মৃত ও দণ্ডিত যৌন অপরাধী জেফ্রি এপস্টেইনের সম্পত্তি থেকে পাওয়া বিপুলসংখ্যক ছবিতে যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান ও সাবেক শীর্ষ নেতা, প্রযুক্তি ও অর্থনীতির প্রভাবশালী ব্যক্তিদের উপস্থিতি নতুন করে বিতর্ক উসকে দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের হাউস ওভারসাইট অ্যান্ড গভর্নমেন্ট রিফর্ম কমিটির ডেমোক্র্যাট সদস্যরা এসব ছবি প্রকাশ করেছেন।
এপস্টেইনের ছবি ও কংগ্রেসের প্রকাশ
হাউস ওভারসাইট কমিটির হাতে এপস্টেইনের সম্পত্তি থেকে পাওয়া প্রায় ৯৫ হাজার ছবি এসেছে। চলমান তদন্তের অংশ হিসেবে শুক্রবার এসব ছবির একটি অংশ প্রকাশ করা হয়। ছবিগুলোতে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, সাবেক প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন, মাইক্রোসফটের সহপ্রতিষ্ঠাতা বিল গেটস এবং সাবেক ট্রেজারি সেক্রেটারি ল্যারি সামার্সসহ বহু প্রভাবশালী ব্যক্তিকে দেখা যায়।
ডেমোক্র্যাটদের বক্তব্য
কমিটির শীর্ষ ডেমোক্র্যাট সদস্য ক্যালিফোর্নিয়ার প্রতিনিধি রবার্ট গার্সিয়া বলেন, এপস্টেইন ও তার ক্ষমতাধর বন্ধুদের বিষয়ে সত্য প্রকাশ এবং ভুক্তভোগীদের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার সময় এসেছে। তার ভাষায়, এসব ছবি এপস্টেইনের সঙ্গে বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী কিছু মানুষের সম্পর্ক নিয়ে আরও গুরুতর প্রশ্ন তুলেছে। তিনি বিচার বিভাগকে দ্রুত সব নথি প্রকাশের আহ্বান জানান।
ট্রাম্পের প্রতিক্রিয়া
ছবি প্রকাশের বিষয়ে জানতে চাইলে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেন, তিনি এসব ছবি দেখেননি। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, এপস্টেইনের সঙ্গে ছবি আছে—এমন মানুষের সংখ্যা শত শত, তাই বিষয়টিকে তিনি গুরুত্ব দিচ্ছেন না এবং এ বিষয়ে তার কোনো জ্ঞান নেই।
হোয়াইট হাউসের অভিযোগ
হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র অ্যাবিগেইল জ্যাকসন অভিযোগ করেন, ডেমোক্র্যাটরা বাছাই করা ছবি প্রকাশ করে বিভ্রান্তিকর বয়ান তৈরি করছে। তার দাবি, ট্রাম্প প্রশাসন এপস্টেইনের ভুক্তভোগীদের জন্য ডেমোক্র্যাটদের চেয়ে বেশি স্বচ্ছতা নিশ্চিত করেছে এবং হাজার হাজার নথি প্রকাশ করেছে। তিনি আরও বলেন, ডেমোক্র্যাটদের উচিত ব্যাখ্যা দেওয়া কেন তারা এপস্টেইনের দণ্ডের পরও তার সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছিলেন।

ডেমোক্র্যাট নেতাদের জবাব
হাউস মাইনরিটি লিডার হাকিম জেফরিসের মুখপাত্র জানান, জেফরিস কোনো ইমেইল যোগাযোগ বা অনুদানের বিষয়ে জানতেন না। ভার্জিন আইল্যান্ডসের ডেমোক্র্যাট প্রতিনিধি স্টেসি প্লাসকেটের পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিক কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
ছবির বিবরণ ও বিতর্ক
