০৯:২১ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৯ ডিসেম্বর ২০২৫
পূর্ণমাত্রার যুদ্ধে ইরান, যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েল ও ইউরোপের বিরুদ্ধে কঠিন লড়াইয়ের ঘোষণা ইসরায়েলের স্বীকৃতির বিরুদ্ধে আরব ইসলামি আফ্রিকান ঐক্য, সোমালিল্যান্ড প্রশ্নে তীব্র নিন্দা সোনার দামে নতুন ইতিহাস, টানা অষ্টম দফা বৃদ্ধিতে বাংলাদেশে সর্বোচ্চ চূড়া কাঁপছে গোমতী সেতু, যান চলাচল সাময়িক বন্ধ কারওয়ান বাজারে চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে মানববন্ধনে হামলা, পাল্টাপাল্টি ধাওয়া-সংঘর্ষ খালেদা জিয়ার তিন আসনে বিকল্প প্রার্থী প্রস্তুত, শেষ মুহূর্তে বড় রদবদলে বিএনপি নির্বাচনের আগে সীমান্তপথে অস্ত্র পাচারের চেষ্টা বেড়েছে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা খুলনা–৫ আসনে জামায়াতের মনোনয়ন জমা দিলেন মিয়া গোলাম পরওয়ার এই নির্বাচনে বিএনপি একা হয়ে পড়েছে: ডা. তাহের প্রথম পাঁচ মাসে নতুন বিদেশি ঋণ প্রতিশ্রুতি নেই

ইউরোপীয় ইউনিয়নের বিরুদ্ধে ট্রাম্পের কড়া অবস্থান, বদলে গেল আটলান্টিক সম্পর্কের ছক

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর যে ইউরোপীয় ঐক্যের ভিত্তি গড়তে যুক্তরাষ্ট্র নিজেই বড় ভূমিকা রেখেছিল, সেই ইউরোপীয় ইউনিয়নকে এবার সরাসরি চ্যালেঞ্জের মুখে ফেললেন সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। অভিবাসন নীতি, গণতান্ত্রিক স্বাধীনতা এবং প্রতিরক্ষা ব্যয়ের প্রশ্নে ইউরোপকে নরম ও অকার্যকর বলে আখ্যা দিয়ে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘদিনের নীতিতে বড় পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিলেন। এতে করে শীতল যুদ্ধের পর সবচেয়ে বড় পুনর্মূল্যায়নের মুখে পড়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের সম্পর্ক।

ইউরোপ নিয়ে ক্ষোভ ও নতুন নিরাপত্তা ভাবনা

চলতি বছরজুড়ে ট্রাম্প ও তাঁর সহযোগীরা ইউরোপের সমালোচনায় মুখর ছিলেন। তাঁদের অভিযোগ, ইউরোপীয় দেশগুলো অভিবাসন নিয়ন্ত্রণে ঢিলেঢালা, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ রক্ষায় দুর্বল এবং নিজেদের প্রতিরক্ষার পুরো খরচ বহনে অনিচ্ছুক। এই সমালোচনার কেন্দ্রে রয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যাকে ওয়াশিংটন এখন দেখছে অতিরিক্ত নিয়ন্ত্রিত এক بيرোক্র্যাটিক কাঠামো হিসেবে, যা দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে অক্ষম।

মাগা ধারার রাজনীতি ও তীব্র ভাষা

ট্রাম্পের নতুন জাতীয় নিরাপত্তা নীতিতে এই অবস্থান আরও স্পষ্ট। যুক্তরাষ্ট্রকে আবার মহান করার রাজনৈতিক ধারার সমর্থকেরা দীর্ঘদিন ধরেই ইউরোপীয় ইউনিয়নকে জাতীয় পরিচয় ও উদ্যোগ দমিয়ে রাখা এক অতিরাষ্ট্রীয় কাঠামো হিসেবে দেখে আসছেন। এ বছরের শুরুতে মিউনিখে এক বক্তব্যে ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স ইউরোপীয় কর্মকর্তাদের সোভিয়েত যুগের ভাষায় কমিশার বলে আখ্যা দিয়ে বিতর্ক উসকে দেন।

