জন্ম ও শৈশবের গল্প
দলীয় সূত্র ও জীবনীগ্রন্থ অনুযায়ী খালেদা জিয়ার জন্ম সাল নিয়ে ভিন্ন তথ্য রয়েছে। বিএনপির ওয়েবসাইটে জন্মসাল ১৯৪৬ উল্লেখ থাকলেও ‘নন্দিত নেত্রী: খালেদা জিয়া’ গ্রন্থে বলা হয়, তিনি জন্মগ্রহণ করেন ১৯৪৫ সালের ১৫ আগস্ট। জন্মস্থান অবিভক্ত ভারতের পশ্চিমবঙ্গের জলপাইগুঁড়ির নয়াবস্তি এলাকা। সে সময় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ সদ্য শেষ, চারদিকে শান্তির আকাঙ্ক্ষা। সেই প্রেক্ষাপটেই পরিবারের একজন চিকিৎসক বন্ধু নবজাতকের নাম রাখেন ‘শান্তি’। পরবর্তীতে পরিবারের আদরে তার ডাকনাম হয়ে ওঠে পুতুল।
পারিবারিক পরিচয়
খালেদা জিয়ার আদিবাড়ি ফেনীর ফুলগাজী উপজেলায়। তার বাবা ইস্কান্দর মজুমদার এবং মা বেগম তৈয়বা মজুমদার। তিন বোন ও দুই ভাইয়ের মধ্যে তিনি ছিলেন তৃতীয়। দুই পুত্র সন্তানের জননী খালেদা জিয়া। বড় ছেলে তারেক রহমান পিনো এবং ছোট ছেলে প্রয়াত আরাফাত রহমান কোকো।
রাজনীতিতে প্রবেশ
স্বামী শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর রাজনীতিতে সক্রিয় হন খালেদা জিয়া। ১৯৮২ সালের ৩ জানুয়ারি তিনি বিএনপিতে যোগ দেন। অল্প সময়ের মধ্যেই দলের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে আসেন। ১৯৮৪ সালের ১০ মে তিনি বিএনপির চেয়ারপারসন নির্বাচিত হন।
প্রধানমন্ত্রিত্ব ও রাষ্ট্র পরিচালনা
খালেদা জিয়া তিনবার বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন। ১৯৯১ সালে নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে প্রথমবার প্রধানমন্ত্রী হন তিনি। তার নেতৃত্বে সংবিধানের দ্বাদশ সংশোধনীর মাধ্যমে দেশে সংসদীয় গণতন্ত্র পুনঃপ্রবর্তিত হয়। ১৯৯৬ সালে তিনি স্বল্প সময়ের জন্য প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। ২০০১ সালে চারদলীয় জোটের নেতৃত্ব দিয়ে তৃতীয়বারের মতো ক্ষমতায় আসেন।

বিরোধী রাজনীতি ও নির্বাচন
২০০৮ সালের নির্বাচনের পর তিনি বিরোধী দলীয় নেতার দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৪ ও ২০২৪ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচন বিএনপি বর্জন করে। ২০১৮ সালের নির্বাচনের সময় তিনি কারাবন্দি থাকায় নির্বাচনে অংশ নিতে পারেননি।
কারাবাস ও মুক্তি
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় ২০১৮ সালে সাজাপ্রাপ্ত হয়ে কারাগারে যান খালেদা জিয়া। পরে অসুস্থতার কারণে হাসপাতালে চিকিৎসা নেন। ২০২০ সালে করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে শর্তসাপেক্ষে মুক্তি পান তিনি। ২০২৪ সালের আগস্টে রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর রাষ্ট্রপতির আদেশে তিনি পূর্ণ মুক্তি লাভ করেন।
শেষ সময়ের কর্মসূচি
২০১৭ সালে রোহিঙ্গা ক্যাম্প সফর ছিল তার সর্বশেষ প্রকাশ্য কর্মসূচি। একই বছরে তিনি শেষবারের মতো সমাবেশ ও সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন।

ব্যক্তিগত জীবনের কিছু স্মৃতি
বিভিন্ন সময়ে জন্মদিন উদযাপন করলেও কারাবাসের পর আর জন্মদিনে কেক কাটেননি খালেদা জিয়া। জীবনের শেষ বছরগুলোতে তিনি মূলত চিকিৎসা ও ব্যক্তিগত সময় কাটিয়েছেন।
বাংলাদেশের রাজনীতিতে খালেদা জিয়া ছিলেন এক প্রভাবশালী নেত্রী। তার জীবন ও রাজনীতি দেশের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হয়ে থাকবে
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















