সারাক্ষণ ডেস্ক
মাইকেল সোলেন্ডা এবং তার স্ত্রীর ৪২ বছরের দাম্পত্য জীবনের প্রথম ১০ বছর তারা একই বিছানায় ঘুমাতেন, কিন্তু তারপর থেকে তারা আলাদা বিছানায় ঘুমানো শুরু করেন।
তাদের এই আলাদা বিছানায় যাওয়ার মূল কারন ছিল ‘নাক ডাকা’। এই ক্রমবর্ধমান নাক ডাকা এক পর্যায়ে তাদেরকে চিকিৎসকের শরণাপন্য হতে বাধ্য করে। কারণ ঘুমের ব্যাঘাতের ফলে তারা অনিদ্রাজনিত সমস্যায় ভূগছিলেন। অবশেষে তারা নাক ডাকা বন্ধের জন্যে CPAP যন্ত্র ব্যবহার করতে বাধ্য হন।
আজকাল CPAP নিয়ে অনেকেই ঘুমাতে বাধ্য হচ্ছেন
CPAP ((continuous positive airway pressure) যন্ত্র তাদের নাকডাকা বন্ধ হতে সাহায্য করেছিল এবং তারপরই নর্থ ক্যারোলিনার শারলটের বাসিন্দা এই যুগল একসময়ে আলাদা বিছানায় ঘুমানোর সিদ্ধান্ত নেন। তবে সেটি অন্য কারনে। স্বামী রাতে অনেক হট হতেন আর স্ত্রী থাকতেন ঠান্ডা।
CPAP ((continuous positive airway pressure) যন্ত্র
৬৬ বছর বয়স্ক সোলেন্ডা বলেন, “আমরা স্বাস্থকর সম্পর্ক ধরে রাখার জন্যে আলাদা ঘুমাতে সিদ্ধঅনত নেই এতে কোন লজ্জা নেই, কোনো অপমানের ব্যাপার নয় এটা।”
নাক ডাকা, তাপমাত্রার উঠানামা এবং বিভিন্ন কারনেই সঙ্গীকে আলাদা বিছানায় ঘুমাতে বাধ্য করে। তাছাড়া, সঙ্গীর অসুস্থতা, কাজের সময়ের ভিন্নতা, এবং বিছানায় যাওয়ার সময়ের ভিন্নতাও অনেক সময় আলাদা বিছানায় ঘূমাতে বাধ্য হন অনেকেই।
আমেরিকান একাডেমী অব স্লীপ মেডিসিন স্টাডির মতে, এক তৃতীয়াংশ আমেরিকান তারা বিভিন্ন কারনে বিভিন্ন উপলক্ষ্যে আলাদা বিছানায় ঘুমান।
পালমোনিস্ট ড. সীমা খোসলা বলেন, “ভাল একটি দাম্পত্য সম্পর্কের জন্যে কমপক্ষে ৭-৮ ঘন্টা নিরবচ্ছিন্ন ও পর্যাপ্ত ঘুম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।”
ফার্গোর নর্থ ডাকোটা সেন্টারের স্বাস্থ্য পরিচালক খোসলা বলেন, “গবেষনায় দেখা যায় যে, যে সকল যুগল অনেকদিন ধরে ঘুমের ব্যাঘাত তাদের মধ্যে নানা রকম ঝগড়া-বিবাদ সহজেই লেগে যায়।
তিনি আরো বলেন, তার কাছে অনেক রোগী আসে, এমনকি ৬০ বছরের দাম্পত্য জীবন কাটিয়েছেন তারাও যারা দীর্ঘদিন ধরেই ঘুমের ব্যাঘাতের সমস্যায় ভূগছেন। তিনি বলেন, “আজকাল আলাদা ঘুমানো একটা খুব সাধারন ব্যাপার হয়ে গেছে।” খোসলা বলেন, “এই সমস্যার সবচেয়ে বড় কারন ‘এপনিয়া’ বা ‘প্রচন্ড নাক ডাকা’”
সোলেন্ডা যখন বুঝতে পারেন যে তার নাক ডাকার কারনেই তাদের স্বামী-স্ত্রীর ঘুমের ব্যাঘাত ঘটছে তখনই তিনি একজন ঘুম বিশেষজ্ঞের কাছে ছুটে যান।
