০৫:২৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৬ জুন ২০২৫

ইউনূসের ভাষণে সেনাবাহিনীও চ্যালেঞ্জের মুখে

৬ তারিখ বিকেলে মুহাম্মদ ইউনূস বেতার ও টিভি ভাষণ দেওয়ার পরে অনেকেই বলছেন, তার ভাষণের পরে দেশের নির্বাচন আবার পিছিয়ে গেল। কেউ কেউ বলছেন, এখন কি আর সম্ভব হবে তাকে দিয়ে ডিসেম্বরে বা জানুয়ারিতে নির্বাচন অনুষ্ঠান করানো?

মুহাম্মদ ইউনূসের এই ভাষণের পরের দিন ঈদের জামায়াতে একদল লোককে দেখা গেল, তারা সমস্বরে ইউনূসকে বলছে, “স্যার আপনি আরও পাঁচ বছর থাকেন।” ইউনূসের এই ভাষণের পরে যাদের মধ্যে প্রশ্ন ছিলো, নির্বাচন পিছিয়ে গেল কিনা বা কবে হবে নির্বাচন—তার উত্তরটি কিন্তু ইউনূস ঈদের জামায়াতে ওই লোকদের মুখ দিয়েই দিয়েছেন।

তাছাড়া যারা মূলত এতদিনেও মুহাম্মদ ইউনূসের স্ট্র্যাটেজি বুঝতে পারেননি বা বুঝলেও মেনে নিয়ে নির্বাচন চাচ্ছেন—নিশ্চয়ই এখন তাদের সকলের কাছে পরিষ্কার, ড. ইউনূস মূলত তার ওই বিশেষ ছাত্রদের নিয়ে ও জামায়াতে ইসলামের সমর্থনে ক্ষমতায় থাকতে চান। বিএনপিকে তিনি বড়জোর কিছু সুবিধা দেবেন। কিন্তু যে সুবিধা দিচ্ছেন তাতে তৃণমূলে বিএনপিরই ক্ষতি হচ্ছে বেশি। অন্যদিকে পুলিশ হত্যাকারীদের ইনডেমনিটি দিয়ে পুলিশকে নিষ্ক্রিয় ও ট্রমাগ্রস্ত করা হয়েছে এ কারণে—যাতে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি না হয়। যার ফলে সেনাবাহিনীর মতো একটি ভিন্ন চরিত্রের প্রতিষ্ঠানের সদস্যদেরকে পুলিশিংসহ এমনি নানান কম গুরুত্বপূর্ণ কাজে ব্যস্ত রাখা যায়। সেনাবাহিনীকে এভাবে ব্যস্ত রাখার মূল কারণ বা সেনাবাহিনীর অপরাধ—তারা দেশে একটি নির্বাচন চায়, তারা দেশে একটি স্থিতিশীল সরকার চায়। আর সে হিসেবে কয়েকদিন আগে দরবারে সেনাপ্রধান, সমগ্র সেনাবাহিনীর নেতা ও দেশের সংবিধান ও সার্বভৌমত্বের প্রতীক হিসেবে, স্পষ্ট করে বলেছেন—ডিসেম্বরেই নির্বাচন হবে। ইউনূসের ৬ তারিখের এই ভাষণ যে রাজনৈতিক দলগুলো ডিসেম্বরে নির্বাচন চাচ্ছে তাদের সঙ্গে সঙ্গে সেনাবাহিনীকেও চ্যালেঞ্জ করা হয়েছে।

অথচ যে জুলাই আন্দোলনের কথা তিনি সব সময় বলেন, সেটা যদি সম্পূর্ণটুকু তার মেটিকুলাস ডিজাইন হয় তাহলে ভিন্ন কথা। তবে রাজপথের একজন সাংবাদিক হিসেবে ওই সময়ে দেখেছি, কোটা আন্দোলন শেষ হয়ে যাওয়ার পরে যখন শেখ হাসিনার পদত্যাগের দাবিটি রাজপথে আসে সেখানে কোথাও অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দাবি ছিল না। বরং রাজপথের হাজারটি ফুটেজে এখনও খুঁজে পাওয়া যাবে, ২৬ জুলাইয়ের পর থেকে রাজপথে স্লোগান উঠেছিল, “এই মুহূর্তে দরকার, সেনাবাহিনীর সরকার।” জাতির উদ্দেশে প্রথম ভাষণ ৫ তারিখ সেনাপ্রধানই দিয়েছিলেন। তিনি সে ভাষণে তার ওপর দেশবাসীকে আস্থা রাখতে বলেছিলেন। আর বাংলাদেশের মানুষ তাঁর ওপরই আস্থাও রেখেছিল।

