বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন ইউনুস সরকারের আমলে বিচারব্যবস্থার স্বাধীনতা, ন্যায়বিচারের মান এবং রাজনৈতিক নিরপেক্ষতা নিয়ে আন্তর্জাতিক উদ্বেগ তীব্র হয়েছে। আইবিএএইচআরআই বলছে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও যুক্তরাজ্যের এমপি টিউলিপ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে অনুপস্থিত অবস্থায় রায় এবং বিচার প্রক্রিয়ায় অনিয়ম আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচারের মানদণ্ড পূরণ করে না।
আন্তর্জাতিক বার অ্যাসোসিয়েশনের মানবাধিকার ইনস্টিটিউট (আইবিএএইচআরআই) জানায়, বাংলাদেশের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা এবং বিচার প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা রক্ষায় বড় ধরনের ঘাটতি রয়েছে। অতীতের মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় দায়বদ্ধতা প্রতিষ্ঠা করতে স্বাধীন, নিরপেক্ষ তদন্ত ও বিশ্বাসযোগ্য বিচার অপরিহার্য। টিউলিপ সিদ্দিকের অনুপস্থিত অবস্থায় দুই বছরের কারাদণ্ড ঘোষণার পর তারা গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে।
বিচারব্যবস্থার রাজনৈতিক অপব্যবহার
আইবিএএইচআরআই পরিচালক ব্যারোনেস হেলেনা কেনেডি বলেন, বাংলাদেশের বিচারব্যবস্থাকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহারের প্রবণতা উদ্বেগজনক। তিনি বলেন, প্রতিটি বিচার রাষ্ট্রের ন্যায়বিচার ও মানবাধিকার রক্ষার অঙ্গীকার পরীক্ষা করে। তিনি ড. মুহাম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারকে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা রক্ষা এবং সংবিধান ও আইসিসিপিআরের ন্যায্য বিচারের প্রতিশ্রুতি বজায় রাখার আহ্বান জানান।
শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর মৃত্যুদণ্ড নিয়ে বিতর্ক
২০২৫ সালের ১৭ নভেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে ২০২৪ সালের ছাত্র আন্দোলনে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে মৃত্যুদণ্ড দেয়। আইবিএএইচআরআই বলছে, গুরুতর অভিযোগের বিচার জরুরি হলেও আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখে তা করতে হবে, এবং তারা সব পরিস্থিতিতে মৃত্যুদণ্ডের বিরোধিতা করে।

টিউলিপ সিদ্দিকের অভিযোগপত্রের অনিয়ম
টিউলিপ সিদ্দিক ও তার কয়েকজন স্বজনের বিরুদ্ধে জমির বরাদ্দ সংক্রান্ত দুর্নীতির অভিযোগ আনা হয়। তিনি জানান, তাকে কখনো আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযোগ জানানো হয়নি। তার নির্বাচিত আইনজীবীও হয়রানি, হুমকি এবং গৃহবন্দি অবস্থায় চলাচলে বাধার অভিযোগ করেছেন।
ব্রিটিশ আইনজীবীদের উদ্বেগ
একদল ব্রিটিশ সিনিয়র আইনজীবী যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশের হাইকমিশনারকে চিঠি দিয়ে বিচার প্রক্রিয়াকে কৃত্রিম, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও অন্যায্য বলে মন্তব্য করেন।
জাতিসংঘে জরুরি আপিল
শেখ হাসিনার পক্ষে আন্তর্জাতিক আইনজীবীরা জাতিসংঘে জরুরি আপিল দায়ের করে জানান, তাকে অভিযোগের বিষয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক নোটিশ দেওয়া হয়নি। নিজের পছন্দের আইনজীবী নেওয়ার অধিকার অস্বীকার করা হয়েছে, এবং রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবীর সঙ্গে তার কোনো যোগাযোগ হয়নি। তারা বলেন, আন্তর্জাতিক মান পূরণ না করে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হলে তা সংক্ষিপ্ত বিচার বা summary execution হিসেবে বিবেচিত হবে এবং আইসিসিপিআর-এর ৬ নম্বর অনুচ্ছেদের লঙ্ঘন হবে।
২০২৪ সালের আন্দোলন ও বর্তমান পরিস্থিতি
২০২৪ সালের ছাত্র আন্দোলনে পুলিশের অতিরিক্ত বলপ্রয়োগে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে, এবং জাতিসংঘের প্রতিবেদন অনুযায়ী এতে ১,৪০০ জনের বেশি মানুষ নিহত হয়। পরবর্তীতে আওয়ামী লীগ সরকার পতন ও শেখ হাসিনার দেশত্যাগ ঘটে। ড. ইউনুসের নেতৃত্বে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকার আইনের শাসন ও মানবাধিকার পুনরুদ্ধারের আশা তৈরি করলেও সাম্প্রতিক বিচারগুলো আন্তর্জাতিক মানদণ্ড পূরণ করছে না—এমন সমালোচনা বাড়ছে। এতে বিচারব্যবস্থা রাজনৈতিক প্রতিশোধের হাতিয়ারে পরিণত হওয়ার ঝুঁকি বাড়ছে।

ন্যায্য বিচারের অভাবে দায়বদ্ধতা অসম্ভব
আইবিএএইচআরআই বলছে, ন্যায্য বিচার ছাড়া কোনো দায়বদ্ধতা প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়। তারা আইসিসিপিআরের ১৪ নম্বর অনুচ্ছেদ মেনে চলার আহ্বান জানায়, যেখানে স্বাধীন ও নিরপেক্ষ আদালতে ন্যায্য বিচারের অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে।
আইনজীবীর স্বাধীনতা ও জাতিসংঘের নীতি
জাতিসংঘের বিচার বিভাগের স্বাধীনতা সংক্রান্ত মৌলিক নীতিমালা অনুযায়ী, প্রত্যেক ব্যক্তি নিজের পছন্দের আইনজীবীর সহায়তা পাওয়ার অধিকারী। একই সঙ্গে আইনজীবীরা যেন ভয়ভীতি বা বাধা ছাড়া স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারেন, তা নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব।
আইনজীবী হয়রানি নিয়ে উদ্বেগ
আইবিএএইচআরআই-এর সহ-সভাপতি মার্ক স্টিফেনস সিবিই বলেন, টিউলিপ সিদ্দিকের আইনজীবীর বিরুদ্ধে হয়রানি ন্যায়বিচারের ভিত্তিকে ক্ষতিগ্রস্ত করে এবং আইনের শাসনকে দুর্বল করে। রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার অপব্যবহার বন্ধ করা এবং আইনজীবীদের নিরাপদ, স্বাধীন পরিবেশ নিশ্চিত করার ওপর তিনি জোর দেন। তিনি মৃত্যুদণ্ড স্থগিত, স্থায়ী মোরাটোরিয়াম আর শেষ পর্যন্ত বিলুপ্তির আহ্বান জানান।
মৃত্যুদণ্ড নিয়ে আইবিএএইচআরআই-এর অবস্থান
আইবিএএইচআরআই সব পরিস্থিতিতে মৃত্যুদণ্ডের কঠোর বিরোধিতা পুনর্ব্যক্ত করেছে।
#Hasina #TulipSiddiq #Bangladesh #JusticeCrisis #IBAHRI #YunusGovernment
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















