নির্বাচনের আগে আসন ভাগাভাগি নিয়ে যে টানাপোড়েন তৈরি হয়েছিল, তা কাটিয়ে বিএনপি ও তাদের জোটসঙ্গীরা এখন সমঝোতার পথে এগোচ্ছে। কয়েক দিনের গোপন আলোচনা ও দরকষাকষির পর আসন বণ্টন নিয়ে একটি কার্যকর সমাধানে পৌঁছানোর ইঙ্গিত দিয়েছেন উভয় পক্ষের শীর্ষ নেতারা। এই সমঝোতার মাধ্যমে আসন্ন নির্বাচনে একটি যৌথ রাজনৈতিক অবস্থান তৈরির আশা করা হচ্ছে
আসন ভাগাভাগিতে সমঝোতার ইঙ্গিত
বিএনপি ও জোটের একাধিক জ্যেষ্ঠ নেতা জানিয়েছেন, আসন ভাগাভাগি নিয়ে আলোচনা কার্যত শেষ হয়েছে এবং উভয় পক্ষই একটি গ্রহণযোগ্য সমাধানে পৌঁছেছে। তবে দলটির সামনে এখন বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে, যেসব আসনে জোটসঙ্গীদের জায়গা দিতে হবে, সেখানে বিএনপির অভ্যন্তরীণ বিরোধ ও অসন্তোষ কীভাবে সামাল দেওয়া হবে। এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয়নি, বিএনপি কতটি আসন তাদের অংশীদারদের জন্য ছেড়ে দেবে।
ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নতুন কৌশল
সমঝোতার একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো, কিছু জোটসঙ্গী প্রার্থী বিএনপির নির্বাচনী প্রতীক ধানের শীষ নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারেন। নির্বাচন কমিশনের বর্তমান বিধি অনুযায়ী নিবন্ধিত কোনো দল অন্য দলের প্রতীকে নির্বাচন করতে পারে না। এই বাধা কাটাতে বিএনপি নতুন কৌশল নিয়েছে। নির্দিষ্ট কিছু জোটনেতা নিজ নিজ দল ভেঙে বা দলত্যাগ করে বিএনপিতে যোগ দেবেন, যাতে তারা ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করতে পারেন। ইতোমধ্যে কয়েকজন নেতা এই পথে এগিয়েছেন।
জোটে যোগদানের সাম্প্রতিক নজির
বাংলাদেশ লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির চেয়ারম্যান শাহাদাত হোসেন সেলিম গত ডিসেম্বরের শুরুতে তার দল ভেঙে বিএনপিতে যোগ দেন। পরে বাংলাদেশ জাতীয় দলের চেয়ারম্যান সৈয়দ এহসানুল হুদাও একই সিদ্ধান্ত নেন। আরও কয়েকটি দলের নেতারা জানিয়েছেন, বিএনপির সঙ্গে তাদের আলোচনা ইতিবাচক হয়েছে এবং তারা ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করতে আগ্রহী। তবে সবাই এই কৌশলে রাজি নন। কয়েকজন শীর্ষ নেতা নিজ নিজ দলের প্রতীকেই নির্বাচনে থাকতে চান।

নিজস্ব প্রতীকেই থাকার সিদ্ধান্ত
কিছু রাজনৈতিক নেতা স্পষ্টভাবে জানিয়েছেন, তারা দলত্যাগ করে বিএনপির প্রতীকে নির্বাচন করবেন না। তাদের মতে, নিজস্ব রাজনৈতিক পরিচয় ও প্রতীক ধরে রাখাই তাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এ ক্ষেত্রে বিএনপি সংশ্লিষ্ট কয়েকটি আসন তাদের জন্য ছেড়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করছে বলে জানা গেছে।
জামায়াতি শরিকের সঙ্গে আসন বণ্টন
আসন ভাগাভাগির আলোচনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পেয়েছে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ। দলটি তাদের নিজস্ব প্রতীক খেজুর গাছ নিয়ে নির্বাচনে অংশ নেবে। বিএনপি জানিয়েছে, এই দলের জন্য চারটি সংসদীয় আসন ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট আসনগুলোতে জমিয়তের প্রার্থীরা নির্বাচন করবেন।
চূড়ান্ত ঘোষণা অপেক্ষমাণ
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানিয়েছেন, জোটসঙ্গীদের সঙ্গে আসন ভাগাভাগি নিয়ে আলোচনা সম্পন্ন হয়েছে এবং খুব শিগগিরই আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসবে। কতটি আসন কাদের জন্য রাখা হচ্ছে, সে বিষয়ে বিস্তারিত জানাতে তিনি কিছুটা সময় চেয়েছেন।
নির্বাচনী সময়সূচি ও বাকি আসন
নির্বাচন কমিশনের ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, আগামী ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এবং মনোনয়নপত্র জমার শেষ সময় ডিসেম্বরের শেষ ভাগ। বিএনপি ইতোমধ্যে বেশিরভাগ আসনে তাদের প্রার্থী ঘোষণা করেছে। বাকি আসনগুলোর একটি অংশ এখন জোটসঙ্গীদের মধ্যে বণ্টন করা হচ্ছে।
ভেতরের অস্বস্তি ও চ্যালেঞ্জ
দলীয় সূত্র জানিয়েছে, যেসব আসনে আগে থেকেই বিএনপির প্রার্থীরা প্রচার শুরু করেছেন, সেখানে হঠাৎ করে জোটসঙ্গীদের জায়গা দিতে গেলে অস্বস্তি তৈরি হতে পারে। কোথাও কোথাও শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতার আশঙ্কাও রয়েছে। এসব বাস্তবতা মাথায় রেখেই বিএনপি এখন তাদের জোট রাজনীতিকে আরও সতর্কভাবে এগিয়ে নিতে চাইছে।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















