সারাক্ষণ ডেস্ক
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ফিলিপাইনকে তার সামরিক শক্তি বৃদ্ধির জন্যে ৫০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করার ঘোষণা দিয়েছে। মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্র একটি যৌথ সম্মেলনের পরে এই ঘোষণা দেয়। সাউথ চায়না সী তে চায়নার সামুদ্রিক আগ্রাসন প্রতিহত করার লক্ষ্যই এই অনুদানের মূল লক্ষ্য।
মঙ্গলবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ফিলিপাইনের পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রীদের ২+২ আলোচনায় এই বিনিয়োগের ঘোষণা আসে। এ মাসের শুরুতে জাপানের সাথে ফিলিপাইনের এধরনের একটা মিটিং হয়েছিল।
মার্কিন প্রতিরক্ষা সচিব লয়েড অস্টিন বলেন, “আমরা মার্কিন কংগ্রেসে ফিলিপাইনে ৫০০ মিলিয়ন ডলারের একটা সামরিক সাহায্যের জন্যে কাজ করছিলাম।” “ সাধারনত এই ধরনের অনুদানের ঘটনা নজীরবিহীন।”
মার্কিন প্রতিরক্ষা সচিব অস্টিন আরো বলেন, এধরনের অনুদানের ফলে ফিলিপাইন তার সামরিক বাহিনীকে আরো আধুনিকায়নের নিয়ে যেতে পারবে। পাশাপাশি, প্রেসিডেন্ট ফার্দিনান্দ মার্কোসের প্রশাসন তার বৈদেশিক প্রতিরক্ষাও শক্তিশালী করতে সুবিধা পাবে।
ফিলিপাইনের ভূ-রাজনৈতিক মিত্ররা ম্যানিলার প্রতি সাপোর্ট বাড়াতে এই ধরনের আধুনিক বিষয়গুলো ব্যবহার করেছে , যেমন গত ডিসেম্বরে জাপান ম্যানিলাকে এই এলাকায় হুমকি মোকাবেলায় একটি রাডার হস্তান্তর করেছে।
মার্কিনিদের এই অনুদান এই মুহূর্তে চায়না ও ফিলিপাইনের মাঝে সাউথ চায়না সী কে ঘিরে একধরনের উত্তেজনা নিয়ে এসেছে। গত ১৭ জুন চাইনিজ কোস্ট গার্ড সদস্যরা সেকেন্ড টমাস শোলে ফিলিপাইনের একটি জাহাজে ছুরি, চাকু এবং অস্ত্র নিয়ে উঠে পড়ে এবং অনেক ক্ষয়ক্ষতি করে। এই সময়ে একজন ফিলিপিনো সার্ভিসম্যান তার হাতের বুড়ো আঙ্গুল হারায়। ম্যানিলা এই হামলাকে দস্যুতা বলে উল্লেখ করেছেন এবং চায়নার কাছে ১ মিলিয়ন ডলারের ক্ষতিপূরণ দাবী করেছেন।
এই দুই দেশ এ মাসের শুরুতে উত্তেজনা কমাতে বিরোধপূর্ণ এলাকায় অবস্থিত ফিলিপাইনের ঘাঁটিগুলোতে পূণরায় সরবরাহ চালু রাখার ব্যাপারে রাজী হয়েছিলেন। কিন্তু লাওসে শুক্রবার দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠকের পরেও চাইনিজ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সেকেন্ড টমাস শোলে অবস্থিত ফিলিপাইনের ঘাঁটিতে পূণ:সরবরাহ চালু রাখার ব্যাপারে আপত্তি জানিয়েছেন।
ম্যানিলা এবং ওয়াশিংটন সম্প্রতি সাউথ ইস্ট এশিয়ান নেশনের নয়টি স্থানে তাদের প্রবেশাধিকার ভাগাভাগি করছে। মঙ্গলবার তিয়োডরো সাংবাদিকদের বলেন, “ এটা এখন আর একক কোনো বিনিয়োগ নয় এটি বহুমুখী বিনিয়োগ যা দেশটিকে উন্নয়নে সাহায্য করবে পাশাপাশি অনাকাংখিত ও বেআইনি আগ্রাসন থেকেও মুক্তি দেবে।”
একইভাবে, “ফিলিপাইন ও যুক্তরাষ্ট আশা করে যে, ইন্টিলিজেন্স শেয়ারিং চুক্তি যা জেনারেল সিকিউরিটি অব মিলিটারী ইনফরমেশন এগ্রিমেন্ট নামে পরিচিত তা এবছরের শেষে সই হবে। এই চুক্তিটি হবে দ্বিপাক্ষিক সাইবার নিরাপত্তার লক্ষ্যে।” ফিলিপাইন এবং যুক্তরাষ্ট্র উভয়ই “১৯৫১ এর মিউচুয়াল ডিফেন্স টিটির” সদস্য যা উভয় দেশের বিবাদ মিটানোর লক্ষ্যে করা হয়েছিল।
চেস্টার ক্যাবালজা, ম্যানিলায় থিংক ট্যাংক ‘ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট এন্ড সিকিউরিটি কো অপারেশন’ এর প্রতিষ্ঠাতা । তিনি বলেন, “ আমেরিকান অর্থায়ন একটি ‘‘বিশাল কাজ’’ যা ইন্দো প্যাসিফিকে কৌশলগত মূল্যায়ন বাড়াতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।”
তিনি আরো বলেন, “মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এই ধরনের খোলামেলা সহযোগিতার ফলে চায়না ক্ষোভ প্রকাশ করতে পারে। চাইনিজ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই লাওসে এশিয়ান-চায়না মিনিস্টারস মিটিং এ উর্ধ্বতন কুটনীতিকদের বলেন, বেইজিং কখনোই আঞ্চলিক উত্তেজনা প্রশমনে তৃতীয় পক্ষের নাক গলানোকে সহজ ভাবে নেবেনা।”
ক্যাবালজা বলেন, তৃতীয় পক্ষের উপরে ওয়াং ই এর মন্তব্য পক্ষপাতিত্বপূর্ণ এবং ভিত্তিহীন, কারন চায়না আফ্রিকাতে, মধ্যপ্রাচ্যে এবং সাউথ ইস্ট এশিয়াতে অন্য দেশের সামরিক বাহিনীকে সমর্থন করে।
Leave a Reply