১১:০৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০৬ নভেম্বর ২০২৫
মুর্শিদাবাদ-কাহিনী (পর্ব-৩৬৪) ক্ষমতার নৃত্য: ট্রাম্পের হোয়াইট হাউস বলরুম প্রকল্পে দানের আড়ালে ব্যবসায়িক স্বার্থের খেলা জোহরান মামদানির সিরিয়ান স্ত্রী রামা দুয়াজি সম্পর্কে এই বিষয়গুলো কি জানেন? পুঁজিবাজারে পতনের ধারা অব্যাহত: সপ্তাহ শেষে ডিএসই ও সিএসই লাল সূচকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে মৃত্যু সংবিধান উপেক্ষা করে গণভোটের তাড়াহুড়ো জনমনে সন্দেহ জাগাচ্ছে: আমীর খসরু শেয়ারবাজারে পতন: সপ্তাহ শেষে লাল সংকেতে ডিএসই ও সিএসই ব্যাংক একীভূতকরণে বিনিয়োগকারীদের ক্ষোভ: পদত্যাগ দাবি ও আন্দোলনের হুঁশিয়ারি নির্বাচনে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা ও ধর্মনিরপেক্ষতা নিশ্চিতের আহ্বান হিন্দু মহাজোটের সিঙ্গাপুরের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ভিভিয়ান বালাকৃষ্ণন: গাজা পুনর্গঠন ও শান্তি আলোচনায় বাস্তব পদক্ষেপ চাইলেন

মুর্শিদাবাদ-কাহিনী (পর্ব-৪৮)

  • Sarakhon Report
  • ১১:০০:৫৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৭ মে ২০২৪
  • 81

শ্রী নিখিলনাথ রায়

 

গোপালচাঁদের আবেদন অগ্রাহ্য হইলে, তিনি অত্যন্ত অর্থকষ্টে পতিত হইয়া, অবশেষে হতাশ-হৃদয়ে ইহ জীবনের লীলা শেষ করেন। অনন্তর কিষণচাঁদের মৃত্যু হইলে, গোবিন্দচাঁদের বিধবা পত্নী বিবি প্রাণকুমারী গবর্ণমেন্টের নিকট হইতে ৩ শত টাকা বৃত্তি পাইয়াছিলেন। গোপালচাঁদের মৃত্যুর পর তিনি গোলাপচাঁদকে দত্তক গ্রহণ করেন। গোলাপচাঁদ প্রাপ্তবয়স্ক হইলে, প্রাণকুমারী নিজ বৃত্তির বৃদ্ধির জন্য, অথবা গোলাপচাঁদকে একটি স্বতন্ত্র বৃত্তি ‘প্রদান করিতে গবর্ণমেন্টের নিকট বারংবার আবেদন করেন। তাঁহার শেষ আবেদন লেপ্টেনান্ট গবর্ণর সার চার্লস এলিয়েটের নিকট করা হয়।

কিন্তু গবর্ণমেন্ট তাঁহার কথায় কর্ণপাত করেন নাই। প্রাণকুমারীর মৃত্যুর পর গোলাপচাঁদ পুনর্ব্বার বেঙ্গল গবর্ণমেন্ট ও ভারতগবর্ণমেন্ট উভয়ের নিকটই আবেদন করেন। কিন্তু কোন স্থানে তাঁহার আবেদন গ্রাজ হয় নাই! গবর্ণমেন্ট তাঁহার বাটীনির্মাণের জন্য কেবল ৫ হাজার টাকা প্রদান করিয়াছেন। গোলাপচাদ অতি দীনভাবে জীবিকা নির্ব্বাহ করিয়া মৃত্যুমুখে পতিত হন। এক্ষণে তাঁহার পুত্র বিশ্বমান আছেন। তাঁহাদের হীনাবস্থা সত্ত্বেও সেই সুপ্রসিদ্ধ জগৎশেঠগণের বংশধর বলিয়া এবং মুর্শিদাবাদের জনসম্প্রদায়ের নেতা বলিয়া আজিও মুর্শিদাবাদবাসিগণ তাঁহাদের প্রতি যথেষ্ট সম্মান প্রদর্শন করিয়া থাকে।

