০৪:৩৩ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ০৭ নভেম্বর ২০২৫
অটিজম চিকিৎসার অপ্রতিষ্ঠিত পথে প্রতিটি পরিবার সাত দশক পর ব্রিটিশ মিউজিক্যালে নতুন জীবন পেল প্রিয় ভালুক সম্পর্কের উষ্ণতা ধরে রাখা উচিৎ, পারিবারিক সীমারেখা রক্ষা করে উৎসব উদযাপনের জ্ঞান শৈশবের গভীর ক্ষত থেকে লেখা এক রন্ধনশিল্পীর আত্মস্বীকারোক্তি মুর্শিদাবাদ-কাহিনী (পর্ব-৩৬৪) ক্ষমতার নৃত্য: ট্রাম্পের হোয়াইট হাউস বলরুম প্রকল্পে দানের আড়ালে ব্যবসায়িক স্বার্থের খেলা জোহরান মামদানির সিরিয়ান স্ত্রী রামা দুয়াজি সম্পর্কে এই বিষয়গুলো কি জানেন? পুঁজিবাজারে পতনের ধারা অব্যাহত: সপ্তাহ শেষে ডিএসই ও সিএসই লাল সূচকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে মৃত্যু সংবিধান উপেক্ষা করে গণভোটের তাড়াহুড়ো জনমনে সন্দেহ জাগাচ্ছে: আমীর খসরু

মুর্শিদাবাদ-কাহিনী (পর্ব-৭৭)

  • Sarakhon Report
  • ১১:০০:৪৪ অপরাহ্ন, বুধবার, ৫ জুন ২০২৪
  • 71

শ্রী নিখিলনাথ রায়

আফগানেরা তাঁহার সহিত সাক্ষাৎ করিয়া সমস্ত বিষয়ের বন্দোবস্ত করিতে স্বীকৃত হয়। পরে তাহারা দরবারগৃহে জৈনুদ্দীনের সহিত সাক্ষাতের ছলে তাঁহাকে সেই স্থানে নিহত করিয়া, তাঁহার পরিবারবর্গের যংপরোনাস্তি লাঞ্ছনা করে। তাহারা জৈনুদ্দীনের স্ত্রী আমিনা বেগম ও অন্যান্য সম্ভ্রান্ত মহিলাদিগকে উন্মুক্ত শকটে আরোহণ করাইয়া, প্রকান্ত রাজপথ দিয়া সমস্ত নগর প্রদক্ষিণ করায় এবং জৈনুদ্দীনের পিতা ও আলিবন্দীর জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা হাজী আহমদকে অশেষবিধ কষ্ট প্রদান করিয়া নিহত করে। ক্রমে সমস্ত বিহার প্রদেশ তাহাদের করতলগত হয়।

নবাব এই সংবাদশ্রবণে হৃদয়ে এতদূর আঘাত প্রাপ্ত হন যে, আফগানদিগের দমনের কি উপায় করিবেন, কিছুই স্থির করিতে পারেন নাই। তিনি নিজ প্রাণপ্রিয় জামাতা জৈনুদ্দীনের ও জ্যেষ্ঠ- ভ্রাতার তাদৃশ শোচনীয় পরিণামে অত্যন্ত ব্যথিত হইয়া পড়িলেন। স্নেহপুত্তলী কন্যা, দৌহিত্র ও দৌহিত্রীগণের নির্যাতন ও অবমাননার -নবাব স্ত্রীলোকের ন্যায় কাতর হইলেন; তাহার উপর পাটনা ও সমস্ত বিহারের দুর্দশার স্মৃতি তাঁহাকে আরও অভিভূত করিয়া ফেলিল। সেই সময়ে তাঁহার সেই মহীয়সী মহিষীর উপদেশালোক পুনরায় তাঁহার হৃদয়াকাশ হইতে বিষাদ-মেঘ দূরীভূত করিতে আরম্ভ করিল।

তিনি নবাবকে নিতান্ত নিস্তেজ ভাবে অবস্থিতি করিতে দেখিয়া, তাঁহাকে আফগানদিগের বিরুদ্ধে উত্তেতি করিতে লাগিলেন। যাহাতে করা, দৌহিত্র ও দৌহিত্রীগণের উদ্ধার সাধন হয়, তজ্জন্য প্রকৃষ্ট উপায় অবলম্বন করিতে পরামর্শ দিলেন। তিনি নবাবের হৃদয়দৌলোর: যৎপরোনাস্তি নিন্দা করিয়া, যাহাতে বলবতী হয়, তজ্জনা তাঁহাকে অবিরত তাঁহার মনে শত্রুদমনের ইচ্ছা প্রোৎসাহিত করিতে লাগিলেন। বেগমের উত্তেজনায় নবাব প্রবুদ্ধ হইয়া, শকগানদিগের দমনে কৃতসঙ্কল্প হইলেন এবং আপনার সৈন্যদিগকে আহ্বান করিয়া তাহা- দিগের নিকট সমস্ত কথা ব্যক্ত করিলেন। অতঃপর তিনি তাহাদিগকে উৎসাহিত করিয়া, স্রোতস্বিনীর মহাপ্রবাহে ভাসমান মুষ্টিমেয় আফগান তৃণগুচ্ছকে ভাসাইবার জন্য প্রবলবেগে ধাবিত হইলেন।

