১২:৫৮ অপরাহ্ন, বুধবার, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৫
ধনী আমেরিকানরা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাড়ানোর জন্য দায়ী নারী নিহত, ভাতিজি আহত: জয়পুরহাটে দুর্বৃত্তদের হামলা ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের বন্দীর মৃত্যু গাজীপুরে কারখানার দূষিত পানি পানে অসুস্থ তিন শতাধিক শ্রমিক ঘোড়া ছুটে গেল? লাল পোশাকের রাইডারদের প্রস্তুত থাকতে হবে আমেরিকার ২০২৬ সালের মধ্যবর্তী নির্বাচনের জন্য আরও আক্রমণাত্মক দৃষ্টিভঙ্গির দাবি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের হোয়াইট হাউজের স্বপ্নের প্রকল্প বড় হচ্ছে ,স্থপতিরাও আশঙ্কিত ধনীদের নতুন ট্রেন্ড: আকস্মিক ‘ট্রাস্ট রিভিল’ অনুষ্ঠানে উত্তরাধিকারীদের সামনে সম্পদ ঘোষণা যত্নদাতাদের নিজেদের যত্ন নেওয়ার লড়াই সুদান রাশিয়াকে আফ্রিকায় প্রথম নৌঘাঁটির প্রস্তাব দিল

সুদান রাশিয়াকে আফ্রিকায় প্রথম নৌঘাঁটির প্রস্তাব দিল

সুদানের সামরিক সরকার রাশিয়াকে রেড সি উপকূলে তাদের প্রথম আফ্রিকান নৌঘাঁটি স্থাপনের সুযোগ দিয়েছে, যা মস্কোর জন্য হবে এক বড় কৌশলগত অর্জন। সুদানি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এই ঘাঁটি হলে রাশিয়া রেড সি–র গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক রুটকে কাছ থেকে নজরদারি করতে পারবে এবং আফ্রিকায় তাদের সামরিক উপস্থিতি নতুন মাত্রায় পৌঁছাবে। এই সম্ভাব্য চুক্তি যুক্তরাষ্ট্রের জন্য উদ্বেগের কারণ, কারণ ওয়াশিংটন বহুদিন ধরে রাশিয়া ও চীনকে আফ্রিকার বন্দর ও সামরিক ঘাঁটিতে দৃঢ় অবস্থান গ্রহণ থেকে বিরত রাখতে চেষ্টা করে আসছে।

অক্টোবরে সুদান রাশিয়ার কাছে যে ২৫ বছরের পরিকল্পনা তুলে ধরেছে, তাতে রাশিয়াকে সর্বোচ্চ ৩০০ সেনা মোতায়েনের অনুমতি দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। রাশিয়া চারটি যুদ্ধজাহাজ, এমনকি পারমাণবিকচালিত জাহাজও পোর্ট সুদান বা রেড সি–র অন্য কোনো নির্ধারিত বন্দর ব্যবহার করতে পারবে। চুক্তির অংশ হিসেবে সুদানের স্বর্ণখনি খাতে রাশিয়াকে বিশেষ সুবিধা দেওয়ার প্রস্তাব রয়েছে, কারণ সুদান আফ্রিকার তৃতীয় বৃহত্তম সোনার উৎপাদক দেশ। পোর্ট সুদানকে কেন্দ্র করে রাশিয়া সুয়েজ খালগামী বৈশ্বিক নৌ-চলাচল সহজেই পর্যবেক্ষণ করতে পারবে। বিশ্বের বারো শতাংশের বেশি বাণিজ্য এই খাল দিয়ে চলাচল করে। এসব সুযোগের বিনিময়ে সুদান উন্নত রাশিয়ান অ্যান্টি-এয়ারক্রাফট সিস্টেমসহ বিভিন্ন অস্ত্র কম দামে পাওয়ার আশা করছে, কারণ দেশটির সামরিক সরকার এখনো Rapid Support Forces–এর বিরুদ্ধে গৃহযুদ্ধে লড়ছে।

