সারাক্ষণ ডেস্ক
প্রথম আলোর একটি শিরোনাম “লেবার পার্টির বিপুল বিজয় দেখছে ঋষির দল”
এমন নির্বাচন সচরাচর দেখা যায় না, বিশেষত প্রাণবন্ত গণতন্ত্রে, যেখানে ভোটের আগেই ক্ষমতাসীন দল পরাজয় মেনে নেয়। যুক্তরাজ্যের কনিষ্ঠতম এবং প্রথম একজন ভারতীয় বংশোদ্ভূত প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক যখন ডাউনিং স্ট্রিটে খোলা আকাশের নিচে দাঁড়িয়ে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করেন, সে সময় আকস্মিক বৃষ্টি তাঁকে যেভাবে ভিজিয়ে দিয়েছিল, তাতে তখনই কথা উঠেছিল আলামত ভালো নয়, তাঁর এবার ভরাডুবি হবে। ভোটের আগের দিন গতকাল বুধবার ব্রিটিশ সংবাদপত্রগুলো দেখলে তাঁর এবং তাঁর দলের জন্য অনেকের করুণা বোধ হতে পারে।
বিরোধী দল লেবার পার্টির ভূমিধস বিজয়ের সম্ভাবনা এতটাই প্রবল যে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সোয়েলা বেভারম্যান কনজারভেটিভ পার্টির সমর্থক দ্য টেলিগ্রাফ পত্রিকায় গতকাল নিবন্ধ লিখে হার মেনে নিয়ে দলকে পুনর্গঠনের মাধ্যমে বাঁচানোর কথা বলেছেন। ভোটের ৩৬ ঘণ্টা আগে কনজারভেটিভ পার্টির সমর্থকদের কাছে এখনো জনপ্রিয় বরিস জনসন নির্বাচনী সভায় প্রথমবারের মতো অংশ নিয়ে বলেছেন, লেবারের বিরাট বিজয় হবে অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভধারণের মতো ভীতিকর। কনজারভেটিভ পার্টির সমর্থক আরেকটি পত্রিকা ডেইলি মেইল শিরোনাম করেছে, স্টারমার–বিভীষিকা ঠেকাতে বরিস ও ঋষি এক হয়েছেন (পত্রিকাটি শিরোনামে স্টরমাগেডন বিশেষণ ব্যবহার করেছে, যা স্টারমারের আর্মাগেডনের যৌগ এবং বাংলায় আর্মাগেডনের কোনো জুৎসই প্রতিশব্দ নেই)।
সংবাদপত্রের পাতায় নির্বাচনের গতিবিধির প্রতিফলন সম্পর্কে এরপর বিবিসির প্রশ্নের জবাবে পেনশনমন্ত্রী মেল স্ট্রাইড বলেন, লেবার পার্টি সম্ভবত এত বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে, যা এর আগে কখনো কোনো দল পায়নি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও এর কোনো ব্যতিক্রম নেই। সকালে ফেসবুকে ঢুকতেই কনজারভেটিভ পার্টির যে বিজ্ঞাপন আমার মোবাইলের পর্দায় উঠে এসেছে, তাতে আকুল আবেদন হচ্ছে লেবার পার্টির সুপার মেজরিটির অর্থ হবে তাদের কোনো জবাবদিহি থাকবে না। তাই আমার এলাকার স্বার্থ রক্ষায় আমি যেন কনজারভেটিভদের ভোট দিই। কনজারভেটিভদের এসব প্রচারণা তাদের সমর্থকদের ভোটকেন্দ্রে হাজির করার শেষ চেষ্টা বলেও অনেকের ধারণা। লেবার পার্টির প্রধান কিয়ার স্টারমারও বলেছেন, সুপার মেজরিটির কথা বলার আসল উদ্দেশ্য হচ্ছে লেবার ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে যেতে নিরুৎসাহিত করা।
