০১:২৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৫
ঘূর্ণিঝড়ের ক্ষত, ঋণের চাপ আর সংস্কারের চ্যালেঞ্জ: শ্রীলঙ্কা এক সংকটে আটকে পড়েছে জিএমের বৈশ্বিক দৌড় ফর্মুলা ওয়ানকে হাতিয়ার করে নতুন বাজারে আমেরিকার অটো জায়ান্ট মাদুরো পতনের ছক কি যুদ্ধ ডেকে আনবে ক্যারিবিয়ানে ভারতের টিকা সাম্রাজ্য: উদ্ভাবনের শক্তিতে সিরাম ইনস্টিটিউট এর বিশ্বজয় চারটি এমভিপি চারটি শিরোপা অজেয় আয়শা উইলসনের রাজত্ব লিওনার্দো ডিক্যাপ্রিও: পরিবর্তনের ভেতর টিকে থাকার অভিনয়শিল্পী কেপপ ডেমন হান্টার্স: আবেগ থেকে বৈশ্বিক উন্মাদনা, এক অ্যানিমেশনের অসম্ভব জয়যাত্রা ভেনিজুয়েলা প্রশ্নে ট্রাম্পে আস্থা, মাদুরো হটাতে পারলেই সব ক্ষমা ডোরালের নির্বাসিতদের কণ্ঠ যুদ্ধবিরতি ছাড়াই শেষ আসিয়ান বৈঠক, আবার আলোচনায় বসছে থাইল্যান্ড-কাম্বোডিয়া কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ডেটা সেন্টারে বড় ঝাঁপ আদানির, পারমাণবিক বিদ্যুৎ নিয়েও ভাবনা

শীতে ঘরে ঘরে গ্যাসের অনিশ্চয়তা, চাপের মুখে সরবরাহ ব্যবস্থা

শীত এলেই রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় গ্যাসের চাপ নিয়ে নতুন করে উদ্বেগ তৈরি হয়। এবারের শীতেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। তবে সংকটের চিত্র সর্বত্র একরকম নয়। কোথাও নিরবচ্ছিন্নভাবে গ্যাস সরবরাহ থাকলেও কোথাও ঘরের রান্নাঘরে আগুন জ্বালাতে মানুষকে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হচ্ছে। এই বৈপরীত্য দেশের গ্যাস ব্যবস্থার ওপর বাড়তে থাকা চাপ এবং অগ্রাধিকারভিত্তিক সরবরাহ ব্যবস্থার বাস্তব চিত্র তুলে ধরছে।

ঘরের চুলায় আগুন নেই

রাজধানীর অনেক আবাসিক এলাকায় শীত শুরু হলেই গ্যাসের চাপ কমে যায়। কোথাও পুরোপুরি বন্ধ না হলেও দিনের বড় একটি সময় চুলায় আগুন থাকে না বললেই চলে। বনশ্রী এলাকার বাসিন্দারা জানান, সকালে নির্দিষ্ট সময়ের পর গ্যাস প্রায় পাওয়া যায় না। দুপুরের পর কিছুটা চাপ বাড়লেও রান্নার কাজ নির্বিঘ্নে করা কঠিন হয়ে পড়ে।

একই শহরের অন্য এলাকায় আবার ভিন্ন চিত্র দেখা যাচ্ছে। এসকাটন কিংবা পুরান ঢাকার কিছু অংশে বাসিন্দারা বলছেন, তারা এবার গ্যাসের তেমন সংকট অনুভব করছেন না। দিনরাত মোটামুটি স্বাভাবিক চাপেই গ্যাস মিলছে। ফলে একই শহরের মধ্যেই কয়েকটি রাস্তার ব্যবধানে ভিন্ন ভিন্ন বাস্তবতা তৈরি হয়েছে।

এই বৈষম্যের পেছনে আবহাওয়ার ভূমিকার কথাও বলছেন অনেকে। উত্তরের জেলাগুলোতে তাপমাত্রা উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেলেও ঢাকায় শীত তুলনামূলকভাবে মৃদু। তবুও আবাসিক গ্যাস সরবরাহে অনিয়ম মানুষের ভোগান্তি বাড়াচ্ছে।

শিল্পখাতে তুলনামূলক স্বস্তি

আবাসিক গ্রাহকদের ভোগান্তির বিপরীতে শিল্পখাতে পরিস্থিতি তুলনামূলকভাবে স্থিতিশীল। তৈরি পোশাক ও বস্ত্রখাতের উদ্যোক্তারা জানান, এ বছর শীতে বড় ধরনের গ্যাস সংকটের মুখে পড়তে হয়নি।

