০৮:৫২ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ০২ ডিসেম্বর ২০২৫

জিডিপি ‘বাড়লেও’ ভারত কেন আইএমএফ-এর মূল্যায়নে ‘সি’ গ্রেড পেলো?

  • Sarakhon Report
  • ০৭:২৯:০৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২ ডিসেম্বর ২০২৫
  • 19

ভারতের জিডিপি বৃদ্ধির দাবি করেছে নরেন্দ্র মোদীর সরকার

ভারতে চলতি আর্থিক বছরে, অর্থাৎ, ২০২৫-২৬-এর দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকে প্রকৃত জিডিপি ৮.২ শতাংশ বেড়েছে বলে সম্প্রতি দাবি করেছিল কেন্দ্রীয় সরকার।

অঙ্কটা গত বছরের তুলনায় বেশি। সরকারি তথ্য অনুযায়ী গত বছরের দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকে ভারতের প্রকৃত জিডিপি ছিল ৫.৬ শতাংশ।

এদিকে, ইন্টারন্যাশনাল মনিটারি ফান্ড (আইএমএফ) বা আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল তাদের সাম্প্রতিকতম প্রতিবেদনে ভারতের জিডিপি এবং ন্যাশানাল অ্যাকাউন্টস স্ট্যাটিস্টিক্স-এর গুণমানকে ‘সি গ্রেড’ দিয়েছে। আর একে ঘিরেই শুরু হয়েছে জোর বিতর্ক।

ন্যাশনাল অ্যাকাউন্টস এমন এক জাতীয় সিস্টেম যেটা কোনো দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা বর্ণনা করার জন্য সমন্বিত কাঠামো প্রদান করে।

বিজেপি সরকারের তরফে প্রকাশিত একটা বিবৃতিতে উল্লেখ হয়েছে, দ্রুত এগিয়ে যাওয়া প্রধান অর্থনীতি হিসেবে ভারত তার নিজের অবস্থানকে বেশ মজবুত করে তুলেছে। ভারতের জিডিপি আনুমানিক ৭.৩ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার (সাত লাখ ৩০ হাজার কোটি ডলার) বলে জানিয়েছে।

কিন্তু আইএমএফ-এর তরফে প্রকাশিত ‘ইন্ডিয়া: ২০২৫ আর্টিকেল ফোর কন্সালটেশন’ শীর্ষক সাম্প্রতিকতম প্রতিবেদন প্রকাশ্যে আসার পর থেকেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে যে, সরকারি তথ্য অনুযায়ী ভারতের জিডিপির পরিসংখ্যান যখন প্রবৃদ্ধির দিকে ইঙ্গিত করছে, তখন আইএমএফ কেন ‘সি’ গ্রেড দিয়েছে?

একদিকে বিজেপি সব প্রশ্ন খারিজ করে দাবি করেছে–– পরিসংখ্যানে কোনো গলদ নেই।

অন্যদিকে, বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো এ নিয়ে বেশ সরব। বিশেষত কংগ্রেস আইএমএফ-এর রিপোর্টের ওপর ভিত্তি করে বিজেপিকে কোণঠাসা করতে ছাড়েনি। গত কয়েকদিন ধরেই বিষয়টা আলোচনার কেন্দ্রে রয়েছে।

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের ম্যানেজিং ডিরেক্টর ক্রিস্টালিনা জর্জেভা

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের ম্যানেজিং ডিরেক্টর ক্রিস্টালিনা জর্জেভা

আইএমএফ-এর রিপোর্টে কী বলা হয়েছে?

সম্প্রতি আইএমএফ ভারত সম্পর্কে একটা প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে এবং তাকে ঘিরেই এই বিতর্কের সূত্রপাত।

গত ২৬শে নভেম্বর প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পর্যবেক্ষণের জন্য পর্যাপ্ত তথ্য না মেলার কারণে ভারতকে সি গ্রেড দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে, কেন্দ্র সরকারের দাবি জিডিপি বেড়েছে। এরপরই বিতর্কের সূত্রপাত।

ন্যশানাল অ্যাকাউন্টস স্ট্যাটিস্টিক্স (এনএসএ) বা জাতীয় হিসাব পরিসংখ্যান জাতীয় অর্থনৈতিক হিসাব ব্যবস্থার অন্তর্গত এমন এক ব্যবস্থা যা একটা দেশের অর্থনীতি বর্ণনা করার জন্য বিশদ এবং সমন্বিত কাঠামো প্রদান করে।

জাতিসংঘের ‘সিস্টেম অফ ন্যশানাল অ্যাকাউন্টস’ (জাতীয় হিসাব ব্যবস্থা)-এর নীতির উপর ভিত্তি করে মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি), জাতীয় আয়, খরচ, সঞ্চয় এবং মূলধন গঠনের মতো সামগ্রিক অর্থনৈতিক সমষ্টির পরিমাপ ও বিশ্লেষণ করতে ব্যবহার করা হয় এনএসএ।

এর জন্য বিভিন্ন উৎস থেকে সংকলন করা তথ্য সংগ্রহ করা হয়। এটা কোনো দেশের অর্থনৈতিক কর্মক্ষমতা এবং কাঠামো মূল্যায়নের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয়।

