০৫:৪০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৬ জুন ২০২৫

মব ভায়োলেন্সের মূল টার্গেট বাঙালি—কালচারাল হেজিমনি

দেশে প্রতিদিন কোথাও না কোথাও ছোটখাটো মব ভায়োলেন্স ঘটছে।

গত এক সপ্তাহে ঘটে যাওয়া দুটো লজ্জাজনক শুধু নয়, ন্যাক্কারজনক মব ভায়োলেন্সের একটি সংবাদপত্রের পাতায় বড় করে এসেছে। সেটা সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি), মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার কে এম নুরুল হুদার ওপর ঘটে যাওয়া মব ভায়োলেন্স। অপরটি পত্রপত্রিকায় সেইভাবে আসেনি; সেটা লালমনিরহাটের দরিদ্র হিন্দু পরেশচন্দ্র শীল ও তার সন্তানের ওপর।

বর্তমান সরকারের আমলে প্রথম ঘটনা অর্থাৎ কে এম নুরুল হুদার ওপর ঘটে যাওয়া মব ভায়োলেন্সটিও কেন যে বেশ বড় আকারে সরকার-সমর্থক পত্রিকায় এলো, তা সত্যি একটা বড় প্রশ্ন। আর অপরটি, অর্থাৎ সংখ্যালঘু পরেশচন্দ্র শীলের ওপর ঘটে যাওয়া মব ভায়োলেন্সের ঘটনা যে পত্রপত্রিকায় সেভাবে আসবে না—এটাই তো স্বাভাবিক এ সরকারের আমলে। যেখানে সরকারপ্রধান নিজেই বলেন, সংখ্যালঘুদের ওপর যা কিছু ঘটছে সবই রাজনৈতিক কারণে, সেখানে দরিদ্র পরেশ শীলও নিশ্চয়ই এই সরকার ও তার সমর্থকদের মতে আরেকজন শেখ হাসিনা ছিলেন। তাই তাঁর ওপর এগুলো ঘটতেই পারে।

তবে গত দশ মাসের মব ভায়োলেন্স বা সংগঠিত সন্ত্রাসী আক্রমণগুলোর চরিত্র বিশ্লেষণ করলে স্পষ্ট হয়, এগুলোর বেশিভাগ ঘটছে মুক্তিযোদ্ধা ও হিন্দুদের ওপর। এবং এই দুটির কারণ যদি একটু গভীরে খুঁজতে যাওয়া হয়, তাহলে কিন্তু একই।

 

যেমন, একটা খারাপ নির্বাচন করার জন্য যদি কে এম নুরুল হুদাকে ওইভাবে মব ভায়োলেন্সের শিকার হতে হয়, তাহলে এ দেশের কোন নির্বাচন কমিশনার বাদ যাবেন? ১৯৭৩ থেকে এ-পর্যন্ত বাংলাদেশে যতগুলো নির্বাচন হয়েছে, সবগুলো নির্বাচন-নিয়ে প্রশ্ন আছে। আর বিশেষ করে ১৯৭৮-এর প্রেসিডেন্ট নির্বাচন, ১৯৭৯-এর পার্লামেন্ট নির্বাচন, ১৯৮৬-এর পার্লামেন্ট নির্বাচন, ১৯৮৮-এর পার্লামেন্ট নির্বাচন, তাছাড়া ১৯৯১-এর পরে দেশ একটি নির্বাচনী ধারায় ফিরলেও—সেখান থেকে দেশকে আজকের এই খাদে ফেলে দেয় যে উপনির্বাচন দুটি, অর্থাৎ ঢাকার মিরপুর উপনির্বাচন ও মাগুরা-২ আসনের উপনির্বাচন—ওই নির্বাচন কমিশনারও কি তাহলে নুরুল হুদার মতো দায়ী হবেন না? তাঁদেরকে কিন্তু মানুষ ওইভাবে দায়ী করেন না; মানুষ দায়ী করে সরকারকে।

কারণ, নির্বাচন কমিশন স্বাধীন হলেও নির্বাচন অনুষ্ঠান করানোর মতো শক্তি ও কাঠামো তার নেই। যেমন, বিচার বিভাগ স্বাধীন ও নির্বাহী বিভাগ থেকে পৃথক হলেও, যদি তার স্বাধীন সচিবালয় না থাকে, কাঠামো না থাকে, ওই বিচারবিভাগের ওপর কি বিচারের সব দায় চাপানো যায়? না—বেশি অংশ পড়ে যায় সরকারের ওপর।

তাই কে এম নুরুল হুদাকে অপমান করা, শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করার মূল কারণ—তিনি মুক্তিযোদ্ধা। আর একজন মুক্তিযোদ্ধা মানে শুধু যে তিনি অস্ত্র হাতে মুক্তিযুদ্ধ করেছিলেন তা নয়—তিনি একটি হেজিমনি ধারণ করেন, যা বাংলাদেশে খুব সহজ একটা নাম পেয়েছে: মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষ শক্তি।

মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষ শক্তি অর্থাৎ যারা বাংলা ও বাঙালির, অর্থাৎ এই ভূখণ্ডের হাজার বছরের কৃষ্টি বা কালচারকে ধারণ করেন; যারা চেতনার দিক থেকে ভৌগোলিকভাবে ন্যাচারাল। আর এটাই পৃথিবীর নিয়ম। আফ্রিকাকে পশ্চিমারা উপনিবেশ বানিয়ে তার সম্পদ লুটে নিয়ে গেছে; তাদের অনেক আচরণে পরিবর্তন ঘটিয়েছে। মধ্য এশিয়া থেকে গিয়ে তাদের অনেক অংশে অনেক আচরণে পরিবর্তন করা হয়েছে। কিন্তু তাদের কালচারকে শেকড় থেকে উপড়ে ফেলা যায়নি।

একটি বড় অংশ এখনও তাদের কালচারকে আঁকড়ে ধরে আছে। আর সেই হেজিমনিই আফ্রিকার সবচেয়ে বড় শক্তি। এই হেজিমনিকে নিয়েই সে সব আরোপিত ও আগত আচরণের বিরুদ্ধে নীরবে ও সরবে যুদ্ধ করে যাচ্ছে আফ্রিকা।

বাংলাদেশের এই অংশ ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান হওয়া কোনো দোষের ছিল না। কারণ, ওই অর্থে ভারতবর্ষ কখনও একটি একক রাষ্ট্র ছিল না; অনেকগুলো রাজ্য বা রাষ্ট্র ছিল। এখানে যে বন্ধনটি ছিল তা ভূমিগত বৈচিত্র্যের মধ্যে একটা আঞ্চলিক সংস্কৃতির সূক্ষ্ম মিলনের বন্ধন—যে ধরনের সংস্কৃতির বন্ধন চীন থেকে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অনেক দেশে আছে।

১৯৪৭ সালে পাকিস্তান যাঁরা সৃষ্টি করেছিলেন, তাঁদের মূল সমস্যা—তাঁরা ভৌগোলিক হেজিমনি বদলে বাস্তবে কী সেখানে প্রতিস্থাপন করবেন, তাও যেমন জানতেন না, তেমনি সমাজ ও মানবসভ্যতার ইতিহাস সম্পর্কে অজ্ঞতা, না–হয় তাকে অস্বীকার করার ফলেই তাঁরা ভৌগোলিক হেজিমনিকে অস্বীকার করেন—সেটাও পরিষ্কার নয়। এবং সেটা শুধু পূর্ব বাংলার নয়; পাঞ্জাব, সিন্ধু, সীমান্ত প্রদেশ—সবখানেই তাঁরা করেছেন।

যে কারণে পাকিস্তানের যে অংশটুকু টিকে আছে, তারা আজও নিজস্ব কোনো পা খুঁজে পায়নি এবং রাষ্ট্র হিসেবেও সঠিকভাবে দাঁড়াতে পারছে না। সে দেশের মধ্যবিত্ত ও উচ্চ-মধ্যবিত্তের সন্তান ওই অর্থে কেউ দেশে নেই, বা প্রতিনিয়ত দেশ ছাড়ে। সেখানে বিজ্ঞানের থেকে অজ্ঞতার, জঙ্গিপনার স্থান অনেক ওপরে।

বাংলাদেশের বর্তমান সরকার ১৯৭১-এ বাংলাদেশ সৃষ্টির ভেতর দিয়ে এই ভূখণ্ড আবার যে তার নিজস্ব কালচারাল হেজিমনিতে পা রাখার চেষ্টা করেছিল—সেটা পরিবর্তন করতে চাইছে। কিন্তু তার বদলে তারাও পাকিস্তানি নেতাদের মতো জানে না—সেখানে কী প্রতিস্থাপন করতে হবে। আর মানবসভ্যতায় কালচারাল হেজিমনির স্থানে অন্যকিছু প্রতিস্থাপন করা যায় কিনা—না, এটা সম্পূর্ণ একটি বিবর্তন প্রক্রিয়া—এ সম্পর্কেও তারা স্বচ্ছ বলে মনে হয় না।

তাই স্বাভাবিকই—বলপ্রয়োগের যে ধর্ম, অর্থাৎ জ্ঞান থেকে নয়, পেশি থেকে উৎপত্তি—নিয়ম অনুযায়ী তারা ধরে নিয়েছে; যারা মুক্তিযুদ্ধ করেছিলেন বা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাস করেন, তাদেরকে নির্মূল করতে হবে।

