০৯:৩৯ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ০৬ ডিসেম্বর ২০২৫
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ঢাকা (পর্ব-৬৮) বৈশ্বিক এআই কেন্দ্র হতে হলে ভারতকে বিদ্যুৎ অবকাঠামো আধুনিক করতে হবে সৌদি আরবে উৎসবের চলচ্চিত্র উৎসবের জাদু রিওতে তালিপট পাম গাছ ফুলে উঠছে প্রথম এবং এক বার মাত্র আপনার অডিও বুক এ সিজনে এইবার সস্তা হতে পারে, প্রযুক্তিগত পরিবর্তনের কারণে প্রাচীন ভারতে গণিতচর্চা (পর্ব-৩৩৫) মাইকেল ওভিটজ: এক প্রাক্তন হলিউড টাইটানের সংগ্রহশালা-স্টাইলের বাসা নেটফ্লিক্সের সঙ্গে একচেটিয়া আলোচনায় ওয়ার্নার ব্রোস ডিসকভারির স্টুডিও বিক্রি ডিসেম্বরে বাজারে আসছে অ্যামাজনের নতুন কালার কিণ্ডল স্ক্রাইব কঠিন অর্থনীতির মধ্যেও আলো ঝলমলে বুখারেস্টের ক্রিসমাস মার্কেট

বৈশ্বিক এআই কেন্দ্র হতে হলে ভারতকে বিদ্যুৎ অবকাঠামো আধুনিক করতে হবে

ভারত বৈশ্বিক এআই সরবরাহ শৃঙ্খলে নিজের অবস্থান শক্ত করতে চায়। গুগল ও ওপেনএআই-সহ বড় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলো সম্প্রতি ভারতে ১ গিগাওয়াট ক্ষমতার ডেটা সেন্টার স্থাপনের পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে। এসব বিনিয়োগ প্রমাণ করে যে দেশটির প্রযুক্তি সক্ষমতার সম্ভাবনা অনেক, তবে বাস্তবে সেই সম্ভাবনা কাজে লাগাতে হলে বিদ্যমান অবকাঠামোতে দ্রুত উন্নয়ন অপরিহার্য।

দক্ষিণ এশিয়ার এই দেশটি বর্তমানে বিশ্বের প্রায় ২০ শতাংশ তথ্য তৈরি করলেও তাদের হাতে বৈশ্বিক ডেটা সেন্টার সক্ষমতার মাত্র ১ শতাংশ রয়েছে। ২০২৫ সালের এপ্রিলে ভারতের মোট ডেটা সেন্টার সক্ষমতা ছিল মাত্র ১.২ গিগাওয়াট। অর্থাৎ একটি ১ গিগাওয়াট প্রকল্পই দেশটির সক্ষমতাকে প্রায় দ্বিগুণ করে দিতে পারে। ২০৩০ সালের মধ্যে ভারতের সক্ষমতা ৫ থেকে ১৭ গিগাওয়াটে পৌঁছানোর বিভিন্ন পূর্বাভাস থাকলেও, তা অর্জন করতে হলে দেশের ভিত্তিগত অবকাঠামোতে বড় ধরনের সংস্কার প্রয়োজন।

দেশীয় ডেটা সেন্টার নির্মাণ শুধু অর্থনৈতিক নয়, ভূরাজনৈতিকভাবেও গুরুত্বপূর্ণ। পরিবর্তিত বৈশ্বিক বাস্তবতায় উদীয়মান প্রযুক্তির নির্ভরযোগ্য প্রবেশাধিকার ও নিরাপদ তথ্য ব্যবস্থাপনা অত্যন্ত জরুরি। দেশীয় ডেটা সেন্টার ভারতের প্রযুক্তি সরবরাহ শৃঙ্খলকে শক্তিশালী করবে, দেশীয় উদ্ভাবন বাড়াবে, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত করবে এবং কর্মসংস্থান তৈরি করবে। পাশাপাশি টিয়ার-১ শহরের বাইরে ডেটা সেন্টার ছড়িয়ে দিলে আধা-শহর ও গ্রামীণ এলাকায় সংযোগ ও লেটেন্সি উন্নত হবে, যা ডিজিটাল বিভাজন কমাতে সহায়তা করবে।

