কুমিল্লার বুড়িচংয়ে এক বিএনপি সমর্থককে সরাসরি গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করিয়ে তুলে নেওয়ার হুমকির অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় বিএনপি নেতা আবুল কাশেম মিয়াজীর বিরুদ্ধে। তাঁর সঙ্গে ভুক্তভোগীর কথোপকথনের একটি অডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়তেই জেলাজুড়ে ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয় এবং দলীয় শৃঙ্খলা ও রাজনৈতিক আচরণ নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন ওঠে।
ভাইরাল অডিওতে কী শোনা গেছে
গত শুক্রবার রাতে ৩৫ সেকেন্ডের ওই অডিও রেকর্ডটি ছড়িয়ে পড়ে। অডিওতে সোহেল মিয়াকে মামলা দিয়ে ভয় দেখানো প্রসঙ্গে কথা বলতে শোনা যায়। এর জবাবে আবুল কাশেম মিয়াজী অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে বলেন, তিনি মামলা করেন না, সরাসরি ওয়ারেন্ট করান। একপর্যায়ে সোহেল কোথায় আছেন জানতে চেয়ে তাঁকে ধরে নিয়ে আসার হুমকি দিয়ে ফোনের সংযোগ কেটে দেন বলেও অডিওতে শোনা যায়।
দলীয় অনুসারিতা ও অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব
অভিযুক্ত আবুল কাশেম মিয়াজী বুড়িচং উপজেলার ষোলনল ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক। ভুক্তভোগী সোহেল মিয়া একই এলাকার বাসিন্দা এবং উপজেলা বিএনপির সভাপতি এ টি এম মিজানুর রহমানের অনুসারী হিসেবে পরিচিত। অন্যদিকে আবুল কাশেম মিয়াজী কুমিল্লা-৫ আসনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী হাজী জসীম উদ্দিনের অনুসারী বলে স্থানীয় সূত্র জানিয়েছে। এই ভিন্ন অনুসারিতাকে কেন্দ্র করে এলাকায় আগে থেকেই রাজনৈতিক টানাপোড়েন ছিল বলে জানা গেছে।
দোয়া মাহফিল থেকেই সূত্রপাত
স্থানীয় সূত্র জানায়, সম্প্রতি সোহেল মিয়া তাঁর নিজ বাড়িতে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার রোগমুক্তি কামনায় দোয়া মাহফিলের আয়োজন করেন। সেখানে উপজেলা বিএনপির সভাপতি এ টি এম মিজানুর রহমানের অনুসারীদের দাওয়াত দেওয়া হলেও আবুল কাশেম মিয়াজীকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। এই বিষয়টিকেই ক্ষোভের কারণ হিসেবে দেখছেন স্থানীয় নেতাকর্মীরা।
ভুক্তভোগীর অভিযোগ ও নিরাপত্তাহীনতা
ভুক্তভোগী সোহেল মিয়া বলেন, দোয়া মাহফিলে দাওয়াত না দেওয়ায় তাঁকে ১০ থেকে ১২টি মামলার ভয় দেখানো হয়েছে এবং সরাসরি ওয়ারেন্ট করার পাশাপাশি তুলে নেওয়ার হুমকিও দেওয়া হয়েছে। তিনি জানান, এসব ঘটনার পর থেকে তিনি ও তাঁর পরিবার চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।
অভিযুক্ত নেতার বক্তব্য
অভিযোগ প্রসঙ্গে আবুল কাশেম মিয়াজী বলেন, সোহেল একজন চোর এবং তাঁর সঙ্গে সে অনুযায়ী আচরণ করা হয়েছে। তবে চুরির অভিযোগ বা মামলার কোনো লিখিত প্রমাণ তিনি দেখাতে পারেননি।
দলীয় অবস্থান ও সম্ভাব্য ব্যবস্থা
এ বিষয়ে বুড়িচং উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কবির হোসেন জানান, তিনি অডিও রেকর্ডটি শুনেছেন এবং ঘটনাটিকে অনাকাঙ্ক্ষিত বলে মন্তব্য করেন। দলের প্রার্থী হাজী জসীম উদ্দিন বর্তমানে ঢাকায় থাকায় তিনি এলাকায় ফিরলে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করে সাংগঠনিকভাবে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
ভাইরাল অডিওকে কেন্দ্র করে স্থানীয় বিএনপির ভেতরে অস্বস্তি বাড়ছে। দলীয় শৃঙ্খলা, রাজনৈতিক সহনশীলতা এবং নেতাকর্মীদের আচরণ নিয়ে কেন্দ্রীয় পর্যায় থেকে কী ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হয়, সেদিকেই এখন নজর সংশ্লিষ্ট মহলের।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 


