আইএমএফ তাদের কাছে পেশ করা তথ্যকে চারটে বিভাগে বা গ্রেডে ভাগ করে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের তরফে ভারতের ন্যাশনাল অ্যাকাউন্টস স্ট্যাটিসটিক্সকে ‘সি’ গ্রেড দেওয়া হয়েছে, যা চারটি গ্রেডের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বনিম্ন।

এই চারটে গ্রেডের মধ্যে প্রথম হলো- ‘গ্রেড এ’ অর্থাৎ পর্যবেক্ষণের জন্য পর্যাপ্ত ডেটা রয়েছে ।

পরেরটা ‘গ্রেড বি’ যেখানে ডেটাতে কিছু ত্রুটি রয়েছে, তবে সামগ্রিকভাবে সেগুলো পর্যবেক্ষণের জন্য তা যথেষ্ট। তৃতীয় হলো ‘গ্রেড সি’, যেখানে ডেটাতে কিছু ঘাটতি রয়েছে এবং যা পর্যবেক্ষণ প্রক্রিয়াকে কিছুটা প্রভাবিত করে।

চতুর্থ হলো ‘গ্রেড ডি’, যেখানে ডেটাতে গুরুতর ফাঁক রয়েছে যা পর্যবেক্ষণের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্যভাবে বাধার সৃষ্টি করে।

আইএমএফ-এর সাম্প্রতিকতম প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে যে ভারতের তরফে ব্যবহৃত জাতীয় অ্যাকাউন্টস স্ট্যাটিসটিক্স-এর ক্ষেত্রে ফ্রিকোয়েন্সি সঠিক এবং সে সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্যও পাওয়া গেছে। তবে এর কিছু পদ্ধতিগত ত্রুটি রয়েছে যে বিষয়ে আইএমএফ উল্লেখ করেছে।

আইএমএফ আরো জানিয়েছে যে ভারত সরকার যে তথ্য ব্যবহার করেছে তা ২০১১-২০১২ সালের এবং সেই ভিত্তিবর্ষ এখন আর প্রাসঙ্গিক নয়।

এছাড়া, ভারত ‘প্রোডিউসড প্রাইস ইনডেক্স’ বা উৎপাদক মূল্য সূচক ব্যবহার করে না। তার পরিবর্তে ‘হোলসেল প্রাইস ইনডেক্স’ বা পাইকারি মূল্য সূচক ব্যবহার করে যে কারণে তথ্যে পার্থক্য দেখা যেতে পারে।

উৎপাদক মূল্য সূচক হলো এমন এক অর্থনৈতিক সূচক যা দেশীয় উৎপাদকদের তাদের উৎপাদনের জন্য প্রাপ্ত বিক্রয়মূল্যের গড় পরিবর্তনকে পরিমাপ করে। এটা উৎপাদকের দৃষ্টিকোণ থেকে মূল্য পরিবর্তনের বিষয়টাকে প্রতিফলিত করে এবং ভোক্তাদের কাছে পৌঁছানোর আগে মুদ্রাস্ফীতির ফলে তৈরি চাপের প্রাথমিক সূচক হিসেবেও কাজ করে।

অন্যদিকে, পাইকারি মূল্য সূচক পাইকারি পর্যায়ে পণ্যের দামের গড় পরিবর্তনের উপর নজর রাখে। এটা মুদ্রাস্ফীতি পরিমাপ করতে, অর্থনৈতিক পরিস্থিতি মূল্যায়ন করতে এবং মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি)-এর মতো পরিবর্তনশীল বিষয়গুলোর ক্ষেত্রে ‘ডিফ্লেক্টর’ বা বিচ্যুতি বোঝানোর কাজ করে।

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল তাদের প্রতিবেদনে জানিয়েছে নন-ব্যাংকিং ফিনান্সিয়াল কোম্পানি (এনবিএফসি), খানা বা পরিবার এবং পুরো সিস্টেমের মধ্যে যে আর্থিক আন্তঃসংযোগ রয়েছে সে বিষয়ে উপলব্ধ তথ্যও ভারতের ক্ষেত্রে সীমিত।

প্রসঙ্গত, এনবিএফসি বলে এমন সংস্থাকে বোঝায় যা ঋণ, বিনিয়োগ ইত্যাদির মতো আর্থিক পরিষেবা দেয় বটে, কিন্তু তাদের ব্যাংকিং লাইসেন্স নেই।

বিজেপি বনাম কংগ্রেস

কংগ্রেস নেতা পি চিদাম্বরম আইএমএফ-এর প্রতিবেদন নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটা পোস্ট করেছিলেন।

ভারতের সাবেক অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরম এক্স হ্যান্ডেলে (সাবেক টুইটার) করা এক পোস্ট-এ কেন্দ্র সরকারের কাছে জানতে চেয়েছিলেন আইএমএফ কেন ভারতের ন্যাশনাল অ্যাকাউন্টস স্ট্যাটিস্টিকসকে ‘সি গ্রেড’-এ রেখেছে।