তবে ভারতের ডেটা সেন্টার বাজার গড়ে ওঠার পথে বড় কাঠামোগত চ্যালেঞ্জ রয়েছে। ডেটা সেন্টার নির্মাণে বিপুল অগ্রিম বিনিয়োগ প্রয়োজন এবং বাজারটি অত্যন্ত কেন্দ্রীভূত। অ্যামাজন ওয়েব সার্ভিসেস, মাইক্রোসফট আজুর ও গুগল ক্লাউডের মতো বৈশ্বিক হাইপারস্কেলারেরা ভারতের অবকাঠামো-সেবা বাজারের ৮৭ শতাংশ দখলে রেখেছে। স্কেল ও নেটওয়ার্ক ইফেক্টের কারণে নতুন দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতিযোগিতা কঠিন হয়ে পড়ে। পাশাপাশি, ভারতের নিম্ন সক্ষমতার একটি কারণ দেশীয় চাহিদার ঘাটতি; বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠান এখনো বিদেশি ক্লাউড প্ল্যাটফর্মে তথ্য সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াকরণ করে।

সবচেয়ে বড় বাধা হলো বিদ্যুৎ ও পানি অবকাঠামো। বড় ও এআই-প্রস্তুত ডেটা সেন্টারের জন্য নিরবচ্ছিন্ন উচ্চমানের বিদ্যুৎ দরকার। দ্য সানডে গার্ডিয়ানের তথ্য অনুযায়ী, ভারতে বিদ্যুৎ সঞ্চালন ও বিতরণে মোট উৎপাদনের ১৬.৬৪ শতাংশ ক্ষতি হয়—যা বৈশ্বিক গড় ৬ থেকে ৮ শতাংশের দ্বিগুণেরও বেশি। এই অদক্ষতা নির্ভরযোগ্যতাকে ক্ষুণ্ন করে, ফলে ডেটা সেন্টারগুলোকে ব্যয়বহুল ডিজেল জেনারেটরের ওপর নির্ভর করতে হয়। অর্থাৎ ভারতের বিদ্যুৎ গ্রিডকে উচ্চ সঞ্চালন ক্ষমতা ও বিভিন্ন ধরনের শক্তি-উৎস ব্যবস্থাপনা সমর্থন করতে আধুনিকায়ন করতে হবে।

পানির অভাবও দীর্ঘমেয়াদে গুরুতর হুমকি। একটি ১ মেগাওয়াট ডেটা সেন্টার বছরে গড়ে ২ কোটি ৫৫ লাখ লিটার মিঠা পানি খরচ করে। নীতি আয়োগ অনুমান করেছে যে ২০৩০ সালের মধ্যে ভারতের ২১টি শহরের ভূগর্ভস্থ পানির মজুত শেষ হয়ে যেতে পারে। মহারাষ্ট্র ও তামিলনাড়ুর মতো প্রধান ডেটা সেন্টার অঞ্চল ইতিমধ্যে পানি-সংকটে ভুগছে, ফলে ঐতিহ্যগত কুলিং পদ্ধতি দীর্ঘমেয়াদে টেকসই নয়।