যে জগৎশেঠগণ মধ্যাহ্নভাস্কর তুল্য প্রদীপ্ত প্রভাবে সমগ্র জগতে গৌরবজ্যোতিঃ বিকীর্ণ করিয়াছিলেন, এক্ষণে তাঁহাদের বংশধর সামান্য দীপশিখার বস্তায় আপনার ক্ষীণরশ্মি বিকীর্ণ করিতেছেন। দুর্ভাগ্যের প্রবল ঝটিকা অতঃপর এই রশ্মি চিরনির্বাপিত করিবে কি না, তাহা কে বলিতে পারে? জগৎশেঠদিগের সুদূরবিস্তৃত বাসভবন এক্ষণে ভগ্ন দশায় পতিত। অনেক স্থানের চিহ্নমাত্রও নাই। ভাগীরথী ইহার অধিকাংশই গর্ভস্থ করিয়াছেন। ঠাকুরবাটীর প্রাঙ্গণে অনেক বৃহৎ বৃহৎ প্রস্তরখণ্ড ভগ্নাবস্থায় পড়িয়া রহিয়াছে। তন্মধ্যে পার্শ্বনাথের মন্দিরের কয়েকটি বহুমূল্য স্তন্ত ও চৌকাঠের শিল্পনৈপুণ্য আজিও বিস্ময়োৎপাদন করিয়া থাকে। এই পার্শ্বনাথের মন্দির ভাগীরথীতীরে অবস্থিত ছিল।

ভাগীরথীগর্ভস্থ হওয়ার উপক্রম হওয়ায়, তাহা ভগ্ন করিয়া ঠাকুরবাটীর প্রাঙ্গণে ফেলিয়া রাখা হইয়াছে। জগৎশেঠগণ বৈষ্ণব হওয়ার পূর্ব্বে সেই মন্দিরে পূজোপাসনাদি করিতেন। অন্তঃপুর হইতে পার্শ্বনাথের মন্দির ও বর্তমান গোবিন্দদেবের মন্দিরে যাইবার জন্য সুরঙ্গ ছিল; এক্ষণে তাহার পথ বন্ধ হইয়া গিয়াছে। বর্তমান ঠাকুরবাটী পূর্ব্বমুখে অবস্থিত এবং সদর রাস্তার উপরে। ইহার একটি প্রকাণ্ড তোরণ-দ্বার অদ্যাপি বর্ত- মান আছে। ঠাকুরবাটীর পশ্চাতে কতকগুলি উচ্চ ভিত্তি দৃষ্ট হয়। তথায় জগৎশেঠগণের উপবেশনালয় ছিল।

 

 

 

 

জনপ্রিয় সংবাদ

মুর্শিদাবাদ-কাহিনী (পর্ব-৩৬৪)

মুর্শিদাবাদ-কাহিনী (পর্ব-৪৮)

১১:০০:৫৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৭ মে ২০২৪

শ্রী নিখিলনাথ রায়

 

গোপালচাঁদের আবেদন অগ্রাহ্য হইলে, তিনি অত্যন্ত অর্থকষ্টে পতিত হইয়া, অবশেষে হতাশ-হৃদয়ে ইহ জীবনের লীলা শেষ করেন। অনন্তর কিষণচাঁদের মৃত্যু হইলে, গোবিন্দচাঁদের বিধবা পত্নী বিবি প্রাণকুমারী গবর্ণমেন্টের নিকট হইতে ৩ শত টাকা বৃত্তি পাইয়াছিলেন। গোপালচাঁদের মৃত্যুর পর তিনি গোলাপচাঁদকে দত্তক গ্রহণ করেন। গোলাপচাঁদ প্রাপ্তবয়স্ক হইলে, প্রাণকুমারী নিজ বৃত্তির বৃদ্ধির জন্য, অথবা গোলাপচাঁদকে একটি স্বতন্ত্র বৃত্তি ‘প্রদান করিতে গবর্ণমেন্টের নিকট বারংবার আবেদন করেন। তাঁহার শেষ আবেদন লেপ্টেনান্ট গবর্ণর সার চার্লস এলিয়েটের নিকট করা হয়।