তাছাড়া বাংলাদেশের রাজনীতির ক্লান্তিকালে বারবার সেনাবাহিনী দেশের হাল ধরেছে, এটা সেই পাকিস্তান আমল থেকে এই ভূখণ্ডের পরম্পরা। তাই এ ভূখণ্ডের মানুষ যেমন রাজনৈতিক সরকারের সঙ্গে অভ্যস্ত, তেমনি সামরিক সরকারের সঙ্গেও অভ্যস্ত। এমনকি বিশ্বও সেভাবে বাংলাদেশকে নিয়ে অভ্যস্ত। কারণ, এ দেশের সামরিক শাসকরা কখনও দেশের মৌল চেতনার বিপরীতে যায়নি। এমনকি অন্য কোনো দেশের শত্রু হিসেবে বাংলাদেশকে উপস্থিত করেনি।

যে কারণে বাংলাদেশের সেনাশাসকরা দিল্লি থেকে ওয়াশিংটন সব সময়ই সম্মানিত রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে আমন্ত্রিত হয়েছেন। বাংলাদেশের মর্যাদা ওই অর্থে কখনও কমেনি। বাংলাদেশ ছোট দেশ হলেও স্বাধীনতার পরপরই ১৯৭৩ ও ১৯৭৪ সালে জোট নিরপেক্ষ সম্মেলনে ও জাতিসংঘে মূল আকর্ষণ ছিলেন বাংলাদেশের নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। এ ধরনের আকর্ষণ তার আগে শুধুমাত্র ফিদেল ক্যাস্ট্রো ও গাদ্দাফিকে ঘিরে দেখা গেছে। এমনকি বাংলাদেশের অর্থনীতি ২০০৯ এর পর থেকে দক্ষিণ এশিয়ার একটি মিরাকল হলেও বাংলাদেশ তো আর বড় অর্থনীতি হয়নি। তারপরেও জি-৮, জি-২০ সম্মেলনের সম্মানিত অতিথি হিসেবে বাংলাদেশের সরকার প্রধান আমন্ত্রিত হয়েছেন।

বাংলাদেশের অতীত ইতিহাস থেকে বলা যায়, গত দশ মাস যদি দেশে সামরিক সরকার থাকত তাহলেও সে সরকার বিশ্বে একই ধরনের সম্মান পেতেন। যেমন পেয়েছিলেন জিয়াউর রহমান ও হোসাইন মোহাম্মদ এরশাদ। এমনকি হোসাইন মোহাম্মদ এরশাদ সামরিক সরকার হওয়া সত্ত্বেও যে বছর ইরাক কুয়েত আক্রমণ করে, ওই বছর তার সৌদি সফরের সময় সৌদি বাদশা নিজেই তাকে রিসিভ করতে এয়ারপোর্টে এসেছিলেন। যা একটি বিরল ঘটনা ও সম্মান বাংলাদেশের জন্যে। আর দেশের জন্যে এ সম্মান সেনাবাহিনীর মাধ্যমে সামরিক শাসক ও রাষ্ট্রপতি জেনারেল এরশাদ অর্জন করেছিলেন।

কিন্তু তার বদলে গত দশ মাসে সেই বাংলাদেশকে “সাইডলাইন সাক্ষাৎ” আর “লবি সাক্ষাতে” নামিয়ে আনা হয়েছে। এর কারণ কিন্তু অন্য কোনো দেশ বাংলাদেশের জনগণকে অসম্মান করছে না। বাস্তবে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের প্রথম শর্তই হলো, রাষ্ট্র ক্ষমতায় থাকবে রাষ্ট্রের সবচেয়ে সুসংগঠিত অংশ। যখন নির্বাচনের মাধ্যমে কোনো রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় আসে তখন রাজনৈতিক দল, সিভিল প্রশাসন ও সুসংগঠিত সেনাবাহিনী মিলেই রাষ্ট্র ক্ষমতায় থাকে। আর তার বিপরীতে এখন বড় রাজনৈতিক দলকে অবজ্ঞা করা হচ্ছে, যাদের রাজনৈতিক নিবন্ধন নেই বা এখনও রাজনৈতিক দল হয়ে উঠেনি—তাদেরকে পাঁচবার যে দল রাষ্ট্রক্ষমতায় থেকেছে—তাদের থেকে কম গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। কিছুদিন আগেও যেসব এনজিও করে খাওয়া লোকেরা এই সব রাজনীতিবিদদের একটু সাক্ষাৎ পেলে ধন্য হয়ে যেতেন; তাদের সামনে ছাত্রের মতো বসানো হচ্ছে এইসব প্রবীণ ও বড় দলের রাজনীতিকদের।