এই সব বাধা মোকাবিলায় ভারতের বহুমুখী ও সক্রিয় কৌশল গ্রহণ প্রয়োজন। প্রথমত, বিদ্যুৎ অবকাঠামো আধুনিকীকরণে বেসরকারি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে হবে। ভর্তুকির বদলে ৫ মেগাওয়াটের বেশি সক্ষমতার ডেটা সেন্টারের জন্য ন্যাশনাল থার্মাল পাওয়ার করপোরেশনের (এনটিপিসি) এনার্জি বন্ডে অনুপাতিক বিনিয়োগ বাধ্যতামূলক করা যেতে পারে। এতে বেসরকারি অর্থ মূল গ্রিডের আধুনিকায়ন ও নবায়নযোগ্য শক্তিতে প্রবাহিত হবে এবং ডেটা সেন্টার অপারেটররা নির্ভরযোগ্য বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করতে পারবে।

১০০ মেগাওয়াটের বেশি সক্ষমতার ডেটা সেন্টারগুলোর ক্ষেত্রে নিজস্ব বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র নির্মাণ বাধ্যতামূলক করা যেতে পারে। যদিও বর্তমানে ভারতের বেশিরভাগ ডেটা সেন্টারের সক্ষমতা ১০ মেগাওয়াটের কম, ভবিষ্যতে বড় আকারের প্রকল্প বাড়লে এই বিকল্পটি বেশি কার্যকর হবে। দীর্ঘমেয়াদে এটি গ্রিড-নির্ভরতার ঝুঁকি কমিয়ে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ নিশ্চিত করতে পারে, যদিও উৎপাদন খরচ পাবলিক গ্রিডের তুলনায় বেশি হবে।

দ্বিতীয়ত, ভারতকে বিস্তৃত ডেটা লোকালাইজেশনের চাপ না বাড়িয়ে আঞ্চলিক ডিজিটাল হাব হওয়ার কৌশলে জোর দিতে হবে। উৎপাদন ব্যয়ের তুলনামূলক কম হওয়ার কারণে ভারত আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের জন্য আকর্ষণীয় কেন্দ্র। কোটাক মিউচুয়াল ফান্ডের হিসাবে, ভারতে ডেটা সেন্টার নির্মাণে প্রতি ওয়াটে গড় ব্যয় ৭ ডলার, যেখানে যুক্তরাষ্ট্রে ১০ এবং যুক্তরাজ্যে ১১ ডলার। প্রতিরক্ষা, অর্থ ও স্বাস্থ্য খাতের মতো জাতীয় নিরাপত্তা-সংক্রান্ত ক্ষেত্রে লক্ষ্যভিত্তিক দেশীয় উন্নয়ন চাহিদা বাড়াবে।

তৃতীয়ত, এআই সরবরাহ শৃঙ্খল সুরক্ষিত করতে উন্নত অর্থনীতির দেশ—যুক্তরাষ্ট্র, দক্ষিণ কোরিয়া ও তাইওয়ানের সঙ্গে চিপ সংগ্রহ, নকশা ও উৎপাদনে বহুপাক্ষিক অংশীদারত্ব জরুরি। একই সঙ্গে পানি, বিদ্যুৎ ও ভূমি ব্যবহারে অভিন্ন ন্যূনতম দক্ষতার বিধান দীর্ঘমেয়াদে পরিবেশগত স্থায়িত্ব ও রাজ্যভেদে নিয়ন্ত্রক ব্যয় সামঞ্জস্যপূর্ণ করবে।

ভারতকে বৈশ্বিক প্রযুক্তি সরবরাহ শৃঙ্খলে শক্ত অবস্থান নিশ্চিত করতে হলে নিরবচ্ছিন্ন ও নির্ভরযোগ্য বিদ্যুৎ নিশ্চিত করার মতো বিদ্যুৎ অবকাঠামো আধুনিকীকরণ অত্যাবশ্যক। পাশাপাশি, বহুপাক্ষিক ও দ্বিপাক্ষিক অংশীদারত্ব বিনিয়োগ ও প্রযুক্তি হস্তান্তরকে উৎসাহিত করবে, যা ভারতকে বৈশ্বিক এআই অগ্রগতির ভোক্তা ও অংশীদার—উভয় ভূমিকায় প্রতিষ্ঠিত করবে। শেষত, পানি ব্যবহারের ওপর কঠোর নিয়ন্ত্রণ দরকার, যাতে জাতীয় সংকটের প্রেক্ষাপটে পানি-দক্ষ প্রযুক্তি নিশ্চিত হয়। এই সক্রিয় ও চাহিদা-ভিত্তিক কৌশলগুলোই ভারতে একটি টেকসই, স্থিতিশীল ও বৈশ্বিক প্রতিযোগিতামূলক ডেটা সেন্টার পরিবেশ গড়ে তুলতে সহায়ক হবে।