একজন সুদানি সামরিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, তাদের নতুন অস্ত্রপ্রয়োজন রয়েছে, কিন্তু রাশিয়ার সঙ্গে এমন চুক্তিতে এগোলে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে সম্পর্ক জটিল হতে পারে। সুদানের সরকার এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো মন্তব্য করেনি। রেড সি–তে রাশিয়ার একটি স্থায়ী ঘাঁটি যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা কর্মকর্তাদেরও দুশ্চিন্তায় ফেলেছে। তাদের মতে, আফ্রিকায় রাশিয়ার সামরিক ঘাঁটির সংখ্যা বাড়লে আন্তর্জাতিক পরিসরে তাদের ক্ষমতা ও প্রভাব বৃদ্ধি পাবে। উষ্ণ জলের ঘাঁটি না থাকায় রাশিয়ান নৌবাহিনী এতদিন সীমাবদ্ধ ছিল; তাই লিবিয়া বা সুদানে একটি কার্যকর ঘাঁটি পেলে রাশিয়ান জাহাজ ভূমধ্যসাগর ও ভারত মহাসাগরে দীর্ঘমেয়াদি অভিযান চালাতে পারবে। এক মার্কিন কর্মকর্তা বলেন, এমন একটি ঘাঁটি রাশিয়াকে “অবাধে সামরিক ক্ষমতা প্রদর্শনের সুযোগ” দেবে।

আফ্রিকায় রাশিয়ার উপস্থিতি নতুন নয়, তবে ওয়াগনার গ্রুপের পতনের পর তাদের প্রভাব কিছুটা দুর্বল হয়ে পড়েছিল। ২০২৩ সালে ওয়াগনার প্রধান ইয়েভগেনি প্রিগোজিনের বিদ্রোহ এবং পরে বিমানে বিস্ফোরণে মৃত্যুর পর মহাদেশজুড়ে গ্রুপটির আর্থিক ও রাজনৈতিক কার্যক্রম ভেঙে পড়ে। ক্রেমলিন নতুন ভাড়াটে বাহিনী দাঁড় করালেও তারা এখনো আগের প্রভাব বা অর্থনৈতিক সাফল্য অর্জন করতে পারেনি। এই প্রেক্ষাপটে সুদানের গৃহযুদ্ধ রাশিয়ার জন্য নতুন পথ খুলে দিয়েছে। ২০২৩ সালে জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহান ও তার ডেপুটি মোহাম্মদ হামদান দাগালোর ক্ষমতার লড়াই থেকে সংঘাত শুরু হয়। মস্কো প্রথমে দাগালোর RSF বিদ্রোহীদের সমর্থন দেয় এবং সেই সুযোগে সুদানের সোনার সম্পদে প্রবেশাধিকার বাড়ায়।

এদিকে চীনের উপস্থিতিও আফ্রিকার বন্দরগুলোতে দ্রুত বাড়ছে। ২০১৭ সালে জিবুতিতে চীন তাদের প্রথম বিদেশি নৌঘাঁটি সম্পন্ন করে, যা বাব-আল-মান্দাব প্রণালীর কৌশলগত জায়গায় অবস্থিত। এখানকার ঘাঁটিতে বিমানবাহী রণতরী পর্যন্ত নোঙর করা যায়। একই এলাকায় যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় আফ্রিকান ঘাঁটি ক্যাম্প লেমনিয়ের অবস্থিত, যেখানে প্রায় চার হাজার মার্কিন সেনা নিয়োজিত। এখান থেকে সোমালিয়ায় মার্কিন অভিযান পরিচালিত হয় এবং অঞ্চলের মার্কিন দূতাবাসগুলোর জরুরি পরিস্থিতিতে দ্রুত প্রতিক্রিয়ার দায়িত্বও এখানকার বাহিনী পালন করে। সোমালিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের কমান্ডো বাহিনী আল-শাবাব ও আইএস–সংশ্লিষ্ট গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে স্থানীয় সেনাদের সহায়তায় নিয়োজিত রয়েছে।