প্রতিক্রিয়া স্বরূপ বিজেপির আইটি সেল-এর প্রধান অমিত মালব্য পাল্টা বলেছেন, “এই বিষয়টা উদ্বেগজনক যে সাবেক অর্থমন্ত্রী আতঙ্ক ছড়াচ্ছেন। কারণ তার দল হজম করতে পারছে না যে অবস্থায় তারা (ভারতীয় অর্থনীতিকে) রেখে গিয়েছিলেন সেই ফ্র্যাজাইল ফাইভ (পাঁচটা নাজুক অর্থনীতির দেশ) অর্থনীতির মধ্যে এখন আর ভারত নেই”।

দেশ অনেকটাই এগিয়েছে বলে বিজেপির দাবি।

শুধু তাই নয়, কংগ্রেসের তোলা অভিযোগের জবাবে বিজেপি জানিয়েছে–– বহু বছর ধরেই ভারতকে ‘সি গ্রেড’ দেওয়া হয়েছে। ২০১১-২০১২কে ভিত্তিবর্ষ হিসেবে ধরার কারণে প্রযুক্তিগত সমস্যার ফলেই বহু বছর ধরে ভারতের ক্ষেত্রে এই গ্রেডের কোনো পরিবর্তন হয়নি।

কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশ বিজেপির সমালোচনা করে পাল্টা বলেছেন, “গ্রস ফিক্সড ক্যাপিটাল ফর্মেশনে কোনো বৃদ্ধি হয়নি। বেসরকারি বিনিয়োগে রিনিউড মোমেন্টাম (নতুনভাবে গতি) না এলে উচ্চ জিডিপির হার টেকসই হতে পারে না”।

কংগ্রেস নেত্রী সুপ্রিয়া শ্রীনাতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লিখেছেন, “আইএমএফ জানিয়েছে ভারতের ন্যাশনাল অ্যাকাউন্টস এবং মুদ্রাস্ফীতি সংক্রন্ত পরিসংখ্যান কিন্তু ইনফর্মাল সেক্টর (অনানুষ্ঠানিক খাত) এবং জনগণের ব্যয়ের ধরনের মতো মূল দিকগুলোকে প্রতিফলিত করে না”।

তিনি যোগ করেছেন, “গত বছরও আইএমএফ ভারতকে সি গ্রেড দিয়েছিল, কিন্তু কিছুই বদলায়নি”।

অমিত মালব্যর অবশ্য যুক্তি, সরকারের দেওয়া জিডিপি সংক্রান্ত তথ্য ‘ভুয়া’ নয়। আইএমএফ-এর রেটিং অনেক বছর ধরে বদলায়নি এবং প্রযুক্তিগত মাপকাঠির ভিত্তিতে বছরের পর বছর ধরে তা ‘সি’- গ্রেডই রয়ে গেছে।

এদিকে এদিকে ২০১১-২০১২ সালকে ভিত্তিবর্ষ করার প্রসঙ্গ ওঠায় কংগ্রেসকে বিঁধতে ছাড়েনি বিজেপি।

কংগ্রেস নেতা পি চিদাম্বরমের এক্স পোস্টের জবাবে বিজেপি নেতা অমিত মালব্য জানিয়েছেন, সরকার যখন ভিত্তিবর্ষ আপডেট করে ২০১১-২০১২ করেছিল, তখনও কংগ্রেস আপত্তি জানিয়েছে এবং আগামী বছর ফেব্রুয়ারিতে যখন রিভিশন করে ২০২২-২০২৩ করবে তখনো বিরোধীরা আপত্তি জানাবে।

তার পাল্টা অভিযোগ, ভারত যে ফ্রিকোয়েন্সি এবং সময়ানুবর্তিতার জন্য এ গ্রেড পেয়েছে সেই বিষয়টাকে কংগ্রেস একেবারে উপেক্ষা করে গিয়েছে।

দুই জন নারী ও দুই জন পুরুষ মাথায় ইট বহন করছেন, প্রতীকী  ছবি

অসংগঠিত ক্ষেত্র গত কয়েক বছরে একাধিক ধাক্কার সম্মুখীন হয়েছে- প্রতীকী ছবি

বিশেষজ্ঞরা কী বলছেন?

দিল্লির জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক অরুণ কুমার জানিয়েছেন, বছরের পর বছর ধরে জিডিপির পরিসংখ্যান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

এক অনুষ্ঠানে সাংবাদিক করণ থাপারের সঙ্গে আলোচনার সময় তিনি বলেছিলেন যে জিডিপির জন্য ২০১১-২০১২ সিরিজের পরিসংখ্যান সরকার নিজেই একসময় গ্রহণ করেনি।

অরুণ কুমার বলেন, “নোট বাতিলের সময় প্রায় তিন লাখ সংস্থাকে শেল কোম্পানি বলে বন্ধ করে দেওয়া হয়, কিন্তু পরিসংখ্যানে তার কোনো প্রভাব দেখা যায়নি”।

“সার্ভে অফ সার্ভিস সেক্টর (পরিষেবা খাতের)-এর জরিপের সময়, দেখা গিয়েছে যে তালিকাভুক্ত সংস্থাগুলোর প্রায় ৩৫ শতাংশ কোম্পানি যেখানে লিস্টেড ছিল, সেখানে আর নেই। তাহলে কীভাবে এই তথ্য সঠিক হতে পারে? এই সমস্ত তথ্যের প্রতিফলন হওয়া উচিত”।

