সারাক্ষণ ডেস্ক
জাপানের রাজধানী টোকিওতে বিবাহিতা নারীরা জাতীয় গড়ের চেয়ে অপেক্ষাকৃত বেশী শিশু জন্ম দেয় । কিন্তু শহরের ৪৭টি এলাকার মধ্যে টোকিওর জন্মহার একেবারে তলানীতে গিয়ে ঠেকেছে। এই ধরনের জন্মহার কমে যাওয়া সাধারনত সেই সকল নারীদের মাঝে বেশী দেখা যায় যারা গ্রাম থেকে শহরে এসেছে চাকুরি কিংবা পড়াশোনার জন্যে। কারন তাদের বেশীরভাগই অনেক বয়স পর্যন্ত অবিবাহিতা থেকে যায়।প্রতিষ্ঠিত হওয়ার জন্যে এরা এতটাই ব্যস্ত হয়ে পড়ে যে সংসার করার জন্যে তাদের সময় হয়ে ওঠেনা। মূলত দাম্পত্য , সন্তান এবং চাকুরি জীবন ইত্যাদি সবকিছুকে একসাথে সামলানোকে তারা অনেকটাই ভয়ের চোখে দেখেন।
স্বাস্থ্য , শ্রম ও জনকল্যান মন্ত্রণালয়ের মতে, জন্মহার মানে ১৫-৪৯ বছর বয়সের নারীরা তাদের এই সময়ের মধ্যে কতজন শিশু জন্ম দিতে পারে তার সংখ্যা। মন্ত্রণালয়টি জুন মাসের এক রিপোর্টে জানায়, টোকিওতে জন্মহার গতবছরে ১.০ থেকে ০.৯৯ এ নেমে গেছে ।
এই ধরনের নিম্নমুখী হওয়া সত্বেও টোকিওর শিশু জন্মের হার জাতীয় গড়কে অতিক্রম করেছে। ২০২০ সালে , ১০০০ বিবাহিতা নারী ৭৬.৪ শিশু জন্ম দিয়েছেন যা গত এক দশকে ৭৪.৬ এর চেয়ে বেশী। টোকিও ২০% কম শিশুর জন্মহার রেকর্ড করেছে, যেটি সব এলাকার মধ্যে সবচেয়ে কম।
সারাদেশের শিশু জন্মহার বেড়ে যাওয়া নিয়ে গর্ব করলেও আকাশচুম্বি আবাসন খরচ, লেখাপড়া খরচ এবং অবিবাহিতা নারীদের টোকিওতে আগমন টোকিওর জন্মহার কমে যাওয়ার অন্যতম কারন।
ওসাকা থেকে টোকিওতে আসা ৩২ বছর বয়সী এক নারী বলেন, “আমি আমার কাজ নিয়ে প্রথম বছর গুলিতে খুব ব্যস্ত ছিলাম। আমি ভাবতাম একসময় বিয়ে করবো , কিন্তু সময় অনেক গড়িয়ে গেছে টের পাইনি।”
তিনি আরো বলেন “ টোকিও থাকার জন্যে খুবই চমৎকার জায়গা কারন এখানে আমার বয়সী অনেক মানুষ রয়েছে।”গত বছর ১৫ থেকে ২৪ বছর বয়সী ৭২,০০০ নারী টোকিওতে এসেছে এবং ৩২,০০০ ফিরে গেছেন। বাকী ৪০,০০০ টোকিওতে স্থায়ী হয়েছে। এই জাতীয় ট্রেন্ড না থাকলে শহরটির জন্মহার বেড়ে যেত।
সোফিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক তোরু নাকাজাতো বলেন, “ টোকিওতে আসা মানুষেরা সাধারনত ক্যারিয়ার গড়তে আসেন এবং ক্যারিয়ার গড়ার পরে বিবাহ এবং সন্তান নেবার চিন্তা করেন।” ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব পপুলেশন এন্ড সোশাল সিকিউরিটি সার্ভিস এর মতে, আসলে ২৩.৮% নারীই ৫০ বছর বয়স পর্যন্ত অবিবাহিতাই থাকেন যা জাতীয় গড়ের চেয়ে অনেক বেশী।”
টোকিওর প্রধান এলাকা বুঙ্কিও ওয়ার্ডে বসবাসকারী ৩০ বছর বয়সী এক নারী বলেন, “টোকিওতে স্বামী-স্ত্রী উভয়ই আয় করলে এখানে সন্তানাদি পালন করতে সহজ হয়।” নাকাজাতো বলেন, অর্থনৈতিক ভাবে সমৃদ্ধ দম্পতিরা বেশী সন্তান নিতে আগ্রহী হন। আবার , অর্থনৈতিকভাকে সচ্ছল মেট্রোপলিটন সরকার শক্তিশালী চাইল্ড কেয়ার সাপোর্ট দেয়।
অনেক দম্পতি শিশু জন্মের পর টোকিওর অধিক খরচে জীবনে মেলাতে না পেরে গ্রামীন এলাকায় চলে যান। ইন্টারনাল এফেয়ার্স এবং কমিউনিকেশন মন্ত্রণালয়ের মতে, ১ থেকে ৪ বছর বয়সী সবচেয়ে বেশী সংখ্যক শিশু ২০২৩ সালে টোকিও থেকে চলে গেছে।
কিছু আঞ্চলিক শহরে বাড়তি জন্মহার রেকর্ড করেছে।যদিও গত ৫ বছরে শিশু জন্মের গড় সংখ্যা কমেছে বিশেষ করে নাগাসাকির গোটো এলাকা এবং কিয়োটোর মিয়াজু এলাকাতে। অধিক নেট আউটফ্লোর কারনে নারীদের উর্বরতার হারও বেড়েছে।
ভুমি, সংস্থাপন , পরিবহন এবং পর্যটন মন্ত্রণালয় এর ২০২০ সালের এক জরিপে দেখা গেছে ভাল চাকরি, বা স্কুলের জন্যে তারা নিজ এলকা ছেড়ে টোকিওতে চলে গেছে। এমনকি ওকিনাওয়া এলাকায় ২০২৩ সালে সবচেয়ে বেশী উর্বরতা হার ১.৬০ রেকর্ড করা হয়েছিল ।
উচ্চ জন্মহার থাকলেও মিউনিসিপালিটিস গুলো সন্তান পালনের জন্যে যথেষ্ট উপযুক্ত নয়, তাই পরিবার শুরু করার আগেই অধিক সংখ্যক নারীরা এই শহরগুলো ছেড়ে চলে যাচ্ছে যা জনসংখ্যা কমে যাওয়াকেই বোঝায়।
Leave a Reply