লেবার পার্টি পরিবর্তনের স্লোগান নিয়ে এই নির্বাচনে প্রচার চালাচ্ছে। তারা কনজারভেটিভ পার্টির ১৪ বছরের শাসনে যে স্থবিরতা তৈরি হয়েছে, তা ভাঙার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। লেবার পার্টির বর্তমান নেতা কিয়ার স্টারমারের অধীন দলটিও অনেক বদলে গেছে। এই পরিবর্তনের প্রতিফলন ঘটেছে কিয়ার স্টারমার তাঁর পূর্বসূরি জেরেমি করবিন এবং তাঁর সমর্থক বামপন্থীদের মনোনয়ন দিতে অস্বীকৃতি জানিয়ে তাঁদের দল ছেড়ে যেতে বাধ্য করার ঘটনাগুলোয়। বেসরকারি খাতের ভূমিকা এবং রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা ও পররাষ্ট্রনীতির প্রশ্নে তিনি যেসব নীতিগত পরিবর্তন এনেছেন, তাতে তাঁকে বামপন্থীরা লেবারের পোশাকে কনজারভেটিভ হিসেবে অভিহিত করতে শুরু করেছেন।
ইত্তেফাক এর একটি শিরোনাম “ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে শিক্ষক নেতাদের বৈঠক আজ, কর্মবিরতি চলছে”
সর্বজনীন পেনশনের ‘প্রত্যয় স্কিম’ বাতিলের দাবিতে তৃতীয় দিনের মতো সর্বাত্মক কর্মবিরতি পালন করেছেন দেশের ৩৫টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। বুধবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ভবনের মূল ফটকে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। এসময় সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির মহাসচিব ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক নিজামুল হক ভূইয়া জানান, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের আন্দোলনরত শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলতে চেয়েছেন। আজ ওবায়দুল কাদের শিক্ষকদের সময় দিয়েছেন বলেও জানান এই শিক্ষক নেতা। তবে পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত শিক্ষকদের সর্বাত্মক কর্মবিরতি চলবে।
শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আন্দোলনের ফলে তিন দিন থেকেই কার্যত অচল হয়ে আছে দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। সকাল থেকেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা সর্বাত্মক কর্মবিরতি পালন করে কলা ভবনের মূল ফটকে অবস্থান নেন। অন্যদিকে ‘কর্মকর্তা-কর্মচারী ঐক্য পরিষদ’ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান নেন। ফলে শিক্ষার্থীরা বিভাগ, হল, ইনস্টিটিউট ও প্রশাসনিক ভবনের কোথাও কোনো ধরনের সেবা পাচ্ছে না। প্রশাসনিক ভবনের সামনে থেকে অনেক শিক্ষার্থী সেবা নিতে এসে ফিরে যাচ্ছেন।
নিজামুল হক ভূইয়া বলেন, ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইসহাক আলী খান পান্না আমাকে ফোন করেছিলেন। তিনি আমাকে বললেন, ‘আপনি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে একটু কথা বলুন।’ আমি তার কাছে আমাদের আন্দোলনের যৌক্তিকতা তুলে ধরলাম। তিনি বললেন, ‘আপনারা আরো দুই-তিন জন শিক্ষকসহ সন্ধ্যায় আসুন।’ আমি বললাম, ‘আমার ফেডারেশন আছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আছে।’ তিনি বললেন, ‘ঠিক আছে।’ তবে বেশি লোকজন না নিয়ে যেতে অনুরোধ করেছেন, যাতে কথা বলতে সুবিধা হয়। এখন আমরা নিজেরা বসে সিদ্ধান্ত নেব।
অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী মঙ্গলবার শিক্ষকদের চলমান আন্দোলনকে ‘অযৌক্তিক’ বলে মন্তব্য করেছেন। এ বিষয়ে সাংবাদিকরা জানতে চাইলে নিজামুল হক ভূইয়া বলেন, ‘যারা প্রত্যয় স্কিম করেছেন, তারা হয়তো মন্ত্রীকে ভুল বুঝিয়েছেন। তিনি তার জায়গা থেকে কথা বলেছেন। আমরা যখন তাকে বোঝাতে পারব, তখন হয়তো তিনি আমাদের সঙ্গে একমত হবেন। তার বক্তব্যটি আমরা গ্রহণ করিনি।’
আলোচনার বিষয়ে জানতে চাইলে এই শিক্ষক নেতা গতকাল সন্ধ্যায় বলেন, আমরা এখনো আলোচনার সময় নির্ধারণ করিনি। আমরা আশাবাদী কাল (বৃহস্পতিবার) সকালে আলোচনায় বসতে পারব। এছাড়া শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গেও আমাদের আলোচনা বসার কথা রয়েছে।
এদিকে সকালে অবস্থান কর্মসূচিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক জিনাত হুদা বলেন, আমাদের বক্তব্য পরিষ্কার, আমরা তিন দফা দাবি জানিয়েছি। প্রত্যয় স্কিম বাতিল করতে হবে, সুপার গ্রেডে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের অন্তর্ভুক্তি এবং শিক্ষকদের জন্য স্বতন্ত্র বেতন স্কেল প্রবর্তন করতে হবে। দাবিগুলো যদি মেনে নেওয়া না হয় তাহলে আমরা লাগাতার কর্মবিরতি চালিয়ে যাব।
এদিকে বুধবার সকালে প্রশাসনিক ভবনের সামনে বিক্ষোভ-সমাবেশ করেন কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। এ সময় অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর পদত্যাগ এবং অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাজকর্মকে কূপমণ্ডূকতা বলেও আখ্যা দেন তারা।
যুগান্তরের একটি শিরোনাম “ঢাকার বেশির ভাগ এলাকা অপরিকল্পিত”
রাজধানী ঢাকার জনসংখ্যার লাগাম না টেনে যত বিনিয়োগ করা হোক না কেন, তাতে সুফল মিলবে না বলে জানিয়েছেন পরিকল্পনাবিদরা। তারা বলেছেন, ঢাকার বেশির ভাগ এলাকা অপরিকল্পিত। সেসব এলাকায় নাগরিক সেবা নেই বললেই চলে। এমতাবস্থায় এখানে বিনিয়োগ করে বসবাসযোগ্যতা বাড়ানো যাবে না। ব্যয়বহুল মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নের পরও ঢাকার বাসযোগ্যতার মান ধারাবাহিকভাবে নিচের দিকে যাচ্ছে কেন, এর কারণ অনুসন্ধান করতে হবে।
বুধবার সকালে পরিকল্পনাবিদদের জাতীয় পর্যায়ের সংগঠন বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) উদ্যোগে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের সদস্য ও খ্যাতিমান নগর পরিকল্পনাবিদরা এ কথা জানান। বাংলামোটরে প্ল্যানার্স টাওয়ারের বিআইপি কনফারেন্স হলে ‘বাসযোগ্যতা সূচকে ঢাকা কেন এত পিছিয়ে’ শীর্ষক একটি সেমিনার অনুষ্ঠানে উপরিউক্ত মতামত উঠে আসে।
সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক পরিকল্পনাবিদ শেখ মুহম্মদ মেহেদী আহসানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ পরিবেশন করেন বিআইপির সভাপতি পরিকল্পনাবিদ অধ্যাপক ড. আদিল মুহাম্মদ খান। লিখিত প্রবন্ধে বলা হয়, সম্প্রতি প্রকাশিত ইকোনমিক ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (ইআইইউ) ২০২৪-এর বসবাসযোগ্যতা সূচকে ১৭৩টি দেশের মধ্যে রাজধানী ঢাকার অবস্থান ১৬৮তম; অবস্থান নিচের দিক থেকে ষষ্ঠ, যেটা হতাশাব্যঞ্জক।
