শ্রী নিখিলনাথ রায়
নওয়াজেস্ মহম্মদখী নিঃসন্তান ছিলেন; এজন্য তিনি সিরাজউদ্দৌলার কনিষ্ঠ ভ্রাতা এক্রাম উদ্দৌলাকে পুত্ররূপে গ্রহণ করেন। যখন মোতি- ঝিলে তিনি আগমন করিতেন, এক্রাম উদ্দৌলাও তাঁহার সহিত আসিত। তাঁহার ন্যায় তাঁহার প্রিয় পুত্রটিও নর্তকীগণের কণ্ঠসুধা পান করিত। এক্রামের মনোরঞ্জনের জন্য ভিন্ন ভিন্ন সম্প্রদায়ের নর্তকী নিযুক্ত হইত। মুতাক্ষরীনকার এই সম্বন্ধে একটি গল্প বলিয়াছেন, তাহা হইতে নওয়াজেস্ মহম্মদ খাঁর ন্যায়পরায়ণতারও পরিচয় পাওয়া যায়।
এক দিন এক্রাম উদ্দৌলা এক দল নর্তকী লইয়া মোতিঝিলের রম্যকাননে আনন্দোপভোগ করিতেছিলেন। তাহাদের মধ্যে একটি নর্তকী মুতাক্ষরীনকারের কনিষ্ঠ ভ্রাতা গালিব আলির প্রতি কটাক্ষপাত করে; ক্রমে উভয়ের দৃষ্টিবিনিময় হইতে থাকে; ইহাতে অনুচরবর্গসহ এক্রাম উদ্দৌলা অত্যন্ত ক্রুদ্ধ হইয়া উঠিলে, গালিব আলি তথা হইতে প্রস্থান করিতে বাধ্য হয়।
এক্রাম উদ্দৌলা নওয়াজেস্ মহম্মদ খার নিকট বারংবার বলিতে আরম্ভ করেন যে, গালিব আলি যদি পলায়ন না করিত, তাহা হইলে আমার হস্তে নিশ্চয়ই তাহার প্রাণবায়ুর অবসান হইত। নওয়াজেস্ মহম্মদ খাঁ এক্রাম উদ্দৌলার এইরূপ কথা শুনিয়া রাগান্বিত হইয়া বলেন, যদি তুমি তাহাকে বধ করিতে, তাহা হইলে, আমিও স্বহস্তে তোমার কণ্ঠ ছেদন করিতাম। তুমি যেমন আমার এক ভগিনীর পুত্র, সেও সেইরূপ দ্বিতীয়া ভগিনীর গর্ভজাত।
মোতিঝিলের বৃক্ষবাটিকা তিন দিকে স্বাভাবিক পরিখায় বেষ্টিত ছিল; নওয়াজেস্ মহম্মদ খাঁ কেবল পশ্চিম দিকে তোরণদ্বার নির্মাণ করিয়া তাহাকে সুরক্ষিত করেন। উক্ত তোরণদ্বারের চিহ্ন আজিও বিদ্যমান আছে। তাহারই নিকটে হিজরী ১১৬৩ অব্দে (১৭৫০/৫১ খৃঃ অব্দে) এক মজেদ, মাদ্রাসা ও লাঙ্গরখানা (অতিথিশালা) নিখিত হয়। মজেদটি অস্থাপি বর্তমান রহিয়াছে। তাহার বৃহৎ গম্বুজত্রয়ের নিয়ে শব্দ করিলে, ভিতর হইতে প্রতিধ্বনি নির্গত হয়। মজেদের সম্মুখ ভাগে ফারসী ভাষায় তাহার নির্মাণাব্দ লিখিত আছে।
Leave a Reply