০৬:০৮ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৩০ জুন ২০২৫

নীলের বিশ্বায়ন – নীল ও ঔপনিবেশিক বাংলায় গোয়েন্দাগিরি (পর্ব-৪৩)

  • Sarakhon Report
  • ১০:০০:৩৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪
  • 17

পিয়ের পল দারাক ও ভেলাম ভান সেন্দেল

অনুবাদ : ফওজুল করিম


পরিবহন

অনেক জমি লাগে নীল চাষ করতে, তাই জমিগুলো এক জায়গায় না হয়ে থাকে ছড়ানো। এমনকি কখনও কখনও সেগুলো নীল কুঠি থেকে নয় কিলোমিটার দূরেও হয়ে থাকে। সেজন্যে নৌকার সাহায্যে নীল পরিবহন করা হয়। সবসময়ে নীলকুঠি হয় নদীর ধারে এবং নীল চাষের জমির ভাটিতে। আবার নীল গাছ কাটার সময়ে বার্ষিক বন্যা শুরু হলে নদী ভরাট হয়ে যাতায়াতের নৌ-পথ আপনা থেকেই তৈরি হয়ে যায়।

নৌকোয় করে নীল আনা

সাধারণতঃ একটি নৌকায় ৪০ থেকে ৪৫টা নীলের বোঝা নেয়া হয়। এক সঙ্গে বেশি নিলে নৌকা ভার হয়ে যায় এবং নৌকা চলার গতি হয়ে পড়ে ধীর। এর ফলে আসার সময়ই নীলের গাছ গেজিয়ে যায়। তিন জন মাঝিসহ একটি নৌকার মাসিক ভাড়া ষোলো টাকা (চল্লিশ ফ্রাঙ্ক)। তিন ঘণ্টার মধ্যে নীল কুঠিতে নিতে হবে, না হলে নৌকার উপরেই গাছ গ্যাঁজাতে শুরু করবে, নইলে নীল গাছ জলাধারে ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে যাবে। এর থেকে যে রং বের করা যাবে না তা নয়। সে রং হবে নীলের বদলে কালো।

নৌকা থেকে গরুর গাড়িতে তোলা হলো নীল 

আমরা ইতিপূর্বে বছরে যে দুর্বার নীল পাওয়ার কথা বলেছি তা ছাড়াও যেসব জমিতে বন্যার পানি ওঠে না সে সব জমিতে অক্টোবর-নভেম্বর মাসে নীল গাড়ি ও রো যায়। তবে এ গাছ জন্মানো হয় শুধু বীজ উৎপাদনের জন্য। প্রতি বিঘায় বীজের ন্যানো হল, গাছ রোপণের সময় যে বীজ ব্যবহার করা হয়েছিল তার ওজনের ২৪ জন বাজন প্রতি বিঘার তিন সের বীজ ব্যবহার করে থাকলে বীজের ফলন হবে ৭২ সের। শুধু স্বীজ উৎপাদনের জন্য গাছ বপন করে থাকলে বীজ পাওয়া যাবে অর্দ্ধেক পরিমাণ। এ রকম করতে হলে সাধারণত গাছ বুনতে হয় জুন জুলাই মাসে। আগস্টের শুরুতে গাছের মাথা এক ফুট আন্দাজ হলেই গাছের আগা ছেটে দিতে হবে। যাতে গাছের আরও অনেক শাখা বের হয় এবং সেই সাথে বীজের ফলন হয় বেশি গত কয়েক বছর এ ধরনের গাছ লাগাত দেশী লোকেরা। এটা যথেষ্ঠ লাভজনক ব্যবসা, কেননা বীজের দাম অত্যন্ত বেশি। বীজ পাওয়া যায় জানুয়ারি মাসে। নীল গাছের রং বদলে গেলেও বীজ যেখানে থাকে সে অংশটির শুকিয়ে গেলেই বোঝা যায় যে গাছের বীজ পরিপক্ক হয়েছে। এ সময়ে দেশী মানুষরা গাছের আগা কেটে বীজ শুকানোর একটি বিশেষ জায়গায় তিন চারদিন ধরে সেগুলো শুকানো হয়। তারপর সেগুলো আরও দুই দিন ধরে শুকানো হয় তারপর সেগুলো গোলাঘরে মওজুদ করা হয়। বঙ্গদেশের প্রথা অনুযায়ী যে বীজ থেকে আবার গাছ কেনা হবে সে বীজ শুকানো হয় খুব ভাল করে। এ জন্যে অনেক সময় বীজ শুকানো হয় সাত আট দিন ধরে।