রাজনীতিকদের যে এভাবে অসম্মান করা হচ্ছে তা এতদিন মুখ বুজে সহ্য করার পরে ইউনূসের ৬ তারিখের ভাষণের পরে বিএনপির স্ট্যান্ডিং কমিটির মিটিং শেষে যে প্রতিক্রিয়া দেওয়া হয়েছে—সেখানে বিএনপি স্পষ্ট জানিয়েছে, “প্রধান উপদেষ্টার শব্দ চয়ন রাজনৈতিক ভব্যতার সীমা অতিক্রম করেছে।” গত দশ মাস ধরে দেশের রাজনীতি, রাজনীতিবিদ ও রাজনৈতিক ইতিহাস যেভাবে অপমানিত হচ্ছে—বলা যেতে পারে বিএনপিই প্রথম খুবই ভদ্র ভাষায় তার জবাব দিল। তাছাড়া ইউনূস যে এপ্রিলে নির্বাচনের কথা বলেছেন, বিএনপি সেটাকেও প্রত্যাখ্যান করেছে। তারা তাদের পূর্বের দাবি ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন হতে হবে—সেখানেই অবস্থান রেখেছে। বিএনপিসহ পুরোনো প্রায় সবগুলো দলই ডিসেম্বরেরই নির্বাচনের দাবিতে অটল আছে।

ইউনূসের এই এপ্রিল কৌশল ও রাজনৈতিক দলগুলোর আগের দাবিতে অটল থাকায় দেশবাসীর আর বুঝতে কোনো অসুবিধা নেই, বাস্তবে ইউনূস সরকার সেনাবাহিনীর চাওয়াকেও অস্বীকার করে নির্বাচন অনুষ্ঠান না করার পক্ষে। অর্থাৎ দেশ যেভাবে চলছে এভাবেই চলবে।

দেশ এভাবে চলার ফলে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বাংলাদেশের মান কোথায় চলে গেছে তা দেশবাসী বুঝতে পারছেন। দেশের জিডিপি’র হার ও বাজেট দেশের অর্থনীতিকে আরও পরিষ্কার করে দিয়েছে। নিম্নবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্ত হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে অর্থনীতির অবস্থা—তাদের বাজারের ব্যাগ হাতে নিলেই। আর পরিসংখ্যানে গেলে দেখা যাবে, ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশে যে দুর্ভিক্ষ হয়েছিল যার জন্যে ৫০ বছর পরে ইউনূসের চোখ গড়িয়ে পানি পড়েছে—ওই দুর্ভিক্ষের সময়ও বাংলাদেশের জিডিপি ৬% এর ওপরে ছিল, বর্তমানে সেটা ৩.৩%। এর পরে আর অর্থনীতির বিষয়টি নিয়ে কথা বলার প্রয়োজন পড়ে না।

অন্যদিকে সরকারের পক্ষ থেকে মিয়ানমারকে করিডোর দেওয়ার কথা বলে আবার সে বিষয়টির দোষ চাপানো হয়েছে দেশের মানুষের ওপর—যে মানুষ মিথ্যে প্রচার করছে। কিন্তু এর বাস্তবতা তো দেশের কিছু মানুষ জানে। যদিও বাংলাদেশের সরকার পরিবর্তনের পরে বাইডেন ও ক্লিন্টনকে খুশি দেখা গেছে ড. ইউনূসের সঙ্গে। তবে কোথাও হিলারি বা ওবামাকে কিন্তু দেখা যায়নি। যারা সারাক্ষণ বাংলাদেশের সরকার পরিবর্তনের আমেরিকার ডিপ স্টেটের ওপর সব দায় চাপাচ্ছে—তাদের এ বিষয়টির দিকে একটু গভীরভাবে তাকাতে হবে। তাছাড়া ইউএসএইডের টাকা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আওয়ামী শিক্ষক থেকে শুরু করে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর কাছের অনেক মানুষ নিয়েছিল কিনা—তা এখন আওয়ামী লীগ খতিয়ে দেখতে পারে।

অন্যদিকে পাকিস্তানের লস্কর-ই-তৈয়বা দাবি করেছে তারা বাংলাদেশে হাসিনার সরকারের পতন ঘটিয়েছে। কোন কোন মহল থেকে সে দেশের আরও কয়েকটি সংগঠনের নাম আসছে। আবার বাংলাদেশে এটিবি, হুজি প্রকাশ্যে চলে এসেছে। তাদের পতাকা উড়েছে। এছাড়া ওই সময়ের বাস্তবতায় বলা যায়, অন্তত ৬০ ভাগ আওয়ামী লীগ কর্মী তাদের নেতাদের ব্যবহারে অভিমান করে ঘরে উঠে গিয়েছিল। ৩০ ভাগ আওয়ামী লীগ কর্মী ও সমর্থক অপমানিত হয়ে দূরে সরে গিয়েছিল আর ১০ ভাগ কেন যেন ওই আন্দোলনকে সমর্থন করেছিল। যা ওই সরকারের পতনকে দ্রুত করে।

