০৩:৩৭ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫
ভেনেজুয়েলার তেলের বিপুল ভান্ডার থাকলেও বাস্তব উৎপাদন থেকে যাবে কাগজে-কলমেই রঙে রঙে নির্বাসন ও স্বীকৃতি: কাতারে এম এফ হুসেইনের নিজের জাদুঘর কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার হাত ধরে বাইবেলের বৈশ্বিক যাত্রা, লক্ষ্য দুই হাজার তেত্রিশ ক্যানসারের পথ ধরেই আলঝেইমারের নতুন চিকিৎসা দিগন্ত নাইরোবির শহরের পাশে বুনো আফ্রিকা: এক দিনে সাফারির অবিস্মরণীয় অভিজ্ঞতা যশোরে প্রকাশ্যে ছুরিকাঘাতে যুবক নিহত ঝালকাঠিতে হাদির গ্রামের বাড়িতে লুটপাট ‘হাদির ওপর হামলাকারী শিবিরের লোক’—রিজভীর বক্তব্য ভিত্তিহীন: ডিএমপি কমিশনার ইসরায়েলমুখী বিশাল ইভানজেলিকাল মিশন: ট্রাম্প প্রশাসনের উদ্দেশে স্পষ্ট বার্তা হাদির ওপর হামলা বৃহত্তর ষড়যন্ত্রের অংশ: মির্জা আব্বাস

রঙে রঙে নির্বাসন ও স্বীকৃতি: কাতারে এম এফ হুসেইনের নিজের জাদুঘর

ভারতের আধুনিক শিল্পের সবচেয়ে পরিচিত নাম এম এফ হুসেইন। মৃত্যুর চৌদ্দ বছর পরেও তিনি আবার শিরোনামে। এ বছর নিলামে তাঁর একটি চিত্রকর্ম বিক্রি হয়েছে প্রায় এক কোটি আটত্রিশ লাখ ডলারে, যা ভারতীয় কোনো শিল্পীর জন্য সর্বোচ্চ মূল্য। সেই সাফল্যের সঙ্গে যুক্ত হলো আরেকটি ঐতিহাসিক অধ্যায়। কাতারের দোহায় খুলে গেল লওহ ওয়া কলম নামের জাদুঘর, যা ভারতের বাইরে কোনো একক ভারতীয় শিল্পীকে ঘিরে গড়ে ওঠা প্রথম জাদুঘর।

কেন কাতার, কেন ভারত নয়
প্রশ্ন ওঠে, জন্মভূমি মহারাষ্ট্রের পাণ্ডারপুর নয়, হুসেইনের জাদুঘর কেন কাতারে। উত্তর লুকিয়ে আছে তাঁর জীবনের সবচেয়ে বেদনাদায়ক অধ্যায়ে। মুসলিম পরিচয়ের হুসেইন হিন্দু দেবীদের নগ্ন রূপে আঁকার অভিযোগে হিন্দু জাতীয়তাবাদীদের রোষের মুখে পড়েন। দুই হাজার দশকের মাঝামাঝি সময়ে পরিস্থিতি হয়ে ওঠে অসহনীয়। প্রাণনাশের হুমকি, শিল্পকর্ম ভাঙচুর, বাড়িতে হামলা এবং প্রায় নয়শোর মতো মামলা। দুই হাজার ছয়ে তিনি ভারত ছাড়েন, আর কখনো ফিরে যাননি।

India's best-known artist gets his own museum—in Qatar

নাগরিকত্ব বদল, পরিচয়ের দ্বন্দ্ব
দুবাই, দোহা ও লন্ডনের মধ্যে ঘুরে ঘুরে কাটে তাঁর শেষ জীবন। দুই হাজার দশে কাতার তাঁকে নাগরিকত্ব দেয়। দ্বৈত নাগরিকত্বের সুযোগ না থাকায় গভীর বেদনায় ভারতীয় নাগরিকত্ব ত্যাগ করেন তিনি। তখন থেকেই তিনি পরিচিত হন ভারতীয় বংশোদ্ভূত কাতারি চিত্রশিল্পী হিসেবে।

MF Husain was forced into exile; now his work finds permanent home in Qatar  | Arts and Culture | Al Jazeera

তারকা শিল্পীর উত্থান
নিলাম প্রতিষ্ঠান ক্রিস্টিসের সোনাল সিংয়ের মতে, হুসেইন ছিলেন ভারতের প্রথম তারকা শিল্পীদের একজন। মুম্বাইয়ের ফুটপাতে রাত কাটানো, সিনেমার পোস্টার আঁকা থেকে শুরু করে আন্তর্জাতিক খ্যাতি—নিজেকে দৃশ্যমান করতে তিনি সচেতন প্রচেষ্টা নিয়েছিলেন। সেই প্রচেষ্টাই তাঁকে ভারতীয় শিল্পের মুখপাত্রে পরিণত করে।

