০২:২০ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৫
সংযুক্ত আরব আমিরাত–পাকিস্তান সম্পর্ক নতুন উচ্চতায়, বাণিজ্য ও বিনিয়োগে জোর লাইফ এন্ডাওমেন্ট উদ্যোগে গুরুতর রোগীদের নতুন আশার আলো, একশ চল্লিশ রোগীর চিকিৎসায় টেকসই অর্থায়ন শুরু চাঁদপুর–শরীয়তপুর নৌপথে ফেরি চলাচল শুরু, কুয়াশার কারণে ছিল দীর্ঘ বিরতি জুবায়ের রহমান চৌধুরী বাংলাদেশের নতুন প্রধান বিচারপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ ইনকিলাব মঞ্চের রোববার সর্বাত্মক অবরোধ ঘোষণা খালেদা জিয়ার অবস্থা সংকটাপন্ন, চিকিৎসায় কঠিন সময় পার করছেন ঘরে ঢুকে ছাত্রলীগ নেতার বাবা ও চাচাকে কুপিয়ে হত্যা বিজিবির হস্তক্ষেপে জয়পুরহাট সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ বন্ধ করল বিএসএফ জামায়াতের সঙ্গে জোট না করতে নাহিদ ইসলামকে অনুরোধ এনসিপির ৩০ নেতার রিহ্যাব মেলা ২০২৫-এর শেষ দিনে উপচে পড়া ভিড়, স্বপ্নের বাড়ির খোঁজে ক্রেতাদের শেষ মুহূর্তের সিদ্ধান্ত

ওয়েস্টমিনস্টারে ইতিহাসের মোড় ঘোরানো সংসদ, সাইমন দে মন্টফোর্টের ডাকে নতুন শাসনচিন্তার সূচনা

লন্ডনের ওয়েস্টমিনস্টার একসময় যেন গমগমে জনসমুদ্রে রূপ নিয়েছিল। ইংল্যান্ডের নানা প্রান্ত থেকে আসা অভিজাত, ধর্মীয় নেতা, নাইট ও নগর প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে সেখানে বসেছিল এক ব্যতিক্রমী সংসদ। এই সভা কর অনুমোদনের জন্য নয়, বরং গোটা দেশের ভবিষ্যৎ শাসনব্যবস্থা নিয়ে আলোচনার জন্য ডাকা হয়েছিল। ইতিহাসে এই ঘটনাই পরিচিত হয়ে আছে সাইমন দে মন্টফোর্টের সংসদ হিসেবে, যা প্রতিনিধিত্বমূলক শাসনের পথে এক বড় পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত।

রাজকীয় ব্যর্থতা ও বিদ্রোহের পটভূমি
এই সংসদের পেছনে ছিল গভীর রাজনৈতিক সংকট। রাজা তৃতীয় হেনরির ব্যর্থ শাসন, গ্যাসকোনিতে বিপর্যয়কর সামরিক অভিযান, অতিরিক্ত কর আরোপ এবং সংস্কার অমান্য করার প্রবণতা ইংল্যান্ডের অভিজাতদের ক্ষুব্ধ করে তোলে। বারনরা বিশ্বাস করতে শুরু করেন, রাজা আর শাসনের যোগ্য নন। এর ফলেই ১২৫৮ সালে অক্সফোর্ডের বিধান গৃহীত হয়, যার লক্ষ্য ছিল রাজক্ষমতা সীমিত করা, রাজাকে একটি পরিষদের অধীনে আনা এবং নিয়মিত সংসদ বসানো। কিন্তু রাজা সেই বিধান মানতে অস্বীকার করলে দেশ গৃহযুদ্ধের দিকে গড়ায়।