আর মুক্তিযুদ্ধের চেতনা কখনই কোনো একটি সশস্ত্র যুদ্ধের চেতনা, বা যারা নেতৃত্ব দিয়েছিলেন সেই সব ব্যক্তির ব্যক্তিগত ইতিহাসের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়; মুক্তিযুদ্ধের চেতনা অর্থাৎ বাঙালির ভৌগোলিক নিজস্ব কালচারের ওপর পা রাখা।

তাই যারা এই বাঙালি কালচারের হেজিমনিতে বিশ্বাস করে বা নিজেকে লালন করে—স্বভাবগতভাবে কিংবা বোধের মাধ্যমে—তাদেরকে এই সরকারের আনুকূল্যপ্রাপ্ত ‘মব’ শত্রু মনে করছে, এবং তাদের ওপর হামলা হচ্ছে।

যেমন লালমনিরহাটের পরেশ শীল। তিনি নিতান্তই লেখাপড়া না–জানা একজন দরিদ্র পেশাজীবী। কিন্তু তাঁকে কেন মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সঙ্গে জড়িয়ে ফেলে আক্রান্ত করা হচ্ছে? কারণ, পরেশ শীল জন্মগতভাবে, আচরণগতভাবে এই ভৌগোলিক হেজিমনিকে ধারণ করেন।এমনকি তাঁকে ভারতবর্ষের রাজপুতনার হিন্দুদের পাশে, বা কেরালার হিন্দুদের পাশে নিয়ে গেলেও পৃথক মনে হবে; কারণ, তিনি এই ভূখণ্ডের হেজিমনিকে রক্তধারা ও আচরণধারার ভেতর দিয়ে পেয়েছেন।

অথচ একটি রাষ্ট্রের যা চরিত্র হওয়া উচিত—ওই ভূখণ্ডের সব ধরনের চিন্তা, আচরণ ও বিশ্বাসকে সম্মান করা ও স্থান দেওয়া। কখনই রাষ্ট্র পরিচালকদের ব্যক্তিগত বিশ্বাস ও চিন্তাধারা মেনে নিতে ও সেই মতে চলতে–বলতে দেশের সব নাগরিককে বাধ্য করা নয়—আর এই বাধ্য করার কাজটি যখনই করা হয়, তখনই সরকার অথরিটারিয়ান হয়ে ওঠে।

জেনারেল এরশাদের শাসনামলকে স্বৈরাচারী শাসনামল বলা হতো, যদিও তিনি বাঙালির কালচারকে কখনও বাধাগ্রস্ত করেননি। তাঁর শাসনামলে যা সমস্যা ছিল, তা হলো—তিনি কালচারের ওপর কখনও কখনও একটি গোষ্ঠীর ব্যক্তিগত বিশ্বাসের ধর্মকে বসাতে চেয়েছিলেন বা উপরে তুলে ধরেছিলেন।

 

কিন্তু তাঁর পতনের পর ১৯৯১ থেকে ২০২৪ অবধি বিএনপি বা আওয়ামী লীগ ওই অর্থে গণতন্ত্রী হতে না–পারার সবচেয়ে বড় কারণ—সরকারের মতো করে সবাইকে ভাবতে হবে, বিশ্বাস করতে হবে; ইতিহাস, ভূগোল, সাহিত্য—সবই এই যে জোর বা জবরদস্তি রাষ্ট্র থেকে—এটাই কিন্তু সবচেয়ে বড় সমস্যা ছিল জনগণের জন্য।

আর বর্তমানে যা হয়েছে—সরকারের বিশ্বাস, সরকারের ভাবনা ‘মব ভায়োলেন্সের’ মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। আর সে বিশ্বাস ও ভাবনা কী, তা তারা নিজেরাও পরিষ্কার নয়—অনেকটা পাকিস্তানের মতো অস্বচ্ছ।

এ ধরনের একটা সময়ে যেমন কে এম নুরুল হুদার মতো মুক্তিযোদ্ধাও বাদ যান না, তেমনি এটা বেশি করে আঘাত করে পরেশ শীলের মতো সংখ্যালঘুদের। কারণ, সংখ্যালঘু মানেই দুর্বল। তাই যে–কোন দুর্যোগে তারাই সবচেয়ে বেশি আঘাতগ্রস্ত হয়; যেমন ঝড়ে দরিদ্রের বাড়িগুলোই ভেঙে পড়ে বেশি।

বাস্তবে কালচারাল হেজিমনি যখন আক্রান্ত, সে সময়ে আক্রান্ত সংখ্যালঘু হিন্দুদেরকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী সংখ্যাগুরু যারা আক্রান্ত হচ্ছে, তাদের থেকে পৃথক করে দেখা উচিত নয়।

