বুদ্ধিমত্তা মানে কী, তা নিয়ে মানুষের ধারণা বহুদিনের। কিন্তু সাম্প্রতিক এক গবেষণা সেই ধারণাকে নতুন করে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। যেখানে আধুনিক কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা আত্মবিশ্বাসী ভুলে ভর করে, সেখানে শিম্পাঞ্জিরা দেখিয়েছে যুক্তি, প্রমাণ বিচার আর নিজের অজানা সম্পর্কে সচেতন থাকার ক্ষমতা।
বুদ্ধিমত্তা নিয়ে পুরোনো বিভ্রান্তি
আমাদের সমাজে বুদ্ধিমত্তাকে প্রায়ই জন্মগত গুণ হিসেবে দেখা হয়। বেশি বুদ্ধিমান মানেই ভালো শিক্ষা, ভালো কাজ, বেশি মর্যাদা। প্রযুক্তি দুনিয়ায়ও একই ধারণা কাজ করে। মানুষ ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার তুলনা নিয়ে বাড়ছে উত্তেজনা। কেউ কেউ আশঙ্কা করছেন, একদিন যন্ত্র মানুষের ওপর আধিপত্য করবে। কিন্তু আসল প্রশ্ন হলো, বুদ্ধিমত্তা কি সত্যিই একমাত্রিক কিছু।
শিম্পাঞ্জির যুক্তির পরীক্ষা

উগান্ডার একটি সংরক্ষণ কেন্দ্রে উদ্ধার হওয়া শিম্পাঞ্জিদের নিয়ে করা সাম্প্রতিক পরীক্ষায় দেখা গেছে, তারা শুধু শেখে না, প্রমাণের ওজনও বিচার করে। কখনো স্বচ্ছ পাত্রে খাবার দেখিয়ে, কখনো ঝাঁকিয়ে শব্দ শোনার সুযোগ দিয়ে তাদের সিদ্ধান্ত নিতে বলা হয়। নতুন তথ্য এলে তারা আগের ধারণা বদলাতে পিছপা হয়নি। এমনকি ভুল তথ্য দেখানো হলে তারা সেটি বাতিল করে অন্য দুর্বল সূত্র মনে করে সঠিক সিদ্ধান্তে পৌঁছেছে।
নিজের অজানা বোঝার ক্ষমতা
এই আচরণ গবেষকদের কাছে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এখানে শিম্পাঞ্জিরা দেখিয়েছে তারা কি জানে আর কী জানে না, তা বোঝার ক্ষমতা। বিজ্ঞানীরা একে বলেন আত্ম জ্ঞানমূলক চিন্তা। সফল হতে হলে তাদের ভাবতে হয়েছে, কোন তথ্য যথেষ্ট নয় এবং কখন সিদ্ধান্ত বদলানো দরকার।
মানুষের একচেটিয়া যুক্তির ধারণা ভাঙল
দীর্ঘদিন ধরে দর্শনে যুক্তিকে মানুষের একান্ত বৈশিষ্ট্য ধরা হতো। কিন্তু এই গবেষণা দেখাল, বিবর্তনের ধারায় আমাদের নিকটতম আত্মীয়দের মধ্যেও সেই ক্ষমতার শিকড় আছে। এতে বোঝা যায়, যুক্তিবোধ কোনো অলৌকিক দান নয়, বরং প্রকৃতির ধারাবাহিক বিকাশ।

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সীমাবদ্ধতা
একই সময়ে বিজ্ঞানীরা লক্ষ্য করছেন, আধুনিক কথোপকথন ভিত্তিক কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রায়ই নিজের অজানা স্বীকার করতে পারে না। বরং আত্মবিশ্বাসী ভঙ্গিতে ভুল উত্তর দেয়। কারণ তাদের প্রশিক্ষণ এমনভাবে তৈরি, যেখানে অনিশ্চয়তা শাস্তিযোগ্য। ভাষায় দক্ষতা আর বিপুল তথ্যভান্ডার থাকলেও কৌতূহল, সম্ভাব্য যুক্তি আর আত্মসমালোচনার ঘাটতি স্পষ্ট।
বুদ্ধিমত্তা, ক্ষমতা আর ভয়ের সম্পর্ক
মানুষ স্বভাবতই শ্রেণিবিন্যাসপ্রবণ। তাই আমরা বুদ্ধিমত্তাকে ক্ষমতার সঙ্গে মিলিয়ে দেখি। ফলে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এগিয়ে গেলে ভয় পাই, আধিপত্যের আশঙ্কা করি। অথচ ইতিহাস বলে, এই মনোভাবেই আমরা শিম্পাঞ্জির মতো প্রাণীদের প্রায় নিশ্চিহ্ন করে ফেলেছি। যাদের কাছ থেকে নিজেদের সম্পর্কে শেখার ছিল অনেক কিছু।
মূল কথা
বুদ্ধিমত্তা কোনো একক মাপকাঠি নয়। কেউ ভাষায় দক্ষ, কেউ যুক্তিতে, কেউ আবার পরিস্থিতি বোঝায়। শিম্পাঞ্জিরা দেখিয়ে দিল, প্রকৃত বুদ্ধিমত্তা মানে শুধু আত্মবিশ্বাস নয়, বরং প্রমাণ বিচার, সন্দেহ করা আর নিজের সীমা জানা।

সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