Simon de Montfort's Parliament - Wikipedia

লিউসের যুদ্ধ ও ক্ষমতার পালাবদল
১২৬৪ সালের মে মাসে লিউসের যুদ্ধে রাজাকে পরাজিত করেন সাইমন দে মন্টফোর্ট। সেই যুদ্ধে রাজা তৃতীয় হেনরি ও তাঁর পুত্র এডওয়ার্ড বন্দি হন। এই বিজয়ের পর কার্যত রাজ্যের ক্ষমতা চলে আসে মন্টফোর্টের হাতে। তিনি নিজেকে শুধু সামরিক নেতা নয়, বরং নতুন রাজনৈতিক ব্যবস্থার রূপকার হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে শুরু করেন।

ওয়েস্টমিনস্টারের ব্যতিক্রমী সংসদ
১২৬৫ সালের জানুয়ারিতে মন্টফোর্ট যে সংসদ আহ্বান করেন, তা ছিল সময়ের তুলনায় একেবারেই নতুন ধারণার। ওয়েস্টমিনস্টার-এ অনুষ্ঠিত এই সভায় উপস্থিত ছিলেন তেইশজন অভিজাত, একশ বিশজন ধর্মযাজক, প্রতিটি কাউন্টি থেকে দুজন নাইট, বড় শহর থেকে নাগরিক প্রতিনিধি এবং উপকূলীয় সিনক পার্টসের প্রতিনিধিরা। রাজকক্ষেই চিঠি পাঠ করে জানানো হয়, রাজা এখন একটি নতুন পরিষদের অধীনে শাসন করবেন।

প্রতিনিধিত্বমূলক শাসনের ভিত্তি
এই সংসদ প্রথমবার সাধারণ মানুষকে ডাকার ঘটনা না হলেও, এখানেই স্থায়ী কিছু নীতি প্রতিষ্ঠিত হয়। নির্বাচিত নাইট ও নগর প্রতিনিধির অংশগ্রহণ, কাউন্টি ও নগরের প্রতিনিধিত্ব এবং অভিজাতদের বাইরেও পরামর্শ নেওয়ার রীতি এখান থেকেই শক্ত ভিত্তি পায়। মন্টফর্ট সচেতনভাবেই এই সংস্কার গুলোর সঙ্গে ম্যাগনা কার্টার আদর্শ যুক্ত করেন, যাতে তাঁর শাসন বৈধতা ও গ্রহণযোগ্যতা পায়।

স্বল্পস্থায়ী শাসন, দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব
মন্টফোর্টের শাসন দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। কয়েক মাস পরই ইভেশামের যুদ্ধে তিনি নিহত হন। তাঁর মৃত্যুর পর থেকে তাঁর ভূমিকা নিয়ে বিতর্ক থাকলেও ইতিহাসবিদদের বড় অংশ একমত, ১২৬৫ সালের সেই সংসদে ভবিষ্যতের প্রতিনিধিত্বমূলক সরকার ব্যবস্থার পথে এক গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক।

জনপ্রিয় সংবাদ

সংযুক্ত আরব আমিরাত–পাকিস্তান সম্পর্ক নতুন উচ্চতায়, বাণিজ্য ও বিনিয়োগে জোর

ওয়েস্টমিনস্টারে ইতিহাসের মোড় ঘোরানো সংসদ, সাইমন দে মন্টফোর্টের ডাকে নতুন শাসনচিন্তার সূচনা

১২:০৭:২৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৫

লন্ডনের ওয়েস্টমিনস্টার একসময় যেন গমগমে জনসমুদ্রে রূপ নিয়েছিল। ইংল্যান্ডের নানা প্রান্ত থেকে আসা অভিজাত, ধর্মীয় নেতা, নাইট ও নগর প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে সেখানে বসেছিল এক ব্যতিক্রমী সংসদ। এই সভা কর অনুমোদনের জন্য নয়, বরং গোটা দেশের ভবিষ্যৎ শাসনব্যবস্থা নিয়ে আলোচনার জন্য ডাকা হয়েছিল। ইতিহাসে এই ঘটনাই পরিচিত হয়ে আছে সাইমন দে মন্টফোর্টের সংসদ হিসেবে, যা প্রতিনিধিত্বমূলক শাসনের পথে এক বড় পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত।