আরও বলা হয়, ঢাকা শহরে দেড় কোটি মানুষ বসবাস করে। যাদের নানা কর্মকাণ্ড অর্থনীতিতে বড় অবদান রাখছে। ঢাকার বাসযোগ্যতার মানের উন্নয়ন করতে না পারলে সামাজিক ও অর্থনৈতিক বিকাশ এবং তাদের জীবনমানের উন্নয়ন হবে না। এছাড়া ঢাকার অবাসযোগ্যতা ও অস্থায়িত্বশীল উন্নয়ন কর্মকাণ্ড সারা দেশের সুষম ও টেকসই উন্নয়নের বোঝা হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
মূল প্রবন্ধে ড. আদিল জানান, মেট্রোরেলের পাশাপাশি গণপরিবহণব্যবস্থার উন্নয়ন করা প্রয়োজন। এর জন্য মানসম্মত বাস সার্ভিস ও প্যারা ট্রানজিট সার্ভিস নিশ্চিত এবং হাঁটার উপযোগী ফুটপাত নিশ্চিত করতে হবে। এলাকাভিত্তিক সবার জন্য প্রবেশগম্য খেলার মাঠ-পার্ক-উদ্যান তৈরি এবং বিদ্যমান সুবিধাদি সবার জন্য উন্মুক্ত করা দরকার। এছাড়া আবাসিক এলাকায় পর্যাপ্ত নাগরিক সুবিধাদি নিশ্চিত করতে পরিকল্পনার মানদণ্ড (প্ল্যানিং স্ট্যান্ডার্ড) সংশোধন, আবাসিক এলাকায় অনুমোদনহীন শিল্পকারখানা-গুদাম প্রভৃতি সরানোর উদ্যোগ, প্রয়োজন মোতাবেক নিুবিত্ত ও নিু-মধ্যবিত্তদের মানসম্মত আবাসন নিশ্চিত করতে নীতিমালা তৈরি এবং ভূমি বরাদ্দ ও সাশ্রয়ী আবাসন প্রকল্প গ্রহণ করা দরকার।
বিআইপির সাধারণ সম্পাদক পরিকল্পনাবিদ শেখ মুহম্মদ মেহেদী আহসান বলেন, বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক নীতি এবং সেগুলোর লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য বাসযোগ্যতার প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। সামগ্রিক পরিবেশের কথা ভেবে পরিকল্পনা করলে ঢাকা শহরের বাসযোগ্যতা বাড়ানো সম্ভব। আগামী নবম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনাকে কেন্দ্র করে ঢাকার বাসযোগ্যতা বাড়ানোর প্রতি সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তিনি।
বিআইপির সাবেক সভাপতি ও উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য পরিকল্পনাবিদ অধ্যাপক ড. আকতার মাহমুদ বলেন, এলাকাভিত্তিক প্রাথমিক বিদ্যালয় ও প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজন পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন। শহরের বিশাল জনগোষ্ঠীকে বস্তিতে রেখে বাসযোগ্যতার উন্নতি করা সম্ভব নয়।
বিআইপির সাবেক সভাপতি ও উপদেষ্টা পরিষদের আহ্বায়ক পরিকল্পনাবিদ মোহাম্মদ ফজলে রেজা সুমন বলেন, বিগত এক যুগে অবকাঠামোতে প্রচুর বিনিয়োগের পর এবং ঢাকার সূচকে কোনো উন্নতি হয়নি। গণপরিবহণ নিয়ে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে ফুটপাত ও রোড নেটওয়ার্ক বৃদ্ধিতে সংস্থাগুলোকে আরও মনোযোগী হওয়ার আহ্বান জানান।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন বিআইপির যুগ্মসম্পাদক পরিকল্পনাবিদ তামজিদুল ইসলাম, বোর্ড সদস্য (একাডেমিক অ্যাফেয়ার্স) পরিকল্পনাবিদ উসওয়াতুন মাহেরা খুশি, বোর্ড সদস্য (মেম্বারশিপ অ্যাফেয়ার্স) পরিকল্পনাবিদ মো. ফাহিম আবেদীন।
