০৪:৩৫ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৭ অক্টোবর ২০২৫
প্রাচীন ভারতে গণিতচর্চা (পর্ব-৩১৫) ভারতের কৃষকদের জন্য নতুন আশার আলো— কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তায় বদলে যাচ্ছে মৌসুমি বৃষ্টির পূর্বাভাস নীল উপত্যকার টমেটোর গল্পে মিশরীয় স্বাদের ইতিহাস ও নারী ঐতিহ্যের সন্ধান শত্রুর তুলনায় বন্ধুর বিশ্বাসঘাতকতা  অধিক আঘাত দেয়  বলিউডের তারকারা এখন চায় স্ট্রিমিংয়ের লাভের শেয়ার, শুধু অগ্রিম চেক নয় মুর্শিদাবাদ-কাহিনী (পর্ব-৩৫৩) যুক্তরাষ্ট্রে সেপ্টেম্বরে মুদ্রাস্ফীতি ৩ শতাংশে পৌঁছালেও প্রত্যাশার নিচে, সুদহার কমাতে স্বস্তিতে ফেড অধিকাংশ শেয়ারদরের পতনে ডিএসই ও সিএসই সপ্তাহ শুরু করল লাল সূচকে শেহবাজ শরিফ ও আসিম মুনির ‘মহান মানুষ’, বললেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আত্মসাৎ হওয়া ৪৫০০ কোটি টাকার ফেরত দাবি—দুর্নীতিবাজদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চায় গ্রাহকরা

যাহা ছিল তাহাই থাকছে

  • Sarakhon Report
  • ১০:১০:৪০ অপরাহ্ন, শনিবার, ১ জুন ২০২৪
  • 41

সুমন চট্টোপাধ্যায়

গোড়াতেই আমার তরফে একটি বিধিবদ্ধ সতর্কীকরণ দিয়ে রাখা জরুরি। ২০২৪-এর লোকসভা ভোট নিয়ে বিবিধ খবরের চ্যানেল যে যার মতো করে ডঙ্কা বাজিয়ে বুথ ফেরত সমীক্ষার ফল প্রকাশ করল, তাদের একটির ওপরেও ব্যক্তিগতভাবে আমার কোনও আস্থা নেই। কেন?

রূঢ সত্যটি প্রথমে কবুল করা প্রয়োজন। প্রতিষ্ঠান হিসেবে ভারতীয় মিডিয়ার এখন কার্যত কোনও বিশ্বাসযোগ্যতা নেই। ইন্দিরা গান্ধি দেশে জরুরি অবস্থা জারি করে মিডিয়াকে শাসকের সামনে হামাগুড়ি দিতে বাধ্য করেছিলেন, নরেন্দ্র মোদীর জমানায় জরুরি অবস্থা জারি না থাকা সত্ত্বেও ভারতীয় মিডিয়ার ততোধিক করুণ দশাটি বে-আব্রু হয়ে গিয়েছে। শাসকের সামনে সত্যের বাতিস্তম্ভ ধরে রাখার বদলে মিডিয়া এখন হয় ভয়ে থরহরি কম্পমান, নতুবা মসি নামক অসিটি যে তাদের কোমরবন্ধে একদা শোভা পেত সেটাই বিস্মৃত হয়েছে। এটা কেন, কীভাবে হোল তা নিয়ে দীর্ঘ প্রস্তাবনা করা আমার উদ্দেশ্য নয়। ভবিষ্যতে কোনও অবকাশে তা করা যাবে।

আমার প্রাথমিক এবং সর্বপ্রধান প্রশ্নটি এই বাস্তবাবস্থা থেকে উৎসারিত। যে মিডিয়া দৈনন্দিনভাবে সত্য কথাটা বলতে ভুলে গিয়েছে হঠাৎ বুথ ফেরত সমীক্ষায় তারা সত্যবাদী যুধিষ্ঠির হয়ে উঠবে এতটা আশা করাই মূর্খামি। করতে পারে যদি তারা সমীক্ষায় জমানা বদলের সুস্পষ্ট ইঙ্গিত পায়। তা যে হওয়ার নয়, হওয়ার কথাও ছিলনা, এই সহজ সত্যটি বোঝার জন্য ভোট বিশেষজ্ঞ হওয়ার কোনও প্রয়োজন নেই, কম বেশি প্রত্যেক প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিক তা জানে। এবার জানার বিষয় ছিল একটাই। বিজেপি গত দুটি লোকসভা ভোটের মতো এবারও একক ক্ষমতায় লোকসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে কি পাবেনা, এন ডি এ কোয়ালিশন হিসেবে সরকার গড়বে সে কথা সর্বজন বিদিত ছিল।