কিন্তু দেশের বেশ কিছু কর্নার থেকে এমন একটি বিষয় সব সময় বলা হচ্ছে যে বর্তমানের সরকার প্রধান আমেরিকার প্রতিনিধি। আর সরকারের পক্ষ থেকে বাইডেন (যার শেষের দিকে ক্যান্সারের কারণে মস্তিষ্ক ঠিকমতো কাজ করত না—তা এখন ডাক্তারি রিপোর্ট অনুযায়ী প্রমাণিত) চলে যাওয়ার পরে একের পর একটি বিষয় হাজির করা হচ্ছে—যাতে আমেরিকার কাছাকাছি যাওয়া যায়। যার প্রথম উদ্যোগ ছিল স্টারলিংক নেওয়া। দেশের সাধারণ মানুষের সঙ্গে সঙ্গে রাজনীতিবিদরা আরও বেশি বোঝেন—ব্যবসা এবং সরকারনীতি এক নয়। তাছাড়া ব্যবসায়ী আর সরকার এক নয়।

এর পরে নিজেদের থেকে করিডোরের কথা উল্লেখ করার ভেতর আমেরিকাকে মিয়ানমারে একটা যুদ্ধে জড়ানোর আহ্বান ছিল। কারণ, নিয়োডিমিয়াম, ডিসপ্রোসিয়াম, প্রাসিডিমিয়াম, টার্বিয়াম—এ ধরনের মোট ১৭টি দুষ্প্রাপ্য খনিজের প্রায় ৬৫ শতাংশের মালিক চীন। ট্যারিফ যুদ্ধে চীন এই খনিজকে হাতিয়ার করেছে। যদিও ইতোমধ্যে আমেরিকা ও চীন বিষয়টি অনেকখানি মিটিয়ে নিয়েছে, তারপরেও আমেরিকা এই খনিজ দেশের বাইরে খুঁজছে। যে কারণে তারা গ্রিনল্যান্ড কেনার মতো প্রস্তাব দিচ্ছে, ইউক্রেনের খনিজের মালিকানার ভাগাভাগি করতে যাচ্ছে, আফ্রিকা নিয়ে নানান ধরনের বক্তব্য দিচ্ছে। অন্যদিকে সকলে জানেন—সিঙ্গাপুরের যতটুকু আয়তন, প্রায় অতটুকু জায়গা জুড়ে এই খনিজ মিয়ানমারে আছে।

তাই অনেকটা গ্রাম্য বুদ্ধিতে করিডোরের নামে আমেরিকাকে মিয়ানমারে ঢোকার সুযোগ করে দেওয়া যেতে পারে—এমন একটা প্রলোভনের বাতাস সৃষ্টি করা হয়েছিল। কিন্তু যারা এ বাতাস সৃষ্টি করেছিলেন, তারা মনে হয় রাইজিং পাওয়ার আর ফলিং পাওয়ারের যুদ্ধের ইতিহাস জানেন না। যাকে বলা হয় থিউসিডিডিস ট্র্যাপ। এই ট্র্যাপে পুরানো অর্থনীতির ও সামরিক শক্তির বিজয়ের ইতিহাস মাত্র হাতে গোনা। তাই আমেরিকার মতো একটি সংগঠিত রাষ্ট্রকে তার বিপরীতের প্রধান রাইজিং পাওয়ার চীনের এক ধরনের বাফার স্টেট মিয়ানমারে, আবার যেখানে আরেকটি রাইজিং পাওয়ার—যার অবস্থান চতুর্থ বিশ্বে, সেই ভারতেরও স্বার্থ রয়েছে—সেখানে যতই খনিজের প্রলোভন দেখানো হোক না কেন, প্রলোভিত করা যায় না। বরং এই বাস্তবতা মানতে হবে, আমেরিকা এখন তার নিজের অর্থনীতি নিয়ে ব্যস্ত। ট্রাম্পের জয় তাদের অর্থনীতির জন্য তারা ভালো মনে করছে। এ কারণে বাংলাদেশের মতো ক্ষুদ্র ও সম্পদহীন দেশ নিয়ে শুধুমাত্র তারাই কনসার্ন হবে, যাদের অভ্যন্তরীণ সিকিউরিটির জন্য বাংলাদেশের মৌলবাদ ও জঙ্গিরা ক্ষতিকারক। অন্য কেউ এ নিয়ে মাথা ঘামাবে না। তবে মৌলবাদী জঙ্গি নিয়ে সারা পৃথিবী কনসার্ন থাকে—এ কারণে যে জঙ্গির কোনো নির্দিষ্ট সীমানা নেই।

লেখক: সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় পদকপ্রাপ্ত সাংবাদিকসম্পাদক সারাক্ষণ ও The Present World.