বণিক বার্তার একটি শিরোনাম “দেশের ব্যাংক খাতের ঋণ শ্রেণীকরণ পদ্ধতিতে বড় পরিবর্তন আসছে”
ঋণ কর্মসূচির আওতায় তৃতীয় কিস্তির অর্থ ছাড়ের আগে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) রিভিউ মিশনের কাছে ব্যাংক খাতের ঋণ শ্রেণীকরণ পদ্ধতিতে বড় পরিবর্তন আনার প্রতিশ্রুতি দেয় বাংলাদেশ। আগামী বছরের মার্চের মধ্যেই এ পরিবর্তনের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন হতে যাচ্ছে বলে অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে। আইএমএফের সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনেও বিষয়টি উঠে এসেছে।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, নতুন পরিকল্পনা অনুসারে, এ বছরের এপ্রিল-সেপ্টেম্বরে যেসব ঋণের মেয়াদ শেষ হবে সেগুলোর ক্ষেত্রে নির্ধারিত সময়ের সঙ্গে ১৮০ দিন যোগ করে মেয়াদোত্তীর্ণ ঋণ হিসাব করা হবে। এর পর থেকে বছরের শেষ পর্যন্ত যেসব ঋণের মেয়াদ শেষ হবে সেগুলোর ক্ষেত্রে মেয়াদোত্তীর্ণ ঋণ হিসাব করা হবে নির্ধারিত সময়ের সঙ্গে ৯০ দিন যোগ করে। এরপর থেকে ৯০ দিনের গ্রেস পিরিয়ড তুলে দেয়া হবে। আর ২০২৫ সালের মার্চ শেষে ঋণ পরিশোধের নির্ধারিত সময়ের একদিন পর থেকেই তা মেয়াদোত্তীর্ণ হিসেবে গণ্য করা হবে। এরই মধ্যে এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে একটি সার্কুলার জারি করা হয়েছে।
ব্যাংক ঋণ খেলাপি হওয়ার আগের ধাপ ‘ওভারডিউ’ বা ‘মেয়াদোত্তীর্ণ’। কোনো ঋণের কিস্তি পরিশোধ অনিয়মিত হয়ে গেলে সেটি মেয়াদোত্তীর্ণ বলে গণ্য হয়। এ ধরনের ঋণই পরে যুক্ত হয় খেলাপির খাতায়। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, চলতি বছরের মার্চ শেষে মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়া ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ৫৭ হাজার ৩৯২ কোটি টাকায়। পরিশোধ বা পুনঃতফসিলের মাধ্যমে নিয়মিত না করা হলে এ ঋণও শিগগিরই খেলাপির খাতায় উঠবে। আবার ঋণ শ্রেণীকরণ পদ্ধতিতে পরিবর্তন এলে এর বড় অংশই খেলাপি হওয়ার শঙ্কা রয়েছে।
দেশের ব্যাংক খাতে খেলাপির মতো মেয়াদোত্তীর্ণ ঋণের পরিমাণও ব্যাপক মাত্রায় বাড়ছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, ২০২২ সালের মার্চে ব্যাংক খাতে মেয়াদোত্তীর্ণ ঋণের পরিমাণ ছিল ১ লাখ ৮৮ হাজার ৯৭২ কোটি টাকা। ২০২৩ সালের মার্চ শেষে তা বেড়ে ২ লাখ ১৮ হাজার ৬৬৫ কোটি টাকায় দাঁড়ায়। চলতি বছরের একই সময়ে মেয়াদোর্ত্তীর্ণ ঋণ এসে ঠেকেছে ২ লাখ ৫৭ হাজার ৩৯২ কোটি টাকায়।