প্রত্যাশিতভাবেই সব বুথ ফেরত সমীক্ষায় বিজেপি এবং এন ডি এ হই হই করে তৃতীয়বারের জন্য ক্ষমতায় আসছে। অর্থাৎ আমি গোড়াতেই যে প্রতিপাদ্য দিয়ে শুরু করেছিলাম সেটাই প্রতিফলিত হচ্ছে এই ফলাফলে। এবার কোন চ্যানেলের কোন অনুমানকে আপনি বিশ্বাস করবেন তা সম্পূর্ণভাবে নির্ভর করবে আপনার রাজনৈতিক আনুগত্য কাদের প্রতি তার ওপর।

বিজেপি অথবা তাদের এন ডি এ জোটের সমর্থকেরা এই ফল দেখে ইচ্ছে করলে আজ রাতেই অকাল দেওয়ালি পালন করতে পারেন। কেননা নিজেদের দুর্গ বলে পরিচিত রাজ্যগুলিতে তাঁদের প্রায় চিরস্থায়ী রকমের বন্দোবস্ত অটুট আছে। যেমন গুজরাত, মধ্যপ্রদেশ, ছত্তিশগড়। সামান্য ক্ষতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে রাজস্থান, হরিয়ানা, । বড় ধাক্কা যদি কোথাও সত্যিই হয় তাহলে সেটা হবে মহারাষ্ট্রের।

উল্টোদিকে প্রাপ্তির তালিকাও যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ। বিন্ধ্য পর্বতের দক্ষিণে কেবলমাত্র কর্ণাটক ছাড়া বাকি রাজ্যগুলিতে বিজেপি দল হিসেবে মোটামুটি অপাঙ্কতেয় ছিল। একা হাতে নরেন্দ্র মোদী দসকে সেই দুরবস্থা থেকে তুলে এনেছেন। বাম শাসিত কেরলে বিজেপির ভোট এক লাফে ২০-২২ শতাংশ বেড়েছে, তামিলনাড়ুতে তারা খাতা খোলার স্বপ্ন দেখছে আর তেলেঙ্গানায় তাদের সম্ভাব্য আসন সংখ্যা প্রায় কংগ্রেসের সমান সমান হওয়ার জায়গায় পৌঁছে গিয়েছে। দক্ষিণ ভারতে বিজেপির এমন দর্পিত আবির্ভাব দেশের রাজনীতিতে এক অভিনব অধ্যায়, ভবিষ্যতের পক্ষেও যথেষ্ট ইঙ্গিতবাহী।

তবে পদ্ম শিবিরে সবচেয়ে সুখের খবর আসতে পারে পশ্চিমবঙ্গ থেকেই। সব কয়টি বুথ ফেরত সমীক্ষায় দেখা যাচ্ছে আসন এবং ভোটের শতাংশের হার, দুটি নিক্তিতেই এবার বি জে পি এগিয়ে থাকছে তৃণমূল কংগ্রেসের থেকে। এই সর্বসম্মত ‘প্রজেকশান’ যদি মিলে যায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জীবনে নতুন করে শুরু হবে দুঃস্বপ্নের রাত্রি।

কেন্দ্র-ওয়ারি ফল না আসা পর্যন্ত চূড়ান্ত বিশ্লেষণ সম্ভব নয়, সেটা হবে অন্ধকারে ঢিল ছোঁড়ার সমতুল। তর্কের খাতিরে যদি ধরে নিই বুথ ফেরত সমীক্ষার ফল মিলে যাবে তাহলে একটি প্রাক-অনুমান করা সম্ভব। সমীক্ষায় দেখাচ্ছে বাম-কংগ্রেস জোট এবার কম করে ১৩ শতাংশ ভোট পেতে পারে, এটা গোটা রাজ্যে ৪২টি কেন্দ্রের সামগ্রিক হিসেব। কিন্তু ওই ৪২টি আসনের মধ্যে এমন ৮-১০টি আসন থাকবে যেখানে এই জোটের প্রাপ্ত ভোট সংখ্যা হবে অনেক বেশি। সেই আসনগুলিতে তৃণমূল কতটা ক্ষতিগ্রস্ত হয় এখন সেটাই দেখার।