নেতানিয়াহুর বিচার বন্ধের আহ্বান ট্রাম্পের

ইউনূসের ভাষণে সেনাবাহিনীও চ্যালেঞ্জের মুখে

০৮:০০:৫৪ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৯ জুন ২০২৫

৬ তারিখ বিকেলে মুহাম্মদ ইউনূস বেতার ও টিভি ভাষণ দেওয়ার পরে অনেকেই বলছেন, তার ভাষণের পরে দেশের নির্বাচন আবার পিছিয়ে গেল। কেউ কেউ বলছেন, এখন কি আর সম্ভব হবে তাকে দিয়ে ডিসেম্বরে বা জানুয়ারিতে নির্বাচন অনুষ্ঠান করানো?

মুহাম্মদ ইউনূসের এই ভাষণের পরের দিন ঈদের জামায়াতে একদল লোককে দেখা গেল, তারা সমস্বরে ইউনূসকে বলছে, “স্যার আপনি আরও পাঁচ বছর থাকেন।” ইউনূসের এই ভাষণের পরে যাদের মধ্যে প্রশ্ন ছিলো, নির্বাচন পিছিয়ে গেল কিনা বা কবে হবে নির্বাচন—তার উত্তরটি কিন্তু ইউনূস ঈদের জামায়াতে ওই লোকদের মুখ দিয়েই দিয়েছেন।

তাছাড়া যারা মূলত এতদিনেও মুহাম্মদ ইউনূসের স্ট্র্যাটেজি বুঝতে পারেননি বা বুঝলেও মেনে নিয়ে নির্বাচন চাচ্ছেন—নিশ্চয়ই এখন তাদের সকলের কাছে পরিষ্কার, ড. ইউনূস মূলত তার ওই বিশেষ ছাত্রদের নিয়ে ও জামায়াতে ইসলামের সমর্থনে ক্ষমতায় থাকতে চান। বিএনপিকে তিনি বড়জোর কিছু সুবিধা দেবেন। কিন্তু যে সুবিধা দিচ্ছেন তাতে তৃণমূলে বিএনপিরই ক্ষতি হচ্ছে বেশি। অন্যদিকে পুলিশ হত্যাকারীদের ইনডেমনিটি দিয়ে পুলিশকে নিষ্ক্রিয় ও ট্রমাগ্রস্ত করা হয়েছে এ কারণে—যাতে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি না হয়। যার ফলে সেনাবাহিনীর মতো একটি ভিন্ন চরিত্রের প্রতিষ্ঠানের সদস্যদেরকে পুলিশিংসহ এমনি নানান কম গুরুত্বপূর্ণ কাজে ব্যস্ত রাখা যায়। সেনাবাহিনীকে এভাবে ব্যস্ত রাখার মূল কারণ বা সেনাবাহিনীর অপরাধ—তারা দেশে একটি নির্বাচন চায়, তারা দেশে একটি স্থিতিশীল সরকার চায়। আর সে হিসেবে কয়েকদিন আগে দরবারে সেনাপ্রধান, সমগ্র সেনাবাহিনীর নেতা ও দেশের সংবিধান ও সার্বভৌমত্বের প্রতীক হিসেবে, স্পষ্ট করে বলেছেন—ডিসেম্বরেই নির্বাচন হবে। ইউনূসের ৬ তারিখের এই ভাষণ যে রাজনৈতিক দলগুলো ডিসেম্বরে নির্বাচন চাচ্ছে তাদের সঙ্গে সঙ্গে সেনাবাহিনীকেও চ্যালেঞ্জ করা হয়েছে।

অথচ যে জুলাই আন্দোলনের কথা তিনি সব সময় বলেন, সেটা যদি সম্পূর্ণটুকু তার মেটিকুলাস ডিজাইন হয় তাহলে ভিন্ন কথা। তবে রাজপথের একজন সাংবাদিক হিসেবে ওই সময়ে দেখেছি, কোটা আন্দোলন শেষ হয়ে যাওয়ার পরে যখন শেখ হাসিনার পদত্যাগের দাবিটি রাজপথে আসে সেখানে কোথাও অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দাবি ছিল না। বরং রাজপথের হাজারটি ফুটেজে এখনও খুঁজে পাওয়া যাবে, ২৬ জুলাইয়ের পর থেকে রাজপথে স্লোগান উঠেছিল, “এই মুহূর্তে দরকার, সেনাবাহিনীর সরকার।” জাতির উদ্দেশে প্রথম ভাষণ ৫ তারিখ সেনাপ্রধানই দিয়েছিলেন। তিনি সে ভাষণে তার ওপর দেশবাসীকে আস্থা রাখতে বলেছিলেন। আর বাংলাদেশের মানুষ তাঁর ওপরই আস্থাও রেখেছিল।