তার কথায়, “২০১৯ সালে একটা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছিল বেকারত্বের হার গত ৪৫ বছরের সর্বোচ্চ স্তরে। তারপর আদমশুমারিও হয়নি তাই এই সব তথ্য নিয়ে প্রশ্ন উঠতে বাধ্য”।

অরুণ কুমার জানিয়েছেন, বিগত কয়েক অসংগঠিত ক্ষেত্র একের পর এক ধাক্কার সম্মুখীন হয়েছে।

তিনি ব্যাখ্যা করেছেন, “প্রথমে নোট বাতিল করা, তারপর জিএসটি চালু করা হয় যে কারণে অনেক সমস্যা তৈরি হয়। এরপর নন-ফিনান্সিয়াল ব্যাংকিং সেক্টর সমস্যায় পড়ে এবং তারপর কোভিড মহামারীর কারণে অসংগঠিত ক্ষেত্র আবার আঘাত পায়”।

তার মতে গণনা পদ্ধতি পরিবর্তন করা উচিত।

তিনি বলেছেন, “এই পরিস্থিতিতে জিডিপি গণনা করার পদ্ধতি চারবার বদলানো উচিত ছিল, কিন্তু বাস্তবে তা একবারও পরিবর্তন করা হয়নি। আমি মনে করি আইএমএফ যা করেছে তা কয়েকটা বিষয়ের দিকে ইঙ্গিত করে”।

বিষয়টাকে বিশদে ব্যাখ্যা করেছেন অরুণ কুমার।

তার কথায়, “একদিকে সরকার অসংগঠিত খাত নিয়ে নিরপেক্ষ মূল্যায়ন করছে না, কিন্তু এটা মেনে নিচ্ছে যে সেটা সংগঠিত ক্ষেত্রের মতো বাড়ছে”।

“অথচ অসংগঠিত ক্ষেত্রকে এই ধাক্কাগুলো কিন্তু বেশি প্রভাবিত করেছে। যদিও (সরকারি তথ্যের দিকে ইঙ্গিত করে) পতনশীল খাতের পরিসংখ্যানকে বৃদ্ধি হিসেবে দেখা হচ্ছে”।

ঘোমটায় মুখ ঢাকা দুই জন নারী মাথার ওপর দুই হাতে ধরে গামলায় করে ইটের টুকরো বহন করছেন  - প্রতীকী ছবি

বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন অসংগঠিত খাতে কোনো স্বাধীন পরিসংখ্যান হয়নি- প্রতীকী ছবি

অর্থনৈতিক বিষয়ক বিশেষজ্ঞ ও দ্য ওয়্যারের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য এমকে বেণু মনে করেন আইএমএফ-এর প্রতিবেদনে এই ইঙ্গিত স্পষ্ট দেশের জিডিপি গণনা করার পদ্ধতিতে অনেক ত্রুটি রয়েছে।

তিনি বলেন, “ভারত নিজেকে একটা বৃহত্তর অর্থনীতি এবং দ্রুত অগ্রগামী অর্থনীতি হিসেবে তুলে ধরে। কিন্তু এই রিপোর্ট (আইএমএফ-এর) আন্তর্জাতিক বাজারে ভারতের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করেছে”।

মি. বেণু আইএমএফ তার প্রতিবেদনে তথ্যের ফাঁককে ব্যাখ্যা করতে ‘সাইজেবল ডিস্ক্রিপেনিস’ (খুব বড় আকারের ত্রুটি) শব্দটা ব্যবহার করেছে।

তিনি জানিয়েছেন ভারত এর আগে ‘বি গ্রেড’ পেয়েছে। বর্তমানের সি গ্রেড কিন্তু কোনোদিক থেকেই ইতিবাচক লক্ষণ নয়।

তিনি বলেন, “গত পাঁচ-ছয় বছর ধরে আমি দেখছি সরকার তথ্য হেরফের করছে। সরকার তথ্যকে হেরফের করে পেশ করছে”।

কোভিড মহামারির পর অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মধ্যে অনেকের দাবি, সরকার প্রবৃদ্ধির পরিসংখ্যান ঠিকমতো দেখাচ্ছে না।

এমষকে বেণু ব্যাখ্যা করেছেন, সেখানে একটা সংগঠিত খাত বা লিস্টেড কোম্পানি রয়েছে (তালিকাভুক্ত সংস্থা) এবং অসংগঠিত খাতও রয়েছে। যা ঘটেছে তা হলো সংগঠিত খাতের তথ্যের দিকে নজর দেওয়া হচ্ছে, এবং এটা মনে করা হচ্ছে হয় যে অসংগঠিত খাত (অর্থাৎ ছোট এবং মাঝারি আকারের সংস্থাগুলোর ৯০ শতাংশ) একই গতিতে বৃদ্ধি পাবে।

“কিন্তু বাস্তবে যেটা ঘটছে সেটা হলো সংগঠিত খাত বৃদ্ধি পেলেও অসংগঠিত খাত কিন্তু একইভাবে বাড়ছে না। তাই এই কারণে জিডিপির হিসাব ভুল হয়ে যাচ্ছে”।

বিবিসি নিউজ বাংলা

জনপ্রিয় সংবাদ

চট্টগ্রামে রোড ক্র্যাশে নিহত–আহতদের স্মরণে মানববন্ধন

জিডিপি ‘বাড়লেও’ ভারত কেন আইএমএফ-এর মূল্যায়নে ‘সি’ গ্রেড পেলো?