সব মিলিয়ে ২০১৯-এ ভোটের ফল যা ছিল এবার সেটাই কম বেশি অক্ষুন্ন থাকছে। অস্যার্থ ভারতবাসী আপাতত দিল্লির তখতে কোনও বদল চাইছে না। নেহরুর পরে মোদীই হবেন প্রথম প্রধানমন্ত্রী যিনি পরপর তিনবার জয়ের বরমাল্য পড়বেন।

জনপ্রিয় সংবাদ

প্রাচীন ভারতে গণিতচর্চা (পর্ব-৩১৫)

যাহা ছিল তাহাই থাকছে

১০:১০:৪০ অপরাহ্ন, শনিবার, ১ জুন ২০২৪

সুমন চট্টোপাধ্যায়

গোড়াতেই আমার তরফে একটি বিধিবদ্ধ সতর্কীকরণ দিয়ে রাখা জরুরি। ২০২৪-এর লোকসভা ভোট নিয়ে বিবিধ খবরের চ্যানেল যে যার মতো করে ডঙ্কা বাজিয়ে বুথ ফেরত সমীক্ষার ফল প্রকাশ করল, তাদের একটির ওপরেও ব্যক্তিগতভাবে আমার কোনও আস্থা নেই। কেন?

রূঢ সত্যটি প্রথমে কবুল করা প্রয়োজন। প্রতিষ্ঠান হিসেবে ভারতীয় মিডিয়ার এখন কার্যত কোনও বিশ্বাসযোগ্যতা নেই। ইন্দিরা গান্ধি দেশে জরুরি অবস্থা জারি করে মিডিয়াকে শাসকের সামনে হামাগুড়ি দিতে বাধ্য করেছিলেন, নরেন্দ্র মোদীর জমানায় জরুরি অবস্থা জারি না থাকা সত্ত্বেও ভারতীয় মিডিয়ার ততোধিক করুণ দশাটি বে-আব্রু হয়ে গিয়েছে। শাসকের সামনে সত্যের বাতিস্তম্ভ ধরে রাখার বদলে মিডিয়া এখন হয় ভয়ে থরহরি কম্পমান, নতুবা মসি নামক অসিটি যে তাদের কোমরবন্ধে একদা শোভা পেত সেটাই বিস্মৃত হয়েছে। এটা কেন, কীভাবে হোল তা নিয়ে দীর্ঘ প্রস্তাবনা করা আমার উদ্দেশ্য নয়। ভবিষ্যতে কোনও অবকাশে তা করা যাবে।

আমার প্রাথমিক এবং সর্বপ্রধান প্রশ্নটি এই বাস্তবাবস্থা থেকে উৎসারিত। যে মিডিয়া দৈনন্দিনভাবে সত্য কথাটা বলতে ভুলে গিয়েছে হঠাৎ বুথ ফেরত সমীক্ষায় তারা সত্যবাদী যুধিষ্ঠির হয়ে উঠবে এতটা আশা করাই মূর্খামি। করতে পারে যদি তারা সমীক্ষায় জমানা বদলের সুস্পষ্ট ইঙ্গিত পায়। তা যে হওয়ার নয়, হওয়ার কথাও ছিলনা, এই সহজ সত্যটি বোঝার জন্য ভোট বিশেষজ্ঞ হওয়ার কোনও প্রয়োজন নেই, কম বেশি প্রত্যেক প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিক তা জানে। এবার জানার বিষয় ছিল একটাই। বিজেপি গত দুটি লোকসভা ভোটের মতো এবারও একক ক্ষমতায় লোকসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে কি পাবেনা, এন ডি এ কোয়ালিশন হিসেবে সরকার গড়বে সে কথা সর্বজন বিদিত ছিল।