জনপ্রিয় সংবাদ

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ঢাকা (পর্ব-৬৮)

বৈশ্বিক এআই কেন্দ্র হতে হলে ভারতকে বিদ্যুৎ অবকাঠামো আধুনিক করতে হবে

০৮:০০:৩৮ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৬ ডিসেম্বর ২০২৫
ভারত বৈশ্বিক এআই সরবরাহ শৃঙ্খলে নিজের অবস্থান শক্ত করতে চায়। গুগল ও ওপেনএআই-সহ বড় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলো সম্প্রতি ভারতে ১ গিগাওয়াট ক্ষমতার ডেটা সেন্টার স্থাপনের পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে। এসব বিনিয়োগ প্রমাণ করে যে দেশটির প্রযুক্তি সক্ষমতার সম্ভাবনা অনেক, তবে বাস্তবে সেই সম্ভাবনা কাজে লাগাতে হলে বিদ্যমান অবকাঠামোতে দ্রুত উন্নয়ন অপরিহার্য।

দক্ষিণ এশিয়ার এই দেশটি বর্তমানে বিশ্বের প্রায় ২০ শতাংশ তথ্য তৈরি করলেও তাদের হাতে বৈশ্বিক ডেটা সেন্টার সক্ষমতার মাত্র ১ শতাংশ রয়েছে। ২০২৫ সালের এপ্রিলে ভারতের মোট ডেটা সেন্টার সক্ষমতা ছিল মাত্র ১.২ গিগাওয়াট। অর্থাৎ একটি ১ গিগাওয়াট প্রকল্পই দেশটির সক্ষমতাকে প্রায় দ্বিগুণ করে দিতে পারে। ২০৩০ সালের মধ্যে ভারতের সক্ষমতা ৫ থেকে ১৭ গিগাওয়াটে পৌঁছানোর বিভিন্ন পূর্বাভাস থাকলেও, তা অর্জন করতে হলে দেশের ভিত্তিগত অবকাঠামোতে বড় ধরনের সংস্কার প্রয়োজন।

দেশীয় ডেটা সেন্টার নির্মাণ শুধু অর্থনৈতিক নয়, ভূরাজনৈতিকভাবেও গুরুত্বপূর্ণ। পরিবর্তিত বৈশ্বিক বাস্তবতায় উদীয়মান প্রযুক্তির নির্ভরযোগ্য প্রবেশাধিকার ও নিরাপদ তথ্য ব্যবস্থাপনা অত্যন্ত জরুরি। দেশীয় ডেটা সেন্টার ভারতের প্রযুক্তি সরবরাহ শৃঙ্খলকে শক্তিশালী করবে, দেশীয় উদ্ভাবন বাড়াবে, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত করবে এবং কর্মসংস্থান তৈরি করবে। পাশাপাশি টিয়ার-১ শহরের বাইরে ডেটা সেন্টার ছড়িয়ে দিলে আধা-শহর ও গ্রামীণ এলাকায় সংযোগ ও লেটেন্সি উন্নত হবে, যা ডিজিটাল বিভাজন কমাতে সহায়তা করবে।