সুদান ও রাশিয়ার এই চুক্তি এখনো চূড়ান্ত নয়, তবে আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক শক্তিগুলোর প্রতিযোগিতার প্রেক্ষাপটে আফ্রিকার ভূ-রাজনীতিতে এটি একটি বড় বাঁকবদলের ইঙ্গিত দিচ্ছে। রাশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের প্রতিদ্বন্দ্বিতার কেন্দ্রে রেড সি এখন আরও উত্তপ্ত হয়ে উঠছে, আর সুদানের অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সেই প্রতিযোগিতাকে আরও তীব্র করছে।

জনপ্রিয় সংবাদ

ধনী আমেরিকানরা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাড়ানোর জন্য দায়ী

সুদান রাশিয়াকে আফ্রিকায় প্রথম নৌঘাঁটির প্রস্তাব দিল

১১:৫৪:০৮ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৩ ডিসেম্বর ২০২৫

সুদানের সামরিক সরকার রাশিয়াকে রেড সি উপকূলে তাদের প্রথম আফ্রিকান নৌঘাঁটি স্থাপনের সুযোগ দিয়েছে, যা মস্কোর জন্য হবে এক বড় কৌশলগত অর্জন। সুদানি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এই ঘাঁটি হলে রাশিয়া রেড সি–র গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক রুটকে কাছ থেকে নজরদারি করতে পারবে এবং আফ্রিকায় তাদের সামরিক উপস্থিতি নতুন মাত্রায় পৌঁছাবে। এই সম্ভাব্য চুক্তি যুক্তরাষ্ট্রের জন্য উদ্বেগের কারণ, কারণ ওয়াশিংটন বহুদিন ধরে রাশিয়া ও চীনকে আফ্রিকার বন্দর ও সামরিক ঘাঁটিতে দৃঢ় অবস্থান গ্রহণ থেকে বিরত রাখতে চেষ্টা করে আসছে।

অক্টোবরে সুদান রাশিয়ার কাছে যে ২৫ বছরের পরিকল্পনা তুলে ধরেছে, তাতে রাশিয়াকে সর্বোচ্চ ৩০০ সেনা মোতায়েনের অনুমতি দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। রাশিয়া চারটি যুদ্ধজাহাজ, এমনকি পারমাণবিকচালিত জাহাজও পোর্ট সুদান বা রেড সি–র অন্য কোনো নির্ধারিত বন্দর ব্যবহার করতে পারবে। চুক্তির অংশ হিসেবে সুদানের স্বর্ণখনি খাতে রাশিয়াকে বিশেষ সুবিধা দেওয়ার প্রস্তাব রয়েছে, কারণ সুদান আফ্রিকার তৃতীয় বৃহত্তম সোনার উৎপাদক দেশ। পোর্ট সুদানকে কেন্দ্র করে রাশিয়া সুয়েজ খালগামী বৈশ্বিক নৌ-চলাচল সহজেই পর্যবেক্ষণ করতে পারবে। বিশ্বের বারো শতাংশের বেশি বাণিজ্য এই খাল দিয়ে চলাচল করে। এসব সুযোগের বিনিময়ে সুদান উন্নত রাশিয়ান অ্যান্টি-এয়ারক্রাফট সিস্টেমসহ বিভিন্ন অস্ত্র কম দামে পাওয়ার আশা করছে, কারণ দেশটির সামরিক সরকার এখনো Rapid Support Forces–এর বিরুদ্ধে গৃহযুদ্ধে লড়ছে।

