শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০:০৬ পূর্বাহ্ন

পুতিন এবং কিমের মতো নেতারা এক হলে বিশ্বকে সর্তক হতে হয়

  • Update Time : মঙ্গলবার, ২৫ জুন, ২০২৪, ৮.০৯ এএম

সের্গ শ্মেমান

ভ্লাদিমির পুতিনের উত্তর কোরিয়া সফরের গত কয়েকদিনে  উত্তর কোরিয়ার রাজধানীকে পুরনো দিনের  কমিউনিস্ট শীর্ষ সম্মেলনেরসময়ের মতো সাজানো হয়েছিল। সেনাবাহিনীর পতাকা ওড়ানো, শিশুদের দল দিয়ে অভিনন্দন, প্রতিটি ল্যাম্পপোস্ট এবং বিল্ডিংয়ে পতাকার প্রতিকৃতি, বেহিসাবী উপহার এবং চিরন্তন বন্ধুত্বের উচ্চাভিলাষী প্রকাশ ছিল।

“কমরেড কিম জং-উন তাকে আন্তরিকভাবে আলিঙ্গন করেছেন,” বিমানবন্দরের শুভেচ্ছা সম্পর্কে উত্তর কোরিয়ার সরকারি বর্ণনা ছিল। “শীর্ষ নেতারা তাদের অন্তঃস্থল থেকে চিন্তাভাবনা শেয়ার করেছেন একান্ত বৈঠকের সময় ।

অন্যদিকে সোভিয়েত যুগে উত্তর কোরিয়ার প্রতি বন্ধুত্বের প্রতিশ্রুতি সত্ত্বেও, কোনও সোভিয়েত নেতা কখনও পিয়ংইয়ং সফর করেননি। প্রকৃতপক্ষে, একমাত্র ক্রেমলিন নেতা যিনি প্রথম সফর করেছেন, তিনিও পুতিন নিজেই, আর সেটা ছিলো ২০০০ সালে। ওই সফর সম্পূর্ণ ভিন্ন সফর, পুতিন তখন নিজেকে বিশ্বের একটি বিপজ্জনক এবং প্রায় বিচ্ছিন্ন নেতার মধ্যে অপরিহার্য মধ্যস্থতাকারী হিসাবে অবস্থান করার চেষ্টা করেছিলেন। আর সফর শেষে  রাশিয়ান নেতা বলেছিলেন যে তিনি আত্মবিশ্বাসী হয়েছেন,  উত্তর কোরিয়া কেবল মহাবিশ্বের শান্তিপূর্ণ অনুসন্ধানের জন্য রকেট প্রযুক্তি ব্যবহার করবে। (২০১৮ সালের জুনে চোখ রাখলে দেখা যায়,  তৎকালীন আমেরিকার রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্প তার মিস্টার কিমের সাথে সফর শেষে টুইট করেছেন: “মাত্র অবতরণ করেছি — একটি দীর্ঘ সফর, তবে এখন সবাই নিজেকে আমার দায়িত্ব নেওয়ার দিনের চেয়ে অনেক বেশি নিরাপদ বোধ করতে পারে। উত্তর কোরিয়ার কাছ থেকে এখন আর কোনও পারমাণবিক হুমকি নেই।”)

এই পুতিন-কিম সফর ছিল পৃথিবী বিচ্ছিন্ন নেতার সঙ্গে , যেমন হয়েছিলো তাদের পূর্ব রাশিয়ার শেষ বৈঠক সেপ্টেম্বর মাসে। পুতিন সম্ভবত বর্তমান পৃথিবীতে সব থেকে অচ্যূত নেতা। তিনি ইউক্রেনে তার নির্মম যুদ্ধ বজায় রাখার জন্য গোলাবারুদ এবং অস্ত্র খুঁজছেন, এবং পশ্চিমের প্রতি তার ঘৃণার সহযাত্রী একটি কমরেড খুঁজছেন। মি. কিম, যিনি সম্ভবত তার ক্ষেপণাস্ত্র বা পারমাণবিক কর্মসূচির জন্য প্রযুক্তিগত সহায়তা চেয়েছেন, তবে তিনি অন্তত এখনও তার নিজের জনগণ ছাড়া অন্য কারও বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেননি। যাইহোক, পুতিন এবং কিমের স্বাক্ষরিত চুক্তির পাঠ্য প্রকাশ করা হয়নি এবং জনসাধারণের জানানোর জন্য একটি মাত্র লাইনটি ছিল বিদেশী আগ্রাসনের ক্ষেত্রে পারস্পরিক সহায়তার বিষয়ে তারা একমত হয়েছে। যখন বাস্তবে পৃথিবীতে এইভাবে  সমাজচ্যুত বা মানুষের বিপরীতের নেতারা মিলিত হয় এবং পারস্পরিক সামরিক সহায়তা নিয়ে আলোচনা করে, তখন চিন্তার কারণ সৃষ্টি হয়। রাশিয়া নিজেই উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক এবং ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি সম্পর্কে প্রকাশ্যে উদ্বিগ্ন ছিল এবং এমনকি এটি বন্ধ করার জন্য জাতিসংঘের প্রচেষ্টায় যোগ দিয়েছিল। কিন্তু মি. পুতিন এখন তার দেশের পররাষ্ট্র নীতি শুধুমাত্র সেই সমর্থন সংগ্রহের ওপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করেছেন যা তিনি পশ্চিমের বিরুদ্ধে টিকে থাকার যুদ্ধে পরিণত করেছেন।

পিয়ংইয়ং থেকে, পুতিন তার পুরানো সোভিয়েত বিমানে হ্যানয় উড়ে যান, কমিউনিস্ট যুগের আরেকটি মিত্র, যেখানে তাকে আবারও আনুষ্ঠানিক আলিঙ্গন এবং শিশুদের পতাকা ওড়ানোর মাধ্যমে স্বাগত জানানো হয়েছিল। কিন্তু এখানে তার পশ্চিমবিরোধী বক্তব্য প্রায় অনুপস্থিত ছিল। তার লক্ষ্য ছিল সহজ।তিনি শুধু  দেখাতে চেয়েছেন যে তিনি এখনও কিছু জায়গায় সম্মানের সাথে নিজেকে গ্রহনযোগ্য করতে পারেন।  যেমন প্রেসিডেন্ট বাইডেন এবং চীনের শি জিনপিং গত বছর ভিয়েতনাম সফর ছিলেন। তিনিও তেমন একজন আর কি?  ভিয়েতনাম ঐতিহাসিকভাবে তার অস্ত্রশস্ত্রের জন্য রাশিয়ার উপর অত্যন্ত নির্ভরশীল, কিন্তু দেশটি  মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং পশ্চিমের সাথে সেতু তৈরি করেছে । তাই এখানে পুতিনের বার্তাটি ছিল: আরে, আমি এখনও আছি।

ফ্রেন্স-আমেরিকান লেখক ও সাংবাদিক, নিউ ইয়র্ক টাইমসের এডিটরিয়াল বোর্ডের মেম্বর। 

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

kjhdf73kjhykjhuhf
© All rights reserved © 2024