প্রত্যাশিতভাবেই সব বুথ ফেরত সমীক্ষায় বিজেপি এবং এন ডি এ হই হই করে তৃতীয়বারের জন্য ক্ষমতায় আসছে। অর্থাৎ আমি গোড়াতেই যে প্রতিপাদ্য দিয়ে শুরু করেছিলাম সেটাই প্রতিফলিত হচ্ছে এই ফলাফলে। এবার কোন চ্যানেলের কোন অনুমানকে আপনি বিশ্বাস করবেন তা সম্পূর্ণভাবে নির্ভর করবে আপনার রাজনৈতিক আনুগত্য কাদের প্রতি তার ওপর।

বিজেপি অথবা তাদের এন ডি এ জোটের সমর্থকেরা এই ফল দেখে ইচ্ছে করলে আজ রাতেই অকাল দেওয়ালি পালন করতে পারেন। কেননা নিজেদের দুর্গ বলে পরিচিত রাজ্যগুলিতে তাঁদের প্রায় চিরস্থায়ী রকমের বন্দোবস্ত অটুট আছে। যেমন গুজরাত, মধ্যপ্রদেশ, ছত্তিশগড়। সামান্য ক্ষতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে রাজস্থান, হরিয়ানা, । বড় ধাক্কা যদি কোথাও সত্যিই হয় তাহলে সেটা হবে মহারাষ্ট্রের।

উল্টোদিকে প্রাপ্তির তালিকাও যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ। বিন্ধ্য পর্বতের দক্ষিণে কেবলমাত্র কর্ণাটক ছাড়া বাকি রাজ্যগুলিতে বিজেপি দল হিসেবে মোটামুটি অপাঙ্কতেয় ছিল। একা হাতে নরেন্দ্র মোদী দসকে সেই দুরবস্থা থেকে তুলে এনেছেন। বাম শাসিত কেরলে বিজেপির ভোট এক লাফে ২০-২২ শতাংশ বেড়েছে, তামিলনাড়ুতে তারা খাতা খোলার স্বপ্ন দেখছে আর তেলেঙ্গানায় তাদের সম্ভাব্য আসন সংখ্যা প্রায় কংগ্রেসের সমান সমান হওয়ার জায়গায় পৌঁছে গিয়েছে। দক্ষিণ ভারতে বিজেপির এমন দর্পিত আবির্ভাব দেশের রাজনীতিতে এক অভিনব অধ্যায়, ভবিষ্যতের পক্ষেও যথেষ্ট ইঙ্গিতবাহী।

তবে পদ্ম শিবিরে সবচেয়ে সুখের খবর আসতে পারে পশ্চিমবঙ্গ থেকেই। সব কয়টি বুথ ফেরত সমীক্ষায় দেখা যাচ্ছে আসন এবং ভোটের শতাংশের হার, দুটি নিক্তিতেই এবার বি জে পি এগিয়ে থাকছে তৃণমূল কংগ্রেসের থেকে। এই সর্বসম্মত ‘প্রজেকশান’ যদি মিলে যায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জীবনে নতুন করে শুরু হবে দুঃস্বপ্নের রাত্রি।

কেন্দ্র-ওয়ারি ফল না আসা পর্যন্ত চূড়ান্ত বিশ্লেষণ সম্ভব নয়, সেটা হবে অন্ধকারে ঢিল ছোঁড়ার সমতুল। তর্কের খাতিরে যদি ধরে নিই বুথ ফেরত সমীক্ষার ফল মিলে যাবে তাহলে একটি প্রাক-অনুমান করা সম্ভব। সমীক্ষায় দেখাচ্ছে বাম-কংগ্রেস জোট এবার কম করে ১৩ শতাংশ ভোট পেতে পারে, এটা গোটা রাজ্যে ৪২টি কেন্দ্রের সামগ্রিক হিসেব। কিন্তু ওই ৪২টি আসনের মধ্যে এমন ৮-১০টি আসন থাকবে যেখানে এই জোটের প্রাপ্ত ভোট সংখ্যা হবে অনেক বেশি। সেই আসনগুলিতে তৃণমূল কতটা ক্ষতিগ্রস্ত হয় এখন সেটাই দেখার।

সব মিলিয়ে ২০১৯-এ ভোটের ফল যা ছিল এবার সেটাই কম বেশি অক্ষুন্ন থাকছে। অস্যার্থ ভারতবাসী আপাতত দিল্লির তখতে কোনও বদল চাইছে না। নেহরুর পরে মোদীই হবেন প্রথম প্রধানমন্ত্রী যিনি পরপর তিনবার জয়ের বরমাল্য পড়বেন।