০৭:২৯:০৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২ ডিসেম্বর ২০২৫

ভারতে চলতি আর্থিক বছরে, অর্থাৎ, ২০২৫-২৬-এর দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকে প্রকৃত জিডিপি ৮.২ শতাংশ বেড়েছে বলে সম্প্রতি দাবি করেছিল কেন্দ্রীয় সরকার।

অঙ্কটা গত বছরের তুলনায় বেশি। সরকারি তথ্য অনুযায়ী গত বছরের দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকে ভারতের প্রকৃত জিডিপি ছিল ৫.৬ শতাংশ।

এদিকে, ইন্টারন্যাশনাল মনিটারি ফান্ড (আইএমএফ) বা আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল তাদের সাম্প্রতিকতম প্রতিবেদনে ভারতের জিডিপি এবং ন্যাশানাল অ্যাকাউন্টস স্ট্যাটিস্টিক্স-এর গুণমানকে ‘সি গ্রেড’ দিয়েছে। আর একে ঘিরেই শুরু হয়েছে জোর বিতর্ক।

ন্যাশনাল অ্যাকাউন্টস এমন এক জাতীয় সিস্টেম যেটা কোনো দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা বর্ণনা করার জন্য সমন্বিত কাঠামো প্রদান করে।

বিজেপি সরকারের তরফে প্রকাশিত একটা বিবৃতিতে উল্লেখ হয়েছে, দ্রুত এগিয়ে যাওয়া প্রধান অর্থনীতি হিসেবে ভারত তার নিজের অবস্থানকে বেশ মজবুত করে তুলেছে। ভারতের জিডিপি আনুমানিক ৭.৩ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার (সাত লাখ ৩০ হাজার কোটি ডলার) বলে জানিয়েছে।

কিন্তু আইএমএফ-এর তরফে প্রকাশিত ‘ইন্ডিয়া: ২০২৫ আর্টিকেল ফোর কন্সালটেশন’ শীর্ষক সাম্প্রতিকতম প্রতিবেদন প্রকাশ্যে আসার পর থেকেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে যে, সরকারি তথ্য অনুযায়ী ভারতের জিডিপির পরিসংখ্যান যখন প্রবৃদ্ধির দিকে ইঙ্গিত করছে, তখন আইএমএফ কেন ‘সি’ গ্রেড দিয়েছে?

একদিকে বিজেপি সব প্রশ্ন খারিজ করে দাবি করেছে–– পরিসংখ্যানে কোনো গলদ নেই।

অন্যদিকে, বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো এ নিয়ে বেশ সরব। বিশেষত কংগ্রেস আইএমএফ-এর রিপোর্টের ওপর ভিত্তি করে বিজেপিকে কোণঠাসা করতে ছাড়েনি। গত কয়েকদিন ধরেই বিষয়টা আলোচনার কেন্দ্রে রয়েছে।

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের ম্যানেজিং ডিরেক্টর ক্রিস্টালিনা জর্জেভা

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের ম্যানেজিং ডিরেক্টর ক্রিস্টালিনা জর্জেভা

আইএমএফ-এর রিপোর্টে কী বলা হয়েছে?

সম্প্রতি আইএমএফ ভারত সম্পর্কে একটা প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে এবং তাকে ঘিরেই এই বিতর্কের সূত্রপাত।

গত ২৬শে নভেম্বর প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পর্যবেক্ষণের জন্য পর্যাপ্ত তথ্য না মেলার কারণে ভারতকে সি গ্রেড দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে, কেন্দ্র সরকারের দাবি জিডিপি বেড়েছে। এরপরই বিতর্কের সূত্রপাত।

ন্যশানাল অ্যাকাউন্টস স্ট্যাটিস্টিক্স (এনএসএ) বা জাতীয় হিসাব পরিসংখ্যান জাতীয় অর্থনৈতিক হিসাব ব্যবস্থার অন্তর্গত এমন এক ব্যবস্থা যা একটা দেশের অর্থনীতি বর্ণনা করার জন্য বিশদ এবং সমন্বিত কাঠামো প্রদান করে।

জাতিসংঘের ‘সিস্টেম অফ ন্যশানাল অ্যাকাউন্টস’ (জাতীয় হিসাব ব্যবস্থা)-এর নীতির উপর ভিত্তি করে মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি), জাতীয় আয়, খরচ, সঞ্চয় এবং মূলধন গঠনের মতো সামগ্রিক অর্থনৈতিক সমষ্টির পরিমাপ ও বিশ্লেষণ করতে ব্যবহার করা হয় এনএসএ।

এর জন্য বিভিন্ন উৎস থেকে সংকলন করা তথ্য সংগ্রহ করা হয়। এটা কোনো দেশের অর্থনৈতিক কর্মক্ষমতা এবং কাঠামো মূল্যায়নের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয়।