বাণিজ্য ও প্রযুক্তি নিয়ে টানাপোড়েন

বাণিজ্য ক্ষেত্রেও উত্তেজনা বেড়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধি ইউরোপীয় ইউনিয়নের ওপর শুল্ক বাড়ানোর হুমকি দেন, যদি তারা মার্কিন প্রযুক্তি কোম্পানির বিরুদ্ধে জরিমানা আরোপ বন্ধ না করে। সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সকে বড় অঙ্কের জরিমানা করায় এই উত্তেজনা আরও তীব্র হয়। ইউরোপীয় ইউনিয়নের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তাদের আইন সবার জন্য সমানভাবে প্রযোজ্য।

ইউরোপের আত্মরক্ষার যুক্তি

ইউরোপীয় নেতাদের মতে, প্রায় সাড়ে চারশো মিলিয়ন ভোক্তা ও বিশাল অর্থনৈতিক শক্তি নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়ন তাদের নিরাপত্তা ও বৈশ্বিক প্রভাব ধরে রাখার প্রধান হাতিয়ার। তারা স্বীকার করেন, সাতাশ দেশের এই জোট পরিচালনা করা জটিল, তবু একে ইউরোপীয় সার্বভৌমত্বের রক্ষাকবচ হিসেবেই দেখেন। একই সঙ্গে প্রতিযোগিতা বাড়াতে নিয়ন্ত্রক চাপ কমানোর উদ্যোগ চলছে।

গণতন্ত্র ও মত প্রকাশের বিতর্ক

যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা ইউরোপের গণতন্ত্র নিয়ে প্রশ্ন তুললেও ইউরোপীয় নেতারা তা নাকচ করেছেন। তাঁদের মতে, এই আক্রমণের পেছনে রয়েছে মূলত বাণিজ্যিক স্বার্থ। ইউরোপীয় কাউন্সিলের সভাপতি আন্তোনিও কস্তা স্পষ্ট করে বলেন, প্রযুক্তি দানবদের স্বার্থ রক্ষার নামে নাগরিকদের তথ্য জানার অধিকার বিসর্জন দিলে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা টিকবে না।

অর্থনীতিতে ঐক্যের প্রয়োজন

অনেক ইউরোপীয় বিশ্লেষক মনে করেন, সমস্যার মূল নয় ইউরোপীয় ইউনিয়ন, বরং সেটিই সমাধানের আশা। সাবেক ইউরোপীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রধান মারিও দ্রাগির মতে, সদস্য দেশগুলোর মধ্যে অর্থনৈতিক সম্পর্ক গভীর হলে দীর্ঘদিনের স্থবিরতা কাটিয়ে বাজারের পূর্ণ সম্ভাবনা কাজে লাগানো সম্ভব।

জনপ্রিয় সংবাদ

পূর্ণমাত্রার যুদ্ধে ইরান, যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েল ও ইউরোপের বিরুদ্ধে কঠিন লড়াইয়ের ঘোষণা

ইউরোপীয় ইউনিয়নের বিরুদ্ধে ট্রাম্পের কড়া অবস্থান, বদলে গেল আটলান্টিক সম্পর্কের ছক

০৭:৩২:৩৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৯ ডিসেম্বর ২০২৫

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর যে ইউরোপীয় ঐক্যের ভিত্তি গড়তে যুক্তরাষ্ট্র নিজেই বড় ভূমিকা রেখেছিল, সেই ইউরোপীয় ইউনিয়নকে এবার সরাসরি চ্যালেঞ্জের মুখে ফেললেন সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। অভিবাসন নীতি, গণতান্ত্রিক স্বাধীনতা এবং প্রতিরক্ষা ব্যয়ের প্রশ্নে ইউরোপকে নরম ও অকার্যকর বলে আখ্যা দিয়ে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘদিনের নীতিতে বড় পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিলেন। এতে করে শীতল যুদ্ধের পর সবচেয়ে বড় পুনর্মূল্যায়নের মুখে পড়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের সম্পর্ক।