তাছাড়া বাংলাদেশের রাজনীতির ক্লান্তিকালে বারবার সেনাবাহিনী দেশের হাল ধরেছে, এটা সেই পাকিস্তান আমল থেকে এই ভূখণ্ডের পরম্পরা। তাই এ ভূখণ্ডের মানুষ যেমন রাজনৈতিক সরকারের সঙ্গে অভ্যস্ত, তেমনি সামরিক সরকারের সঙ্গেও অভ্যস্ত। এমনকি বিশ্বও সেভাবে বাংলাদেশকে নিয়ে অভ্যস্ত। কারণ, এ দেশের সামরিক শাসকরা কখনও দেশের মৌল চেতনার বিপরীতে যায়নি। এমনকি অন্য কোনো দেশের শত্রু হিসেবে বাংলাদেশকে উপস্থিত করেনি।

যে কারণে বাংলাদেশের সেনাশাসকরা দিল্লি থেকে ওয়াশিংটন সব সময়ই সম্মানিত রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে আমন্ত্রিত হয়েছেন। বাংলাদেশের মর্যাদা ওই অর্থে কখনও কমেনি। বাংলাদেশ ছোট দেশ হলেও স্বাধীনতার পরপরই ১৯৭৩ ও ১৯৭৪ সালে জোট নিরপেক্ষ সম্মেলনে ও জাতিসংঘে মূল আকর্ষণ ছিলেন বাংলাদেশের নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। এ ধরনের আকর্ষণ তার আগে শুধুমাত্র ফিদেল ক্যাস্ট্রো ও গাদ্দাফিকে ঘিরে দেখা গেছে। এমনকি বাংলাদেশের অর্থনীতি ২০০৯ এর পর থেকে দক্ষিণ এশিয়ার একটি মিরাকল হলেও বাংলাদেশ তো আর বড় অর্থনীতি হয়নি। তারপরেও জি-৮, জি-২০ সম্মেলনের সম্মানিত অতিথি হিসেবে বাংলাদেশের সরকার প্রধান আমন্ত্রিত হয়েছেন।

বাংলাদেশের অতীত ইতিহাস থেকে বলা যায়, গত দশ মাস যদি দেশে সামরিক সরকার থাকত তাহলেও সে সরকার বিশ্বে একই ধরনের সম্মান পেতেন। যেমন পেয়েছিলেন জিয়াউর রহমান ও হোসাইন মোহাম্মদ এরশাদ। এমনকি হোসাইন মোহাম্মদ এরশাদ সামরিক সরকার হওয়া সত্ত্বেও যে বছর ইরাক কুয়েত আক্রমণ করে, ওই বছর তার সৌদি সফরের সময় সৌদি বাদশা নিজেই তাকে রিসিভ করতে এয়ারপোর্টে এসেছিলেন। যা একটি বিরল ঘটনা ও সম্মান বাংলাদেশের জন্যে। আর দেশের জন্যে এ সম্মান সেনাবাহিনীর মাধ্যমে সামরিক শাসক ও রাষ্ট্রপতি জেনারেল এরশাদ অর্জন করেছিলেন।

কিন্তু তার বদলে গত দশ মাসে সেই বাংলাদেশকে “সাইডলাইন সাক্ষাৎ” আর “লবি সাক্ষাতে” নামিয়ে আনা হয়েছে। এর কারণ কিন্তু অন্য কোনো দেশ বাংলাদেশের জনগণকে অসম্মান করছে না। বাস্তবে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের প্রথম শর্তই হলো, রাষ্ট্র ক্ষমতায় থাকবে রাষ্ট্রের সবচেয়ে সুসংগঠিত অংশ। যখন নির্বাচনের মাধ্যমে কোনো রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় আসে তখন রাজনৈতিক দল, সিভিল প্রশাসন ও সুসংগঠিত সেনাবাহিনী মিলেই রাষ্ট্র ক্ষমতায় থাকে। আর তার বিপরীতে এখন বড় রাজনৈতিক দলকে অবজ্ঞা করা হচ্ছে, যাদের রাজনৈতিক নিবন্ধন নেই বা এখনও রাজনৈতিক দল হয়ে উঠেনি—তাদেরকে পাঁচবার যে দল রাষ্ট্রক্ষমতায় থেকেছে—তাদের থেকে কম গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। কিছুদিন আগেও যেসব এনজিও করে খাওয়া লোকেরা এই সব রাজনীতিবিদদের একটু সাক্ষাৎ পেলে ধন্য হয়ে যেতেন; তাদের সামনে ছাত্রের মতো বসানো হচ্ছে এইসব প্রবীণ ও বড় দলের রাজনীতিকদের।

