ভারতের রাজধানী দিল্লিতে শীতের আগমনে বিষাক্ত দূষণ বেড়ে গেছে
ভারতের রাজধানী দিল্লিতে শীতের আগমনে বিষাক্ত দূষণের মাত্রা আকাশচুম্বী হয়ে উঠেছে। নাগরিকদের প্রতিদিনের জীবনে শ্বাসকষ্ট, মাথাব্যথা এবং চোখে অস্বস্তি তৈরি হচ্ছে, যা থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার কোনও উপায় নেই। বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, দিল্লির বাতাস জীবনসংহারী এবং অত্যন্ত বিপজ্জনক।
১. শ্বাস নিতে পারা – দিল্লির দৈনিক বাস্তবতা
প্রতিদিন সকালে দিল্লি বাসীরা বিষাক্ত কুয়াশার মধ্যে উঠে এবং দিনভর এই দূষিত পরিবেশে বাঁচতে বাধ্য হন। কারখানা, যানবাহন এবং কৃষকদের ফসল পোড়ানোর কারণে দূষণের মাত্রা ২০ গুণ পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ভারতের শীর্ষস্থানীয় গবেষণা হাসপাতালগুলোর বিশেষজ্ঞরা এটিকে ‘সীমান্তসীমাহীন’ এবং ‘প্রাণঘাতী’ বলছেন।
২. প্রাচীন দিল্লিতে সকালের ছবি
প্রথম সকালে দিল্লির ইন্ডিয়া গেট ও প্রেসিডেন্ট ভবনের মধ্যবর্তী রাস্তার ওপর ছুটে চলা দৌড়বিদদের চোখে পড়েছে কুয়াশা। এমন অবস্থা যে এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত দেখা যায় না। একইভাবে, ৭২ বছর বয়সী দিনেশ কামাথ তার সকাল বেলার হাঁটার জন্য বের হন। দূষিত বাতাসের কারণে প্রতিটি শীতে তার কাছে এটি একটি কঠিন সিদ্ধান্ত হয়ে দাঁড়ায়: বাইরে হাঁটবেন, নাকি সুস্থ থাকার জন্য বাড়িতে থাকবেন।

৩. বিরোধী দলের অভিযোগ: ‘মিথ্যা ডেটা’
দিল্লি সরকারের একটি উদ্যোগ হিসেবে শহরে “অ্যান্টি-স্মগ গান” বসানো হয়েছে, যা জল স্প্রে করে বাতাসের দূষণের মাত্রা কমানোর চেষ্টা করে। তবে বিশেষজ্ঞরা এটিকে একটি জনপ্রতিনিধির কাছে প্রতারণা হিসেবে চিহ্নিত করেছেন, কেননা তারা বলেন, এই গানগুলো বসানোর উদ্দেশ্য মূলত দূষণের ডেটাকে প্রভাবিত করে কমানো।
৪. স্কুল এবং হাসপাতালের অবস্থা
দিল্লির স্কুলগুলোর বাচ্চারা প্রতি বছরই দূষণজনিত কারণে ছুটি পায় এবং ক্লাস অনলাইনে নিতে হয়। একইভাবে, দিল্লির জনপ্রিয় সরকারি হাসপাতালগুলোর ডাক্তাররা জানাচ্ছেন যে, রোগী ভর্তির হার ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ বেড়েছে। হাসপাতালের ভেতরেও বাতাসের মান নিরাপদ স্তরের চেয়ে ১০ গুণ বেশি।
৫. মধ্যবয়সী মানুষদের অভিজ্ঞতা
দিল্লির ট্যাক্স অফিসের কাছাকাছি এক রাস্তায় দাঁড়িয়ে শেলেন্দ্র চৌহান, ৪৯, জানাচ্ছেন, “বাতাসে শ্বাস নেওয়া কঠিন, চোখ জ্বলে।” তিনি বললেন, তার বস তার গাড়িতে একটি ছোট এয়ার পিউরিফায়ার বসিয়েছেন, কিন্তু পিউরিফায়ার সম্পর্কে অনেকেই জানেন না।
৬. দিনের শেষ
দিল্লির প্রাণকেন্দ্র চাঁদনি চক মার্কেটে দিনের শেষ ভাগে দূষণের এক ভয়ানক ছবি উঠে এসেছে। একপাশে যেখানে যানবাহন নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে, সেখানে দূষণের মাত্রা কিছুটা কম, তবে অন্যপাশে তা দ্বিগুণ।

৭. রাতের সময় এবং দুঃখজনক বাস্তবতা
দিল্লির আনন্দ বিহার বাস স্টেশনে, দীপক রাওয়াত, ৩১, এক চায়ের দোকান চালান। তিনি প্রতিদিন সকাল ৪টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত কাজ করেন, তবে এর মধ্যে তার চোখ জ্বলে এবং তিনি প্রায়ই কাশতে থাকেন। তার মতে, বিষাক্ত কুয়াশার সঙ্গে অবাধ স্যুয়ারের দুর্গন্ধ মিশে যায়।
দিল্লির পরিস্থিতি ক্রমেই খারাপ হয়ে উঠছে এবং এখানকার বাসিন্দারা এটি তাদের দৈনন্দিন জীবনের অংশ হিসেবে মেনে নিয়েছেন। সরকারের শিথিলতা এবং জরুরি পদক্ষেপের অভাবে, তারা দিন দিন বিপদে পড়ছেন।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