Qatar honours MF Husain with museum | Why the painter left India & artists  who faced similar criticism | Bhaskar English

চিত্রের বিশাল জগৎ
জীবনে প্রায় চল্লিশ হাজার শিল্পকর্ম তৈরি করেছেন হুসেইন। ছোট স্কেচ থেকে শুরু করে বিশাল বহুপ্যানেলের চিত্রকর্ম। সাধারণ মানুষের চোখে তিনি ঘোড়া, দৈনন্দিন জীবন আর দেবীদের চিত্রকর হলেও তাঁর পরিসর ছিল অনেক বিস্তৃত। নতুন জাদুঘরে মাত্র দেড় শতাধিক কাজ প্রদর্শিত হলেও বিমূর্ত শিল্প, ভারতীয় মনীষীদের প্রতিকৃতি এবং ব্রিটিশ শাসনবিরোধী আন্দোলন নিয়ে একশো ফুট দীর্ঘ চিত্রের অংশ সেখানে জায়গা পেয়েছে।

India's best-known artist gets his own museum—in Qatar

রং বদলেছে, বিষয় বদলেছে
কাতারে এসে ঘোড়ার বদলে তাঁর ক্যানভাসে আসে উট। আরব সভ্যতা নিয়ে নিরানব্বইটি চিত্র আঁকার দায়িত্ব পান তিনি। পৃষ্ঠপোষক ছিলেন শেখা মোজা বিনতে নাসের আল মিসনেদ। মৃত্যুর আগে তিনি এর মধ্যে পঁয়ত্রিশটি সম্পন্ন করেন। জাদুঘরের উদ্বোধনে শেখা মোজা হুসেইনকে ভারতীয় ও আরব—দুটি পরিচয়ের সমন্বয় হিসেবে তুলে ধরেন।

MF Husain was forced into exile; now his work finds permanent home in Qatar  | Arts and Culture | Al Jazeera

অনুপস্থিত বিতর্ক, উপস্থিত ইতিহাস
যে চিত্রগুলো তাঁকে বিতর্কের কেন্দ্রে এনেছিল, সেগুলো জাদুঘরে নেই। এই অনুপস্থিতি যেমন চোখে পড়ে, তেমনি মনে করিয়ে দেয়—এই বিতর্কই তাঁকে ইতিহাসে স্থায়ী করেছে। যদি তিনি ভারত ছাড়তে না বাধ্য হতেন, হয়তো এই জাদুঘরই তৈরি হতো না।

আরব সাগরের সেতু
জাদুঘরের কিউরেটর নুফ মোহাম্মদের ভাষায়, এই প্রতিষ্ঠান কাতার ও দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে এক সাংস্কৃতিক সেতু। হুসেইন নিজে বলেছিলেন, তিনি কোথাও পুরোপুরি অন্তর্ভুক্ত নন। তবু সত্য হলো, তাঁর শিল্প সবার।

জনপ্রিয় সংবাদ

ভেনেজুয়েলার তেলের বিপুল ভান্ডার থাকলেও বাস্তব উৎপাদন থেকে যাবে কাগজে-কলমেই

রঙে রঙে নির্বাসন ও স্বীকৃতি: কাতারে এম এফ হুসেইনের নিজের জাদুঘর

০১:০০:২৩ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫

ভারতের আধুনিক শিল্পের সবচেয়ে পরিচিত নাম এম এফ হুসেইন। মৃত্যুর চৌদ্দ বছর পরেও তিনি আবার শিরোনামে। এ বছর নিলামে তাঁর একটি চিত্রকর্ম বিক্রি হয়েছে প্রায় এক কোটি আটত্রিশ লাখ ডলারে, যা ভারতীয় কোনো শিল্পীর জন্য সর্বোচ্চ মূল্য। সেই সাফল্যের সঙ্গে যুক্ত হলো আরেকটি ঐতিহাসিক অধ্যায়। কাতারের দোহায় খুলে গেল লওহ ওয়া কলম নামের জাদুঘর, যা ভারতের বাইরে কোনো একক ভারতীয় শিল্পীকে ঘিরে গড়ে ওঠা প্রথম জাদুঘর।

কেন কাতার, কেন ভারত নয়
প্রশ্ন ওঠে, জন্মভূমি মহারাষ্ট্রের পাণ্ডারপুর নয়, হুসেইনের জাদুঘর কেন কাতারে। উত্তর লুকিয়ে আছে তাঁর জীবনের সবচেয়ে বেদনাদায়ক অধ্যায়ে। মুসলিম পরিচয়ের হুসেইন হিন্দু দেবীদের নগ্ন রূপে আঁকার অভিযোগে হিন্দু জাতীয়তাবাদীদের রোষের মুখে পড়েন। দুই হাজার দশকের মাঝামাঝি সময়ে পরিস্থিতি হয়ে ওঠে অসহনীয়। প্রাণনাশের হুমকি, শিল্পকর্ম ভাঙচুর, বাড়িতে হামলা এবং প্রায় নয়শোর মতো মামলা। দুই হাজার ছয়ে তিনি ভারত ছাড়েন, আর কখনো ফিরে যাননি।

