মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক আর বিশ্বজুড়ে মদের চাহিদা কমে যাওয়ার প্রভাবে বড় সংকটে পড়েছে স্কটল্যান্ডের হুইস্কি শিল্প। দীর্ঘদিনের ধারাবাহিক প্রবৃদ্ধির পর টানা তৃতীয় বছরের মতো বিক্রি কমেছে স্কচ হুইস্কির। এর ফলে উৎপাদন কমানো, কারখানা সাময়িক বন্ধ রাখা এবং নতুন বিনিয়োগ নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।
বিক্রিতে টানা পতন ও অতিরিক্ত মজুত
আন্তর্জাতিক অ্যালকোহল বাজার বিশ্লেষক সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে বিশ্বব্যাপী স্কচ হুইস্কির বিক্রি কমেছে প্রায় তিন শতাংশ। কয়েক দশক ধরে যে শিল্প ক্রমাগত বেড়েছে, সেখানে এই পতন বড় সতর্ক সংকেত হিসেবে দেখা হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক আর ক্রেতাদের মদ্যপান কমানোর প্রবণতা মিলিয়ে বাজারে অতিরিক্ত মজুত তৈরি হয়েছে।
মার্কিন শুল্কে বাড়ছে ক্ষতি
যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বাণিজ্য সমঝোতা হলেও ব্রিটেন থেকে আমদানি হওয়া হুইস্কির ওপর এখনো দশ শতাংশ শুল্ক বহাল আছে। স্কচ হুইস্কি শিল্প সংগঠনের হিসাব বলছে, এই শুল্কের কারণে প্রতি সপ্তাহে শিল্পটির ক্ষতি হচ্ছে কয়েক মিলিয়ন পাউন্ড। মাসে ক্ষতির অঙ্ক দাঁড়াচ্ছে প্রায় দুই কোটি পাউন্ডে। এর জেরে ইতিমধ্যে হাজারের বেশি কর্মসংস্থান হারিয়েছে খাতটি।

উৎপাদন কমাচ্ছে বড় ব্র্যান্ড
চাহিদা কমে যাওয়ায় শীর্ষ পানীয় প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানগুলো উৎপাদন কমাতে শুরু করেছে। জনি ওয়াকার, টালিস্কার ও লাগাভুলিনের মতো জনপ্রিয় ব্র্যান্ডের মালিক ডিয়াজিও জানিয়েছে, বর্তমান চাহিদার সঙ্গে সামঞ্জস্য রাখতে কিছু কারখানায় উৎপাদনের দিন কমানো হয়েছে। হাইল্যান্ডস অঞ্চলের কয়েকটি কারখানায় কাজ সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হয়েছে। এমনকি স্কাই দ্বীপে টালিস্কার ডিস্টিলারির সম্প্রসারণ পরিকল্পনাও অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বড় ধাক্কা
স্কচ হুইস্কির সবচেয়ে বড় বাজার যুক্তরাষ্ট্রে বিক্রি কমেছে আরও বেশি। চলতি বছরের প্রথম নয় মাসে সেখানে বিক্রি নেমেছে ছয় শতাংশে। আগের বছরের তুলনায় কিছুটা উন্নতি হলেও এটি এখনও অতীতের উচ্চ প্রবৃদ্ধির ধারার অনেক নিচে। বিশ্লেষকদের মতে, শুল্কের পাশাপাশি মানুষের জীবনযাত্রার পরিবর্তন এবং মদ্যপান কমানোর প্রবণতা এই পতনের বড় কারণ।
ভবিষ্যৎ নিয়ে সতর্ক আশাবাদ
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গত কয়েক দশকে স্কচ হুইস্কির যে ব্যাপক সাফল্য এসেছে, এখন সেটি চাপে পড়েছে। তবে শিল্পটি সৃজনশীল এবং নতুন পথ খুঁজে নেওয়ার সক্ষমতা আছে। অনেক উৎপাদক অবিক্রীত মজুত রাখার জন্য নতুন গুদাম তৈরি করছে। একই সঙ্গে ধারণা করা হচ্ছে, দশকের শেষ দিকে আবারও ধীরে ধীরে প্রবৃদ্ধিতে ফিরতে পারে এই খাত।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















