মাহমুদুল হককে বাদ দিয়ে বাংলা উপন্যাসকে ভাবা ভুল হবে। বাংলাদেশে কেন মাহমুদুল হক বহু পঠিত নয় বা তাঁকে নিয়ে কম আলোচনা হয় এ সত্যিই এক প্রশ্ন।
মাহমুদুল হকের সাহিত্য নিসন্দেহে স্থান নিয়েছে চিরায়ত সাহিত্যের সারিতে।
তার উপন্যাস জীবন আমার বোন শুধু সময়ের চিত্র নয়, ইতিহাসকে গল্পের মধ্যে দিয়ে আনা নয় সেখানে রয়ে গেছে আরো অনেক কিছু।
তরুণ প্রজম্মের পাঠকের কাজে তাই তুলে দেয়া হলো মাহমুদুল হকের এই অনবদ্য উপন্যাস জীবন আমার বোন। আর আগের প্রজম্ম নিশ্চয়ই নতুন করে আরেকবার গ্রহন করুক এক অমৃত সাহিত্য। – সম্পাদক
খোকা অপরাধীর মতো বললে, ‘কিছু কিছু আলাপ হয় বৈকি!’
‘কি ধরনের আলাপ?’ বেশ জোর দিয়ে জিগ্যেশ করে লুলু চৌধুরী।
‘আন্দাজ ক’রে নিন।’
‘এটা কিন্তু ঠিক বললেন না। অন্যেরা কে কোন্ চোখে আমাকে দ্যাখে, তাদের কার কি রুচি শিক্ষা-দীক্ষা, তাতো আর আমার জানা নেই, খুব শক্ত আমার পক্ষে তা আন্দাজ করা-‘
‘আপনি বরং মুরাদের সঙ্গে আলাপ করবেন, মোটামুটি ও সবই জানে-‘
‘ওর সঙ্গে আমার কথা হয়েছে-‘ একটু থেমে হাসতে হাসতে লুলু চৌধুরী বললে, ‘শুধু কথা হয়েছে বললে ভুল বলা হবে, ছোটোখাটো একচোট হ’য়ে গেছে বলতে পারেন দু’জনের মধ্যে!’
‘মুরাদ নিশ্চয়ই কিছু কিছু বলেছে আপনাকে?’
‘বলেছে, তবে সেগুলো না বললেও ওর চলতো। নোংরা ঘাঁটাঘাঁটি কাদা ছোড়াছুড়িকে আমি সাংঘাতিক ঘৃণা করি। ও যা যা বলেছে সেসব শুনে মন খারাপ করার কোনো মানে হয় না। দেখুন, এটা অত্যন্ত সত্যিকথা যে আমার চাল-চলন আর পাঁচটা সাধারণ মেয়ের মতো নয়, বরং কিছুটা আমার নিজের মর্জিমতো বলতে পারেন। মানে এই নয়, আমি অসাধারণ একটা কিছু।
এখানে আমার পেশার কথাটা সবাইকে শুধু ভেবে নয়, বিবেচনা ক’রে দেখতে হবে। তুচ্ছ কানাকানিতে কান পেতে ব’সে থাকলে আমার চলবে না, এ তো আপনি বোঝেনই। নিরর্থক সময় অপব্যয় করা ছাড়া ওটা অন্য কিছু নয়। আমাকে সবসময় আমার পেশার কথা ভেবে চলতে হয়। আমি যে কোনো কিছুর পরোয়া করি না, লাজ- লজ্জার ধার ধারি না, এসব নিয়ে কানাকানি করা আর নিছক বদনামের জন্যে বদনাম করা এক কথা। এসব একপেশে কানাকানির আমি মোটেই দাম দিতে শিখিনি।’
লুলু চৌধুরী থামলেও কোনো প্রত্যুত্তর করলো না খোকা। কেবল তার ভয়টা অনেক হালকা হয়ে গিয়েছে বুঝতে পেরে সে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো। যথেষ্ট সংযমী মহিলা এই লুলু চৌধুরী, প্রায় আচ্ছন্নভাবে প্রয়োজন কি সে তা ধরতে পারলো না, সুকৌশলে ধোলাই চলছে না- তো!
Leave a Reply