রাজকীয় ব্যর্থতা ও বিদ্রোহের পটভূমি
এই সংসদের পেছনে ছিল গভীর রাজনৈতিক সংকট। রাজা তৃতীয় হেনরির ব্যর্থ শাসন, গ্যাসকোনিতে বিপর্যয়কর সামরিক অভিযান, অতিরিক্ত কর আরোপ এবং সংস্কার অমান্য করার প্রবণতা ইংল্যান্ডের অভিজাতদের ক্ষুব্ধ করে তোলে। বারনরা বিশ্বাস করতে শুরু করেন, রাজা আর শাসনের যোগ্য নন। এর ফলেই ১২৫৮ সালে অক্সফোর্ডের বিধান গৃহীত হয়, যার লক্ষ্য ছিল রাজক্ষমতা সীমিত করা, রাজাকে একটি পরিষদের অধীনে আনা এবং নিয়মিত সংসদ বসানো। কিন্তু রাজা সেই বিধান মানতে অস্বীকার করলে দেশ গৃহযুদ্ধের দিকে গড়ায়।

Simon de Montfort's Parliament - Wikipedia

লিউসের যুদ্ধ ও ক্ষমতার পালাবদল
১২৬৪ সালের মে মাসে লিউসের যুদ্ধে রাজাকে পরাজিত করেন সাইমন দে মন্টফোর্ট। সেই যুদ্ধে রাজা তৃতীয় হেনরি ও তাঁর পুত্র এডওয়ার্ড বন্দি হন। এই বিজয়ের পর কার্যত রাজ্যের ক্ষমতা চলে আসে মন্টফোর্টের হাতে। তিনি নিজেকে শুধু সামরিক নেতা নয়, বরং নতুন রাজনৈতিক ব্যবস্থার রূপকার হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে শুরু করেন।

ওয়েস্টমিনস্টারের ব্যতিক্রমী সংসদ
১২৬৫ সালের জানুয়ারিতে মন্টফোর্ট যে সংসদ আহ্বান করেন, তা ছিল সময়ের তুলনায় একেবারেই নতুন ধারণার। ওয়েস্টমিনস্টার-এ অনুষ্ঠিত এই সভায় উপস্থিত ছিলেন তেইশজন অভিজাত, একশ বিশজন ধর্মযাজক, প্রতিটি কাউন্টি থেকে দুজন নাইট, বড় শহর থেকে নাগরিক প্রতিনিধি এবং উপকূলীয় সিনক পার্টসের প্রতিনিধিরা। রাজকক্ষেই চিঠি পাঠ করে জানানো হয়, রাজা এখন একটি নতুন পরিষদের অধীনে শাসন করবেন।

প্রতিনিধিত্বমূলক শাসনের ভিত্তি
এই সংসদ প্রথমবার সাধারণ মানুষকে ডাকার ঘটনা না হলেও, এখানেই স্থায়ী কিছু নীতি প্রতিষ্ঠিত হয়। নির্বাচিত নাইট ও নগর প্রতিনিধির অংশগ্রহণ, কাউন্টি ও নগরের প্রতিনিধিত্ব এবং অভিজাতদের বাইরেও পরামর্শ নেওয়ার রীতি এখান থেকেই শক্ত ভিত্তি পায়। মন্টফর্ট সচেতনভাবেই এই সংস্কার গুলোর সঙ্গে ম্যাগনা কার্টার আদর্শ যুক্ত করেন, যাতে তাঁর শাসন বৈধতা ও গ্রহণযোগ্যতা পায়।

স্বল্পস্থায়ী শাসন, দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব
মন্টফোর্টের শাসন দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। কয়েক মাস পরই ইভেশামের যুদ্ধে তিনি নিহত হন। তাঁর মৃত্যুর পর থেকে তাঁর ভূমিকা নিয়ে বিতর্ক থাকলেও ইতিহাসবিদদের বড় অংশ একমত, ১২৬৫ সালের সেই সংসদে ভবিষ্যতের প্রতিনিধিত্বমূলক সরকার ব্যবস্থার পথে এক গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক।