০৪:৩৩ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ০৭ নভেম্বর ২০২৫
অটিজম চিকিৎসার অপ্রতিষ্ঠিত পথে প্রতিটি পরিবার সাত দশক পর ব্রিটিশ মিউজিক্যালে নতুন জীবন পেল প্রিয় ভালুক সম্পর্কের উষ্ণতা ধরে রাখা উচিৎ, পারিবারিক সীমারেখা রক্ষা করে উৎসব উদযাপনের জ্ঞান শৈশবের গভীর ক্ষত থেকে লেখা এক রন্ধনশিল্পীর আত্মস্বীকারোক্তি মুর্শিদাবাদ-কাহিনী (পর্ব-৩৬৪) ক্ষমতার নৃত্য: ট্রাম্পের হোয়াইট হাউস বলরুম প্রকল্পে দানের আড়ালে ব্যবসায়িক স্বার্থের খেলা জোহরান মামদানির সিরিয়ান স্ত্রী রামা দুয়াজি সম্পর্কে এই বিষয়গুলো কি জানেন? পুঁজিবাজারে পতনের ধারা অব্যাহত: সপ্তাহ শেষে ডিএসই ও সিএসই লাল সূচকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে মৃত্যু সংবিধান উপেক্ষা করে গণভোটের তাড়াহুড়ো জনমনে সন্দেহ জাগাচ্ছে: আমীর খসরু

মুর্শিদাবাদ-কাহিনী (পর্ব-৮০)

  • Sarakhon Report
  • ১১:০০:৫৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ৮ জুন ২০২৪
  • 74

শ্রী নিখিলনাথ রায়

নবাববেগম নিজেই তাঁহার উপায় করিলেন।। নবাববেগম হোসেন কুলীর প্রতি ঘসেটীর ক্রোধ জানিতে পারিয়া উক্ত খাঁর বধের জন্য নওয়াজেস্ মহম্মদের মত করিতে ঘসেটাকেই নিযুক্ত করেন। চরিত্রহীনা রমণী যখন স্বীয় প্রণয়পাত্রকে অপরের প্রণয়াকাঙ্ক্ষী দেখে, তখন হিতাহিত জ্ঞানশুপ্ত হয়; এমন কি, ক্রোধও হিংসার বশীভূত হইয়া সেই প্রণয়পাত্রেরই মৃত্যুকামনা পর্যন্ত করিতে ত্রুটি করে না। বঙ্কিমচন্দ্রের রাজসিংহে জেব উন্নিসাচরিত্র এই রূপ ভাবেই চিত্রিত হইয়াছে। অবশেষে নওয়াজেস্ নানাপ্রকারে বাধ্য হইয়া মত প্রদন করিলে, নবাব আলিবদ্দী খাঁ স্বীয় দোষক্ষালনের জন্য শিকারচ্ছলে রাজমহলে গমন করিলেন। নবাববেগম তাহার পর সিরাজকে হোসেনকুলী খাঁর নিধনের জন্য আদেশ দেন। এই জন্য।

সিরাজ হোসেনকুলী খাঁর হত্যাকাণ্ড সম্পাদন করেন। প্রচলিত ইতিহাসে দেখিতে পাওয়া যায় যে, সিরাজ স্বহস্তে হোসেন- কুলী খাঁর প্রাণদণ্ড করিয়াছিলেন; কিন্তু তাহার কোন বিশেষ প্রমাণ পাওয়া যায় না।। যে ব্যক্তি অবৈধ উপায়ে নিজ জননীকে কুপথগামিনী করে, কে তাহাকে অক্ষতশরীরে জীবিত দেখিতে পারে? যাহার জন্য নিজবংশ চির কলঙ্কিত হইয়া উঠে, কে তাহার নিঃসংকোচে কালযাপন সহ করিয়া থাকে? এই জন্য সিরাজকর্তৃক হোসেনকুলী খাঁর বধমাদন ঘটিয়াছিল। যে নবাববেগমকে দেশীয় ও ইউরোপীয়গণ সহস্রকণ্ঠে প্রশংসা করিয়াছেন, তিনি সিরাজউদ্দৌলাকে এই কার্য্যে উৎসাহিত করিয়াছিলেন। নবাব আলিবন্দী খাঁরও ইহা অবিদিত ছিল না।

তবে কি কারণে কেবলই সিরাজ ঐতিহাসিকগণের নিকট দোষী হইলেন, তাহা আমরা বলিতে পারি না। জানি না, সভ্য অথবা অসভ্য জাতির মধ্যে কেহ স্বীয় জননীর ধর্ম্মধ্বংসকারীকে প্রীতির চক্ষে দেখিতে পারে কিনা? সিরাজ ইহার জন্য ঐতিহাসিকগণের নিন্দার পাত্র হইতে পারেন, কিন্তু আমরা এ স্থলে তাঁহাকে বিশেষরূপে দোষী বলিয়া প্রতিপন্ন করার কোন কারণ দেখিতে পাই না। নবাব আলিবদ্দী খাঁর মৃত্যুর পরে সিরাজউদ্দৌলা বাঙ্গলা, বিহার, উড়িষ্যার সিংহাসনে আরোহণ করিয়া, আপনার জ্যেষ্ঠতাতপত্নী ও মাতৃস্বসা ঘসেটা বেগমের মোতিঝিলের প্রাসাদ আক্রমণ করিতে লোক প্রেরণ করেন।

ঘসেটী বরাবরই সিরাজের বিরোধিনী ছিলেন এবং যাহাতে সিরাজ সিংহাসনে আরোহণ করিতে না পারেন, তজ্জন্য তাঁহার দেওয়ান রাজা রাজবল্লভের দ্বারা ইংরেজদিগের সহিত যুক্তি করিতেন। আলিবদ্দী সে কথা বুঝিতে পারিয়া, ইংরেজদিগের প্রতি অসন্তুষ্ট হন এবং তাহাদিগকে দমন করার জন্য সিরাজকে মৃত্যু শয্যায় উপদেশ দিয়া যান। সিংহাসনে আরোহণ করিয়াই সিরাজ ঘসেটার মোতিঝিলের প্রাসাদ আক্রমণ করেন। আলিবদ্দীর বেগম এই বিবাদ মিটাইতে অনেক চেষ্টা করিয়াছিলেন। তিনি ও জগৎশেঠ ঘসেটাকে নিবৃত্ত হইতে অনুরোধ করেন। ঘসেটা প্রথমে স্বীকৃত হন; কিন্তু অবশেষে সিরাজ তাঁহার দুরভিসন্ধি বুঝিতে পারিয়া, তাঁহাকে মোতিঝিলের প্রাসাদ হইতে বন্দী করিয়া আনেন।

জনপ্রিয় সংবাদ

অটিজম চিকিৎসার অপ্রতিষ্ঠিত পথে প্রতিটি পরিবার

মুর্শিদাবাদ-কাহিনী (পর্ব-৮০)

১১:০০:৫৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ৮ জুন ২০২৪

শ্রী নিখিলনাথ রায়

নবাববেগম নিজেই তাঁহার উপায় করিলেন।। নবাববেগম হোসেন কুলীর প্রতি ঘসেটীর ক্রোধ জানিতে পারিয়া উক্ত খাঁর বধের জন্য নওয়াজেস্ মহম্মদের মত করিতে ঘসেটাকেই নিযুক্ত করেন। চরিত্রহীনা রমণী যখন স্বীয় প্রণয়পাত্রকে অপরের প্রণয়াকাঙ্ক্ষী দেখে, তখন হিতাহিত জ্ঞানশুপ্ত হয়; এমন কি, ক্রোধও হিংসার বশীভূত হইয়া সেই প্রণয়পাত্রেরই মৃত্যুকামনা পর্যন্ত করিতে ত্রুটি করে না। বঙ্কিমচন্দ্রের রাজসিংহে জেব উন্নিসাচরিত্র এই রূপ ভাবেই চিত্রিত হইয়াছে। অবশেষে নওয়াজেস্ নানাপ্রকারে বাধ্য হইয়া মত প্রদন করিলে, নবাব আলিবদ্দী খাঁ স্বীয় দোষক্ষালনের জন্য শিকারচ্ছলে রাজমহলে গমন করিলেন। নবাববেগম তাহার পর সিরাজকে হোসেনকুলী খাঁর নিধনের জন্য আদেশ দেন। এই জন্য।

সিরাজ হোসেনকুলী খাঁর হত্যাকাণ্ড সম্পাদন করেন। প্রচলিত ইতিহাসে দেখিতে পাওয়া যায় যে, সিরাজ স্বহস্তে হোসেন- কুলী খাঁর প্রাণদণ্ড করিয়াছিলেন; কিন্তু তাহার কোন বিশেষ প্রমাণ পাওয়া যায় না।। যে ব্যক্তি অবৈধ উপায়ে নিজ জননীকে কুপথগামিনী করে, কে তাহাকে অক্ষতশরীরে জীবিত দেখিতে পারে? যাহার জন্য নিজবংশ চির কলঙ্কিত হইয়া উঠে, কে তাহার নিঃসংকোচে কালযাপন সহ করিয়া থাকে? এই জন্য সিরাজকর্তৃক হোসেনকুলী খাঁর বধমাদন ঘটিয়াছিল। যে নবাববেগমকে দেশীয় ও ইউরোপীয়গণ সহস্রকণ্ঠে প্রশংসা করিয়াছেন, তিনি সিরাজউদ্দৌলাকে এই কার্য্যে উৎসাহিত করিয়াছিলেন। নবাব আলিবন্দী খাঁরও ইহা অবিদিত ছিল না।

তবে কি কারণে কেবলই সিরাজ ঐতিহাসিকগণের নিকট দোষী হইলেন, তাহা আমরা বলিতে পারি না। জানি না, সভ্য অথবা অসভ্য জাতির মধ্যে কেহ স্বীয় জননীর ধর্ম্মধ্বংসকারীকে প্রীতির চক্ষে দেখিতে পারে কিনা? সিরাজ ইহার জন্য ঐতিহাসিকগণের নিন্দার পাত্র হইতে পারেন, কিন্তু আমরা এ স্থলে তাঁহাকে বিশেষরূপে দোষী বলিয়া প্রতিপন্ন করার কোন কারণ দেখিতে পাই না। নবাব আলিবদ্দী খাঁর মৃত্যুর পরে সিরাজউদ্দৌলা বাঙ্গলা, বিহার, উড়িষ্যার সিংহাসনে আরোহণ করিয়া, আপনার জ্যেষ্ঠতাতপত্নী ও মাতৃস্বসা ঘসেটা বেগমের মোতিঝিলের প্রাসাদ আক্রমণ করিতে লোক প্রেরণ করেন।

ঘসেটী বরাবরই সিরাজের বিরোধিনী ছিলেন এবং যাহাতে সিরাজ সিংহাসনে আরোহণ করিতে না পারেন, তজ্জন্য তাঁহার দেওয়ান রাজা রাজবল্লভের দ্বারা ইংরেজদিগের সহিত যুক্তি করিতেন। আলিবদ্দী সে কথা বুঝিতে পারিয়া, ইংরেজদিগের প্রতি অসন্তুষ্ট হন এবং তাহাদিগকে দমন করার জন্য সিরাজকে মৃত্যু শয্যায় উপদেশ দিয়া যান। সিংহাসনে আরোহণ করিয়াই সিরাজ ঘসেটার মোতিঝিলের প্রাসাদ আক্রমণ করেন। আলিবদ্দীর বেগম এই বিবাদ মিটাইতে অনেক চেষ্টা করিয়াছিলেন। তিনি ও জগৎশেঠ ঘসেটাকে নিবৃত্ত হইতে অনুরোধ করেন। ঘসেটা প্রথমে স্বীকৃত হন; কিন্তু অবশেষে সিরাজ তাঁহার দুরভিসন্ধি বুঝিতে পারিয়া, তাঁহাকে মোতিঝিলের প্রাসাদ হইতে বন্দী করিয়া আনেন।