০৩:৪৫ অপরাহ্ন, রবিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৫
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় মব ভায়োলেন্সে সন্দেহভাজন চোরের মৃত্যু, চারজন আটক দুটি গণমাধ্যমে হামলা ও মবতন্ত্রের উত্থান জাতির জন্য লজ্জা: সালাহউদ্দিন ঘরেই রক্তাক্ত মৃত্যু, গলা কাটা অবস্থায় কৃষকের মরদেহ উদ্ধার এআই উন্মাদনায় বাজারের ভেতরের সতর্ক সংকেত, শর্ট বিক্রেতারা কোথায় বাজি ধরছেন ট্রাম্প অনিশ্চয়তায় এশিয়া: দক্ষিণ কোরিয়ার চোখে নিঃসঙ্গ ও কঠিন ভবিষ্যৎ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার যুগে হাতের কাজের ভবিষ্যৎ নিরাপদ মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচতে দৌড়—এল ফাশার দখলের পর সুদানে গণপলায়ন এশিয়াকে বেঁধে রাখা কালো স্রোত: কুরোশিও যেভাবে ইতিহাস, সংস্কৃতি আর জলবায়ু গড়ে তুলেছে ইউরোপে খাবারের যুদ্ধ: কার্বোনারার প্লেট ঘিরে নতুন জাতীয়তাবাদ জেন অস্টেনের উপন্যাসে অর্থনীতির নীরব ভাষা: সমাজ, প্রেম আর টাকার বাস্তব হিসাব

জার্মানির নববর্ষে আতশবাজির তাণ্ডব, শহরজুড়ে আতঙ্ক ও বিতর্ক

নববর্ষের আনন্দে জার্মানির শহরগুলো প্রতি বছরই রূপ নেয় এক অদ্ভুত বৈপরীত্যে। একদিকে উৎসব, অন্যদিকে ভয় আর ধ্বংস। বিশেষ করে বছরের শেষ রাতে আতশবাজির দাপটে বার্লিনসহ বড় শহরগুলো যেন মুহূর্তের মধ্যে যুদ্ধক্ষেত্রের চেহারা নেয়।

নববর্ষের ঐতিহ্য আর আতশবাজির উন্মাদনা
জার্মানিতে নববর্ষ মানেই আতশবাজি। ইউরোপীয় নিয়মে ভবিষ্যৎ জানার পুরোনো সিসা গলানোর প্রথা বন্ধ হলেও, আতশবাজির প্রতি মানুষের টান কমেনি। বছরের শেষ রাতে রাস্তায় নেমে আগুনের ফুলকি ছোড়াকে অনেকেই জাতীয় ঐতিহ্যের অংশ বলে মনে করেন। মধ্যরাত ঘিরে এমন তীব্র শব্দ আর বিস্ফোরণ হয় যে বার্লিনের কিছু এলাকা কার্যত যুদ্ধক্ষেত্রের মতো দেখায়।

প্রাণহানি ও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি
দুই হাজার চব্বিশ সালের নববর্ষের রাতে আতশবাজি-সংক্রান্ত দুর্ঘটনায় পাঁচজন জার্মান নাগরিকের মৃত্যু হয়। শুধু বার্লিনেই আহত হন তিন শতাধিক মানুষ। শহরের বিভিন্ন এলাকায় শত শত আগুন লাগে। একটি আবাসিক ভবনের ছত্রিশটি ফ্ল্যাটের জানালা ভেঙে যাওয়ায় বাসিন্দাদের সরিয়ে নিতে হয়। এমনকি এক বিদেশি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম প্রভাবক শিশুর ঘরের দিকে রকেট ছুড়ে ভিডিও প্রকাশ করায় গ্রেপ্তার হন।

দেখা না গেলেও গভীর প্রভাব
আতশবাজির ক্ষতি শুধু চোখে দেখা ধ্বংসেই সীমাবদ্ধ নয়। জরুরি সেবা সংস্থাগুলো অতিরিক্ত চাপে পড়ে। অনেক মানুষ নিরাপত্তার ভয়ে ঘর থেকে বের হতে চান না। পোষা প্রাণীরা আতঙ্কে কুঁকড়ে থাকে। শব্দরোধী কক্ষ থাকায় বিমানবন্দরসংলগ্ন হোটেলগুলো এ সময় বাড়তি লাভ করে। নববর্ষের সকালে শহরের বাতাসে ভাসে ধুলা আর বিষাক্ত কণা, রাস্তায় ছড়িয়ে থাকে আবর্জনা আর পোড়া ধ্বংসাবশেষ।

