চীনের অভ্যন্তরীণ ও বৈশ্বিক উন্নয়নকে সামনে রেখে প্রযুক্তিনির্ভর উদ্ভাবনকে আরও শক্তিশালী করার ওপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে গুয়াংঝৌতে আয়োজিত ‘আন্ডারস্ট্যান্ডিং চায়না কনফারেন্স ২০২৫’-এ। সোমবার অনুষ্ঠিত এ ফোরামে কমিউনিস্ট পার্টির প্রচার বিভাগের প্রধান লি শুলেই জানান, চীন উচ্চমানের উন্নয়ন এবং বৈশ্বিক উন্মুক্ততার পথে এগোবে। তিন দিনব্যাপী আয়োজিত এই সম্মেলনে প্রায় ৮০০ জন প্রতিনিধি অংশ নেন, যেখানে প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন ছিল আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু।
চীন শুধু নিজেদের উন্নয়ন নয়, বরং উন্নয়নশীল দেশগুলোর সক্ষমতা বৃদ্ধিতেও গুরুত্ব দিচ্ছে বলে জানান চায়না ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট কোঅপারেশন এজেন্সির প্রধান চেন শিয়াওদং। তিনি বলেন, বৈশ্বিক দক্ষিণের দেশগুলোর সমষ্টিগত স্বনির্ভরতা বৃদ্ধিতে চীন সহযোগিতা করছে এবং আন্তর্জাতিক পরিসরে আরও জনকল্যাণমূলক সুবিধা প্রদান করছে, যাতে উন্নয়নের সুফল বৈশ্বিকভাবে সমানভাবে ছড়িয়ে পড়ে। এর অংশ হিসেবে চীন অর্থায়ন বৃদ্ধি, প্রশিক্ষণ প্রদান, নতুন পার্টনারশিপ গড়ে তোলা এবং রোগ নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র নির্মাণ বা খাদ্য উৎপাদনসহ বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে।
তিনি আরও জানান, সবুজ উন্নয়ন, ডিজিটাল ক্ষমতায়ন ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মতো উদীয়মান খাতে সহযোগিতা বাড়ানো হবে, পাশাপাশি চীনা আধুনিকায়নের সফল অভিজ্ঞতাও আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে শেয়ার করা হবে। হংকং বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক লি চেং ফোরামে বলেন, কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় সরকার প্রযুক্তিগত অগ্রগতিকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিচ্ছে, যেখানে জাতীয় ব্যবস্থাপনার সুবাদে সমন্বিত উন্নয়ন ও বাজেট বরাদ্দে রয়েছে বিশেষ সুবিধা।

চায়না ইনস্টিটিউট ফর ইনোভেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট স্ট্র্যাটেজির নির্বাহী উপপরিচালক হুয়াং ছিফান বলেন, গবেষণা ও উন্নয়ন খাতে বিনিয়োগ বৃদ্ধির পাশাপাশি মূল প্রযুক্তিতে ঐতিহাসিক অগ্রগতি অর্জন করেছে চীন। কোয়ান্টাম তথ্য, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, মানুষবাহী মহাকাশমিশন, চন্দ্র অভিযান ও গভীর সমুদ্র অনুসন্ধানের মতো ক্ষেত্রে চীন বৈশ্বিক পর্যায়ে একাধিক প্রথমসারির সাফল্য অর্জন করেছে।
তিনি উল্লেখ করেন, ‘মেড ইন চায়না ২০২৫’ পরিকল্পনার ১০টি প্রধান খাতের মধ্যে পাঁচটিতে চীন নেতৃত্বস্থানীয় অবস্থানে পৌঁছেছে, আর বাকি পাঁচটি খাতে উন্নত দেশগুলোর সমতুল্য অবস্থানে রয়েছে। গাড়ি, জাহাজ নির্মাণ, বিদ্যুৎ সরঞ্জাম, হাইস্পিড রেল ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি সরঞ্জামে চীন বিশ্বমানের অবস্থানে উঠে এসেছে। একইসঙ্গে নতুন উপকরণ, বায়োমেডিসিন, উচ্চমানের যন্ত্রপাতি, মহাকাশ প্রযুক্তি ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জিত হয়েছে।
২০১৫ সালে ঘোষিত ‘মেড ইন চায়না ২০২৫’ পরিকল্পনার লক্ষ্য ছিল উৎপাদন শিল্পকে উদ্ভাবননির্ভর এবং স্বনির্ভর করে তোলা। হুয়াং জানান, আগামী বছর থেকে শুরু হওয়া নতুন পাঁচ বছরের পরিকল্পনায় সংহত সার্কিট, শিল্প সফটওয়্যার ও উচ্চমানের যন্ত্রপাতির মতো মূল প্রযুক্তি উন্নয়নে আরও জোর দেওয়া হবে।

ফোরামটি প্রথম শুরু হয় ২০১৫ সালে চাইনিজ অ্যাকাডেমি অব সায়েন্সেসের গবেষণা সংস্থা দ্বারা। পূর্ববর্তী আসরে বৈশ্বিক সহযোগিতা ও চীনা ধাঁচের আধুনিকায়নসহ নানা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আলোচিত হয়েছে।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















