ঢাকা–চট্টগ্রাম মহাসড়কে দুই স্বর্ণ ব্যবসায়ীকে হ্যান্ডকাফ পরিয়ে তুলে নেওয়ার পর ৩ কোটি টাকার স্বর্ণ লুটের ঘটনায় এক এসআই, এক টিভি সাংবাদিক ও কৃষক লীগের এক নেতাসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে মুন্সিগঞ্জ ডিবি পুলিশ।
মুন্সিগঞ্জের গজারিয়ায় মহাসড়কে সংঘটিত এই পরিকল্পিত ডাকাতির ঘটনায় প্রযুক্তির সহায়তায় একে একে ধরা পড়ে সংঘবদ্ধ চক্রটি। পুলিশের হাতেই পুলিশ পরিচয়ে সংঘটিত লুটের ঘটনায় নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
ঘটনার বিবরণ
৭ ডিসেম্বর ঢাকা থেকে চট্টগ্রামগামী বাসে দুই স্বর্ণ ব্যবসায়ী যাত্রা করছিলেন। গজারিয়ায় পৌঁছালে পুলিশের পোশাক পরা একটি দল বাস থামিয়ে নিজেদের পুলিশ পরিচয় দেয়। পরে দুই ব্যবসায়ীকে বাস থেকে নামিয়ে হ্যান্ডকাফ পরিয়ে একটি মাইক্রোবাসে তোলে।
শারীরিক নির্যাতনের পর ডাকাত চক্রটি তাদের কাছ থেকে ১৪৫ ভরি স্বর্ণালঙ্কার, দুটি মোবাইল ফোন, নগদ অর্থ, দুটি এটিএম কার্ড এবং জাতীয় পরিচয়পত্র ছিনিয়ে নেয়। পরে গাজীপুরের কালীগঞ্জ এলাকায় তাদের বেঁধে ফেলে পালিয়ে যায়।
এক ভরি ২২ ক্যারেট স্বর্ণের দাম ২ লাখ ১০ হাজার টাকার বেশি হওয়ায় লুট হওয়া স্বর্ণের মোট মূল্য দাঁড়ায় প্রায় ৩ কোটি টাকা।

গ্রেপ্তার অভিযান ও উদ্ধারকৃত সম্পদ
মুন্সিগঞ্জ ডিবি পুলিশের তৎপরতায় মঙ্গলবার থেকে বুধবার পর্যন্ত পাঁচজনকে বিভিন্ন স্থান থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় উদ্ধার করা হয় প্রায় ৯৫ ভরি স্বর্ণ, ১৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা, একটি মাইক্রোবাস, পুলিশ পোশাক, হ্যান্ডকাফ এবং ওয়াকিটকি।
প্রথমে মাইক্রোবাসচালক জাকির হোসেনকে ঢাকার কাফরুল থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার কাছ থেকে উদ্ধার হয় ১০ ভরি স্বর্ণ ও ৭ লাখ টাকা। একই ভবনের তৃতীয় তলা থেকে গ্রেপ্তার করা হয় সাবইনস্পেক্টর আকতারুজ্জামান মুনশিকে। তার কাছ থেকে পাওয়া যায় ৪৩ ভরি স্বর্ণ, হ্যান্ডকাফ, ওয়াকিটকি ও তিন সেট পুলিশ ইউনিফর্ম।
তাদের তথ্যের ভিত্তিতে মিরপুর–শাহ আলী এলাকা থেকে রমজান নামে আরেক সন্দেহভাজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার কাছ থেকে উদ্ধার হয় ২০ ভরি স্বর্ণ, স্বর্ণ মাপার দাঁড়িপাল্লা, একটি আইডি কার্ড এবং ৫ লাখ টাকা। মানিকগঞ্জের হরিরামপুর থেকে গ্রেপ্তার করা হয় রমজান আলীকে, যার কাছ থেকে পাওয়া যায় ১৩ ভরি স্বর্ণ ও ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা।
সংশ্লিষ্টদের পরিচয়
পুলিশ জানায়, চক্রের এক সদস্য লুট হওয়া স্বর্ণের একটি অংশ ইতোমধ্যে বিক্রি করেছে মিরপুরের ইসলাম জুয়েলার্সে। দোকানের মালিক ইসমাইল হোসেনকেও গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
গ্রেপ্তার সাবইনস্পেক্টর আকতারুজ্জামান কর্মরত ছিলেন ঢাকার মহানগর পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চে (এসবি)। আর রমজান ছিলেন ব্যক্তিগত টেলিভিশন চ্যানেল ‘মাই টিভি’র প্রতিবেদক। অপর রমজান আলী মানিকগঞ্জ জেলা কৃষক লীগের একজন নেতা।
পরবর্তী পদক্ষেপ
মুন্সিগঞ্জের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মেনহাজুল আলম জানান, চক্রের আরও একজন পলাতক সদস্যকে ধরতে অভিযান চলছে। লুট হওয়া বাকি স্বর্ণ উদ্ধারে তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে।
#MunshiganjRobbery #GoldHeist #PoliceArrest
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