নিষেধাজ্ঞার দাবিতে নতুন বিতর্ক
প্রতি বছরই প্রশ্ন ওঠে, বছরের বাকি সময় আতশবাজি কেনা নিষিদ্ধ থাকলে নববর্ষে কেন ছাড় দেওয়া হবে। যদিও সবচেয়ে ভয়ংকর গোলাকার বিস্ফোরক ইতিমধ্যেই সাধারণ মানুষের জন্য অবৈধ, তবু সেগুলো প্রতিবেশী দেশ থেকে চোরাচালান হয়ে আসে। সমালোচকদের মতে, আইন প্রয়োগ করা কঠিন, কারণ পুলিশ ব্যস্ত অবস্থায় বৈধ আর অবৈধ আতশবাজি আলাদা করতে পারে না। তাই অনেকের দাবি, সব ধরনের আতশবাজিই নিষিদ্ধ করা হোক।

জনমত ও রাজনৈতিক টানাপোড়েন
জরিপ বলছে, বেশিরভাগ জার্মান নাগরিকই কড়াকড়ি নিষেধাজ্ঞার পক্ষে। কিন্তু অনেক রাজনীতিক নববর্ষের আতশবাজিকে অচ্ছেদ্য ঐতিহ্য বলে মনে করেন। যেহেতু আইনটি কেন্দ্রীয় পর্যায়ের, তাই বার্লিনের মতো শহর নিজ উদ্যোগে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে পারে না। তবু পরিবেশবাদী সংগঠনগুলোর দাবি, রাজনৈতিক চাপ বাড়ছে এবং পরিবর্তনের সম্ভাবনাও তৈরি হচ্ছে।

প্রতিবেশী দেশের উদাহরণ
পাশের নেদারল্যান্ডসে বছরের পর বছর আতশবাজির সহিংসতা ও দুর্ঘটনার পর সংসদ সদস্যরা ব্যক্তিগত ব্যবহারের আতশবাজি নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। যদিও সেই আইন কার্যকর হবে আরও পরে, তবু জার্মানিতে এই উদাহরণ নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। আতশবাজিভীত মানুষেরা মনে করছেন, অন্তত পরিবর্তনের পথটা পরিষ্কার হচ্ছে, যদিও আপাতত আরও একবার শব্দ আর আগুনের মধ্যেই নববর্ষ迎 করতে হবে।

#জার্মানি #নববর্ষ #আতশবাজি #বার্লিন #নিরাপত্তা #পরিবেশ #ঐতিহ্য #ইউরোপ

জনপ্রিয় সংবাদ

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় মব ভায়োলেন্সে সন্দেহভাজন চোরের মৃত্যু, চারজন আটক

জার্মানির নববর্ষে আতশবাজির তাণ্ডব, শহরজুড়ে আতঙ্ক ও বিতর্ক

০২:০৫:৫৮ অপরাহ্ন, রবিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৫

নববর্ষের আনন্দে জার্মানির শহরগুলো প্রতি বছরই রূপ নেয় এক অদ্ভুত বৈপরীত্যে। একদিকে উৎসব, অন্যদিকে ভয় আর ধ্বংস। বিশেষ করে বছরের শেষ রাতে আতশবাজির দাপটে বার্লিনসহ বড় শহরগুলো যেন মুহূর্তের মধ্যে যুদ্ধক্ষেত্রের চেহারা নেয়।

নববর্ষের ঐতিহ্য আর আতশবাজির উন্মাদনা
জার্মানিতে নববর্ষ মানেই আতশবাজি। ইউরোপীয় নিয়মে ভবিষ্যৎ জানার পুরোনো সিসা গলানোর প্রথা বন্ধ হলেও, আতশবাজির প্রতি মানুষের টান কমেনি। বছরের শেষ রাতে রাস্তায় নেমে আগুনের ফুলকি ছোড়াকে অনেকেই জাতীয় ঐতিহ্যের অংশ বলে মনে করেন। মধ্যরাত ঘিরে এমন তীব্র শব্দ আর বিস্ফোরণ হয় যে বার্লিনের কিছু এলাকা কার্যত যুদ্ধক্ষেত্রের মতো দেখায়।