তবে ভারতের ডেটা সেন্টার বাজার গড়ে ওঠার পথে বড় কাঠামোগত চ্যালেঞ্জ রয়েছে। ডেটা সেন্টার নির্মাণে বিপুল অগ্রিম বিনিয়োগ প্রয়োজন এবং বাজারটি অত্যন্ত কেন্দ্রীভূত। অ্যামাজন ওয়েব সার্ভিসেস, মাইক্রোসফট আজুর ও গুগল ক্লাউডের মতো বৈশ্বিক হাইপারস্কেলারেরা ভারতের অবকাঠামো-সেবা বাজারের ৮৭ শতাংশ দখলে রেখেছে। স্কেল ও নেটওয়ার্ক ইফেক্টের কারণে নতুন দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতিযোগিতা কঠিন হয়ে পড়ে। পাশাপাশি, ভারতের নিম্ন সক্ষমতার একটি কারণ দেশীয় চাহিদার ঘাটতি; বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠান এখনো বিদেশি ক্লাউড প্ল্যাটফর্মে তথ্য সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াকরণ করে।

সবচেয়ে বড় বাধা হলো বিদ্যুৎ ও পানি অবকাঠামো। বড় ও এআই-প্রস্তুত ডেটা সেন্টারের জন্য নিরবচ্ছিন্ন উচ্চমানের বিদ্যুৎ দরকার। দ্য সানডে গার্ডিয়ানের তথ্য অনুযায়ী, ভারতে বিদ্যুৎ সঞ্চালন ও বিতরণে মোট উৎপাদনের ১৬.৬৪ শতাংশ ক্ষতি হয়—যা বৈশ্বিক গড় ৬ থেকে ৮ শতাংশের দ্বিগুণেরও বেশি। এই অদক্ষতা নির্ভরযোগ্যতাকে ক্ষুণ্ন করে, ফলে ডেটা সেন্টারগুলোকে ব্যয়বহুল ডিজেল জেনারেটরের ওপর নির্ভর করতে হয়। অর্থাৎ ভারতের বিদ্যুৎ গ্রিডকে উচ্চ সঞ্চালন ক্ষমতা ও বিভিন্ন ধরনের শক্তি-উৎস ব্যবস্থাপনা সমর্থন করতে আধুনিকায়ন করতে হবে।

পানির অভাবও দীর্ঘমেয়াদে গুরুতর হুমকি। একটি ১ মেগাওয়াট ডেটা সেন্টার বছরে গড়ে ২ কোটি ৫৫ লাখ লিটার মিঠা পানি খরচ করে। নীতি আয়োগ অনুমান করেছে যে ২০৩০ সালের মধ্যে ভারতের ২১টি শহরের ভূগর্ভস্থ পানির মজুত শেষ হয়ে যেতে পারে। মহারাষ্ট্র ও তামিলনাড়ুর মতো প্রধান ডেটা সেন্টার অঞ্চল ইতিমধ্যে পানি-সংকটে ভুগছে, ফলে ঐতিহ্যগত কুলিং পদ্ধতি দীর্ঘমেয়াদে টেকসই নয়।

এই সব বাধা মোকাবিলায় ভারতের বহুমুখী ও সক্রিয় কৌশল গ্রহণ প্রয়োজন। প্রথমত, বিদ্যুৎ অবকাঠামো আধুনিকীকরণে বেসরকারি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে হবে। ভর্তুকির বদলে ৫ মেগাওয়াটের বেশি সক্ষমতার ডেটা সেন্টারের জন্য ন্যাশনাল থার্মাল পাওয়ার করপোরেশনের (এনটিপিসি) এনার্জি বন্ডে অনুপাতিক বিনিয়োগ বাধ্যতামূলক করা যেতে পারে। এতে বেসরকারি অর্থ মূল গ্রিডের আধুনিকায়ন ও নবায়নযোগ্য শক্তিতে প্রবাহিত হবে এবং ডেটা সেন্টার অপারেটররা নির্ভরযোগ্য বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করতে পারবে।