তবে তারপরও বাংলাদেশের হিন্দুদের জন্য একটা সমস্যা আছে, যা তাদেরকে পলায়নপর হিসেবে চিহ্নিত করে। তবে বাস্তবে এটা কি পলায়নপরতা, ক্লান্তি না আরও অনেক কিছু? কারণ, আজ যে ভারত, পাকিস্তান ও বাংলাদেশ—এটা বিদেশি শাসকের হাত থেকে কেড়ে নিয়ে ভূমিপুত্রদের হাতে শাসিত হবে—এই সংগ্রাম বাঙালি হিন্দুই প্রথম শুরু করে।

ঋষি অরবিন্দ থেকে শুরু করে বিনয়, বাদল, দীনেশ হয়ে সূর্যসেনের সেই তিন দিন চট্টগ্রাম স্বাধীন রাখা থেকে কবি আল মামুদের ভাষায় ‘পাহাড়তলির অগ্নি’ (প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার) সহ হাজারো বাঙালি সন্তানের বুকের রক্ত দিয়ে যার শুরু—যার শীর্ষ বীর সুভাষচন্দ্র বসু।

বাংলার এই অগ্নিঝরা জীবন দেওয়ার পরেই তাদের পথ ধরে পাঞ্জাব। ব্রিটিশ শাসকের কূটকৌশল হোক আর দুর্ভাগ্যই হোক, যদিও বলা হয় ভারত ভাগ হয় ১৯৪৭ সালে—বাস্তবে তো ভাগ হয় বাংলা আর পাঞ্জাব। আর সেখানে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় বাঙালি হিন্দু।

তাই ক্লান্তি থেকেও তারা হতে পারে পলায়নপর—অন্তত জীবন বাঁচানোর জন্য পরেশ শীলরা বাড়িঘর সব ফেলে পশ্চিমবঙ্গের রেললাইনের ধারে বা নদীর পাশে খাস জমিতে স্থান নেয়, শুধুমাত্র জীবনের নিরাপত্তার জন্য বেছে নেয় দুর্বিসহ অভাবের জীবন।

অথচ তারা যে এটা মন থেকে চায় না, তার প্রমাণ—মাত্র কয়েক দিন আগে একজন ভদ্রলোক আমাকে বলছিলেন, ‘তুমি তো গ্রামের দিকে যাও না; গত পনেরো বছরে এ দেশের হিন্দুরা অনেকেই ভালো ভালো বাড়িঘর করেছে। তারা মনে করেছিল তাদেরকে আর এ দেশ ছাড়তে হবে না।’

এখন এই মব ভায়োলেন্সই যখন মূল পরিচালক হয়ে উঠছে দেশে, সে সময়ে নুরুল হুদারাও, অর্থাৎ বাঙালি সংস্কৃতির বা হেজিমনির সব মানুষ—দল, মত, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে—কী সিদ্ধান্ত নেবে, সেটা ভবিষ্যৎই বলবে।

তেমনি ভবিষ্যৎই বলবে—হিন্দুরা কি শুধু পলায়নপর হিসেবে নিজেদের প্রমাণিত করবে, না তাদের যে নতুন প্রজন্ম গত বছরের আগস্ট ও সেপ্টেম্বর মাসে এ দেশে থাকবে বলে মাঠে নেমেছিল—তারা তাদের অধিকারের জন্য লড়বে।

তারা যেমন এই বাংলার সংস্কৃতির হেজিমনিতে বিশ্বাসী, তেমনি তারা সূর্যসেন থেকে ‘পাহাড়তলির অগ্নি’রও উত্তরাধিকার।

সর্বোপরি যারা ‘মব ভায়োলেন্স’কে পৃষ্ঠপোষকতা দিচ্ছেন, বা এটা বিজয়ের পথ মনে করছেন, তারা মধ্যপ্রাচ্য থেকে শিক্ষা নিতে পারেন। মধ্যপ্রাচ্যে পশ্চিমারা বা তাদের সহযোগীরা যা করে, সেটা বড় ধরনের ‘মব ভায়োলেন্স’।

এতে হয়তো মধ্যপ্রাচ্যের অনেক রাষ্ট্রে পুরোপুরিভাবে, অনেকটিতে আংশিকভাবে, এক ধরনের মবের জয় হয়েছে। কিন্তু বিজিত ও বিজয়ী উভয়েই ঢুকে গেছে সহিংসতায়। যার ফলে শুধু রাষ্ট্র অস্থিতিশীল ও অকার্যকর হচ্ছে না, সমাজ ও সমাজের মানব–প্রজন্মকেও ঠেলে দেওয়া হচ্ছে সহিংস জেনারেশন তৈরির পথে—যে সময়ে স্থিতিশীল দেশগুলো বিজ্ঞানভিত্তিক অর্থনীতিতে নিয়োজিত করেছে তাদের নতুন প্রজন্মসহ সব প্রজন্মকে।

 

লেখক: সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত সাংবাদিক, সম্পাদক, সারাক্ষণ, The Present World.