খাত সংশ্লিষ্টদের মতে, আগের বছরগুলোতে যেখানে গ্যাসের চাপ একেবারে তলানিতে নেমে যেত, সেখানে এবার সরবরাহ তুলনামূলকভাবে স্থিতিশীল রয়েছে। অনেক শিল্পপ্রতিষ্ঠানে দিনরাত নিরবচ্ছিন্নভাবে উৎপাদন চালানো সম্ভব হচ্ছে।

তবে এর পেছনে আরেকটি কারণও রয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে বেশ কিছু শিল্পপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাওয়ায় মোট গ্যাসের চাহিদা কমেছে। এতে সরবরাহ ব্যবস্থার ওপর চাপ কিছুটা কমেছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

দেশীয় উৎপাদন কমছে, আমদানির নির্ভরতা বাড়ছে

রাষ্ট্রীয় সংস্থা পেট্রোবাংলার তথ্য অনুযায়ী, দেশে দৈনিক গ্যাসের চাহিদা প্রায় সাড়ে তিনশ কোটি ঘনফুটের কাছাকাছি। অথচ সরবরাহ করা যাচ্ছে এর চেয়ে অনেক কম। গত এক বছরে দেশীয় গ্যাসক্ষেত্রগুলো থেকে উৎপাদন উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে।

বয়সী কূপে উৎপাদন হ্রাস এবং কিছু কূপ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় দেশীয় সরবরাহ আরও সংকুচিত হচ্ছে। এই ঘাটতি পূরণে সরকারকে বাড়তি দামে বিদেশ থেকে তরলীকৃত গ্যাস আমদানি করতে হচ্ছে। বর্তমানে জাতীয় গ্রিডে আমদানিকৃত গ্যাসের অংশ ক্রমেই বাড়ছে।

সরকার গভীর সমুদ্রে ভাসমান টার্মিনালের মাধ্যমে গ্যাস আমদানির ব্যবস্থা করেছে। দীর্ঘমেয়াদি চুক্তির পাশাপাশি খোলা বাজার থেকেও আগের তুলনায় বেশি পরিমাণে গ্যাস কেনা হচ্ছে। চলতি বছরে স্পট মার্কেট থেকে কেনা গ্যাসের পরিমাণ প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে।

চাপে থাকা ব্যবস্থাপনা

পেট্রোবাংলার কর্মকর্তারা বলছেন, পুরো গ্যাস ব্যবস্থা এখন তীব্র চাপের মধ্যে পরিচালিত হচ্ছে। শীতকালে বিদ্যুৎকেন্দ্রে গ্যাসের চাহিদা কিছুটা কমে যাওয়ায় শিল্প ও অন্যান্য খাতে সরবরাহ সামাল দেওয়া সম্ভব হচ্ছে। তবে দেশীয় উৎপাদন না বাড়লে ভবিষ্যতে পরিস্থিতি আরও জটিল হতে পারে।

নতুন কূপ খননের কাজ চলমান থাকলেও তাৎক্ষণিকভাবে বড় ধরনের স্বস্তি আসার সম্ভাবনা কম। ফলে আবাসিক গ্রাহকদের জন্য গ্যাসের অনিশ্চয়তা আপাতত থেকেই যাচ্ছে।

জনপ্রিয় সংবাদ

ঘূর্ণিঝড়ের ক্ষত, ঋণের চাপ আর সংস্কারের চ্যালেঞ্জ: শ্রীলঙ্কা এক সংকটে আটকে পড়েছে

শীতে ঘরে ঘরে গ্যাসের অনিশ্চয়তা, চাপের মুখে সরবরাহ ব্যবস্থা

১১:৩৪:২০ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৫

শীত এলেই রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় গ্যাসের চাপ নিয়ে নতুন করে উদ্বেগ তৈরি হয়। এবারের শীতেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। তবে সংকটের চিত্র সর্বত্র একরকম নয়। কোথাও নিরবচ্ছিন্নভাবে গ্যাস সরবরাহ থাকলেও কোথাও ঘরের রান্নাঘরে আগুন জ্বালাতে মানুষকে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হচ্ছে। এই বৈপরীত্য দেশের গ্যাস ব্যবস্থার ওপর বাড়তে থাকা চাপ এবং অগ্রাধিকারভিত্তিক সরবরাহ ব্যবস্থার বাস্তব চিত্র তুলে ধরছে।

ঘরের চুলায় আগুন নেই

রাজধানীর অনেক আবাসিক এলাকায় শীত শুরু হলেই গ্যাসের চাপ কমে যায়। কোথাও পুরোপুরি বন্ধ না হলেও দিনের বড় একটি সময় চুলায় আগুন থাকে না বললেই চলে। বনশ্রী এলাকার বাসিন্দারা জানান, সকালে নির্দিষ্ট সময়ের পর গ্যাস প্রায় পাওয়া যায় না। দুপুরের পর কিছুটা চাপ বাড়লেও রান্নার কাজ নির্বিঘ্নে করা কঠিন হয়ে পড়ে।

