ক্রিপ্টো দুনিয়ার আলোচিত মুখ ডো কওনের আইনি ঝামেলা যে এখানেই শেষ হচ্ছে না, সেই ইঙ্গিতই দিচ্ছে দক্ষিণ কোরিয়ার সর্বশেষ অবস্থান। যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে দীর্ঘ কারাদণ্ড পাওয়ার পরও তাকে কোরিয়ায় ফেরানো হলে আলাদা মামলায় আবার বিচার ও কঠোর শাস্তির মুখে পড়তে হতে পারে বলে জানিয়েছেন সরকারি কর্মকর্তা ও কৌঁসুলিরা।

যুক্তরাষ্ট্রের সাজা ও সম্ভাব্য প্রত্যাবর্তন

টেরা ইউএসডি ও লুনা ধসের কেন্দ্রীয় চরিত্র ডো কওন যুক্তরাষ্ট্রে প্রতারণা ও অর্থ পাচার সহ একাধিক অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হয়ে দীর্ঘমেয়াদি কারাদণ্ড পেয়েছেন। সাজা ভোগের একটি অংশ শেষ হলে আন্তর্জাতিক বন্দি স্থানান্তর কর্মসূচির আওতায় তিনি কোরিয়ায় ফেরার আবেদন করতে পারেন। এতে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে আপত্তি না থাকার শর্ত যুক্ত থাকায় কোরিয়ায় ফেরার সম্ভাবনা উন্মুক্ত থাকছে।

কোরিয়ায় আলাদা মামলা ও কঠোর শাস্তির ঝুঁকি

ডো কওন যদি কোরিয়ায় প্রত্যর্পিত হন, তাহলে পুঁজিবাজার আইনের লঙ্ঘনসহ একাধিক অভিযোগে তাকে নতুন করে বিচারের মুখোমুখি হতে হবে। সিউল দক্ষিণ জেলা প্রসিকিউটরদের যৌথ আর্থিক অপরাধ ইউনিট আগেই তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছিল। কৌঁসুলিদের মতে, কোরিয়ায় দোষী সাব্যস্ত হলে তার শাস্তি ত্রিশ বছরের বেশি কারাদণ্ডেও গড়াতে পারে।

স্থানীয় ভুক্তভোগী ও ক্ষতিপূরণের প্রশ্ন

কোরিয়ায় প্রায় দুই লাখ বিনিয়োগকারী এই ধসে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন বলে কর্তৃপক্ষের হিসাব। ক্ষতির পরিমাণ প্রায় তিনশ বিলিয়ন ওন। কৌঁসুলিদের যুক্তি, দেশীয় বিচার হলে স্থানীয় ভুক্তভোগীদের ক্ষতিপূরণ নিশ্চিত করার পথ আরও শক্ত হবে। এ ঘটনায় ডো কওনের সঙ্গে জড়িত অভিযোগে আরও দশজনের বিচার প্রক্রিয়া কোরিয়ায় দীর্ঘদিন ধরে চলছে।

টেরা লুনা ধসের পটভূমি

সিঙ্গাপুরভিত্তিক টেরা ফর্ম ল্যাবসের সহ প্রতিষ্ঠাতা ডো কওনের তৈরি টেরা ইউএসডি ডলার সমমূল্য ধরে রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। কিন্তু সেই ব্যবস্থার ভিতরেই ছিল বড় ফাঁক। এক পর্যায়ে মূল্য ধরে রাখতে গোপনে বড় অঙ্কের কেনাকাটা করা হয়েছিল বলে তদন্তে উঠে আসে। শেষ পর্যন্ত টেরা ও লুনার বড় পতনে বিশ্ব জুড়ে বিনিয়োগকারীরা বিপুল ক্ষতির মুখে পড়েন।

আইনি লড়াইয়ের দীর্ঘ ছায়া

মন্টিনেগ্রোতে গ্রেপ্তারের পর ডো কওন যুক্তরাষ্ট্রের বদলে কোরিয়ায় প্রত্যর্পণের চেষ্টা করেছিলেন। শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাষ্ট্রে পাঠানো হয় এবং সেখানেই রায় ঘোষণা হয়। এখন সেই রায়ের পরও কোরিয়ায় সম্ভাব্য নতুন বিচার তার ভবিষ্যৎকে আরও অনিশ্চিত করে তুলেছে।