প্রাণহানি ও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি
দুই হাজার চব্বিশ সালের নববর্ষের রাতে আতশবাজি-সংক্রান্ত দুর্ঘটনায় পাঁচজন জার্মান নাগরিকের মৃত্যু হয়। শুধু বার্লিনেই আহত হন তিন শতাধিক মানুষ। শহরের বিভিন্ন এলাকায় শত শত আগুন লাগে। একটি আবাসিক ভবনের ছত্রিশটি ফ্ল্যাটের জানালা ভেঙে যাওয়ায় বাসিন্দাদের সরিয়ে নিতে হয়। এমনকি এক বিদেশি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম প্রভাবক শিশুর ঘরের দিকে রকেট ছুড়ে ভিডিও প্রকাশ করায় গ্রেপ্তার হন।

দেখা না গেলেও গভীর প্রভাব
আতশবাজির ক্ষতি শুধু চোখে দেখা ধ্বংসেই সীমাবদ্ধ নয়। জরুরি সেবা সংস্থাগুলো অতিরিক্ত চাপে পড়ে। অনেক মানুষ নিরাপত্তার ভয়ে ঘর থেকে বের হতে চান না। পোষা প্রাণীরা আতঙ্কে কুঁকড়ে থাকে। শব্দরোধী কক্ষ থাকায় বিমানবন্দরসংলগ্ন হোটেলগুলো এ সময় বাড়তি লাভ করে। নববর্ষের সকালে শহরের বাতাসে ভাসে ধুলা আর বিষাক্ত কণা, রাস্তায় ছড়িয়ে থাকে আবর্জনা আর পোড়া ধ্বংসাবশেষ।

নিষেধাজ্ঞার দাবিতে নতুন বিতর্ক
প্রতি বছরই প্রশ্ন ওঠে, বছরের বাকি সময় আতশবাজি কেনা নিষিদ্ধ থাকলে নববর্ষে কেন ছাড় দেওয়া হবে। যদিও সবচেয়ে ভয়ংকর গোলাকার বিস্ফোরক ইতিমধ্যেই সাধারণ মানুষের জন্য অবৈধ, তবু সেগুলো প্রতিবেশী দেশ থেকে চোরাচালান হয়ে আসে। সমালোচকদের মতে, আইন প্রয়োগ করা কঠিন, কারণ পুলিশ ব্যস্ত অবস্থায় বৈধ আর অবৈধ আতশবাজি আলাদা করতে পারে না। তাই অনেকের দাবি, সব ধরনের আতশবাজিই নিষিদ্ধ করা হোক।

জনমত ও রাজনৈতিক টানাপোড়েন
জরিপ বলছে, বেশিরভাগ জার্মান নাগরিকই কড়াকড়ি নিষেধাজ্ঞার পক্ষে। কিন্তু অনেক রাজনীতিক নববর্ষের আতশবাজিকে অচ্ছেদ্য ঐতিহ্য বলে মনে করেন। যেহেতু আইনটি কেন্দ্রীয় পর্যায়ের, তাই বার্লিনের মতো শহর নিজ উদ্যোগে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে পারে না। তবু পরিবেশবাদী সংগঠনগুলোর দাবি, রাজনৈতিক চাপ বাড়ছে এবং পরিবর্তনের সম্ভাবনাও তৈরি হচ্ছে।

প্রতিবেশী দেশের উদাহরণ
পাশের নেদারল্যান্ডসে বছরের পর বছর আতশবাজির সহিংসতা ও দুর্ঘটনার পর সংসদ সদস্যরা ব্যক্তিগত ব্যবহারের আতশবাজি নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। যদিও সেই আইন কার্যকর হবে আরও পরে, তবু জার্মানিতে এই উদাহরণ নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। আতশবাজিভীত মানুষেরা মনে করছেন, অন্তত পরিবর্তনের পথটা পরিষ্কার হচ্ছে, যদিও আপাতত আরও একবার শব্দ আর আগুনের মধ্যেই নববর্ষ迎 করতে হবে।

#জার্মানি #নববর্ষ #আতশবাজি #বার্লিন #নিরাপত্তা #পরিবেশ #ঐতিহ্য #ইউরোপ