মেয়াদোত্তীর্ণ ঋণ খেলাপি হয়ে যাওয়া ঠেকাতে প্রতিনিয়ত পুনঃতফসিলের আশ্রয় নিচ্ছে ব্যাংকগুলো। শুধু ২০২২ সালেই রেকর্ড ৬৩ হাজার ৭২০ কোটি টাকার ঋণ পুনঃতফসিল করা হয়। গত বছর পুনঃতফসিল করে মেয়াদ বাড়িয়ে দেয়া ঋণের পরিমাণ আরো বেশি।
খেলাপি, পুনঃতফসিল ও পুনঃগঠনকৃত ঋণকে ‘স্ট্রেসড’ বা ‘দুর্দশাগ্রস্ত’ হিসেবে দেখায় আইএমএফ। গত বছর শেষে পুনঃতফসিলকৃত ঋণের স্থিতি ৩ লাখ কোটি টাকা ছাড়ায়। আবার স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় আদায় অযোগ্য হওয়ায় ব্যাংকগুলো প্রায় ৬৮ হাজার কোটি টাকার ঋণ অবলোপনও করেছে। সব মিলিয়ে দেশের ব্যাংক খাতের এক-তৃতীয়াংশের বেশি ঋণ এখন অনিশ্চয়তার মুখে। গত মার্চ শেষে দেশের ব্যাংকগুলোর বিতরণকৃত ঋণের স্থিতি ছিল ১৬ লাখ ৪০ হাজার ৮৫৫ কোটি টাকা।
আইএমএফের সঙ্গে পরামর্শক্রমে ঋণ শ্রেণীকরণ ও সঞ্চিতি বিধিমালা শক্তিশালী করার কথা জানিয়েছে বাংলাদেশ। এ বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে এটি বাস্তবায়নের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। পাশাপাশি দুর্দশাগ্রস্ত সম্পদের প্রকৃত চিত্র শনাক্তে আইএফআরএস ৯ (ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং স্ট্যান্ডার্ড) গ্রহণের পরিকল্পনা প্রণয়নের প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে। আগামী বছরের জুনের মধ্যে এ পরিকল্পনা প্রণয়নের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। আর ব্যাংক খাতে আইএফআরএস ৯-এর পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন করতে হবে ২০২৭ সালের মধ্যে। এটি বাস্তবায়নে আইএমএফের কাছে কারিগরি সহায়তাও চেয়েছে বাংলাদেশ।
জানতে চাইলে অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) সাবেক চেয়ারম্যান আনিস এ খান বণিক বার্তাকে বলেন, ‘আমাদেরকে আন্তর্জাতিক রীতিনীতিতে ফিরে যেতেই হবে। তা না হলে আন্তর্জাতিক আর্থিক ব্যবস্থা থেকে আমরা পিছিয়ে যাব। তবে এটি বাস্তবায়নের আগে আমাদের নিজস্ব বাস্তবতা, মূল্যস্ফীতি ও টাকার অবমূল্যায়নের মতো বিষয়গুলোকে বিবেচনায় নিতে হবে।’
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যানুসারে, ২০২৪ সালের মার্চ শেষে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৮২ হাজার ২৯৫ কোটি টাকা। এর আগের বছর অর্থাৎ ২০২৩ সালের মার্চ শেষে খেলাপি ঋণ ছিল ১ লাখ ৩১ হাজার ৬২০ কোটি এবং ২০২২ সালের একই সময় শেষে ছিল ১ লাখ ১৩ হাজার ৪৪০ কোটি টাকা। সে হিসাবে দুই বছরের ব্যবধানে খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়েছে প্রায় ৬১ শতাংশ। আইএমএফের কাছে খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনার বিষয়েও প্রতিশ্রুতি দিয়েছে বাংলাদেশ। এক্ষেত্রে সার্বিকভাবে ব্যাংক খাতের খেলাপি ঋণ ৮ শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। এর মধ্যে ২০২৫-২৬ অর্থবছর শেষে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ১০ শতাংশে এবং বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ ৫ শতাংশে নামিয়ে আনার কথা রয়েছে।