India's best-known artist gets his own museum—in Qatar

নাগরিকত্ব বদল, পরিচয়ের দ্বন্দ্ব
দুবাই, দোহা ও লন্ডনের মধ্যে ঘুরে ঘুরে কাটে তাঁর শেষ জীবন। দুই হাজার দশে কাতার তাঁকে নাগরিকত্ব দেয়। দ্বৈত নাগরিকত্বের সুযোগ না থাকায় গভীর বেদনায় ভারতীয় নাগরিকত্ব ত্যাগ করেন তিনি। তখন থেকেই তিনি পরিচিত হন ভারতীয় বংশোদ্ভূত কাতারি চিত্রশিল্পী হিসেবে।

MF Husain was forced into exile; now his work finds permanent home in Qatar  | Arts and Culture | Al Jazeera

তারকা শিল্পীর উত্থান
নিলাম প্রতিষ্ঠান ক্রিস্টিসের সোনাল সিংয়ের মতে, হুসেইন ছিলেন ভারতের প্রথম তারকা শিল্পীদের একজন। মুম্বাইয়ের ফুটপাতে রাত কাটানো, সিনেমার পোস্টার আঁকা থেকে শুরু করে আন্তর্জাতিক খ্যাতি—নিজেকে দৃশ্যমান করতে তিনি সচেতন প্রচেষ্টা নিয়েছিলেন। সেই প্রচেষ্টাই তাঁকে ভারতীয় শিল্পের মুখপাত্রে পরিণত করে।

Qatar honours MF Husain with museum | Why the painter left India & artists  who faced similar criticism | Bhaskar English

চিত্রের বিশাল জগৎ
জীবনে প্রায় চল্লিশ হাজার শিল্পকর্ম তৈরি করেছেন হুসেইন। ছোট স্কেচ থেকে শুরু করে বিশাল বহুপ্যানেলের চিত্রকর্ম। সাধারণ মানুষের চোখে তিনি ঘোড়া, দৈনন্দিন জীবন আর দেবীদের চিত্রকর হলেও তাঁর পরিসর ছিল অনেক বিস্তৃত। নতুন জাদুঘরে মাত্র দেড় শতাধিক কাজ প্রদর্শিত হলেও বিমূর্ত শিল্প, ভারতীয় মনীষীদের প্রতিকৃতি এবং ব্রিটিশ শাসনবিরোধী আন্দোলন নিয়ে একশো ফুট দীর্ঘ চিত্রের অংশ সেখানে জায়গা পেয়েছে।

India's best-known artist gets his own museum—in Qatar

রং বদলেছে, বিষয় বদলেছে
কাতারে এসে ঘোড়ার বদলে তাঁর ক্যানভাসে আসে উট। আরব সভ্যতা নিয়ে নিরানব্বইটি চিত্র আঁকার দায়িত্ব পান তিনি। পৃষ্ঠপোষক ছিলেন শেখা মোজা বিনতে নাসের আল মিসনেদ। মৃত্যুর আগে তিনি এর মধ্যে পঁয়ত্রিশটি সম্পন্ন করেন। জাদুঘরের উদ্বোধনে শেখা মোজা হুসেইনকে ভারতীয় ও আরব—দুটি পরিচয়ের সমন্বয় হিসেবে তুলে ধরেন।

MF Husain was forced into exile; now his work finds permanent home in Qatar  | Arts and Culture | Al Jazeera

অনুপস্থিত বিতর্ক, উপস্থিত ইতিহাস
যে চিত্রগুলো তাঁকে বিতর্কের কেন্দ্রে এনেছিল, সেগুলো জাদুঘরে নেই। এই অনুপস্থিতি যেমন চোখে পড়ে, তেমনি মনে করিয়ে দেয়—এই বিতর্কই তাঁকে ইতিহাসে স্থায়ী করেছে। যদি তিনি ভারত ছাড়তে না বাধ্য হতেন, হয়তো এই জাদুঘরই তৈরি হতো না।

আরব সাগরের সেতু
জাদুঘরের কিউরেটর নুফ মোহাম্মদের ভাষায়, এই প্রতিষ্ঠান কাতার ও দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে এক সাংস্কৃতিক সেতু। হুসেইন নিজে বলেছিলেন, তিনি কোথাও পুরোপুরি অন্তর্ভুক্ত নন। তবু সত্য হলো, তাঁর শিল্প সবার।