০৬:৫৭ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৩০ জুন ২০২৫

জীবন আমার বোন (পর্ব-৬০)

  • Sarakhon Report
  • ১২:০০:৫৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৩ জুলাই ২০২৪
  • 17

মাহমুদুল হককে বাদ দিয়ে বাংলা উপন্যাসকে ভাবা ভুল হবে। বাংলাদেশে কেন মাহমুদুল হক বহু পঠিত নয় বা তাঁকে নিয়ে কম আলোচনা হয় এ সত্যিই এক প্রশ্ন। 

মাহমুদুল হকের সাহিত্য নিসন্দেহে স্থান নিয়েছে চিরায়ত সাহিত্যের সারিতে। 

তার উপন্যাস জীবন আমার বোন শুধু সময়ের চিত্র নয়, ইতিহাসকে গল্পের মধ্যে দিয়ে আনা নয় সেখানে রয়ে গেছে আরো অনেক কিছু। 

তরুণ প্রজম্মের পাঠকের কাজে তাই তুলে দেয়া হলো মাহমুদুল হকের এই অনবদ্য উপন্যাস জীবন আমার বোন। আর আগের প্রজম্ম নিশ্চয়ই নতুন করে আরেকবার গ্রহন করুক এক অমৃত সাহিত্য। – সম্পাদক

মাহমুদুল হক

কই আর।’

‘আসুন না আমার সাথে!’

‘কি রকম?’

‘আমাদের কোম্পানিতে আসুন-‘

‘এখনো সে রকম কিছু ভেবে দেখিনি!’

‘আমি বলি কি, একটা এজেন্সি নিয়ে ফেলুন, আমার ধারণা আপনি

ভালো করবেন।’

খোকা হেসে বললে, ‘ভালোই বলেছেন-‘

‘আমি কিন্তু সিরিয়াসলি বলছি!’

‘তা-তো বুঝতেই পারছি, সব ব্যাপারেই আপনি সিরিয়াস।’

‘আপনি চিন্তা করুন-‘ নড়েচড়ে ব’সে লুলু চৌধুরী বললে, ‘আমি আপনার ওখানে একদিন আসবো?’

‘কিন্তু’

বাধা দিয়ে লুলু চৌধুরী বললে, ‘কোনো কিন্তু নয়, আপনি মনে মনে তৈরি হ’য়ে থাকুন, বাকিটা আমি ক’রে দেবো, আমার বিশ্বাস একটু উদ্যোগ নিলেই আপনাকে চালানো যাবে।’

‘চল উঠবি নাকি?’ মুরাদ ঢুকলো এই সময়।

লুলু চৌধুরীও উঠে দাঁড়ালো। চোখমুখে প্রসন্নতার ছাপ। বিদায় নিয়ে টুপ ক’রে বেরিয়ে এলো খোকা।

দু’জনে হাঁটা শুরু করলো। চারপাশে মানুষজনের মেলা। অনেকের হাতেই লাঠি। মেয়েরাও হাতে লাঠি নিয়ে ঘোরাফেরা করে ছোট ছোট দলে ভাগ হ’য়ে। হাবভাবে চালচলনে মনে হয় ওই জিনিশটা হাতে থাকলেও ওর গুরুত্ব সম্পর্কে ওদের তেমন কোনো ধারণা নেই। এই এখনো কয়েকটি মেয়ে লাঠি হাতে কলরব করতে করতে ওদের পাশ কাটিয়ে বেরিয়ে গেল। বোঝা যায় সকলেই স্কুল-কলেজের মেয়ে। কিন্তু তবু, বেশ কিছুদিন যাবৎ রাস্তাঘাটে প্রায় দেখতেই পাওয়া যায় না মেয়েদের। ধীরে ধীরে ম’রে যাচ্ছে ঢাকা শহর। নিভে আসছে। কোনো কোনো অঞ্চল একেবারে খাঁ খাঁ, নীরব, সন্ধ্যার পর অকারণে গা ছমছম করে।

‘এতোক্ষণ জর্দা কিমাম দেওয়া খুব কোম্পানির খিলি খাওয়াচ্ছিলো নিশ্চয়ই?’ হঠাৎ জিগ্যেশ করে মুরাদ।

‘ঠিক বুঝলাম না সবকিছু, ধোলাইটা বোধহয় আমার ওপর দিয়েই গেল!’

‘অসম্ভব কিছু নয়। একচোট হ’য়ে গিয়েছে আমার সঙ্গে। ওকে যে বোঝাতে পারবে, সে এখনো মায়ের গর্ভে!’