ব্যাংক খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, ঋণ শ্রেণীকরণের ক্ষেত্রে ছাড় দেয়ার কারণে দেশের ব্যাংক খাতে আন্তর্জাতিক হিসাবমান পুরোপুরি বাস্তবায়িত হচ্ছে না। এটি বাস্তবায়ন করা হলে খেলাপি ঋণের পরিমাণ অনেক বেড়ে যাবে। পাশাপাশি বর্তমানে যেসব সম্পদকে ভালো দেখানো হচ্ছে সেগুলোর বড় একটি অংশ মন্দমানে চলে যাবে এবং এর বিপরীতে সঞ্চিতি সংরক্ষণ করতে হবে। এতে ব্যাংক খাতের আয় ও মুনাফাও কমে যাবে। তবে এটি বাস্তবায়িত হলে ব্যাংক খাতের প্রকৃত চিত্র উঠে আসবে, যা দীর্ঘমেয়াদে খাতটির জন্য হবে ইতিবাচক।
বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সাবেক কমিশনার ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান বণিক বার্তাকে বলেন, ‘বর্তমানে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে বিভিন্ন প্রবিধির মাধ্যমে আইএফআরএস ৯-এর বাস্তবায়নের বিষয়টি স্থগিত রাখা হয়েছে। এর মাধ্যমে দেশের ব্যাংক খাতের সম্পদ, মূলধন ও আয় স্ফীত দেখানো হচ্ছে। এতে ব্যাংক খাতের স্বচ্ছতাও প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। বৈশ্বিক আর্থিক ব্যবস্থা ও পুঁজিবাজারের সঙ্গে আমাদের সংযোগ বাড়াতে হলে আর্থিক প্রতিবেদন ও নিরীক্ষায় বৈশ্বিক মান বজায় রাখতে হবে। পুরো বিশ্বেই আইএফআরএস ৯ বাস্তবায়ন করা হয়েছে। এটি একটি বৈশ্বিক চর্চা। তাই আমাদের নিজেদের স্বার্থেই এটি বাস্তবায়ন করতে হবে।’
মানবজমিনের একটি শিরোনাম “দেশের ৮ অঞ্চলে ৬০ কিলোমিটার বেগে ঝড়ের আভাস”
দেশের আটটি অঞ্চলে দুপুর ১টার মধ্যে ৪৫ থেকে ৬০ কিলোমিটার বেগে ঝড়ের আভাস দিয়েছে আবহাওয়া অফিস।
বৃহস্পতিবার সকালে আবহাওয়াবিদ শাহিনুল ইসলামের সই করা আবহাওয়ার পূর্বাভাস সংক্রান্ত এক বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।
পূর্বাভাসে বলা হয়, খুলনা, বরিশাল, পটুয়াখালী, নোয়াখালী, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও সিলেট অঞ্চলের ওপর দিয়ে দক্ষিণ/দক্ষিণ-পূর্ব দিক থেকে ঘণ্টায় ৪৫ থেকে ৬০ কিলোমিটার বেগে বৃষ্টি অথবা বজ্রবৃষ্টিসহ অস্থায়ীভাবে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। এসব এলাকার নদীবন্দর সমূহকে ১ নম্বর সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
এছাড়া সারাদেশে হালকা থেকে অতিভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। শুক্রবার পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন স্থানে এই বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস।
অন্যদিকে উত্তর বঙ্গোপসাগর এবং তৎসংলগ্ন বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় ঝড়ো হাওয়া বয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা নেই। তাই দেশের সমুদ্রবন্দরে কোনো স্থানীয় সতর্ক সংকেত নেই।