ঘূর্ণিঝড় দিতওয়ার আঘাতে শ্রীলঙ্কায় ব্যাপক মানবিক সংকট তৈরির পাশাপাশি দেশের পানীয়জল ব্যবস্থা, অবকাঠামো ও উদ্ধার কার্যক্রমে নতুন চ্যালেঞ্জ যুক্ত হয়েছে। প্রাথমিক হিসাবে কমপক্ষে ২ লাখ ৭৫ হাজার শিশু মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানিয়েছে ইউনিসেফ। এদিকে নৌবাহিনী, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কেন্দ্র (ডিএমসি) এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতার মাধ্যমে বিভিন্ন সহায়তা কার্যক্রম চলছে।
নৌবাহিনীর জরুরি মানবিক সহায়তা অভিযান
সাম্প্রতিক ভয়াবহ আবহাওয়ার পর দেশজুড়ে মানবিক সহায়তা ও দুর্যোগ পুনরুদ্ধার (HADR) কার্যক্রম চালাচ্ছে শ্রীলঙ্কা নৌবাহিনী। পানীয়জলের সংকট নিরসনে তারা গুরুত্বপূর্ণ জলশোধনাগারগুলো মেরামতে নেমেছে।
উভা ও সেন্ট্রাল প্রাদেশিক জল সরবরাহ বোর্ডের অনুরোধে নৌবাহিনী পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট দুটি বিশেষ ডাইভিং দল পাঠায়। মহিয়াঙ্গানায়া ও গাতাম্বে জলশোধনাগারের পানিপাম্পগুলো তলিয়ে গিয়ে কাদা-ময়লায় বন্ধ হয়ে পড়েছিল। এসব স্থানে পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পাওয়ায় পাম্পগুলো অকার্যকর হয়ে যায়।
নৌ ডাইভাররা পানির নিচে সুনির্দিষ্টভাবে বাধা অপসারণ, রক্ষণাবেক্ষণ এবং পাম্প চালু করার কাজ সম্পন্ন করেন। ২ ডিসেম্বর মহিয়াঙ্গানায়া জলশোধনাগারের কাজ শেষ হয়েছে, গাতাম্বে প্রকল্পে কাজ এখনো চলছে।
ডিএমসি: মৃত ৪৭৪, নিখোঁজ ৩৫৬
ঘূর্ণিঝড় দিতওয়ার প্রভাবে সারা দেশে ভয়াবহ প্রাণহানি ঘটেছে। ডিএমসির সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী:
• মোট মৃত: ৪৭৪
• নিখোঁজ: ৩৫৬
ক্যান্ডি জেলাতেই সবচেয়ে বেশি ১১৮ জন মারা গেছে।
ডিএমসি জানায়, এখন পর্যন্ত ২৫ জেলার ৪,৪৮,৮১৭ পরিবারের মোট ১৫,৮৬,৩২৯ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বন্যা ও ভূমিধস জনিত দুরবস্থা এখনো বহু এলাকায় অব্যাহত।

সম্প্রতি:
• সম্পূর্ণ ধ্বংস হওয়া বাড়িঘর: ৯৭১
• আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত ঘরবাড়ি: ৪০,৩৫৮
• আশ্রয়কেন্দ্রে থাকা মানুষ: ২,০১,৮৭৫ (৫৩,৭৫৮ পরিবার)
• মোট আশ্রয়কেন্দ্র: ১,৩৮৫টি
জেলা অনুযায়ী মৃত্যুর সংখ্যা:
ক্যান্ডি: ১১৮ মৃত, ১৭১ নিখোঁজ
নুয়ারা এলিয়া: ৮৯ মৃত, ৭৩ নিখোঁজ
বাডুল্লা: ৮৩ মৃত, ২৮ নিখোঁজ
কুরুনেগালা: ৫৩ মৃত, ২৭ নিখোঁজ
কেগালে: ২৯ মৃত, ৪৩ নিখোঁজ
পুট্টালাম: ২৯ মৃত, ৩ নিখোঁজ
মাতালে: ২৮ মৃত, ২ নিখোঁজ
গামপাহা: ১১ মৃত, ২ নিখোঁজ
অনুরাধাপুরা: ৭ মৃত
কলম্বো: ৫ মৃত, ২ নিখোঁজ
শ্রীলঙ্কা নৌবাহিনীতে যুক্ত হলো আরেকটি সাবেক যুক্তরাষ্ট্রের জাহাজ
যুক্তরাষ্ট্র শ্রীলঙ্কা নৌবাহিনীকে আরও একটি সাবেক ইউএস কোস্ট গার্ড কাটার হস্তান্তর করেছে। এটি শ্রীলঙ্কার কাছে দেওয়া চতুর্থ এমন জাহাজ।
মার্কিন রাষ্ট্রদূত জুলি চুং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জানিয়ে বলেন, এই জাহাজ যুক্ত হওয়ায় মাদকদ্রব্য পাচার রোধ, চোরাচালান প্রতিরোধ এবং অনুসন্ধান ও উদ্ধার অভিযানে শ্রীলঙ্কার সক্ষমতা বাড়বে।
তিনি বলেন, ঘূর্ণিঝড় দিতওয়া মোকাবিলায় সমুদ্রপথে চলমান তৎপরতা আবারও দেখিয়ে দিয়েছে শক্তিশালী সামুদ্রিক অংশীদারিত্ব কতটা গুরুত্বপূর্ণ। জাহাজটি শ্রীলঙ্কায় পৌঁছাতে কয়েক মাস লাগবে, তবে এটি ভবিষ্যতে সমুদ্র নিরাপত্তা ও উদ্ধার তৎপরতায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
#ঘূর্ণিঝড়দিতওয়া #শ্রীলঙ্কা #দুর্যোগব্যবস্থাপনা #নৌবাহিনী #ইউনিসেফ #সারাক্ষণরিপোর্ট
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