আইএমএফ তাদের কাছে পেশ করা তথ্যকে চারটে বিভাগে বা গ্রেডে ভাগ করে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের তরফে ভারতের ন্যাশনাল অ্যাকাউন্টস স্ট্যাটিসটিক্সকে ‘সি’ গ্রেড দেওয়া হয়েছে, যা চারটি গ্রেডের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বনিম্ন।

এই চারটে গ্রেডের মধ্যে প্রথম হলো- ‘গ্রেড এ’ অর্থাৎ পর্যবেক্ষণের জন্য পর্যাপ্ত ডেটা রয়েছে ।

পরেরটা ‘গ্রেড বি’ যেখানে ডেটাতে কিছু ত্রুটি রয়েছে, তবে সামগ্রিকভাবে সেগুলো পর্যবেক্ষণের জন্য তা যথেষ্ট। তৃতীয় হলো ‘গ্রেড সি’, যেখানে ডেটাতে কিছু ঘাটতি রয়েছে এবং যা পর্যবেক্ষণ প্রক্রিয়াকে কিছুটা প্রভাবিত করে।

চতুর্থ হলো ‘গ্রেড ডি’, যেখানে ডেটাতে গুরুতর ফাঁক রয়েছে যা পর্যবেক্ষণের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্যভাবে বাধার সৃষ্টি করে।

আইএমএফ-এর সাম্প্রতিকতম প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে যে ভারতের তরফে ব্যবহৃত জাতীয় অ্যাকাউন্টস স্ট্যাটিসটিক্স-এর ক্ষেত্রে ফ্রিকোয়েন্সি সঠিক এবং সে সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্যও পাওয়া গেছে। তবে এর কিছু পদ্ধতিগত ত্রুটি রয়েছে যে বিষয়ে আইএমএফ উল্লেখ করেছে।

আইএমএফ আরো জানিয়েছে যে ভারত সরকার যে তথ্য ব্যবহার করেছে তা ২০১১-২০১২ সালের এবং সেই ভিত্তিবর্ষ এখন আর প্রাসঙ্গিক নয়।

এছাড়া, ভারত ‘প্রোডিউসড প্রাইস ইনডেক্স’ বা উৎপাদক মূল্য সূচক ব্যবহার করে না। তার পরিবর্তে ‘হোলসেল প্রাইস ইনডেক্স’ বা পাইকারি মূল্য সূচক ব্যবহার করে যে কারণে তথ্যে পার্থক্য দেখা যেতে পারে।

উৎপাদক মূল্য সূচক হলো এমন এক অর্থনৈতিক সূচক যা দেশীয় উৎপাদকদের তাদের উৎপাদনের জন্য প্রাপ্ত বিক্রয়মূল্যের গড় পরিবর্তনকে পরিমাপ করে। এটা উৎপাদকের দৃষ্টিকোণ থেকে মূল্য পরিবর্তনের বিষয়টাকে প্রতিফলিত করে এবং ভোক্তাদের কাছে পৌঁছানোর আগে মুদ্রাস্ফীতির ফলে তৈরি চাপের প্রাথমিক সূচক হিসেবেও কাজ করে।

অন্যদিকে, পাইকারি মূল্য সূচক পাইকারি পর্যায়ে পণ্যের দামের গড় পরিবর্তনের উপর নজর রাখে। এটা মুদ্রাস্ফীতি পরিমাপ করতে, অর্থনৈতিক পরিস্থিতি মূল্যায়ন করতে এবং মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি)-এর মতো পরিবর্তনশীল বিষয়গুলোর ক্ষেত্রে ‘ডিফ্লেক্টর’ বা বিচ্যুতি বোঝানোর কাজ করে।

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল তাদের প্রতিবেদনে জানিয়েছে নন-ব্যাংকিং ফিনান্সিয়াল কোম্পানি (এনবিএফসি), খানা বা পরিবার এবং পুরো সিস্টেমের মধ্যে যে আর্থিক আন্তঃসংযোগ রয়েছে সে বিষয়ে উপলব্ধ তথ্যও ভারতের ক্ষেত্রে সীমিত।

প্রসঙ্গত, এনবিএফসি বলে এমন সংস্থাকে বোঝায় যা ঋণ, বিনিয়োগ ইত্যাদির মতো আর্থিক পরিষেবা দেয় বটে, কিন্তু তাদের ব্যাংকিং লাইসেন্স নেই।

বিজেপি বনাম কংগ্রেস

কংগ্রেস নেতা পি চিদাম্বরম আইএমএফ-এর প্রতিবেদন নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটা পোস্ট করেছিলেন।

ভারতের সাবেক অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরম এক্স হ্যান্ডেলে (সাবেক টুইটার) করা এক পোস্ট-এ কেন্দ্র সরকারের কাছে জানতে চেয়েছিলেন আইএমএফ কেন ভারতের ন্যাশনাল অ্যাকাউন্টস স্ট্যাটিস্টিকসকে ‘সি গ্রেড’-এ রেখেছে।