মব ভায়োলেন্সের মূল টার্গেট বাঙালি—কালচারাল হেজিমনি

০৮:০০:১৮ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৬ জুন ২০২৫

দেশে প্রতিদিন কোথাও না কোথাও ছোটখাটো মব ভায়োলেন্স ঘটছে।

গত এক সপ্তাহে ঘটে যাওয়া দুটো লজ্জাজনক শুধু নয়, ন্যাক্কারজনক মব ভায়োলেন্সের একটি সংবাদপত্রের পাতায় বড় করে এসেছে। সেটা সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি), মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার কে এম নুরুল হুদার ওপর ঘটে যাওয়া মব ভায়োলেন্স। অপরটি পত্রপত্রিকায় সেইভাবে আসেনি; সেটা লালমনিরহাটের দরিদ্র হিন্দু পরেশচন্দ্র শীল ও তার সন্তানের ওপর।

বর্তমান সরকারের আমলে প্রথম ঘটনা অর্থাৎ কে এম নুরুল হুদার ওপর ঘটে যাওয়া মব ভায়োলেন্সটিও কেন যে বেশ বড় আকারে সরকার-সমর্থক পত্রিকায় এলো, তা সত্যি একটা বড় প্রশ্ন। আর অপরটি, অর্থাৎ সংখ্যালঘু পরেশচন্দ্র শীলের ওপর ঘটে যাওয়া মব ভায়োলেন্সের ঘটনা যে পত্রপত্রিকায় সেভাবে আসবে না—এটাই তো স্বাভাবিক এ সরকারের আমলে। যেখানে সরকারপ্রধান নিজেই বলেন, সংখ্যালঘুদের ওপর যা কিছু ঘটছে সবই রাজনৈতিক কারণে, সেখানে দরিদ্র পরেশ শীলও নিশ্চয়ই এই সরকার ও তার সমর্থকদের মতে আরেকজন শেখ হাসিনা ছিলেন। তাই তাঁর ওপর এগুলো ঘটতেই পারে।

তবে গত দশ মাসের মব ভায়োলেন্স বা সংগঠিত সন্ত্রাসী আক্রমণগুলোর চরিত্র বিশ্লেষণ করলে স্পষ্ট হয়, এগুলোর বেশিভাগ ঘটছে মুক্তিযোদ্ধা ও হিন্দুদের ওপর। এবং এই দুটির কারণ যদি একটু গভীরে খুঁজতে যাওয়া হয়, তাহলে কিন্তু একই।

 

যেমন, একটা খারাপ নির্বাচন করার জন্য যদি কে এম নুরুল হুদাকে ওইভাবে মব ভায়োলেন্সের শিকার হতে হয়, তাহলে এ দেশের কোন নির্বাচন কমিশনার বাদ যাবেন? ১৯৭৩ থেকে এ-পর্যন্ত বাংলাদেশে যতগুলো নির্বাচন হয়েছে, সবগুলো নির্বাচন-নিয়ে প্রশ্ন আছে। আর বিশেষ করে ১৯৭৮-এর প্রেসিডেন্ট নির্বাচন, ১৯৭৯-এর পার্লামেন্ট নির্বাচন, ১৯৮৬-এর পার্লামেন্ট নির্বাচন, ১৯৮৮-এর পার্লামেন্ট নির্বাচন, তাছাড়া ১৯৯১-এর পরে দেশ একটি নির্বাচনী ধারায় ফিরলেও—সেখান থেকে দেশকে আজকের এই খাদে ফেলে দেয় যে উপনির্বাচন দুটি, অর্থাৎ ঢাকার মিরপুর উপনির্বাচন ও মাগুরা-২ আসনের উপনির্বাচন—ওই নির্বাচন কমিশনারও কি তাহলে নুরুল হুদার মতো দায়ী হবেন না? তাঁদেরকে কিন্তু মানুষ ওইভাবে দায়ী করেন না; মানুষ দায়ী করে সরকারকে।

কারণ, নির্বাচন কমিশন স্বাধীন হলেও নির্বাচন অনুষ্ঠান করানোর মতো শক্তি ও কাঠামো তার নেই। যেমন, বিচার বিভাগ স্বাধীন ও নির্বাহী বিভাগ থেকে পৃথক হলেও, যদি তার স্বাধীন সচিবালয় না থাকে, কাঠামো না থাকে, ওই বিচারবিভাগের ওপর কি বিচারের সব দায় চাপানো যায়? না—বেশি অংশ পড়ে যায় সরকারের ওপর।

তাই কে এম নুরুল হুদাকে অপমান করা, শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করার মূল কারণ—তিনি মুক্তিযোদ্ধা। আর একজন মুক্তিযোদ্ধা মানে শুধু যে তিনি অস্ত্র হাতে মুক্তিযুদ্ধ করেছিলেন তা নয়—তিনি একটি হেজিমনি ধারণ করেন, যা বাংলাদেশে খুব সহজ একটা নাম পেয়েছে: মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষ শক্তি।

মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষ শক্তি অর্থাৎ যারা বাংলা ও বাঙালির, অর্থাৎ এই ভূখণ্ডের হাজার বছরের কৃষ্টি বা কালচারকে ধারণ করেন; যারা চেতনার দিক থেকে ভৌগোলিকভাবে ন্যাচারাল। আর এটাই পৃথিবীর নিয়ম। আফ্রিকাকে পশ্চিমারা উপনিবেশ বানিয়ে তার সম্পদ লুটে নিয়ে গেছে; তাদের অনেক আচরণে পরিবর্তন ঘটিয়েছে। মধ্য এশিয়া থেকে গিয়ে তাদের অনেক অংশে অনেক আচরণে পরিবর্তন করা হয়েছে। কিন্তু তাদের কালচারকে শেকড় থেকে উপড়ে ফেলা যায়নি।

একটি বড় অংশ এখনও তাদের কালচারকে আঁকড়ে ধরে আছে। আর সেই হেজিমনিই আফ্রিকার সবচেয়ে বড় শক্তি। এই হেজিমনিকে নিয়েই সে সব আরোপিত ও আগত আচরণের বিরুদ্ধে নীরবে ও সরবে যুদ্ধ করে যাচ্ছে আফ্রিকা।

বাংলাদেশের এই অংশ ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান হওয়া কোনো দোষের ছিল না। কারণ, ওই অর্থে ভারতবর্ষ কখনও একটি একক রাষ্ট্র ছিল না; অনেকগুলো রাজ্য বা রাষ্ট্র ছিল। এখানে যে বন্ধনটি ছিল তা ভূমিগত বৈচিত্র্যের মধ্যে একটা আঞ্চলিক সংস্কৃতির সূক্ষ্ম মিলনের বন্ধন—যে ধরনের সংস্কৃতির বন্ধন চীন থেকে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অনেক দেশে আছে।

১৯৪৭ সালে পাকিস্তান যাঁরা সৃষ্টি করেছিলেন, তাঁদের মূল সমস্যা—তাঁরা ভৌগোলিক হেজিমনি বদলে বাস্তবে কী সেখানে প্রতিস্থাপন করবেন, তাও যেমন জানতেন না, তেমনি সমাজ ও মানবসভ্যতার ইতিহাস সম্পর্কে অজ্ঞতা, না–হয় তাকে অস্বীকার করার ফলেই তাঁরা ভৌগোলিক হেজিমনিকে অস্বীকার করেন—সেটাও পরিষ্কার নয়। এবং সেটা শুধু পূর্ব বাংলার নয়; পাঞ্জাব, সিন্ধু, সীমান্ত প্রদেশ—সবখানেই তাঁরা করেছেন।

যে কারণে পাকিস্তানের যে অংশটুকু টিকে আছে, তারা আজও নিজস্ব কোনো পা খুঁজে পায়নি এবং রাষ্ট্র হিসেবেও সঠিকভাবে দাঁড়াতে পারছে না। সে দেশের মধ্যবিত্ত ও উচ্চ-মধ্যবিত্তের সন্তান ওই অর্থে কেউ দেশে নেই, বা প্রতিনিয়ত দেশ ছাড়ে। সেখানে বিজ্ঞানের থেকে অজ্ঞতার, জঙ্গিপনার স্থান অনেক ওপরে।

বাংলাদেশের বর্তমান সরকার ১৯৭১-এ বাংলাদেশ সৃষ্টির ভেতর দিয়ে এই ভূখণ্ড আবার যে তার নিজস্ব কালচারাল হেজিমনিতে পা রাখার চেষ্টা করেছিল—সেটা পরিবর্তন করতে চাইছে। কিন্তু তার বদলে তারাও পাকিস্তানি নেতাদের মতো জানে না—সেখানে কী প্রতিস্থাপন করতে হবে। আর মানবসভ্যতায় কালচারাল হেজিমনির স্থানে অন্যকিছু প্রতিস্থাপন করা যায় কিনা—না, এটা সম্পূর্ণ একটি বিবর্তন প্রক্রিয়া—এ সম্পর্কেও তারা স্বচ্ছ বলে মনে হয় না।

তাই স্বাভাবিকই—বলপ্রয়োগের যে ধর্ম, অর্থাৎ জ্ঞান থেকে নয়, পেশি থেকে উৎপত্তি—নিয়ম অনুযায়ী তারা ধরে নিয়েছে; যারা মুক্তিযুদ্ধ করেছিলেন বা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাস করেন, তাদেরকে নির্মূল করতে হবে।

