পূর্ব ইউক্রেনের লোজোভা শহরের একটি রেলস্টেশনে ক্ষত সারানোর কাজ চলছিল। ঠিক তখনই আকাশে বেজে ওঠে বিমান হামলার সতর্কতা। কর্মীরা ছুটে যান বোমা আশ্রয়কেন্দ্রে। কিছুক্ষণের মধ্যেই বিস্ফোরণ আর আকাশ প্রতিরক্ষার গুলির শব্দে কেঁপে ওঠে এলাকা। এই দৃশ্য এখন লোজোভার নিত্যদিনের বাস্তবতা।
ইউক্রেনের অর্থনীতির প্রাণরেখা হিসেবে পরিচিত রেল নেটওয়ার্ককে অচল করে দিতে রাশিয়া যে পরিকল্পিত অভিযান চালাচ্ছে, লোজোভা তার বড় লক্ষ্য হয়ে উঠেছে। দেশের প্রায় দেড় হাজার কিলোমিটার দীর্ঘ রেলপথ দিয়ে চলাচল করে পণ্যের সিংহভাগ, একই সঙ্গে সামরিক সরঞ্জাম ও সেনা। এই প্রবাহ থামাতেই হামলার মাত্রা বাড়ানো হয়েছে।
রেল অবকাঠামোতে ধারাবাহিক আঘাত
ইউক্রেনের রাষ্ট্রায়ত্ত রেল সংস্থা জানিয়েছে, চলতি বছরে তাদের অবকাঠামোতে এক হাজারের বেশি হামলা হয়েছে। ট্রেন, নিয়ন্ত্রণ কক্ষ, ডিপো, সেতু এবং বিদ্যুৎ সরবরাহ কেন্দ্র—কিছুই বাদ যায়নি। কৃষ্ণসাগরের বন্দরে যাওয়া শস্যবাহী ট্রেনের রুটও হামলার লক্ষ্য হচ্ছে। এতে প্রাণহানির পাশাপাশি যুদ্ধ শুরুর পর থেকে ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে বিপুল অঙ্কে।
সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে রাজধানীর কাছে ফাস্তিভে একটি ড্রোন হামলায় পুরো স্টেশন ধ্বংস হয়ে যায়। এর আগে দিনিপ্রোর কাছে একটি বিদ্যুৎ উপকেন্দ্রে হামলায় প্রাণ হারান এক নিরাপত্তাকর্মী। অক্টোবরের আলাদা দুটি হামলায় একটি ট্রেনের ভেতরে একজন নিহত হন এবং বিদ্যুৎ বিভ্রাটে সারা দেশে ট্রেন চলাচল ব্যাহত হয়।
পরিকল্পিত যুদ্ধের অভিযোগ
রেল সংস্থার প্রধানের ভাষায়, এটি কেবল বিচ্ছিন্ন আক্রমণ নয়, বরং রেলব্যবস্থাকে থামিয়ে দেওয়ার জন্য পরিকল্পিত ও ধারাবাহিক যুদ্ধ। প্রায় প্রতিটি সংযোগস্থলই এখন লক্ষ্যবস্তু। অন্যদিকে রাশিয়া দাবি করছে, তারা সামরিক শিল্প ও জ্বালানি অবকাঠামোতেই আঘাত হানছে এবং বেসামরিক স্থাপনা লক্ষ্য নয়।
গর্বের প্রতীক থেকে ঝুঁকির কেন্দ্রে
যুদ্ধ শুরুর পর আকাশপথ বন্ধ হয়ে গেলে এবং সড়কপথে ভিড় বাড়লে রেলপথই লাখো মানুষকে নিরাপদ স্থানে পৌঁছে দিয়েছিল। ছোট কোচে গাদাগাদি করে যাত্রা করেছে শত শত মানুষ। বিদেশি নেতারাও কিয়েভে এসেছেন এই রেলপথেই। সেই গর্বের প্রতীক রেলই এখন সবচেয়ে ঝুঁকির কেন্দ্রে।
সতর্কতার সীমাবদ্ধতা
রেলকর্মীদের নিরাপত্তায় নানা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় চালকদের হেলমেট পরতে হচ্ছে, ট্রেনের ছাদে বসানো হয়েছে প্রতিরোধমূলক যন্ত্র। তবু লোজোভার মতো জায়গায়, যেখানে একাধিক রুট মিলিত হয়ে বড় লজিস্টিক কেন্দ্র তৈরি করেছে, সেখানে সুরক্ষার সীমা স্পষ্ট। এখান দিয়ে সামনের সারিতে যাওয়া অস্ত্রবাহী ট্রেন চলে, নিয়মিত আসা-যাওয়া করেন সৈনিকেরা।
লোজোভা স্টেশনের প্রধান নিনা জাবেলার কথায়, সতর্ক সংকেত বাজলেই সব কাজ ফেলে আশ্রয় নিতে হয়। তার কাছে জীবনের নিরাপত্তাই প্রথম অগ্রাধিকার। রেল অবকাঠামো রক্ষার লড়াই প্রতিদিন নতুন করে শুরু হচ্ছে, আর সেই লড়াই চালিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকারই যুদ্ধের শুরু থেকে বহাল রয়েছে।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















