দক্ষিণ চীন সাগরের উত্তাল ঢেউ, কুয়াশাচ্ছন্ন আকাশ আর দিকহারা নৌকা—এই প্রতিকূল বাস্তবতার মধ্যেই টানা কয়েক দিন ভেসে ছিলেন ইন্দোনেশিয়ার এক জেলে। শেষ পর্যন্ত অভিজ্ঞতা আর পরিবারের কাছে ফেরার অদম্য ইচ্ছাই তাকে মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরিয়ে আনে।
দিক হারানো সমুদ্রে ভয়ংকর দিন
ইন্দোনেশিয়ার সুবি দ্বীপের বাসিন্দা সাতত্রিশ বছর বয়সী জেলে স্যাহরুদ্দিন গত ত্রিশ নভেম্বর নিয়মিত মাছ ধরার উদ্দেশ্যে ছোট কাঠের নৌকায় সমুদ্রে নামেন। প্রথম কয়েক দিন স্বাভাবিক থাকলেও তৃতীয় দিনের পর থেকেই পরিস্থিতি বদলাতে শুরু করে। প্রবল ঢেউ তার নৌকাকে আছড়ে ফেলতে থাকে। খাবার ও পানি থাকলেও দ্রুত কমতে থাকে জ্বালানি, যা তাকে গভীর দুশ্চিন্তায় ফেলে দেয়।
নষ্ট জিপিএস আর সূর্যের ওপর ভরসা
সমুদ্রে ছয় দিন কাটানোর পর হঠাৎ নষ্ট হয়ে যায় নৌকার দিকনির্দেশনা যন্ত্র। অবস্থান বুঝতে না পেরে তিনি সূর্যের দিকে তাকিয়ে দিক নির্ধারণের চেষ্টা করেন। কিন্তু কুয়াশা আর মেঘে ঢাকা আকাশে সূর্য দেখা যায়নি। তখনই তার মনে পড়ে স্ত্রী ও তিন সন্তানের কথা, যাদের বয়স তিন থেকে বিশ বছরের মধ্যে। জ্বালানি প্রায় শেষ, দিকহারা নৌকা আর অজানা গন্তব্য—সব মিলিয়ে ভয় বাড়তে থাকে।
নব্বই ছয় নটিক্যাল মাইল ভেসে যাওয়া
সুবি দ্বীপ থেকে নৌকাটি ধীরে ধীরে প্রায় ছিয়ানব্বই নটিক্যাল মাইল ভেসে যায় দক্ষিণ চীন সাগর পেরিয়ে মালয়েশিয়ার সারাওয়াক উপকূলে। স্যাহরুদ্দিন জানান, প্রায় দুই দশকের মাছ ধরার অভিজ্ঞতা তাকে মানসিকভাবে শান্ত থাকতে সাহায্য করেছে। শক্ত ঢেউ আর অনিশ্চয়তার মাঝেও বাড়ি ফেরার দৃঢ় সংকল্প তার মনোবল ধরে রেখেছিল।
আলোর দেখা আর নতুন আশ্বাস
দশ দিন সমুদ্রে ভেসে থাকার পর বুধবার রাতে কুচিংয়ের একটি জেটির আলো দেখতে পান তিনি। সেই আলো অনুসরণ করেই তিনি তীরে পৌঁছান। তবে তীরে নেমেও ভয় কাটেনি। তার আশঙ্কা ছিল, তাকে আটক করা হতে পারে কিংবা নৌকা জব্দ হতে পারে। পরে স্থানীয় মানুষ, মালয়েশিয়ার সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এবং ইন্দোনেশীয় কনস্যুলেটের সহায়তায় তিনি নিরাপদ আশ্রয় পান।
সহায়তা আর পরিবারের সঙ্গে কথা
কুচিংয়ে পৌঁছানোর পর তার নৌকায় পাঁচশ লিটার জ্বালানি, খাবার ও পানি দেওয়া হয়, যাতে তিনি ফিরতি যাত্রা করতে পারেন। মালয়েশিয়ার সরকার, সামুদ্রিক নিরাপত্তা সংস্থা, উদ্ধার কেন্দ্র এবং স্থানীয়দের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান ইন্দোনেশিয়ার কনসাল জেনারেল। স্যাহরুদ্দিন ফোনে স্ত্রীকে জানালে পরিবারের দীর্ঘ উৎকণ্ঠার অবসান হয়। পরিবার ভেবেছিল, হয়তো তিনি সমুদ্রে আটক বা নিখোঁজ হয়ে গেছেন।
আজই ফেরার প্রস্তুতি
মেরামত করা দিকনির্দেশনা যন্ত্র নিয়ে স্যাহরুদ্দিন আজই সুবি দ্বীপের পথে রওনা হওয়ার কথা জানিয়েছেন। আবহাওয়া মেঘলা হলেও তার আশা, তিন দিনের মধ্যেই তিনি বাড়িতে পৌঁছাতে পারবেন। সমুদ্রে কাটানো ভয়ংকর দিনগুলোর স্মৃতি নিয়ে এবার তার একমাত্র চাওয়া, নিরাপদে পরিবারের কাছে ফেরা।
#দক্ষিণচীনসাগর #ইন্দোনেশীয়জেলে #সমুদ্রে_উদ্ধার #জীবনসংগ্রাম #মানবিকগল্প #সারাওয়াক #নৌদুর্ঘটনা
সারাক্ষণ রিপোর্ট 


