রাজনীতিকদের যে এভাবে অসম্মান করা হচ্ছে তা এতদিন মুখ বুজে সহ্য করার পরে ইউনূসের ৬ তারিখের ভাষণের পরে বিএনপির স্ট্যান্ডিং কমিটির মিটিং শেষে যে প্রতিক্রিয়া দেওয়া হয়েছে—সেখানে বিএনপি স্পষ্ট জানিয়েছে, “প্রধান উপদেষ্টার শব্দ চয়ন রাজনৈতিক ভব্যতার সীমা অতিক্রম করেছে।” গত দশ মাস ধরে দেশের রাজনীতি, রাজনীতিবিদ ও রাজনৈতিক ইতিহাস যেভাবে অপমানিত হচ্ছে—বলা যেতে পারে বিএনপিই প্রথম খুবই ভদ্র ভাষায় তার জবাব দিল। তাছাড়া ইউনূস যে এপ্রিলে নির্বাচনের কথা বলেছেন, বিএনপি সেটাকেও প্রত্যাখ্যান করেছে। তারা তাদের পূর্বের দাবি ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন হতে হবে—সেখানেই অবস্থান রেখেছে। বিএনপিসহ পুরোনো প্রায় সবগুলো দলই ডিসেম্বরেরই নির্বাচনের দাবিতে অটল আছে।

ইউনূসের এই এপ্রিল কৌশল ও রাজনৈতিক দলগুলোর আগের দাবিতে অটল থাকায় দেশবাসীর আর বুঝতে কোনো অসুবিধা নেই, বাস্তবে ইউনূস সরকার সেনাবাহিনীর চাওয়াকেও অস্বীকার করে নির্বাচন অনুষ্ঠান না করার পক্ষে। অর্থাৎ দেশ যেভাবে চলছে এভাবেই চলবে।

দেশ এভাবে চলার ফলে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বাংলাদেশের মান কোথায় চলে গেছে তা দেশবাসী বুঝতে পারছেন। দেশের জিডিপি’র হার ও বাজেট দেশের অর্থনীতিকে আরও পরিষ্কার করে দিয়েছে। নিম্নবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্ত হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে অর্থনীতির অবস্থা—তাদের বাজারের ব্যাগ হাতে নিলেই। আর পরিসংখ্যানে গেলে দেখা যাবে, ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশে যে দুর্ভিক্ষ হয়েছিল যার জন্যে ৫০ বছর পরে ইউনূসের চোখ গড়িয়ে পানি পড়েছে—ওই দুর্ভিক্ষের সময়ও বাংলাদেশের জিডিপি ৬% এর ওপরে ছিল, বর্তমানে সেটা ৩.৩%। এর পরে আর অর্থনীতির বিষয়টি নিয়ে কথা বলার প্রয়োজন পড়ে না।

অন্যদিকে সরকারের পক্ষ থেকে মিয়ানমারকে করিডোর দেওয়ার কথা বলে আবার সে বিষয়টির দোষ চাপানো হয়েছে দেশের মানুষের ওপর—যে মানুষ মিথ্যে প্রচার করছে। কিন্তু এর বাস্তবতা তো দেশের কিছু মানুষ জানে। যদিও বাংলাদেশের সরকার পরিবর্তনের পরে বাইডেন ও ক্লিন্টনকে খুশি দেখা গেছে ড. ইউনূসের সঙ্গে। তবে কোথাও হিলারি বা ওবামাকে কিন্তু দেখা যায়নি। যারা সারাক্ষণ বাংলাদেশের সরকার পরিবর্তনের আমেরিকার ডিপ স্টেটের ওপর সব দায় চাপাচ্ছে—তাদের এ বিষয়টির দিকে একটু গভীরভাবে তাকাতে হবে। তাছাড়া ইউএসএইডের টাকা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আওয়ামী শিক্ষক থেকে শুরু করে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর কাছের অনেক মানুষ নিয়েছিল কিনা—তা এখন আওয়ামী লীগ খতিয়ে দেখতে পারে।

অন্যদিকে পাকিস্তানের লস্কর-ই-তৈয়বা দাবি করেছে তারা বাংলাদেশে হাসিনার সরকারের পতন ঘটিয়েছে। কোন কোন মহল থেকে সে দেশের আরও কয়েকটি সংগঠনের নাম আসছে। আবার বাংলাদেশে এটিবি, হুজি প্রকাশ্যে চলে এসেছে। তাদের পতাকা উড়েছে। এছাড়া ওই সময়ের বাস্তবতায় বলা যায়, অন্তত ৬০ ভাগ আওয়ামী লীগ কর্মী তাদের নেতাদের ব্যবহারে অভিমান করে ঘরে উঠে গিয়েছিল। ৩০ ভাগ আওয়ামী লীগ কর্মী ও সমর্থক অপমানিত হয়ে দূরে সরে গিয়েছিল আর ১০ ভাগ কেন যেন ওই আন্দোলনকে সমর্থন করেছিল। যা ওই সরকারের পতনকে দ্রুত করে।