আর মুক্তিযুদ্ধের চেতনা কখনই কোনো একটি সশস্ত্র যুদ্ধের চেতনা, বা যারা নেতৃত্ব দিয়েছিলেন সেই সব ব্যক্তির ব্যক্তিগত ইতিহাসের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়; মুক্তিযুদ্ধের চেতনা অর্থাৎ বাঙালির ভৌগোলিক নিজস্ব কালচারের ওপর পা রাখা।

তাই যারা এই বাঙালি কালচারের হেজিমনিতে বিশ্বাস করে বা নিজেকে লালন করে—স্বভাবগতভাবে কিংবা বোধের মাধ্যমে—তাদেরকে এই সরকারের আনুকূল্যপ্রাপ্ত ‘মব’ শত্রু মনে করছে, এবং তাদের ওপর হামলা হচ্ছে।

যেমন লালমনিরহাটের পরেশ শীল। তিনি নিতান্তই লেখাপড়া না–জানা একজন দরিদ্র পেশাজীবী। কিন্তু তাঁকে কেন মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সঙ্গে জড়িয়ে ফেলে আক্রান্ত করা হচ্ছে? কারণ, পরেশ শীল জন্মগতভাবে, আচরণগতভাবে এই ভৌগোলিক হেজিমনিকে ধারণ করেন।এমনকি তাঁকে ভারতবর্ষের রাজপুতনার হিন্দুদের পাশে, বা কেরালার হিন্দুদের পাশে নিয়ে গেলেও পৃথক মনে হবে; কারণ, তিনি এই ভূখণ্ডের হেজিমনিকে রক্তধারা ও আচরণধারার ভেতর দিয়ে পেয়েছেন।

অথচ একটি রাষ্ট্রের যা চরিত্র হওয়া উচিত—ওই ভূখণ্ডের সব ধরনের চিন্তা, আচরণ ও বিশ্বাসকে সম্মান করা ও স্থান দেওয়া। কখনই রাষ্ট্র পরিচালকদের ব্যক্তিগত বিশ্বাস ও চিন্তাধারা মেনে নিতে ও সেই মতে চলতে–বলতে দেশের সব নাগরিককে বাধ্য করা নয়—আর এই বাধ্য করার কাজটি যখনই করা হয়, তখনই সরকার অথরিটারিয়ান হয়ে ওঠে।

জেনারেল এরশাদের শাসনামলকে স্বৈরাচারী শাসনামল বলা হতো, যদিও তিনি বাঙালির কালচারকে কখনও বাধাগ্রস্ত করেননি। তাঁর শাসনামলে যা সমস্যা ছিল, তা হলো—তিনি কালচারের ওপর কখনও কখনও একটি গোষ্ঠীর ব্যক্তিগত বিশ্বাসের ধর্মকে বসাতে চেয়েছিলেন বা উপরে তুলে ধরেছিলেন।

 

কিন্তু তাঁর পতনের পর ১৯৯১ থেকে ২০২৪ অবধি বিএনপি বা আওয়ামী লীগ ওই অর্থে গণতন্ত্রী হতে না–পারার সবচেয়ে বড় কারণ—সরকারের মতো করে সবাইকে ভাবতে হবে, বিশ্বাস করতে হবে; ইতিহাস, ভূগোল, সাহিত্য—সবই এই যে জোর বা জবরদস্তি রাষ্ট্র থেকে—এটাই কিন্তু সবচেয়ে বড় সমস্যা ছিল জনগণের জন্য।

আর বর্তমানে যা হয়েছে—সরকারের বিশ্বাস, সরকারের ভাবনা ‘মব ভায়োলেন্সের’ মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। আর সে বিশ্বাস ও ভাবনা কী, তা তারা নিজেরাও পরিষ্কার নয়—অনেকটা পাকিস্তানের মতো অস্বচ্ছ।

এ ধরনের একটা সময়ে যেমন কে এম নুরুল হুদার মতো মুক্তিযোদ্ধাও বাদ যান না, তেমনি এটা বেশি করে আঘাত করে পরেশ শীলের মতো সংখ্যালঘুদের। কারণ, সংখ্যালঘু মানেই দুর্বল। তাই যে–কোন দুর্যোগে তারাই সবচেয়ে বেশি আঘাতগ্রস্ত হয়; যেমন ঝড়ে দরিদ্রের বাড়িগুলোই ভেঙে পড়ে বেশি।

বাস্তবে কালচারাল হেজিমনি যখন আক্রান্ত, সে সময়ে আক্রান্ত সংখ্যালঘু হিন্দুদেরকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী সংখ্যাগুরু যারা আক্রান্ত হচ্ছে, তাদের থেকে পৃথক করে দেখা উচিত নয়।