১০০ মেগাওয়াটের বেশি সক্ষমতার ডেটা সেন্টারগুলোর ক্ষেত্রে নিজস্ব বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র নির্মাণ বাধ্যতামূলক করা যেতে পারে। যদিও বর্তমানে ভারতের বেশিরভাগ ডেটা সেন্টারের সক্ষমতা ১০ মেগাওয়াটের কম, ভবিষ্যতে বড় আকারের প্রকল্প বাড়লে এই বিকল্পটি বেশি কার্যকর হবে। দীর্ঘমেয়াদে এটি গ্রিড-নির্ভরতার ঝুঁকি কমিয়ে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ নিশ্চিত করতে পারে, যদিও উৎপাদন খরচ পাবলিক গ্রিডের তুলনায় বেশি হবে।

দ্বিতীয়ত, ভারতকে বিস্তৃত ডেটা লোকালাইজেশনের চাপ না বাড়িয়ে আঞ্চলিক ডিজিটাল হাব হওয়ার কৌশলে জোর দিতে হবে। উৎপাদন ব্যয়ের তুলনামূলক কম হওয়ার কারণে ভারত আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের জন্য আকর্ষণীয় কেন্দ্র। কোটাক মিউচুয়াল ফান্ডের হিসাবে, ভারতে ডেটা সেন্টার নির্মাণে প্রতি ওয়াটে গড় ব্যয় ৭ ডলার, যেখানে যুক্তরাষ্ট্রে ১০ এবং যুক্তরাজ্যে ১১ ডলার। প্রতিরক্ষা, অর্থ ও স্বাস্থ্য খাতের মতো জাতীয় নিরাপত্তা-সংক্রান্ত ক্ষেত্রে লক্ষ্যভিত্তিক দেশীয় উন্নয়ন চাহিদা বাড়াবে।

তৃতীয়ত, এআই সরবরাহ শৃঙ্খল সুরক্ষিত করতে উন্নত অর্থনীতির দেশ—যুক্তরাষ্ট্র, দক্ষিণ কোরিয়া ও তাইওয়ানের সঙ্গে চিপ সংগ্রহ, নকশা ও উৎপাদনে বহুপাক্ষিক অংশীদারত্ব জরুরি। একই সঙ্গে পানি, বিদ্যুৎ ও ভূমি ব্যবহারে অভিন্ন ন্যূনতম দক্ষতার বিধান দীর্ঘমেয়াদে পরিবেশগত স্থায়িত্ব ও রাজ্যভেদে নিয়ন্ত্রক ব্যয় সামঞ্জস্যপূর্ণ করবে।

ভারতকে বৈশ্বিক প্রযুক্তি সরবরাহ শৃঙ্খলে শক্ত অবস্থান নিশ্চিত করতে হলে নিরবচ্ছিন্ন ও নির্ভরযোগ্য বিদ্যুৎ নিশ্চিত করার মতো বিদ্যুৎ অবকাঠামো আধুনিকীকরণ অত্যাবশ্যক। পাশাপাশি, বহুপাক্ষিক ও দ্বিপাক্ষিক অংশীদারত্ব বিনিয়োগ ও প্রযুক্তি হস্তান্তরকে উৎসাহিত করবে, যা ভারতকে বৈশ্বিক এআই অগ্রগতির ভোক্তা ও অংশীদার—উভয় ভূমিকায় প্রতিষ্ঠিত করবে। শেষত, পানি ব্যবহারের ওপর কঠোর নিয়ন্ত্রণ দরকার, যাতে জাতীয় সংকটের প্রেক্ষাপটে পানি-দক্ষ প্রযুক্তি নিশ্চিত হয়। এই সক্রিয় ও চাহিদা-ভিত্তিক কৌশলগুলোই ভারতে একটি টেকসই, স্থিতিশীল ও বৈশ্বিক প্রতিযোগিতামূলক ডেটা সেন্টার পরিবেশ গড়ে তুলতে সহায়ক হবে।