প্রকাশিত ছবিগুলোর মধ্যে একটিতে ট্রাম্পকে এক তরুণীর পাশে দাঁড়িয়ে দেখা যায়, যার মুখ আড়াল করা। আরেকটিতে ট্রাম্প ও এপস্টেইনকে এক নারীর সঙ্গে আলাপ করতে দেখা যায়। আরেকটি ছবিতে ট্রাম্পকে একাধিক নারীর সঙ্গে হাস্যোজ্জ্বল অবস্থায় দেখা যায়, যেখানে নারীদের মুখ গোপন করা। এমনকি ‘ট্রাম্প কনডম’ নামে একটি পণ্যের ছবিও রয়েছে, যা এপস্টেইনের সংগ্রহে ছিল।
ক্লিনটন ও গিসলেন ম্যাক্সওয়েল
একটি স্বাক্ষরিত ছবিতে বিল ক্লিনটনকে এপস্টেইন ও তার সহযোগী গিসলেন ম্যাক্সওয়েলের সঙ্গে দেখা যায়। ম্যাক্সওয়েল বর্তমানে যৌন পাচার মামলায় ২০ বছরের সাজা ভোগ করছেন। ক্লিনটনের সঙ্গে এপস্টেইনের সম্পর্ক আগেই আলোচিত হলেও ক্লিনটন দাবি করেছেন, তিনি ২০১৯ সালের গ্রেপ্তারের আগেই এপস্টেইনের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেছিলেন এবং অপরাধ সম্পর্কে জানতেন না।
গেটস, সামার্স ও অন্যান্যরা
বিল গেটসকে প্রিন্স অ্যান্ড্রুর সঙ্গে হাস্যোজ্জ্বল অবস্থায় একটি ছবিতে দেখা যায়, যা আগে প্রকাশিত হয়েছিল। ল্যারি সামার্সকে একটি ছোট বিমানে দেখা যায়। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসিডেন্ট থাকার সময় এপস্টেইনের সঙ্গে তার সম্পর্ক গড়ে ওঠে, যা পরবর্তীতে তার পেশাগত জীবনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। সামার্স স্বীকার করেছেন, এপস্টেইনের সঙ্গে যোগাযোগ চালিয়ে যাওয়া ছিল তার ভুল সিদ্ধান্ত।
স্টিভ ব্যানন ও উডি অ্যালেন
ছবিতে ট্রাম্পের সাবেক কৌশলবিদ স্টিভ ব্যাননকে এপস্টেইনের সঙ্গে কথা বলতে ও সেলফি তুলতে দেখা যায়। আরেক ছবিতে ব্যানন ও চলচ্চিত্র নির্মাতা উডি অ্যালেনকে একসঙ্গে আলাপ করতে দেখা যায়। অ্যালেন বলেছেন, তিনি এপস্টেইনের নৈশভোজে অংশ নিলেও কখনো তাকে অপ্রাপ্তবয়স্কদের সঙ্গে দেখেননি।

বিচার বিভাগ ও ভবিষ্যৎ পদক্ষেপ
কংগ্রেসে পাস হওয়া আইনের আওতায় বিচার বিভাগকে আগামী ১৯ ডিসেম্বরের মধ্যে এপস্টেইন–সংক্রান্ত সব নথি প্রকাশ করতে হবে। আদালতের অনুমতির পর গ্র্যান্ড জুরি নথিসহ অন্যান্য দলিল প্রকাশের প্রক্রিয়া শেষ পর্যায়ে রয়েছে। এদিকে বিল ক্লিনটনকে ওভারসাইট কমিটি তলব করলেও সাক্ষ্যগ্রহণের তারিখ এখনো নির্ধারিত হয়নি।
ছবি প্রকাশ নিয়ে রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব
রিপাবলিকান সদস্যরা অভিযোগ করেছেন, ডেমোক্র্যাটরা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে অল্প কিছু ছবি প্রকাশ করে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছেন। তাদের দাবি, প্রাপ্ত নথিতে কোনো বেআইনি কাজের প্রমাণ নেই। ডেমোক্র্যাটরা পাল্টা বলেন, প্রশাসনের জবাবদিহি নিশ্চিত করতেই তারা এসব তথ্য জনসমক্ষে আনছেন।
আগামী প্রকাশনা
গার্সিয়া জানিয়েছেন, এখনো খুব অল্পসংখ্যক ছবি পর্যালোচনা করা হয়েছে। ভুক্তভোগীদের পরিচয় সুরক্ষিত রেখে বাকি ছবিগুলো আগামী দিন ও সপ্তাহগুলোতে ধাপে ধাপে প্রকাশ করা হবে।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















