বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান সতর্ক করে বলেছেন, দেশের একটি রাজনৈতিক গোষ্ঠী আবারও ফ্যাসিবাদী শক্তিকে পুনর্বাসনের চেষ্টা করছে এবং বাংলাদেশকে একটি পচে যাওয়া অতীতে ঠেলে দিতে চায়। তিনি স্পষ্ট করে বলেন, এই প্রবণতা থেকে সরে এসে সংশোধন না হলে জাতি কাউকেই ক্ষমা করবে না।
জাতীয় প্রেস ক্লাবে আয়োজিত আলোচনা সভায় বক্তব্য
সোমবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আয়োজনে এক আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন ডা. শফিকুর রহমান। তিনি বলেন, যাদের ভূমিকা ফ্যাসিবাদের সঙ্গে যুক্ত, তারা এতদিন ছদ্মবেশে ছিল, কিন্তু এখন তাদের প্রকৃত চেহারা প্রকাশ হয়ে গেছে।
তিনি ফ্যাসিবাদের সহযোগীদের উদ্দেশে অনুতাপ ও ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, অন্যায় পথ থেকে ফিরে না এলে জাতি তাদের ক্ষমা করবে না।
শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা ও দমন-পীড়নের অভিযোগ
ডা. শফিকুর রহমান একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানান এবং যাকে তিনি সাড়ে পনেরো বছরের ফ্যাসিবাদী শাসনকাল বলেছেন, সেই সময়ে নিহত ও নির্যাতিতদের কথা তুলে ধরেন। তার ভাষায়, রাজনৈতিক দল, আলেম সমাজ, সুশীল সমাজ ও সাংবাদিকরা সবাই হত্যাকাণ্ড, গুম ও নিপীড়নের শিকার হয়েছেন।
তিনি ২৪ জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থানের প্রসঙ্গ টেনে বলেন, শহীদের প্রকৃত সংখ্যা এখনো অজানা এবং প্রকাশিত সংখ্যার চেয়েও তা বেশি হতে পারে।
শরিফ ওসমান হাদীর অবস্থা ও সরকারের ভূমিকা
ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদীর শারীরিক অবস্থার কথা উল্লেখ করে জামায়াত আমির গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন। গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত হাদীকে চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরে নেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, আমরা দোয়া করি, আল্লাহ যেন তাকে আমাদের মাঝে সুস্থ করে ফিরিয়ে দেন।
সরকারের নেওয়া পদক্ষেপের কথা স্বীকার করলেও তিনি বলেন, জীবন সংকটের মুখে পড়ার পর নয়, আগেই এমন দায়িত্বশীল ভূমিকা থাকা উচিত।
নির্বাচন কমিশন নিয়ে মন্তব্য
প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সাম্প্রতিক এক মন্তব্যে জনমনে আঘাত লেগেছে বলে মন্তব্য করেন ডা. শফিকুর রহমান। তিনি নির্বাচন কমিশনারকে তার বক্তব্য স্পষ্ট করার এবং নিরপেক্ষতা প্রমাণের আহ্বান জানান, কারণ জাতি সেই বক্তব্য ইতিবাচকভাবে নেয়নি।
তিনি আরও বলেন, মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে, যাতে ভবিষ্যতে কেউ এ ধরনের দুঃসাহস দেখাতে না পারে।
পদত্যাগ নয়, দায়িত্ব পালনের আহ্বান
কিছু মহলের পদত্যাগ দাবির বিষয়ে তিনি বলেন, শুধু পদ ছাড়াই সমাধান নয়। দায়িত্ব পালনের মাধ্যমেই যোগ্যতা প্রমাণ করতে হবে। ব্যর্থ হলে নতুন করে অস্থিরতা তৈরি হতে পারে, যা জামায়াত চায় না বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
একটি মানবিক ও দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশের আহ্বান
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, জামায়াত এমন একটি বাংলাদেশ চায় যেখানে বিভাজন নয় ঐক্য, সহিংসতা নয় ভালোবাসা, দুর্নীতি নয় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি, সবার জন্য ন্যায়বিচার এবং কালো টাকার বদলে মানুষের হাতে কাজ থাকবে।
তিনি জানান, তিনটি বিষয়ে একমত হলেই জামায়াত সব শক্তির সঙ্গে কাজ করতে প্রস্তুত। সেগুলো হলো দুর্নীতির বিরুদ্ধে শূন্য সহনশীলতা, রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত স্বাধীন বিচারব্যবস্থা এবং গৃহীত সংস্কার প্রস্তাবের আন্তরিক বাস্তবায়ন।
একাত্তর ও ২০২৪-এর প্রতি সম্মান
তিনি বলেন, একাত্তর ও ২০২৪—উভয়ের অবদানকে সম্মান করতে হবে। কারও ভূমিকা অস্বীকার করলে তা দেশের ভবিষ্যতের জন্য ক্ষতিকর হবে। তার ভাষায়, ২৪ জুলাই শুধু ইতিহাস নয়, এটি আমাদের অস্তিত্বের অংশ।
সাংবাদিকদের প্রতি আহ্বান
সাংবাদিকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, সংবাদ পরিবেশনে পূর্ণাঙ্গ ও সঠিক তথ্য তুলে ধরতে হবে। বাছাইকৃত উদ্ধৃতি দিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত না করার আহ্বান জানান তিনি।
একই সঙ্গে সত্য ও জাতীয় স্বার্থের ভিত্তিতে ন্যায্য সমালোচনাসহ দায়িত্বশীল ও স্বাধীন গণমাধ্যমের প্রতি জামায়াতের সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেন তিনি।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন জামায়াতের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আমির মোহাম্মদ নুরুল ইসলাম বুলবুল।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 


















