শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৫:২২ অপরাহ্ন

জীবন আমার বোন (পর্ব-৪৪)

  • Update Time : রবিবার, ৭ জুলাই, ২০২৪, ১২.০০ পিএম

মাহমুদুল হককে বাদ দিয়ে বাংলা উপন্যাসকে ভাবা ভুল হবে। বাংলাদেশে কেন মাহমুদুল হক বহু পঠিত নয় বা তাঁকে নিয়ে কম আলোচনা হয় এ সত্যিই এক প্রশ্ন। 

মাহমুদুল হকের সাহিত্য নিসন্দেহে স্থান নিয়েছে চিরায়ত সাহিত্যের সারিতে। 

তার উপন্যাস জীবন আমার বোন শুধু সময়ের চিত্র নয়, ইতিহাসকে গল্পের মধ্যে দিয়ে আনা নয় সেখানে রয়ে গেছে আরো অনেক কিছু। 

তরুণ প্রজম্মের পাঠকের কাজে তাই তুলে দেয়া হলো মাহমুদুল হকের এই অনবদ্য উপন্যাস জীবন আমার বোন। আর আগের প্রজম্ম নিশ্চয়ই নতুন করে আরেকবার গ্রহন করুক এক অমৃত সাহিত্য। – সম্পাদক

মাহমুদুল হক

‘তোর কথা যদি সত্যি হয়, সারা দেশের লোকই দালাল।’

‘তোর তো ওকথা মনে হবেই, নইলে আত্মরক্ষা হবে কি ক’রে। পারবি আমাকে তুই দালাল বলতে? বল দেখি।’

‘গায়ের জোরে আমি কাউকে দোষারোপ করি না-একটু থেমে মওলা বললে, ‘তোরা এই হঠাৎ দেশপ্রেমিকের দল আজকাল যে লাইনে কথা বলছিস তাতে কিছুদিনের মধ্যেই দেখা যাবে যে মালী ফুল ফুটিয়েছে সেও দালাল; এমন কি মুরগি যদি ডিম পেড়ে থাকে, তা দিয়ে থাকে, বাচ্চা ফুটিয়ে থাকে, তাহলে সেও দালালি করেছে–

নুরুদ্দিন এতক্ষণ চুপচাপ শুনছিলো আর সিগ্রেট ফুঁকছিলো। সে রহমানের পক্ষ নিয়ে বললে, ‘কে দালালি করলে আর কে করলে না এসবে কিছু যায় আসে না। মালী কিংবা ধোপাও দালালি করতে পারে। মুরগিও যদি দালালি করে করুক, আপত্তি নেই, কেবল দেখতে হবে কার পাছায় কার ছাপ আছে। তোমাদের ওই টিভির চাকরিটাই হ’লো কবে, যার কাজই অহরহ কেবল ছাপ দেওয়া–‘

‘কি ভাই, আপনারা ঝগড়া করছেন নাকি?’ সবুজ টুপিপরা দু’জন স্বেচ্ছাসেবক তড়িঘড়ি কারে কাবাব উড়িয়ে হাতের চেটোয় মুখ মুছতে মুছতে এক কোণ থেকে উঠে এলো। টেবিলের পাশে দাঁড়িয়ে হাতজোড় ক’রে সবিনয়ে বললে, ‘আপনারা শিক্ষিত লোক এ সময়ে ঝগড়া করা শোভা পায় না আপনাদের। শান্তি ও শৃঙ্খলা রক্ষার পবিত্র দায়িত্ব আমাদের সকলের; বঙ্গবন্ধু বলেছেন আমাদের যেন বদনাম না হয়, ষড়যন্ত্র চলছে!’

রহমান সামাল দিয়ে বললে, ‘আপনাদের চিন্তিত হওয়ার কোনো কারণ নেই, এখানে আমরা সবাই বন্ধু-বান্ধব; নিজেরা নিজেরাই আর কি, নিছক গল্প-গুজব!’

‘ঠিক আছে ঠিক আছে, গল্প করুন আপনারা।’ কাউন্টারে পয়সা চুকিয়ে দিয়ে বেরিয়ে গেল উভয়ে।

‘লেখাবা।’ নুরুদ্দিন দরোজার দিকে হাঁ ক’রে তাকিয়ে থেকে বললে, ‘কি বুঝলি কি ?’

রহমান বললে, ‘এবার শালার বড় রকমের একটা কিছু ঘটবেই। সারা দেশটা যেন অধীর আগ্রহে গাল বাড়িয়ে রেখেছে–‘

‘কেন থাপ্পড় খাওয়ার জন্যে?’ খোকা বললে।

‘ঠিক তাই।’

‘তাহলে আর লাভটা কি হ’লো?’

‘লাভ আছে, লাভ আছে–‘ উল্লসিত হ’য়ে রহমান বললে, ‘থাপ্পড়টা হবে কি ব্যাপার জানিস? বারুদের কারখানায় ফশ্ ক’রে একটা দেশলাইয়ের কাঠি জ্বেলে দেবার মতো। তারপরই যাকে বলে ঘাত- প্রতিঘাতের ব্যাপার। সংগ্রাম। এতদিন তো শুধু শ্লোগান আর চিৎকারের খোসার মধ্যে বাদামের মতো দেখেছিস সংগ্রামকে, এবার দেখবি তার সত্যিকার সর্বগ্রাসী রাক্ষসমূর্তি। রক্তের বদলে রক্ত, সেই রক্ত হবে স্বাধীনতা!’

মওলা ভাসা ভাসা চোখে সকলের দিকে তাকিয়ে বললে, ‘সবকিছু বন্যার তোড়ে হাতিয়া সন্দ্বীপের মতো ভেসে যাবে, আমাদের অনেকেই হয়তো থাকবে না–‘

‘ভালোই হবে–‘ নুরুদ্দিন রগড় ক’রে বললে, ‘খামোকা দালালি- ফালালির ধুয়ো তুলে তোকে জ্বালাতন করার লোকও অনেক ক’মে যাবে। তখন ধুমসে তোদের ওই টিভিতে স্তাড়ামোশে স্তাড়ামোশে ক’রে ‘দিলান্দে সওদে’ করবি!’

‘আমি নিজেও তো ঢেঁসে যেতে পারি?’

 

 

 

 

 

 

 

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

kjhdf73kjhykjhuhf
© All rights reserved © 2024