রকাশের মধ্য দিয়ে শুরু হলো সেই বিদায়ের কাউন্টডাউন; ১২ ডিসেম্বর এটি মুক্তি পাবে ডিজনি প্লাসে। ভ্যাঙ্কুভার শহরে অনুষ্ঠিত শেষ শো-এর পুরো সেটলিস্টই থাকবে এই ভার্সনে, বিশেষ করে ‘The Tortured Poets Department’ অ্যালবামের সম্পূর্ণ লাইভ সেকশন, যা পরের দিকে যোগ হওয়ায় আগের থিয়েটার–ভার্সনে ছিল না।
ট্রেলারে শোনা যায় সুইফটের কণ্ঠ—“আমরা অনেক দিন ধরে এই বিদায়ের জন্য প্রস্তুতি নিয়েছি, আর আজ রাতে শেষবারের মতো তোমাদের জন্য বাজাতে পারছি।” দৃশ্য বদলাতে থাকে স্টেডিয়াম–জুড়ে ঢেউ তোলা আলো, কান্নাভেজা চোখে গাওয়া গানের লাইন আর মঞ্চের পাশেই দাঁড়িয়ে থাকা ব্যান্ড–সঙ্গীদের হাসিমাখা মুখের মধ্যে। এক ফ্রেমে দেখা যায় বন্ধুর হাতে উপহার দেওয়া ফ্রেন্ডশিপ ব্রেসলেট, অন্য ফ্রেমে হঠাৎ উঠে আসে সেই আকুস্টিক সারপ্রাইজ সেকশন, যা প্রতিটি শহরে ভিন্ন ভিন্ন গান দিয়ে ভরিয়ে তুলেছিল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম। যারা আগের কনসার্ট ফিল্ম দেখেছেন, তাদের জন্য নতুন প্রতিশ্রুতি—এইবার কোনো যুগ কাটছাঁট নয়; পুরো শো, শুরু থেকে শেষ।

ডিজনি এই স্পেশালকে দেখছে একদিকে স্বতন্ত্র ইভেন্ট হিসেবে, অন্যদিকে প্ল্যাটফর্মে দর্শক ধরে রাখার আরেকটি বড় হাতিয়ার হিসেবে। প্রথম Eras Tour ফিল্ম থিয়েটারে রেকর্ড ভাঙার পর যখন ডিজনি প্লাসে আসে, তখনও “Tortured Poets” অংশটি ছিল অ্যালবামের মতোই নতুন; ট্যুরের সঙ্গে ঠিকমতো মেলেনি। এখন আলাদা “Final Show” কেটে সেই ফাঁক ভরাট করতে চাইছেন সুইফট—এ যেন এক ধরনের কালেক্টর’স এডিশন, যেখানে বন্ধ হয়ে যাওয়া এক অধ্যায়ের শেষ পাতাগুলো রাখা হয়েছে যত্ন করে।
কিন্তু গল্প এখানেই শেষ নয়। একই দিনে শুরু হচ্ছে ছয় পর্বের ডকুসিরিজ “Taylor Swift | The Eras Tour | The End of an Era”—যার প্রথম দুই পর্ব বেরোনোর কথা ১২ ডিসেম্বরেই। সেখানে মঞ্চের বাইরের টানটান দিনযাপন, দীর্ঘ সফরের ক্লান্তি, বন্ধুত্ব আর সৃজনশীল আলোচনার অনেক মুহূর্ত উঠে আসবে বলেই ইঙ্গিত মিলেছে। ওপেনিং অ্যাক্ট হিসেবে যারা ট্যুরে ছিলেন—গ্রেসি আব্রামস, সাব্রিনা কার্পেন্টারসহ আরও অনেকে—তারা থাকছেন এই সিরিজে। অতিথি হিসেবে দেখা যাবে এড শিরান আর ফ্লোরেন্স ওয়েলচকেও। পরের পর্বগুলো ধাপে ধাপে আসবে, ফলে “শেষ শো”–এর আলোচনাও দীর্ঘ সময় ধরে ছড়িয়ে পড়বে।
পপ সংস্কৃতির আয়নায় এক দশকের প্রতিচ্ছবি