একজন সুদানি সামরিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, তাদের নতুন অস্ত্রপ্রয়োজন রয়েছে, কিন্তু রাশিয়ার সঙ্গে এমন চুক্তিতে এগোলে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে সম্পর্ক জটিল হতে পারে। সুদানের সরকার এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো মন্তব্য করেনি। রেড সি–তে রাশিয়ার একটি স্থায়ী ঘাঁটি যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা কর্মকর্তাদেরও দুশ্চিন্তায় ফেলেছে। তাদের মতে, আফ্রিকায় রাশিয়ার সামরিক ঘাঁটির সংখ্যা বাড়লে আন্তর্জাতিক পরিসরে তাদের ক্ষমতা ও প্রভাব বৃদ্ধি পাবে। উষ্ণ জলের ঘাঁটি না থাকায় রাশিয়ান নৌবাহিনী এতদিন সীমাবদ্ধ ছিল; তাই লিবিয়া বা সুদানে একটি কার্যকর ঘাঁটি পেলে রাশিয়ান জাহাজ ভূমধ্যসাগর ও ভারত মহাসাগরে দীর্ঘমেয়াদি অভিযান চালাতে পারবে। এক মার্কিন কর্মকর্তা বলেন, এমন একটি ঘাঁটি রাশিয়াকে “অবাধে সামরিক ক্ষমতা প্রদর্শনের সুযোগ” দেবে।

আফ্রিকায় রাশিয়ার উপস্থিতি নতুন নয়, তবে ওয়াগনার গ্রুপের পতনের পর তাদের প্রভাব কিছুটা দুর্বল হয়ে পড়েছিল। ২০২৩ সালে ওয়াগনার প্রধান ইয়েভগেনি প্রিগোজিনের বিদ্রোহ এবং পরে বিমানে বিস্ফোরণে মৃত্যুর পর মহাদেশজুড়ে গ্রুপটির আর্থিক ও রাজনৈতিক কার্যক্রম ভেঙে পড়ে। ক্রেমলিন নতুন ভাড়াটে বাহিনী দাঁড় করালেও তারা এখনো আগের প্রভাব বা অর্থনৈতিক সাফল্য অর্জন করতে পারেনি। এই প্রেক্ষাপটে সুদানের গৃহযুদ্ধ রাশিয়ার জন্য নতুন পথ খুলে দিয়েছে। ২০২৩ সালে জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহান ও তার ডেপুটি মোহাম্মদ হামদান দাগালোর ক্ষমতার লড়াই থেকে সংঘাত শুরু হয়। মস্কো প্রথমে দাগালোর RSF বিদ্রোহীদের সমর্থন দেয় এবং সেই সুযোগে সুদানের সোনার সম্পদে প্রবেশাধিকার বাড়ায়।

এদিকে চীনের উপস্থিতিও আফ্রিকার বন্দরগুলোতে দ্রুত বাড়ছে। ২০১৭ সালে জিবুতিতে চীন তাদের প্রথম বিদেশি নৌঘাঁটি সম্পন্ন করে, যা বাব-আল-মান্দাব প্রণালীর কৌশলগত জায়গায় অবস্থিত। এখানকার ঘাঁটিতে বিমানবাহী রণতরী পর্যন্ত নোঙর করা যায়। একই এলাকায় যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় আফ্রিকান ঘাঁটি ক্যাম্প লেমনিয়ের অবস্থিত, যেখানে প্রায় চার হাজার মার্কিন সেনা নিয়োজিত। এখান থেকে সোমালিয়ায় মার্কিন অভিযান পরিচালিত হয় এবং অঞ্চলের মার্কিন দূতাবাসগুলোর জরুরি পরিস্থিতিতে দ্রুত প্রতিক্রিয়ার দায়িত্বও এখানকার বাহিনী পালন করে। সোমালিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের কমান্ডো বাহিনী আল-শাবাব ও আইএস–সংশ্লিষ্ট গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে স্থানীয় সেনাদের সহায়তায় নিয়োজিত রয়েছে।

সুদান ও রাশিয়ার এই চুক্তি এখনো চূড়ান্ত নয়, তবে আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক শক্তিগুলোর প্রতিযোগিতার প্রেক্ষাপটে আফ্রিকার ভূ-রাজনীতিতে এটি একটি বড় বাঁকবদলের ইঙ্গিত দিচ্ছে। রাশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের প্রতিদ্বন্দ্বিতার কেন্দ্রে রেড সি এখন আরও উত্তপ্ত হয়ে উঠছে, আর সুদানের অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সেই প্রতিযোগিতাকে আরও তীব্র করছে।