ইউরোপ নিয়ে ক্ষোভ ও নতুন নিরাপত্তা ভাবনা

চলতি বছরজুড়ে ট্রাম্প ও তাঁর সহযোগীরা ইউরোপের সমালোচনায় মুখর ছিলেন। তাঁদের অভিযোগ, ইউরোপীয় দেশগুলো অভিবাসন নিয়ন্ত্রণে ঢিলেঢালা, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ রক্ষায় দুর্বল এবং নিজেদের প্রতিরক্ষার পুরো খরচ বহনে অনিচ্ছুক। এই সমালোচনার কেন্দ্রে রয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যাকে ওয়াশিংটন এখন দেখছে অতিরিক্ত নিয়ন্ত্রিত এক بيرোক্র্যাটিক কাঠামো হিসেবে, যা দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে অক্ষম।

মাগা ধারার রাজনীতি ও তীব্র ভাষা

ট্রাম্পের নতুন জাতীয় নিরাপত্তা নীতিতে এই অবস্থান আরও স্পষ্ট। যুক্তরাষ্ট্রকে আবার মহান করার রাজনৈতিক ধারার সমর্থকেরা দীর্ঘদিন ধরেই ইউরোপীয় ইউনিয়নকে জাতীয় পরিচয় ও উদ্যোগ দমিয়ে রাখা এক অতিরাষ্ট্রীয় কাঠামো হিসেবে দেখে আসছেন। এ বছরের শুরুতে মিউনিখে এক বক্তব্যে ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স ইউরোপীয় কর্মকর্তাদের সোভিয়েত যুগের ভাষায় কমিশার বলে আখ্যা দিয়ে বিতর্ক উসকে দেন।

বাণিজ্য ও প্রযুক্তি নিয়ে টানাপোড়েন

বাণিজ্য ক্ষেত্রেও উত্তেজনা বেড়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধি ইউরোপীয় ইউনিয়নের ওপর শুল্ক বাড়ানোর হুমকি দেন, যদি তারা মার্কিন প্রযুক্তি কোম্পানির বিরুদ্ধে জরিমানা আরোপ বন্ধ না করে। সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সকে বড় অঙ্কের জরিমানা করায় এই উত্তেজনা আরও তীব্র হয়। ইউরোপীয় ইউনিয়নের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তাদের আইন সবার জন্য সমানভাবে প্রযোজ্য।

ইউরোপের আত্মরক্ষার যুক্তি

ইউরোপীয় নেতাদের মতে, প্রায় সাড়ে চারশো মিলিয়ন ভোক্তা ও বিশাল অর্থনৈতিক শক্তি নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়ন তাদের নিরাপত্তা ও বৈশ্বিক প্রভাব ধরে রাখার প্রধান হাতিয়ার। তারা স্বীকার করেন, সাতাশ দেশের এই জোট পরিচালনা করা জটিল, তবু একে ইউরোপীয় সার্বভৌমত্বের রক্ষাকবচ হিসেবেই দেখেন। একই সঙ্গে প্রতিযোগিতা বাড়াতে নিয়ন্ত্রক চাপ কমানোর উদ্যোগ চলছে।

গণতন্ত্র ও মত প্রকাশের বিতর্ক

যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা ইউরোপের গণতন্ত্র নিয়ে প্রশ্ন তুললেও ইউরোপীয় নেতারা তা নাকচ করেছেন। তাঁদের মতে, এই আক্রমণের পেছনে রয়েছে মূলত বাণিজ্যিক স্বার্থ। ইউরোপীয় কাউন্সিলের সভাপতি আন্তোনিও কস্তা স্পষ্ট করে বলেন, প্রযুক্তি দানবদের স্বার্থ রক্ষার নামে নাগরিকদের তথ্য জানার অধিকার বিসর্জন দিলে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা টিকবে না।

অর্থনীতিতে ঐক্যের প্রয়োজন

অনেক ইউরোপীয় বিশ্লেষক মনে করেন, সমস্যার মূল নয় ইউরোপীয় ইউনিয়ন, বরং সেটিই সমাধানের আশা। সাবেক ইউরোপীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রধান মারিও দ্রাগির মতে, সদস্য দেশগুলোর মধ্যে অর্থনৈতিক সম্পর্ক গভীর হলে দীর্ঘদিনের স্থবিরতা কাটিয়ে বাজারের পূর্ণ সম্ভাবনা কাজে লাগানো সম্ভব।