একই শহরের অন্য এলাকায় আবার ভিন্ন চিত্র দেখা যাচ্ছে। এসকাটন কিংবা পুরান ঢাকার কিছু অংশে বাসিন্দারা বলছেন, তারা এবার গ্যাসের তেমন সংকট অনুভব করছেন না। দিনরাত মোটামুটি স্বাভাবিক চাপেই গ্যাস মিলছে। ফলে একই শহরের মধ্যেই কয়েকটি রাস্তার ব্যবধানে ভিন্ন ভিন্ন বাস্তবতা তৈরি হয়েছে।

এই বৈষম্যের পেছনে আবহাওয়ার ভূমিকার কথাও বলছেন অনেকে। উত্তরের জেলাগুলোতে তাপমাত্রা উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেলেও ঢাকায় শীত তুলনামূলকভাবে মৃদু। তবুও আবাসিক গ্যাস সরবরাহে অনিয়ম মানুষের ভোগান্তি বাড়াচ্ছে।

শিল্পখাতে তুলনামূলক স্বস্তি

আবাসিক গ্রাহকদের ভোগান্তির বিপরীতে শিল্পখাতে পরিস্থিতি তুলনামূলকভাবে স্থিতিশীল। তৈরি পোশাক ও বস্ত্রখাতের উদ্যোক্তারা জানান, এ বছর শীতে বড় ধরনের গ্যাস সংকটের মুখে পড়তে হয়নি।

খাত সংশ্লিষ্টদের মতে, আগের বছরগুলোতে যেখানে গ্যাসের চাপ একেবারে তলানিতে নেমে যেত, সেখানে এবার সরবরাহ তুলনামূলকভাবে স্থিতিশীল রয়েছে। অনেক শিল্পপ্রতিষ্ঠানে দিনরাত নিরবচ্ছিন্নভাবে উৎপাদন চালানো সম্ভব হচ্ছে।

তবে এর পেছনে আরেকটি কারণও রয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে বেশ কিছু শিল্পপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাওয়ায় মোট গ্যাসের চাহিদা কমেছে। এতে সরবরাহ ব্যবস্থার ওপর চাপ কিছুটা কমেছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

দেশীয় উৎপাদন কমছে, আমদানির নির্ভরতা বাড়ছে

রাষ্ট্রীয় সংস্থা পেট্রোবাংলার তথ্য অনুযায়ী, দেশে দৈনিক গ্যাসের চাহিদা প্রায় সাড়ে তিনশ কোটি ঘনফুটের কাছাকাছি। অথচ সরবরাহ করা যাচ্ছে এর চেয়ে অনেক কম। গত এক বছরে দেশীয় গ্যাসক্ষেত্রগুলো থেকে উৎপাদন উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে।

বয়সী কূপে উৎপাদন হ্রাস এবং কিছু কূপ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় দেশীয় সরবরাহ আরও সংকুচিত হচ্ছে। এই ঘাটতি পূরণে সরকারকে বাড়তি দামে বিদেশ থেকে তরলীকৃত গ্যাস আমদানি করতে হচ্ছে। বর্তমানে জাতীয় গ্রিডে আমদানিকৃত গ্যাসের অংশ ক্রমেই বাড়ছে।

সরকার গভীর সমুদ্রে ভাসমান টার্মিনালের মাধ্যমে গ্যাস আমদানির ব্যবস্থা করেছে। দীর্ঘমেয়াদি চুক্তির পাশাপাশি খোলা বাজার থেকেও আগের তুলনায় বেশি পরিমাণে গ্যাস কেনা হচ্ছে। চলতি বছরে স্পট মার্কেট থেকে কেনা গ্যাসের পরিমাণ প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে।

চাপে থাকা ব্যবস্থাপনা

পেট্রোবাংলার কর্মকর্তারা বলছেন, পুরো গ্যাস ব্যবস্থা এখন তীব্র চাপের মধ্যে পরিচালিত হচ্ছে। শীতকালে বিদ্যুৎকেন্দ্রে গ্যাসের চাহিদা কিছুটা কমে যাওয়ায় শিল্প ও অন্যান্য খাতে সরবরাহ সামাল দেওয়া সম্ভব হচ্ছে। তবে দেশীয় উৎপাদন না বাড়লে ভবিষ্যতে পরিস্থিতি আরও জটিল হতে পারে।

নতুন কূপ খননের কাজ চলমান থাকলেও তাৎক্ষণিকভাবে বড় ধরনের স্বস্তি আসার সম্ভাবনা কম। ফলে আবাসিক গ্রাহকদের জন্য গ্যাসের অনিশ্চয়তা আপাতত থেকেই যাচ্ছে।