হলিউডের সবচেয়ে ঐতিহ্যবাহী স্টুডিও গুলোর একটি ওয়ার্নার ব্রাদার্স কে ঘিরে মালিকানা পরিবর্তনের লড়াই যত ঘনীভূত হচ্ছে, ততই ঘনাচ্ছে সিনেমা হলগুলোর ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কা। কে শেষ পর্যন্ত স্টুডিও এর দায়িত্ব নেবে, তা এখনও স্পষ্ট নয়। তবে যেই নিক না কেন, প্রেক্ষাগৃহে সিনেমা মুক্তির ভবিষ্যৎ যে আরও কঠিন হতে যাচ্ছে, সে ইঙ্গিত স্পষ্ট।
মহামারি ও ধর্মঘটের ক্ষত
করোনা মহামারি এবং পরে চিত্রনাট্যকার ও অভিনয়শিল্পীদের ধর্মঘট মিলিয়ে গত কয়েক বছরে হলিউড কার্যত টালমাটাল অবস্থার মধ্য দিয়ে গেছে। চলতি বছরে যুক্তরাষ্ট্রে সিনেমার টিকিট বিক্রি ডিসেম্বরের শেষ নাগাদ প্রায় আটশ ত্রিশ কোটি ডলারে দাঁড়িয়েছে, যা গত বছরের চেয়ে কম এবং মহামারির আগের প্রায় এক হাজার একশ কোটি ডলারের বাজার থেকে অনেক পিছিয়ে। এই বাস্তবতায় নতুন করে মালিকানা লড়াই শিল্পের ওপর আরেকটি চাপ হিসেবে দেখা দিচ্ছে।
ওয়ার্নারের ঐতিহ্য ও বর্তমান সংকট
মহামারীর আগে ওয়ার্নার ব্রাদার্স বছরে গড়ে প্রায় বাইশটি সিনেমা প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি দিত। যাদুবিদ্যার কাহিনী, কমিক চরিত্র আর মহাকাব্যিক অভিযানের মতো বড় বড় ফ্র্যাঞ্চাইজি এই স্টুডিওর পরিচয় গড়ে দিয়েছে। কিন্তু এখন স্ট্রিমিং জায়ান্ট ও ঋণ ভারাক্রান্ত প্রতিদ্বন্দ্বী স্টুডিওর মধ্যে দরকষাকষিতে পড়ে সেই ঐতিহ্যই প্রশ্নের মুখে।

দরপত্রের দ্বন্দ্ব
স্টুডিওর জন্য প্রাথমিকভাবে স্ট্রিমিং কোম্পানিটিকেই বিজয়ী দরদাতা ঘোষণা করা হলেও প্রতিদ্বন্দ্বী পক্ষ হাল ছাড়েনি। তারা সরাসরি শেয়ারহোল্ডারদের কাছে বেশি দামে শেয়ার কেনার প্রস্তাব দিয়েছে। এ অবস্থায় বোর্ডের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত ঝুলে আছে এবং জানুয়ারির শেষ পর্যন্ত অনিশ্চয়তা কাটছে না।
প্রেক্ষাগৃহ নিয়ে প্রতিশ্রুতি, সংশয় থেকেই যায়
দুই পক্ষই দাবি করছে তারা প্রেক্ষাগৃহে সিনেমা মুক্তির পক্ষে। একজন বলছে বছরে ত্রিশটির বেশি সিনেমা হলে আসবে, অন্যজন বলছে শিল্পের প্রচলিত মুক্তি সময়সূচি মানা হবে। তবে বিশ্লেষকদের মতে, এগুলো কতদিন টিকে থাকবে, তা নিয়ে সন্দেহ থেকেই যায়। কারণ একদিকে স্ট্রিমিং ব্যবসার চাপ, অন্যদিকে বিপুল ঋণের বোঝা—দুটিই খরচ কমানোর দিকে ঠেলে দিতে পারে।
বিনিয়োগকারীদের উদ্বেগ
এই অনিশ্চয়তার প্রভাব পড়েছে শেয়ারবাজারেও। সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে বড় প্রদর্শনী চেইন গুলোর শেয়ার মূল্য উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে। বিশ্লেষকেরা বলছেন, প্রেক্ষাগৃহে সিনেমা মুক্তি নিয়ে দীর্ঘমেয়াদি প্রতিশ্রুতির অভাবই বিনিয়োগকারীদের আস্থা নড়বড়ে করছে।
ধীরে বদলালেও সময় অনুকূলে নয়
যে মালিক আসুক, হলিউডের শীর্ষ তারকাদের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখতে প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পুরোপুরি বন্ধ করা সহজ হবে না। তাই পরিবর্তন আসবে ধীরে। কিন্তু বাস্তবতা হলো, দীর্ঘদিন ধরেই সময় সিনেমা হলগুলোর পক্ষে নেই। ওয়ার্নার ব্রাদার্সের মালিকানা বদল সেই ঘড়ির কাঁটা উল্টো ঘোরাতে পারবে কি না, তা নিয়ে সন্দেহ প্রবল।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 


