প্রতিক্রিয়া স্বরূপ বিজেপির আইটি সেল-এর প্রধান অমিত মালব্য পাল্টা বলেছেন, “এই বিষয়টা উদ্বেগজনক যে সাবেক অর্থমন্ত্রী আতঙ্ক ছড়াচ্ছেন। কারণ তার দল হজম করতে পারছে না যে অবস্থায় তারা (ভারতীয় অর্থনীতিকে) রেখে গিয়েছিলেন সেই ফ্র্যাজাইল ফাইভ (পাঁচটা নাজুক অর্থনীতির দেশ) অর্থনীতির মধ্যে এখন আর ভারত নেই”।

দেশ অনেকটাই এগিয়েছে বলে বিজেপির দাবি।

শুধু তাই নয়, কংগ্রেসের তোলা অভিযোগের জবাবে বিজেপি জানিয়েছে–– বহু বছর ধরেই ভারতকে ‘সি গ্রেড’ দেওয়া হয়েছে। ২০১১-২০১২কে ভিত্তিবর্ষ হিসেবে ধরার কারণে প্রযুক্তিগত সমস্যার ফলেই বহু বছর ধরে ভারতের ক্ষেত্রে এই গ্রেডের কোনো পরিবর্তন হয়নি।

কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশ বিজেপির সমালোচনা করে পাল্টা বলেছেন, “গ্রস ফিক্সড ক্যাপিটাল ফর্মেশনে কোনো বৃদ্ধি হয়নি। বেসরকারি বিনিয়োগে রিনিউড মোমেন্টাম (নতুনভাবে গতি) না এলে উচ্চ জিডিপির হার টেকসই হতে পারে না”।

কংগ্রেস নেত্রী সুপ্রিয়া শ্রীনাতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লিখেছেন, “আইএমএফ জানিয়েছে ভারতের ন্যাশনাল অ্যাকাউন্টস এবং মুদ্রাস্ফীতি সংক্রন্ত পরিসংখ্যান কিন্তু ইনফর্মাল সেক্টর (অনানুষ্ঠানিক খাত) এবং জনগণের ব্যয়ের ধরনের মতো মূল দিকগুলোকে প্রতিফলিত করে না”।

তিনি যোগ করেছেন, “গত বছরও আইএমএফ ভারতকে সি গ্রেড দিয়েছিল, কিন্তু কিছুই বদলায়নি”।

অমিত মালব্যর অবশ্য যুক্তি, সরকারের দেওয়া জিডিপি সংক্রান্ত তথ্য ‘ভুয়া’ নয়। আইএমএফ-এর রেটিং অনেক বছর ধরে বদলায়নি এবং প্রযুক্তিগত মাপকাঠির ভিত্তিতে বছরের পর বছর ধরে তা ‘সি’- গ্রেডই রয়ে গেছে।

এদিকে এদিকে ২০১১-২০১২ সালকে ভিত্তিবর্ষ করার প্রসঙ্গ ওঠায় কংগ্রেসকে বিঁধতে ছাড়েনি বিজেপি।

কংগ্রেস নেতা পি চিদাম্বরমের এক্স পোস্টের জবাবে বিজেপি নেতা অমিত মালব্য জানিয়েছেন, সরকার যখন ভিত্তিবর্ষ আপডেট করে ২০১১-২০১২ করেছিল, তখনও কংগ্রেস আপত্তি জানিয়েছে এবং আগামী বছর ফেব্রুয়ারিতে যখন রিভিশন করে ২০২২-২০২৩ করবে তখনো বিরোধীরা আপত্তি জানাবে।

তার পাল্টা অভিযোগ, ভারত যে ফ্রিকোয়েন্সি এবং সময়ানুবর্তিতার জন্য এ গ্রেড পেয়েছে সেই বিষয়টাকে কংগ্রেস একেবারে উপেক্ষা করে গিয়েছে।

দুই জন নারী ও দুই জন পুরুষ মাথায় ইট বহন করছেন, প্রতীকী  ছবি

অসংগঠিত ক্ষেত্র গত কয়েক বছরে একাধিক ধাক্কার সম্মুখীন হয়েছে- প্রতীকী ছবি

বিশেষজ্ঞরা কী বলছেন?

দিল্লির জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক অরুণ কুমার জানিয়েছেন, বছরের পর বছর ধরে জিডিপির পরিসংখ্যান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

এক অনুষ্ঠানে সাংবাদিক করণ থাপারের সঙ্গে আলোচনার সময় তিনি বলেছিলেন যে জিডিপির জন্য ২০১১-২০১২ সিরিজের পরিসংখ্যান সরকার নিজেই একসময় গ্রহণ করেনি।

অরুণ কুমার বলেন, “নোট বাতিলের সময় প্রায় তিন লাখ সংস্থাকে শেল কোম্পানি বলে বন্ধ করে দেওয়া হয়, কিন্তু পরিসংখ্যানে তার কোনো প্রভাব দেখা যায়নি”।

“সার্ভে অফ সার্ভিস সেক্টর (পরিষেবা খাতের)-এর জরিপের সময়, দেখা গিয়েছে যে তালিকাভুক্ত সংস্থাগুলোর প্রায় ৩৫ শতাংশ কোম্পানি যেখানে লিস্টেড ছিল, সেখানে আর নেই। তাহলে কীভাবে এই তথ্য সঠিক হতে পারে? এই সমস্ত তথ্যের প্রতিফলন হওয়া উচিত”।