‘দারুণ ভড়কে গিয়েছিলাম, যাই বলিস, প্রথমে তো বুক ঢিপ ঢিপ করছিলো–‘

একটা দেশলাইয়ের কাঠি দাঁতে খোঁচাতে খোঁচাতে মুরাদ বললে, ‘ওসব ভয় নেই। সাধারণত ও খারাপ ব্যবহার করে না, বাইরের কেউ হ’লে তো নয়ই। এটা ও যেমন ক’রেই হোক রক্ষা ক’রে চলবেই। হিশেব ক’রে কথা বলার মতো ক্ষমতাও ওর আছে, ভালোমতো মিশলে তুইও বুঝতে পারবি।’

‘তুই নিশ্চয়ই আমার নাম তুলেছিস, এটা উচিত হয়নি তোর।’

 

জীবন আমার বোন (পর্ব-৬০)

১২:০০:৫৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৩ জুলাই ২০২৪

মাহমুদুল হককে বাদ দিয়ে বাংলা উপন্যাসকে ভাবা ভুল হবে। বাংলাদেশে কেন মাহমুদুল হক বহু পঠিত নয় বা তাঁকে নিয়ে কম আলোচনা হয় এ সত্যিই এক প্রশ্ন। 

মাহমুদুল হকের সাহিত্য নিসন্দেহে স্থান নিয়েছে চিরায়ত সাহিত্যের সারিতে। 

তার উপন্যাস জীবন আমার বোন শুধু সময়ের চিত্র নয়, ইতিহাসকে গল্পের মধ্যে দিয়ে আনা নয় সেখানে রয়ে গেছে আরো অনেক কিছু। 

তরুণ প্রজম্মের পাঠকের কাজে তাই তুলে দেয়া হলো মাহমুদুল হকের এই অনবদ্য উপন্যাস জীবন আমার বোন। আর আগের প্রজম্ম নিশ্চয়ই নতুন করে আরেকবার গ্রহন করুক এক অমৃত সাহিত্য। – সম্পাদক

মাহমুদুল হক

কই আর।’

‘আসুন না আমার সাথে!’

‘কি রকম?’

‘আমাদের কোম্পানিতে আসুন-‘

‘এখনো সে রকম কিছু ভেবে দেখিনি!’

‘আমি বলি কি, একটা এজেন্সি নিয়ে ফেলুন, আমার ধারণা আপনি

ভালো করবেন।’

খোকা হেসে বললে, ‘ভালোই বলেছেন-‘

‘আমি কিন্তু সিরিয়াসলি বলছি!’

‘তা-তো বুঝতেই পারছি, সব ব্যাপারেই আপনি সিরিয়াস।’

‘আপনি চিন্তা করুন-‘ নড়েচড়ে ব’সে লুলু চৌধুরী বললে, ‘আমি আপনার ওখানে একদিন আসবো?’

‘কিন্তু’

বাধা দিয়ে লুলু চৌধুরী বললে, ‘কোনো কিন্তু নয়, আপনি মনে মনে তৈরি হ’য়ে থাকুন, বাকিটা আমি ক’রে দেবো, আমার বিশ্বাস একটু উদ্যোগ নিলেই আপনাকে চালানো যাবে।’

‘চল উঠবি নাকি?’ মুরাদ ঢুকলো এই সময়।

লুলু চৌধুরীও উঠে দাঁড়ালো। চোখমুখে প্রসন্নতার ছাপ। বিদায় নিয়ে টুপ ক’রে বেরিয়ে এলো খোকা।

দু’জনে হাঁটা শুরু করলো। চারপাশে মানুষজনের মেলা। অনেকের হাতেই লাঠি। মেয়েরাও হাতে লাঠি নিয়ে ঘোরাফেরা করে ছোট ছোট দলে ভাগ হ’য়ে। হাবভাবে চালচলনে মনে হয় ওই জিনিশটা হাতে থাকলেও ওর গুরুত্ব সম্পর্কে ওদের তেমন কোনো ধারণা নেই। এই এখনো কয়েকটি মেয়ে লাঠি হাতে কলরব করতে করতে ওদের পাশ কাটিয়ে বেরিয়ে গেল। বোঝা যায় সকলেই স্কুল-কলেজের মেয়ে। কিন্তু তবু, বেশ কিছুদিন যাবৎ রাস্তাঘাটে প্রায় দেখতেই পাওয়া যায় না মেয়েদের। ধীরে ধীরে ম’রে যাচ্ছে ঢাকা শহর। নিভে আসছে। কোনো কোনো অঞ্চল একেবারে খাঁ খাঁ, নীরব, সন্ধ্যার পর অকারণে গা ছমছম করে।

‘এতোক্ষণ জর্দা কিমাম দেওয়া খুব কোম্পানির খিলি খাওয়াচ্ছিলো নিশ্চয়ই?’ হঠাৎ জিগ্যেশ করে মুরাদ।

‘ঠিক বুঝলাম না সবকিছু, ধোলাইটা বোধহয় আমার ওপর দিয়েই গেল!’

‘অসম্ভব কিছু নয়। একচোট হ’য়ে গিয়েছে আমার সঙ্গে। ওকে যে বোঝাতে পারবে, সে এখনো মায়ের গর্ভে!’

‘দারুণ ভড়কে গিয়েছিলাম, যাই বলিস, প্রথমে তো বুক ঢিপ ঢিপ করছিলো–‘

একটা দেশলাইয়ের কাঠি দাঁতে খোঁচাতে খোঁচাতে মুরাদ বললে, ‘ওসব ভয় নেই। সাধারণত ও খারাপ ব্যবহার করে না, বাইরের কেউ হ’লে তো নয়ই। এটা ও যেমন ক’রেই হোক রক্ষা ক’রে চলবেই। হিশেব ক’রে কথা বলার মতো ক্ষমতাও ওর আছে, ভালোমতো মিশলে তুইও বুঝতে পারবি।’

‘তুই নিশ্চয়ই আমার নাম তুলেছিস, এটা উচিত হয়নি তোর।’