কিন্তু গবর্ণমেন্ট তাঁহার কথায় কর্ণপাত করেন নাই। প্রাণকুমারীর মৃত্যুর পর গোলাপচাঁদ পুনর্ব্বার বেঙ্গল গবর্ণমেন্ট ও ভারতগবর্ণমেন্ট উভয়ের নিকটই আবেদন করেন। কিন্তু কোন স্থানে তাঁহার আবেদন গ্রাজ হয় নাই! গবর্ণমেন্ট তাঁহার বাটীনির্মাণের জন্য কেবল ৫ হাজার টাকা প্রদান করিয়াছেন। গোলাপচাদ অতি দীনভাবে জীবিকা নির্ব্বাহ করিয়া মৃত্যুমুখে পতিত হন। এক্ষণে তাঁহার পুত্র বিশ্বমান আছেন। তাঁহাদের হীনাবস্থা সত্ত্বেও সেই সুপ্রসিদ্ধ জগৎশেঠগণের বংশধর বলিয়া এবং মুর্শিদাবাদের জনসম্প্রদায়ের নেতা বলিয়া আজিও মুর্শিদাবাদবাসিগণ তাঁহাদের প্রতি যথেষ্ট সম্মান প্রদর্শন করিয়া থাকে।

যে জগৎশেঠগণ মধ্যাহ্নভাস্কর তুল্য প্রদীপ্ত প্রভাবে সমগ্র জগতে গৌরবজ্যোতিঃ বিকীর্ণ করিয়াছিলেন, এক্ষণে তাঁহাদের বংশধর সামান্য দীপশিখার বস্তায় আপনার ক্ষীণরশ্মি বিকীর্ণ করিতেছেন। দুর্ভাগ্যের প্রবল ঝটিকা অতঃপর এই রশ্মি চিরনির্বাপিত করিবে কি না, তাহা কে বলিতে পারে? জগৎশেঠদিগের সুদূরবিস্তৃত বাসভবন এক্ষণে ভগ্ন দশায় পতিত। অনেক স্থানের চিহ্নমাত্রও নাই। ভাগীরথী ইহার অধিকাংশই গর্ভস্থ করিয়াছেন। ঠাকুরবাটীর প্রাঙ্গণে অনেক বৃহৎ বৃহৎ প্রস্তরখণ্ড ভগ্নাবস্থায় পড়িয়া রহিয়াছে। তন্মধ্যে পার্শ্বনাথের মন্দিরের কয়েকটি বহুমূল্য স্তন্ত ও চৌকাঠের শিল্পনৈপুণ্য আজিও বিস্ময়োৎপাদন করিয়া থাকে। এই পার্শ্বনাথের মন্দির ভাগীরথীতীরে অবস্থিত ছিল।

ভাগীরথীগর্ভস্থ হওয়ার উপক্রম হওয়ায়, তাহা ভগ্ন করিয়া ঠাকুরবাটীর প্রাঙ্গণে ফেলিয়া রাখা হইয়াছে। জগৎশেঠগণ বৈষ্ণব হওয়ার পূর্ব্বে সেই মন্দিরে পূজোপাসনাদি করিতেন। অন্তঃপুর হইতে পার্শ্বনাথের মন্দির ও বর্তমান গোবিন্দদেবের মন্দিরে যাইবার জন্য সুরঙ্গ ছিল; এক্ষণে তাহার পথ বন্ধ হইয়া গিয়াছে। বর্তমান ঠাকুরবাটী পূর্ব্বমুখে অবস্থিত এবং সদর রাস্তার উপরে। ইহার একটি প্রকাণ্ড তোরণ-দ্বার অদ্যাপি বর্ত- মান আছে। ঠাকুরবাটীর পশ্চাতে কতকগুলি উচ্চ ভিত্তি দৃষ্ট হয়। তথায় জগৎশেঠগণের উপবেশনালয় ছিল।