ইরাস ট্যুরের অর্থ এখন শুধু রেকর্ড ভাঙা আয় নয়; এটি হয়ে উঠেছে পুরো দশকের এক সাংস্কৃতিক সাইনপোস্ট। অর্থনীতিবিদরা হিসাব কষেছেন, প্রতিটি শহরে কনসার্টের আগেপরে হোটেল ও ফ্লাইট বুকিং কীভাবে আকাশছোঁয়া হয়েছে; সমাজবিদরা লিখেছেন স্টেডিয়ামগুলো কীভাবে কয়েক ঘণ্টার জন্য পরিণত হয়েছে বন্ধুত্ব আর যৌথ স্মৃতির অস্থায়ী শহরে। “The Final Show” সেই অভিজ্ঞতাকে ধরে রাখছে মুহূর্ত–ঘনিষ্ঠভাবে, যখনই সেটি শেষ হচ্ছে—এক ধরনের টাইম ক্যাপসুল, যেখানে ধরা থাকবে ২০২০–এর দশকের মাঝামাঝি সময়ের পোশাক, সোশ্যাল মিডিয়া অভ্যাস আর ফ্যানডমের ভাষা।
প্রকল্পটি আবারও সামনে এনেছে মালিকানা আর নিয়ন্ত্রণের প্রশ্ন। নিজস্ব ক্যাটালগের ওপর অধিকার ফিরে পেতে যে শিল্পী এত বছর ধরে রিপ্লে রেকর্ডিংয়ের লড়াই চালিয়ে গেছেন, তিনি এবারও প্রযোজক হিসেবে নিজের প্রোডাকশন হাউসকে রেখেছেন কেন্দ্রে। ডিজনির মতো জায়ান্ট প্ল্যাটফর্মে কনটেন্ট তুলে ধরলেও, টাইটেল থেকে শুরু করে ক্যাম্পেইনের মাঝখানে বারবারই বোঝানো হচ্ছে—এটি সুইফটেরই গল্প, তার নিজের ভাষ্যে। ডকুসিরিজের মাধ্যমে তিনি পারছেন স্ট্রিমিং পেমেন্ট বা শিল্পী–অধিকারের মতো ইস্যুগুলোও ভিন্নভাবে তুলে ধরতে, সরাসরি বক্তব্যের বদলে নিজের যাত্রার অংশ হিসেবে।
সঙ্গীতশিল্পের জন্য এটি একটি রিমাইন্ডার—এমন বহুমাত্রিক রোলআউট আজকাল খুব বেশি দেখা যায় না। অল্প কয়েকজনই আছেন, যাদের ট্যুর নিয়ে একসঙ্গে থিয়েটার, স্ট্রিমিং স্পেশাল আর সিরিজ বানানো যায়। তবু এরাস প্রজেক্ট হয়তো অনেকের জন্য ছোট স্কেলে অনুসরণযোগ্য এক ফর্মুলা তৈরি করছে—লাইভ অভিজ্ঞতাকে ক্যামেরাবন্দি করা, তার পেছনের গল্প খোলা আর সবশেষে তা ধীরে ধীরে বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে ছড়িয়ে দেওয়া। যখন অ্যালবাম বিক্রির চেয়ে ট্যুর আয়ের গুরুত্ব বেশি, তখন একটি ট্যুরকে কনটেন্ট–ইউনিভার্সে পরিণত করা নিছক বিলাসিতা নয়; বরং হিসাব–নিকাশ করা কৌশল।

ফ্যানদের প্রতিক্রিয়া দেখে বোঝা যাচ্ছে, তারা এই দীর্ঘ বিদায়কে সাদরে গ্রহণই করছেন। কেউ আগের কনসার্টে তোলা নিজের ভিডিওর সঙ্গে ট্রেলারের দৃশ্য মেলাচ্ছেন, কেউ আবার “কোন সারপ্রাইজ গান পুরোটা থাকবে” তা নিয়ে তর্কে মেতেছেন। যারা কখনো টিকিটই পাননি, তাদের জন্য ভ্যাঙ্কুভারের এই ফিল্মই হয়তো সবচেয়ে কাছ থেকে দেখা এরাস অভিজ্ঞতা; আর যারা গিয়েছিলেন, তাদের কাছে এটি এমন এক রাতের পুনরাবৃত্তি, যেটি তারা ভিড় আর হৈ–হুল্লোড়ে ঠিকমতো মনে রাখতে পেরেছিলেন কি না, সে নিয়েও সন্দেহ আছে। পর্দায় আলো নিভে আবার যখন শেষবারের মতো ‘লং লিভ’ শোনা যাবে, তখন হয়তো এক যুগ শেষ হবে; কিন্তু টেলর সুইফটের নতুন গল্প বোনা বন্ধ হবে না এখনই।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 


