বীজ গোলা

নীলের বিশ্বায়ন – নীল ও ঔপনিবেশিক বাংলায় গোয়েন্দাগিরি (পর্ব-৪৩)

১০:০০:৩৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪

পিয়ের পল দারাক ও ভেলাম ভান সেন্দেল

অনুবাদ : ফওজুল করিম


পরিবহন

অনেক জমি লাগে নীল চাষ করতে, তাই জমিগুলো এক জায়গায় না হয়ে থাকে ছড়ানো। এমনকি কখনও কখনও সেগুলো নীল কুঠি থেকে নয় কিলোমিটার দূরেও হয়ে থাকে। সেজন্যে নৌকার সাহায্যে নীল পরিবহন করা হয়। সবসময়ে নীলকুঠি হয় নদীর ধারে এবং নীল চাষের জমির ভাটিতে। আবার নীল গাছ কাটার সময়ে বার্ষিক বন্যা শুরু হলে নদী ভরাট হয়ে যাতায়াতের নৌ-পথ আপনা থেকেই তৈরি হয়ে যায়।

নৌকোয় করে নীল আনা

সাধারণতঃ একটি নৌকায় ৪০ থেকে ৪৫টা নীলের বোঝা নেয়া হয়। এক সঙ্গে বেশি নিলে নৌকা ভার হয়ে যায় এবং নৌকা চলার গতি হয়ে পড়ে ধীর। এর ফলে আসার সময়ই নীলের গাছ গেজিয়ে যায়। তিন জন মাঝিসহ একটি নৌকার মাসিক ভাড়া ষোলো টাকা (চল্লিশ ফ্রাঙ্ক)। তিন ঘণ্টার মধ্যে নীল কুঠিতে নিতে হবে, না হলে নৌকার উপরেই গাছ গ্যাঁজাতে শুরু করবে, নইলে নীল গাছ জলাধারে ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে যাবে। এর থেকে যে রং বের করা যাবে না তা নয়। সে রং হবে নীলের বদলে কালো।

নৌকা থেকে গরুর গাড়িতে তোলা হলো নীল 

আমরা ইতিপূর্বে বছরে যে দুর্বার নীল পাওয়ার কথা বলেছি তা ছাড়াও যেসব জমিতে বন্যার পানি ওঠে না সে সব জমিতে অক্টোবর-নভেম্বর মাসে নীল গাড়ি ও রো যায়। তবে এ গাছ জন্মানো হয় শুধু বীজ উৎপাদনের জন্য। প্রতি বিঘায় বীজের ন্যানো হল, গাছ রোপণের সময় যে বীজ ব্যবহার করা হয়েছিল তার ওজনের ২৪ জন বাজন প্রতি বিঘার তিন সের বীজ ব্যবহার করে থাকলে বীজের ফলন হবে ৭২ সের। শুধু স্বীজ উৎপাদনের জন্য গাছ বপন করে থাকলে বীজ পাওয়া যাবে অর্দ্ধেক পরিমাণ। এ রকম করতে হলে সাধারণত গাছ বুনতে হয় জুন জুলাই মাসে। আগস্টের শুরুতে গাছের মাথা এক ফুট আন্দাজ হলেই গাছের আগা ছেটে দিতে হবে। যাতে গাছের আরও অনেক শাখা বের হয় এবং সেই সাথে বীজের ফলন হয় বেশি গত কয়েক বছর এ ধরনের গাছ লাগাত দেশী লোকেরা। এটা যথেষ্ঠ লাভজনক ব্যবসা, কেননা বীজের দাম অত্যন্ত বেশি। বীজ পাওয়া যায় জানুয়ারি মাসে। নীল গাছের রং বদলে গেলেও বীজ যেখানে থাকে সে অংশটির শুকিয়ে গেলেই বোঝা যায় যে গাছের বীজ পরিপক্ক হয়েছে। এ সময়ে দেশী মানুষরা গাছের আগা কেটে বীজ শুকানোর একটি বিশেষ জায়গায় তিন চারদিন ধরে সেগুলো শুকানো হয়। তারপর সেগুলো আরও দুই দিন ধরে শুকানো হয় তারপর সেগুলো গোলাঘরে মওজুদ করা হয়। বঙ্গদেশের প্রথা অনুযায়ী যে বীজ থেকে আবার গাছ কেনা হবে সে বীজ শুকানো হয় খুব ভাল করে। এ জন্যে অনেক সময় বীজ শুকানো হয় সাত আট দিন ধরে।

বীজ গোলা