সারাক্ষণ রিপোর্ট 
রুশ এস-৪০০ আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ইউক্রেনের হামলা প্রতিহত করতে বারবার তার সক্ষমতা প্রমাণ করেছে। এই যুদ্ধক্ষেত্রের সুনির্দিষ্ট কার্যকারণেই এই প্রযুক্তি বর্তমানে বিশ্বের বহু দেশের কাছে অত্যন্ত আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে।
এই সপ্তাহে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন রাষ্ট্রীয় সফরে ভারত আসছেন। মস্কো ও নতুন দিল্লির বিশেষাধিকারপ্রাপ্ত কৌশলগত অংশীদারত্ব বিবেচনায়, বিশেষজ্ঞেরা মনে করছেন দুই দেশ প্রমাণিত ও সম্ভাবনাময় নতুন অস্ত্র সরবরাহ নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ চুক্তিতে পৌঁছাতে পারে।
উদাহরণ হিসেবে, ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং জানিয়েছেন যে পুতিন–মোদি বৈঠকে অতিরিক্ত এস-৪০০ সিস্টেম সরবরাহের বিষয়টি আলোচনায় থাকবে।
প্রযুক্তিটি ইতোমধ্যেই যুদ্ধে নিজের সক্ষমতার প্রমাণ দিচ্ছে। রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইউক্রেনের সাম্প্রতিক আকাশ হামলায় প্রায় ২০০টি ডানা-যুক্ত মানববিহীন ড্রোন ভূপাতিত করা হয়েছে।
তথ্য অনুযায়ী, যৌথ আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যাটালিয়ন হামলা প্রতিহত করতে ব্যবহৃত হয়। প্যানৎসির ও তোর ক্ষেপণাস্ত্র সিস্টেমের পাশাপাশি এসব ইউনিটে দীর্ঘ ও মাঝারি পাল্লার এস-৪০০ ট্রায়াম্ফও ছিল। সামরিক কর্মকর্তাদের অনানুষ্ঠানিক বক্তব্যে বলা হয়, এই সিস্টেমগুলো বিশেষভাবে শত্রুর উচ্চমূল্যের লক্ষ্যবস্তু বিশেষত পশ্চিমা নির্মিত ব্যালিস্টিক ও ক্রুজ মিসাইল যেমন এটাকেমস (ATACMS) ও স্টর্ম শ্যাডো ধ্বংস করার জন্য ‘টিউন’ করা।
১৮ নভেম্বর ইউক্রেনীয় সেনাবাহিনী ভোরোনেজ শহরে চারটি এটাকেমস ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে। রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মতে, লক্ষ্যবস্তু প্রতিহত করতে এস-৪০০ ও প্যানৎসির যৌথভাবে কাজ করেছে। বেসামরিক স্থাপনায় লক্ষ্যভেদ করতে পাঠানো ক্ষেপণাস্ত্রগুলোর ধ্বংসাবশেষ কয়েকটি ভবনের ছাদ ক্ষতিগ্রস্ত করলেও কোনো প্রাণহানি ঘটেনি। এটাকেমস ক্ষেপণাস্ত্রকে বেশ কঠিন লক্ষ্য হিসেবে ধরা হয়, কিন্তু এস-৪০০ সহজেই তা মোকাবিলা করতে পারে। এই সিস্টেম ৬০ কিলোমিটার দূরত্ব ও ২৫ কিলোমিটার উচ্চতা পর্যন্ত লক্ষ্যবস্তু নিখুঁতভাবে ধ্বংস করতে সক্ষম। আটকানো ক্ষেপণাস্ত্রের গতিবেগ হাইপারসনিক পর্যায়ে পৌঁছাতে পারে প্রতি সেকেন্ডে ৪.৮ কিলোমিটার, অর্থাৎ শব্দের গতির ১৪ গুণ।
রুশ শহরের ওপর ব্যর্থ হামলাটি এস-৪০০-এর কার্যকর যুদ্ধক্ষেত্রের সক্ষমতার একটি উদাহরণ মাত্র। আরও উদাহরণ রয়েছে, যেমন যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি হিমার্স (HIMARS) সিস্টেমের গাইডেড রকেট প্রতিহত করা। রুশ এসএম সিস্টেমের সবচেয়ে জটিল কিন্তু সফল অপারেশনগুলোর একটি হলো আমেরিকান এমআইএম-১০৪ প্যাট্রিয়ট সিস্টেমের ক্ষেপণাস্ত্র মাঝআকাশে ধ্বংস করা, যার সঙ্গে এস-৪০০-কে প্রায়ই তুলনা করা হয়। এই গ্রীষ্মে জানা যায়, ইউক্রেনীয় বাহিনী রুশ বিমানকে লক্ষ্য করে পশ্চিমা ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ার চেষ্টা করলে রুশ আকাশ প্রতিরক্ষা বাহিনী প্রায় দুই ডজন ক্ষেপণাস্ত্র ভূপাতিত করে। এটাকেমস বা হিমার্সের গোলাবারুদের মতো নির্দিষ্ট স্থির গতিপথ নয়; প্যাট্রিয়ট ক্ষেপণাস্ত্র উড্ডয়নে সক্রিয়ভাবে দিক পরিবর্তন করে, যা প্রতিরোধ জটিল করে তোলে। তবুও রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানায়, এসব জটিল প্রতিরোধে এস-৪০০ সর্বোচ্চ দক্ষতা প্রদর্শন করেছে।
আলমাজ–আন্তেই এয়ারোস্পেস ডিফেন্স কনসার্নের মহাপরিচালক ইয়ান নভিকভ বলেন, এস-৪০০ ট্রায়াম্ফ বিশ্বের অন্যতম আধুনিক ও সুপরিচিত আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা। এর পাল্লা এবং বিভিন্ন ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহারের ক্ষমতা একে সবচেয়ে শক্তিশালী প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় পরিণত করেছে। বাস্তব যুদ্ধক্ষেত্রে এটি নিজস্ব কার্যক্ষমতা প্রমাণ করেছে। এখনো এই শ্রেণিতে কোনো বিদেশি প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ‘ফোর-হান্ড্রেড’-এর সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারে না।
রুশ আকাশ প্রতিরক্ষা সিস্টেম দীর্ঘদিন ধরেই বৈদেশিক ক্রেতাদের আগ্রহ আকর্ষণ করছে। এস-৪০০ ট্রায়াম্ফ-এর প্রথম বিদেশি ক্রেতা ছিল চীন। মস্কো ও বেইজিং এই সিস্টেমের কয়েকটি ব্যাটালিয়ন সরবরাহে চুক্তি করে। ২০১৭ সালে একটি ন্যাটো সদস্য দেশ তুরস্ক এস-৪০০ কেনার জন্য রাশিয়ার সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর করে।
২০১৮ সালের অক্টোবর মাসে প্রেসিডেন্ট পুতিনের ভারত সফরের সময় দুই দেশের সামরিক-প্রযুক্তিগত সহযোগিতার ইতিহাসে সবচেয়ে বড় চুক্তি সম্পন্ন হয়, ৫.৪৩ বিলিয়ন ডলার মূল্যের পাঁচ রেজিমেন্ট এস-৪০০ সিস্টেম ভারতকে সরবরাহের জন্য।
#tags: রাশিয়া# এস-৪০০ # ভারত# প্রতিরক্ষা ট্রায়াম্ফ