তাঁহার যুদ্ধ কৌশলে অচিরাং আফগানগণ বিধ্বস্ত হইয়া গেল। নবাব আপনার কন্যা, দৌহিত্র ও দৌহিত্রীগণের উদ্ধার-সাধন করিয়া এবং আফগান- দিগের পরিবারগণের প্রতি যথেষ্ট সম্মান দেখাইয়া, যুগপৎ আপনার শৌর্য্য ও মহত্ত্বের পরিচয় প্রদান করিলেন। নবাববেগম যদি আলিবদী খাঁকে আফগানদিগের বিরুদ্ধে উত্তেজিত না করিতেন, তাহা হইলে, তিনি শোকে এত দূর অভিভূত হইয়া পড়িতেন যে, সহসা শত্রুদিগকে দমন করিতে পারিতেন কি না সন্দেহ।

জনপ্রিয় সংবাদ

অটিজম চিকিৎসার অপ্রতিষ্ঠিত পথে প্রতিটি পরিবার

মুর্শিদাবাদ-কাহিনী (পর্ব-৭৭)

১১:০০:৪৪ অপরাহ্ন, বুধবার, ৫ জুন ২০২৪

শ্রী নিখিলনাথ রায়

আফগানেরা তাঁহার সহিত সাক্ষাৎ করিয়া সমস্ত বিষয়ের বন্দোবস্ত করিতে স্বীকৃত হয়। পরে তাহারা দরবারগৃহে জৈনুদ্দীনের সহিত সাক্ষাতের ছলে তাঁহাকে সেই স্থানে নিহত করিয়া, তাঁহার পরিবারবর্গের যংপরোনাস্তি লাঞ্ছনা করে। তাহারা জৈনুদ্দীনের স্ত্রী আমিনা বেগম ও অন্যান্য সম্ভ্রান্ত মহিলাদিগকে উন্মুক্ত শকটে আরোহণ করাইয়া, প্রকান্ত রাজপথ দিয়া সমস্ত নগর প্রদক্ষিণ করায় এবং জৈনুদ্দীনের পিতা ও আলিবন্দীর জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা হাজী আহমদকে অশেষবিধ কষ্ট প্রদান করিয়া নিহত করে। ক্রমে সমস্ত বিহার প্রদেশ তাহাদের করতলগত হয়।

নবাব এই সংবাদশ্রবণে হৃদয়ে এতদূর আঘাত প্রাপ্ত হন যে, আফগানদিগের দমনের কি উপায় করিবেন, কিছুই স্থির করিতে পারেন নাই। তিনি নিজ প্রাণপ্রিয় জামাতা জৈনুদ্দীনের ও জ্যেষ্ঠ- ভ্রাতার তাদৃশ শোচনীয় পরিণামে অত্যন্ত ব্যথিত হইয়া পড়িলেন। স্নেহপুত্তলী কন্যা, দৌহিত্র ও দৌহিত্রীগণের নির্যাতন ও অবমাননার -নবাব স্ত্রীলোকের ন্যায় কাতর হইলেন; তাহার উপর পাটনা ও সমস্ত বিহারের দুর্দশার স্মৃতি তাঁহাকে আরও অভিভূত করিয়া ফেলিল। সেই সময়ে তাঁহার সেই মহীয়সী মহিষীর উপদেশালোক পুনরায় তাঁহার হৃদয়াকাশ হইতে বিষাদ-মেঘ দূরীভূত করিতে আরম্ভ করিল।

তিনি নবাবকে নিতান্ত নিস্তেজ ভাবে অবস্থিতি করিতে দেখিয়া, তাঁহাকে আফগানদিগের বিরুদ্ধে উত্তেতি করিতে লাগিলেন। যাহাতে করা, দৌহিত্র ও দৌহিত্রীগণের উদ্ধার সাধন হয়, তজ্জন্য প্রকৃষ্ট উপায় অবলম্বন করিতে পরামর্শ দিলেন। তিনি নবাবের হৃদয়দৌলোর: যৎপরোনাস্তি নিন্দা করিয়া, যাহাতে বলবতী হয়, তজ্জনা তাঁহাকে অবিরত তাঁহার মনে শত্রুদমনের ইচ্ছা প্রোৎসাহিত করিতে লাগিলেন। বেগমের উত্তেজনায় নবাব প্রবুদ্ধ হইয়া, শকগানদিগের দমনে কৃতসঙ্কল্প হইলেন এবং আপনার সৈন্যদিগকে আহ্বান করিয়া তাহা- দিগের নিকট সমস্ত কথা ব্যক্ত করিলেন। অতঃপর তিনি তাহাদিগকে উৎসাহিত করিয়া, স্রোতস্বিনীর মহাপ্রবাহে ভাসমান মুষ্টিমেয় আফগান তৃণগুচ্ছকে ভাসাইবার জন্য প্রবলবেগে ধাবিত হইলেন।

তাঁহার যুদ্ধ কৌশলে অচিরাং আফগানগণ বিধ্বস্ত হইয়া গেল। নবাব আপনার কন্যা, দৌহিত্র ও দৌহিত্রীগণের উদ্ধার-সাধন করিয়া এবং আফগান- দিগের পরিবারগণের প্রতি যথেষ্ট সম্মান দেখাইয়া, যুগপৎ আপনার শৌর্য্য ও মহত্ত্বের পরিচয় প্রদান করিলেন। নবাববেগম যদি আলিবদী খাঁকে আফগানদিগের বিরুদ্ধে উত্তেজিত না করিতেন, তাহা হইলে, তিনি শোকে এত দূর অভিভূত হইয়া পড়িতেন যে, সহসা শত্রুদিগকে দমন করিতে পারিতেন কি না সন্দেহ।