কিন্তু দেশের বেশ কিছু কর্নার থেকে এমন একটি বিষয় সব সময় বলা হচ্ছে যে বর্তমানের সরকার প্রধান আমেরিকার প্রতিনিধি। আর সরকারের পক্ষ থেকে বাইডেন (যার শেষের দিকে ক্যান্সারের কারণে মস্তিষ্ক ঠিকমতো কাজ করত না—তা এখন ডাক্তারি রিপোর্ট অনুযায়ী প্রমাণিত) চলে যাওয়ার পরে একের পর একটি বিষয় হাজির করা হচ্ছে—যাতে আমেরিকার কাছাকাছি যাওয়া যায়। যার প্রথম উদ্যোগ ছিল স্টারলিংক নেওয়া। দেশের সাধারণ মানুষের সঙ্গে সঙ্গে রাজনীতিবিদরা আরও বেশি বোঝেন—ব্যবসা এবং সরকারনীতি এক নয়। তাছাড়া ব্যবসায়ী আর সরকার এক নয়।

এর পরে নিজেদের থেকে করিডোরের কথা উল্লেখ করার ভেতর আমেরিকাকে মিয়ানমারে একটা যুদ্ধে জড়ানোর আহ্বান ছিল। কারণ, নিয়োডিমিয়াম, ডিসপ্রোসিয়াম, প্রাসিডিমিয়াম, টার্বিয়াম—এ ধরনের মোট ১৭টি দুষ্প্রাপ্য খনিজের প্রায় ৬৫ শতাংশের মালিক চীন। ট্যারিফ যুদ্ধে চীন এই খনিজকে হাতিয়ার করেছে। যদিও ইতোমধ্যে আমেরিকা ও চীন বিষয়টি অনেকখানি মিটিয়ে নিয়েছে, তারপরেও আমেরিকা এই খনিজ দেশের বাইরে খুঁজছে। যে কারণে তারা গ্রিনল্যান্ড কেনার মতো প্রস্তাব দিচ্ছে, ইউক্রেনের খনিজের মালিকানার ভাগাভাগি করতে যাচ্ছে, আফ্রিকা নিয়ে নানান ধরনের বক্তব্য দিচ্ছে। অন্যদিকে সকলে জানেন—সিঙ্গাপুরের যতটুকু আয়তন, প্রায় অতটুকু জায়গা জুড়ে এই খনিজ মিয়ানমারে আছে।

তাই অনেকটা গ্রাম্য বুদ্ধিতে করিডোরের নামে আমেরিকাকে মিয়ানমারে ঢোকার সুযোগ করে দেওয়া যেতে পারে—এমন একটা প্রলোভনের বাতাস সৃষ্টি করা হয়েছিল। কিন্তু যারা এ বাতাস সৃষ্টি করেছিলেন, তারা মনে হয় রাইজিং পাওয়ার আর ফলিং পাওয়ারের যুদ্ধের ইতিহাস জানেন না। যাকে বলা হয় থিউসিডিডিস ট্র্যাপ। এই ট্র্যাপে পুরানো অর্থনীতির ও সামরিক শক্তির বিজয়ের ইতিহাস মাত্র হাতে গোনা। তাই আমেরিকার মতো একটি সংগঠিত রাষ্ট্রকে তার বিপরীতের প্রধান রাইজিং পাওয়ার চীনের এক ধরনের বাফার স্টেট মিয়ানমারে, আবার যেখানে আরেকটি রাইজিং পাওয়ার—যার অবস্থান চতুর্থ বিশ্বে, সেই ভারতেরও স্বার্থ রয়েছে—সেখানে যতই খনিজের প্রলোভন দেখানো হোক না কেন, প্রলোভিত করা যায় না। বরং এই বাস্তবতা মানতে হবে, আমেরিকা এখন তার নিজের অর্থনীতি নিয়ে ব্যস্ত। ট্রাম্পের জয় তাদের অর্থনীতির জন্য তারা ভালো মনে করছে। এ কারণে বাংলাদেশের মতো ক্ষুদ্র ও সম্পদহীন দেশ নিয়ে শুধুমাত্র তারাই কনসার্ন হবে, যাদের অভ্যন্তরীণ সিকিউরিটির জন্য বাংলাদেশের মৌলবাদ ও জঙ্গিরা ক্ষতিকারক। অন্য কেউ এ নিয়ে মাথা ঘামাবে না। তবে মৌলবাদী জঙ্গি নিয়ে সারা পৃথিবী কনসার্ন থাকে—এ কারণে যে জঙ্গির কোনো নির্দিষ্ট সীমানা নেই।

লেখক: সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় পদকপ্রাপ্ত সাংবাদিকসম্পাদক সারাক্ষণ ও The Present World.