আমেরিকায় খেলাধুলা দেখার অভ্যাস বদলে গেছে। মাঠের উত্তেজনার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে মোবাইলের পর্দায় ভেসে ওঠা বাজির হিসাব। কলেজ ক্যাম্পাসগুলো এখন এই নতুন বাস্তবতার সবচেয়ে বড় মঞ্চ। খেলাধুলা আর বিনোদনের মাঝখানে ঢুকে পড়েছে জুয়ার নেশা, যা তরুণদের জীবনধারাকেই নাড়িয়ে দিচ্ছে।
বার থেকে ডরমিটরি, সর্বত্র বাজির টান
রোড আইল্যান্ডের একটি বারে বয়স্ক দর্শকেরা বাস্কেটবল দেখেন আর ফাঁকে ফাঁকে লটারি টিকিট কাটেন। কিন্তু কাছের আরেকটি বারে চিত্র আলাদা। সেখানে তরুণ শিক্ষার্থীদের চোখ টেলিভিশনের চেয়ে বেশি মোবাইল স্ক্রিনে। খেলার ফল নয়, কোন বাজি জিতল বা হারল, সেটাই এখন আলোচনার কেন্দ্র। অনেকেই স্বীকার করছে, তারা ইতিমধ্যেই এই অভ্যাসে আটকে পড়েছে।

আইন বদল, বাজির বিস্ফোরণ
দুই হাজার আঠারো সালে আদালতের রায়ে খেলাধুলায় বাজি বৈধ হওয়ার পর থেকেই যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে এই খাত দ্রুত ফুলে উঠেছে। এখন অধিকাংশ অঙ্গরাজ্যে এটি বৈধ। কলেজ ক্যাম্পাসে এর প্রভাব সবচেয়ে তীব্র, কারণ এখানে তরুণেরা প্রথমবারের মতো পরিবার থেকে দূরে থাকে এবং খেলাধুলা তাদের দৈনন্দিন জীবনের অংশ।
মিডিয়া আর প্রচারের চাপ
খেলাধুলা বিষয়ক অনুষ্ঠানগুলোতেও এখন নিয়মিতভাবে বাজির সম্ভাবনা আর হিসাব ঢুকে পড়ছে। জনপ্রিয় অনুষ্ঠান, অনলাইন প্ল্যাটফর্ম আর প্রভাবশালী ব্যক্তিত্বরা সরাসরি বা পরোক্ষভাবে বাজির প্রচার চালাচ্ছে। এর ফলে তরুণ পুরুষ শিক্ষার্থীরা নিয়মিতভাবে বাজিতে জড়িয়ে পড়ছে, যেখানে নারীদের অংশগ্রহণ তুলনামূলক কম।

নেশার খরচ, বাড়ছে ঝুঁকি
সমীক্ষা বলছে, উল্লেখযোগ্য সংখ্যক তরুণ সমস্যাজনক জুয়ায় জড়িয়ে পড়েছে। অনেকের ক্ষেত্রে বাজির ক্ষতি দৈনন্দিন প্রয়োজন মেটানো, ঘুম কিংবা খাওয়ার ওপর প্রভাব ফেলছে। মানসিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোতে এখন এমন শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়ছে, যারা বাজির কারণে আর্থিক ও মানসিক চাপে ভুগছে।
ছাত্র ক্রীড়াবিদদের ওপর চাপ
কলেজ ক্রীড়াঙ্গন নিজেই বহু বিলিয়ন ডলারের শিল্প। এই খেলাগুলোতেই সবচেয়ে বেশি বাজি ধরা হয়। ফলে খেলোয়াড়রা হারানো বাজির দায়ে গালিগালাজ ও হুমকির শিকার হচ্ছে। কোথাও কোথাও ইচ্ছাকৃতভাবে খারাপ খেলার অভিযোগও উঠেছে, যা পুরো ব্যবস্থার বিশ্বাসযোগ্যতাকে প্রশ্নের মুখে ফেলছে।

নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা, তবু ফাঁক
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলো দেরিতে হলেও নড়েচড়ে বসেছে। বাজি সংস্থার সঙ্গে চুক্তি বাতিল, নজরদারি জোরদার আর নির্দিষ্ট ধরনের বাজি নিষিদ্ধের প্রস্তাব এসেছে। তবু অনলাইন দুনিয়ায় নতুন পথ খুঁজে নিচ্ছে জুয়ার বাজার। তরুণদের কাছে আগামীকাল মানেই আরেকটি বাজির সুযোগ।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