তার কথায়, “২০১৯ সালে একটা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছিল বেকারত্বের হার গত ৪৫ বছরের সর্বোচ্চ স্তরে। তারপর আদমশুমারিও হয়নি তাই এই সব তথ্য নিয়ে প্রশ্ন উঠতে বাধ্য”।

অরুণ কুমার জানিয়েছেন, বিগত কয়েক অসংগঠিত ক্ষেত্র একের পর এক ধাক্কার সম্মুখীন হয়েছে।

তিনি ব্যাখ্যা করেছেন, “প্রথমে নোট বাতিল করা, তারপর জিএসটি চালু করা হয় যে কারণে অনেক সমস্যা তৈরি হয়। এরপর নন-ফিনান্সিয়াল ব্যাংকিং সেক্টর সমস্যায় পড়ে এবং তারপর কোভিড মহামারীর কারণে অসংগঠিত ক্ষেত্র আবার আঘাত পায়”।

তার মতে গণনা পদ্ধতি পরিবর্তন করা উচিত।

তিনি বলেছেন, “এই পরিস্থিতিতে জিডিপি গণনা করার পদ্ধতি চারবার বদলানো উচিত ছিল, কিন্তু বাস্তবে তা একবারও পরিবর্তন করা হয়নি। আমি মনে করি আইএমএফ যা করেছে তা কয়েকটা বিষয়ের দিকে ইঙ্গিত করে”।

বিষয়টাকে বিশদে ব্যাখ্যা করেছেন অরুণ কুমার।

তার কথায়, “একদিকে সরকার অসংগঠিত খাত নিয়ে নিরপেক্ষ মূল্যায়ন করছে না, কিন্তু এটা মেনে নিচ্ছে যে সেটা সংগঠিত ক্ষেত্রের মতো বাড়ছে”।

“অথচ অসংগঠিত ক্ষেত্রকে এই ধাক্কাগুলো কিন্তু বেশি প্রভাবিত করেছে। যদিও (সরকারি তথ্যের দিকে ইঙ্গিত করে) পতনশীল খাতের পরিসংখ্যানকে বৃদ্ধি হিসেবে দেখা হচ্ছে”।

ঘোমটায় মুখ ঢাকা দুই জন নারী মাথার ওপর দুই হাতে ধরে গামলায় করে ইটের টুকরো বহন করছেন  - প্রতীকী ছবি

বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন অসংগঠিত খাতে কোনো স্বাধীন পরিসংখ্যান হয়নি- প্রতীকী ছবি

অর্থনৈতিক বিষয়ক বিশেষজ্ঞ ও দ্য ওয়্যারের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য এমকে বেণু মনে করেন আইএমএফ-এর প্রতিবেদনে এই ইঙ্গিত স্পষ্ট দেশের জিডিপি গণনা করার পদ্ধতিতে অনেক ত্রুটি রয়েছে।

তিনি বলেন, “ভারত নিজেকে একটা বৃহত্তর অর্থনীতি এবং দ্রুত অগ্রগামী অর্থনীতি হিসেবে তুলে ধরে। কিন্তু এই রিপোর্ট (আইএমএফ-এর) আন্তর্জাতিক বাজারে ভারতের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করেছে”।

মি. বেণু আইএমএফ তার প্রতিবেদনে তথ্যের ফাঁককে ব্যাখ্যা করতে ‘সাইজেবল ডিস্ক্রিপেনিস’ (খুব বড় আকারের ত্রুটি) শব্দটা ব্যবহার করেছে।

তিনি জানিয়েছেন ভারত এর আগে ‘বি গ্রেড’ পেয়েছে। বর্তমানের সি গ্রেড কিন্তু কোনোদিক থেকেই ইতিবাচক লক্ষণ নয়।

তিনি বলেন, “গত পাঁচ-ছয় বছর ধরে আমি দেখছি সরকার তথ্য হেরফের করছে। সরকার তথ্যকে হেরফের করে পেশ করছে”।

কোভিড মহামারির পর অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মধ্যে অনেকের দাবি, সরকার প্রবৃদ্ধির পরিসংখ্যান ঠিকমতো দেখাচ্ছে না।

এমষকে বেণু ব্যাখ্যা করেছেন, সেখানে একটা সংগঠিত খাত বা লিস্টেড কোম্পানি রয়েছে (তালিকাভুক্ত সংস্থা) এবং অসংগঠিত খাতও রয়েছে। যা ঘটেছে তা হলো সংগঠিত খাতের তথ্যের দিকে নজর দেওয়া হচ্ছে, এবং এটা মনে করা হচ্ছে হয় যে অসংগঠিত খাত (অর্থাৎ ছোট এবং মাঝারি আকারের সংস্থাগুলোর ৯০ শতাংশ) একই গতিতে বৃদ্ধি পাবে।

“কিন্তু বাস্তবে যেটা ঘটছে সেটা হলো সংগঠিত খাত বৃদ্ধি পেলেও অসংগঠিত খাত কিন্তু একইভাবে বাড়ছে না। তাই এই কারণে জিডিপির হিসাব ভুল হয়ে যাচ্ছে”।

বিবিসি নিউজ বাংলা