সোলেন্ডার বলেন, বিশ বছর ধরে রাতে আমার ঘুম ভেঙ্গে গেলে আমি উঠে পরতাম, বই পড়তাম, টিভি দেখতাম এমনকি আমার সঙ্গীকেও উঠাতাম। এভাবেই আমাদের বিরতিহীন ঘুমের ব্যাঘাত ঘটতে থাকে। আমি ধীরে ধীরে দূর্বলতা অনুভব করা শুরু করলাম।
খোসলা বলেন, “এটা কাছে আসাকে দূরে ঠেলে দেয়া নয়। এর মানে আপনি একসাথে থাকছেন কিন্তু ঘুমাচ্ছেন আলাদা। এটিই হলো আলোচনা গুরুত্বপূর্ন অংশ। দুজনেরই এ ব্যাপারে বুঝতে হবে এবং মেনে নিতে হবে। তিনি বলেন, তিনি তার রোগীদের মাঝে আলাদা ঘুমানোর ব্যাপারে অনিচ্ছা দেখেছেন।”
এমন আরো একটি কেস হলো ট্রেসি ডেনিয়ালে ক্ষেত্রে। তিনি ও তার স্বামী গত ৪ বছর ধরে আলাদা ঘুমাচ্ছেন। এটা কোনো বড় বিষয় ছিলনা, আমি ঠিক গেস্ট রুমে চলে যেতাম।
নর্থ ডাকোটার টাইরনের বাসিন্দা ডেনিয়েলস বলেন,“ আমি এটা করেছিলাম, কারন আমার স্বামী ঘুম বেশী নাক ডাকতেন। কিন্তু আমি ছিলাম খুব হালকা ঘুমের মানুষ। এমিনকি আমার স্বামী একটা পেপার ক্লিপ কার্পেটের ফ্লেরে ফেললেও আমার ঘুম ভেঙ্গে যেতো “
পরবর্তীতে, তার ব্রেস্ট ক্যান্সার ধরা পরার পর তাকে সার্জারীর মধ্যে দিয়ে যেতে হয় এবং তিনি একটা আলোচনা শুরু করেন।
ড. ফাইলিজ জি, চিফ অব স্লীপ মেডিসিন ফিনবার্গ স্কুল অব মেডিসিন এন্ড ডিরেক্টর অব এ স্লীপ ক্লিনিক ইন নর্থ ওয়েস্টার্ন মেমোরিয়াল হসপিটাল, বলেন,“ তিনি এখন তার চিকিৎসায় খুব সাধারন ভাবেই ঘুম জনিত সমস্যায় ভোগা রোগীর সাক্ষাৎ পান।”
তিনি আরো পরামর্শ দেন যে, বিয়ের পূর্বেই ঘুমের ব্যাপারে আলাপ করে নেয়া ভালো। বিবাহিত না হলে পার্টনারকে এ ব্যাপারে জানিয়ে নিলে সমস্যা কমে। ড. জি বলেন, মধ্য বয়সে কম ঘুম স্বাস্থ্যকর।
ড. জী আরো বলেন, যেহেতু আলাদা ঘুমানো কোনো লজ্জার বিষয় নয়, তাই টেকনোলোজিও এ ব্যাপারে আমাদের বিভিন্ন উপায়ে সাহায্য করছে। হালকা শব্দের মেশিন, কুলিং পিলোজ, এবং বিছানা ম্যাটরেস যেগুলি দুই ধরনের তাপমাত্রা দেয় এর পাশাপাশি ইলেকট্রিক কম্বলও ভালো সাহায্য করতে পারে।অনেক দম্পতি ভালো ঘুমের জন্যে তাদের কম্বল শেয়ার বন্ধ করেছেন ।
ড. জি বলেন, “আজকাল সঙ্গীরা আলাদা বিছানায় ঘুমানোকে মেনে নিয়েছেন এবং সবাই এব্যাপারে সচেতন হয়েছেন কারন ভালো ঘুম সমগ্র স্বাস্থ্যের উপর ভীষণ প্রভাব ফেলে।
তিনি বলেন, “আবার অন্য এক গবেষণায় দেখা গেছে, একসাথে ঘুমানোতেও অনেক লাভ আছে।” তবে সবকিছু করার আগে দুজনেরই উচিৎ চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া।