তবে তারপরও বাংলাদেশের হিন্দুদের জন্য একটা সমস্যা আছে, যা তাদেরকে পলায়নপর হিসেবে চিহ্নিত করে। তবে বাস্তবে এটা কি পলায়নপরতা, ক্লান্তি না আরও অনেক কিছু? কারণ, আজ যে ভারত, পাকিস্তান ও বাংলাদেশ—এটা বিদেশি শাসকের হাত থেকে কেড়ে নিয়ে ভূমিপুত্রদের হাতে শাসিত হবে—এই সংগ্রাম বাঙালি হিন্দুই প্রথম শুরু করে।

ঋষি অরবিন্দ থেকে শুরু করে বিনয়, বাদল, দীনেশ হয়ে সূর্যসেনের সেই তিন দিন চট্টগ্রাম স্বাধীন রাখা থেকে কবি আল মামুদের ভাষায় ‘পাহাড়তলির অগ্নি’ (প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার) সহ হাজারো বাঙালি সন্তানের বুকের রক্ত দিয়ে যার শুরু—যার শীর্ষ বীর সুভাষচন্দ্র বসু।

বাংলার এই অগ্নিঝরা জীবন দেওয়ার পরেই তাদের পথ ধরে পাঞ্জাব। ব্রিটিশ শাসকের কূটকৌশল হোক আর দুর্ভাগ্যই হোক, যদিও বলা হয় ভারত ভাগ হয় ১৯৪৭ সালে—বাস্তবে তো ভাগ হয় বাংলা আর পাঞ্জাব। আর সেখানে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় বাঙালি হিন্দু।

তাই ক্লান্তি থেকেও তারা হতে পারে পলায়নপর—অন্তত জীবন বাঁচানোর জন্য পরেশ শীলরা বাড়িঘর সব ফেলে পশ্চিমবঙ্গের রেললাইনের ধারে বা নদীর পাশে খাস জমিতে স্থান নেয়, শুধুমাত্র জীবনের নিরাপত্তার জন্য বেছে নেয় দুর্বিসহ অভাবের জীবন।

অথচ তারা যে এটা মন থেকে চায় না, তার প্রমাণ—মাত্র কয়েক দিন আগে একজন ভদ্রলোক আমাকে বলছিলেন, ‘তুমি তো গ্রামের দিকে যাও না; গত পনেরো বছরে এ দেশের হিন্দুরা অনেকেই ভালো ভালো বাড়িঘর করেছে। তারা মনে করেছিল তাদেরকে আর এ দেশ ছাড়তে হবে না।’

এখন এই মব ভায়োলেন্সই যখন মূল পরিচালক হয়ে উঠছে দেশে, সে সময়ে নুরুল হুদারাও, অর্থাৎ বাঙালি সংস্কৃতির বা হেজিমনির সব মানুষ—দল, মত, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে—কী সিদ্ধান্ত নেবে, সেটা ভবিষ্যৎই বলবে।

তেমনি ভবিষ্যৎই বলবে—হিন্দুরা কি শুধু পলায়নপর হিসেবে নিজেদের প্রমাণিত করবে, না তাদের যে নতুন প্রজন্ম গত বছরের আগস্ট ও সেপ্টেম্বর মাসে এ দেশে থাকবে বলে মাঠে নেমেছিল—তারা তাদের অধিকারের জন্য লড়বে।

তারা যেমন এই বাংলার সংস্কৃতির হেজিমনিতে বিশ্বাসী, তেমনি তারা সূর্যসেন থেকে ‘পাহাড়তলির অগ্নি’রও উত্তরাধিকার।

সর্বোপরি যারা ‘মব ভায়োলেন্স’কে পৃষ্ঠপোষকতা দিচ্ছেন, বা এটা বিজয়ের পথ মনে করছেন, তারা মধ্যপ্রাচ্য থেকে শিক্ষা নিতে পারেন। মধ্যপ্রাচ্যে পশ্চিমারা বা তাদের সহযোগীরা যা করে, সেটা বড় ধরনের ‘মব ভায়োলেন্স’।

এতে হয়তো মধ্যপ্রাচ্যের অনেক রাষ্ট্রে পুরোপুরিভাবে, অনেকটিতে আংশিকভাবে, এক ধরনের মবের জয় হয়েছে। কিন্তু বিজিত ও বিজয়ী উভয়েই ঢুকে গেছে সহিংসতায়। যার ফলে শুধু রাষ্ট্র অস্থিতিশীল ও অকার্যকর হচ্ছে না, সমাজ ও সমাজের মানব–প্রজন্মকেও ঠেলে দেওয়া হচ্ছে সহিংস জেনারেশন তৈরির পথে—যে সময়ে স্থিতিশীল দেশগুলো বিজ্ঞানভিত্তিক অর্থনীতিতে নিয়োজিত করেছে তাদের নতুন প্রজন্মসহ সব প্রজন্মকে।

 

লেখক: সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত সাংবাদিক, সম্পাদক, সারাক্ষণ, The Present World.