চীনা-মার্কিনি নিউরোসায়েন্টিস্ট জেইন উ-র মৃত্যুকে কেন্দ্র করে দায়ের করা দেওয়ানি মামলাটি খারিজের আবেদন করেছে নর্থওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটি। পরিবার অভিযোগ করেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈষম্যমূলক আচরণই তাকে আত্মহত্যার দিকে ঠেলে দেয়। আদালতে এই মামলা গবেষণা জগতকে নাড়িয়ে দিয়েছে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমিকা নিয়ে শুরু হয়েছে তীব্র সমালোচনা।
চিকাগোর আদালতে এই সপ্তাহে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়েছে জেইন উ-র মৃত্যুকে ঘিরে আইনি লড়াই। ২০২৪ সালের জুলাই মাসে আত্মহত্যা করেন তিনি। ২০২৫ সালের জুনে তার পরিবার একটি দেওয়ানি মামলা করে অভিযোগ তোলে যে, বিতর্কিত ‘চায়না ইনিশিয়েটিভ’–এর সময় নর্থওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটির আচরণ তাকে মানসিকভাবে চাপে ফেলে দেয় এবং অবশেষে তার মৃত্যু ঘটে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের মামলা খারিজের আবেদন
সোমবার নর্থওয়েস্টার্নের আইনজীবীরা কুক কাউন্টির বিচারক জোনাথন গ্রিনকে জানান যে তারা আগেই মামলাটি খারিজের আবেদন জমা দিয়েছেন।
বিচারক গ্রিন বিশ্ববিদ্যালয়কে দুই সপ্তাহের মধ্যে সংক্ষিপ্ত আকারে আবেদন পুনরায় জমা দিতে বলেন। পূর্ণাঙ্গ শুনানি আগামী ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত হবে।

পরিবারের অভিযোগ
পরিবার অভিযোগ করেছে,
• গবেষণা তহবিল বন্ধ করে দেওয়া
• ল্যাবরেটরি বন্ধ করে দেওয়া
• অফিস থেকে জোর করে সরিয়ে মনোরোগ ইউনিটে পাঠানো
এই সবকিছু ছিল বৈষম্যমূলক এবং মানসিকভাবে তাকে বিপর্যস্ত করে তোলে।
বিশ্ববিদ্যালয় এনবিসি নিউজকে আগে জানিয়েছিল যে তারা অভিযোগগুলো জোরালোভাবে অস্বীকার করে।
জেইন উ-র পরিচয় ও গবেষণা
হেফেই, আনহুই প্রদেশে জন্ম নেওয়া জেইন উ ১৯৮০-এর দশকে যুক্তরাষ্ট্রে যান এবং স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্যানসার বায়োলজিতে পিএইচডি সম্পন্ন করেন।
তিনি নর্থওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটিতে ড. চার্লস এল. মিক্স রিসার্চ প্রফেসর ছিলেন এবং পারকিনসনস ও এএলএস-এর মতো মস্তিষ্কজনিত রোগের জিনগত কারণ নিয়ে অগ্রগণ্য গবেষণা করতেন।
২০০৬ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে তিনি ন্যাশনাল ইন্সটিটিউটস অব হেলথ (এনআইএইচ) থেকে ১ কোটি ১০ লাখ মার্কিন ডলারেরও বেশি গবেষণা অনুদান পেয়েছিলেন।
মৃত্যুর পর অস্বাভাবিক পদক্ষেপ
জেইন উ–র মৃত্যুর কয়েক দিনের মধ্যেই মেডিকেল স্কুলের ওয়েবসাইট থেকে তার প্রোফাইল সরিয়ে ফেলা হয়। নর্থওয়েস্টার্ন স্কলার পোর্টাল থেকেও তার প্রকাশনা ও অনুদানের তথ্য উধাও হয়ে যায়।
চীনা-মার্কিনি গবেষকরা এটিকে অস্বাভাবিক বলে মন্তব্য করেন। সাধারণত বিশ্ববিদ্যালয় মৃত অধ্যাপকের স্মরণে বিবৃতি প্রকাশ করে এবং কিছুদিন তার ওয়েবপেজ বজায় রাখে—যা এখানে হয়নি।
চায়না ইনিশিয়েটিভ ও তদন্তের প্রভাব
পূর্ববর্তী তদন্তে জানা যায়, জেইন উ সম্ভবত এনআইএইচ–এর চীনা যোগসূত্র যাচাই–সংক্রান্ত তদন্তের লক্ষ্য ছিলেন। এই তদন্তগুলো যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগের এখন বিলুপ্ত ‘চায়না ইনিশিয়েটিভ’-এর সমান্তরালে চলছিল, যার লক্ষ্য ছিল প্রযুক্তি চুরি ও অর্থনৈতিক গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগ খতিয়ে দেখা।

পরিবারের অভিযোগে বলা হয়েছে,
• ২০১৯ সালে তার বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হয়
• এনআইএইচ পরে তাকে নির্দোষ ঘোষণা করে
তবুও বিশ্ববিদ্যালয় তার অবস্থান পুনর্বহাল করেনি।
২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে তার ল্যাবের একটি অংশ বন্ধ করা হয়, গবেষণা দলে থাকা সদস্যদের সরিয়ে নেওয়া হয় এবং নতুন তহবিল পাওয়াকে প্রায় অসম্ভব করে তোলা হয়।
বিস্তৃত প্রেক্ষাপট
বিদেশি প্রভাব–সংক্রান্ত তদন্তে এশীয় বংশোদ্ভূত শত শত বিজ্ঞানীকে চিহ্নিত করা হয়েছিল। অনেকের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা না হলেও তাদের চাকরি হারাতে হয়েছে, আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়তে হয়েছে, কিংবা ক্যারিয়ার ধ্বংস হয়েছে।
মানসিক সহায়তার তথ্য
যদি আত্মহত্যা–সম্পর্কিত কোনো চিন্তা আপনাকে বা আপনার পরিচিত কাউকে বিপর্যস্ত করে, তাহলে স্থানীয় মানসিক স্বাস্থ্যসেবার সঙ্গে যোগাযোগ করা জরুরি।
হংকং: ১৮১১১ (সরকারি মানসিক স্বাস্থ্য সহায়তা), ২৮৯৬ ০০০০ (The Samaritans), ২৩৮২ ০০০০ (Suicide Prevention Services)
যুক্তরাষ্ট্র: ৯৮৮ নম্বরে কল বা টেক্সট করুন, অথবা 988lifeline.org এ যোগাযোগ করুন।
#tags
সারাক্ষণ রিপোর্ট 


















