শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৯:৫৮ পূর্বাহ্ন

জীবন আমার বোন (পর্ব-৭৩)

  • Update Time : শুক্রবার, ৯ আগস্ট, ২০২৪, ৮.০০ পিএম

মাহমুদুল হককে বাদ দিয়ে বাংলা উপন্যাসকে ভাবা ভুল হবে। বাংলাদেশে কেন মাহমুদুল হক বহু পঠিত নয় বা তাঁকে নিয়ে কম আলোচনা হয় এ সত্যিই এক প্রশ্ন। 

মাহমুদুল হকের সাহিত্য নিসন্দেহে স্থান নিয়েছে চিরায়ত সাহিত্যের সারিতে। 

তার উপন্যাস জীবন আমার বোন শুধু সময়ের চিত্র নয়, ইতিহাসকে গল্পের মধ্যে দিয়ে আনা নয় সেখানে রয়ে গেছে আরো অনেক কিছু। 

তরুণ প্রজম্মের পাঠকের কাজে তাই তুলে দেয়া হলো মাহমুদুল হকের এই অনবদ্য উপন্যাস জীবন আমার বোন। আর আগের প্রজম্ম নিশ্চয়ই নতুন করে আরেকবার গ্রহন করুক এক অমৃত সাহিত্য। – সম্পাদক

মাহমুদুল হক

কোনো উত্তর নেই।
‘রঞ্জু তুই খেয়েছিস?’
আগের মতোই কোনো সাড়া না পেয়ে বিছানার দিকে এগোয় খোকা। খাটের উপর ঝুঁকে বললে, ‘কি রে, ঘুমের ওষুধ গিলেছিস নাকি, এই রজু!’
বোঝা গেল জেগে আছে সে। খোকার দিকে পিঠ দিয়ে পাশ ফিরে শুলো।
‘ঠ্যালা সামলাও এখন! কি রে, গোঁসাঘরে গিয়ে খিল দিয়েছিস নাকি? একবাটি তেল লাগবে?’
এবার-ও কোনো উত্তর পেল না খোকা। এতে কিছুটা অবাকই হয় সে। সাধারণত এ ধরনের একগুঁয়েমি করে না রঞ্জু; গোঁ ধ’রে ব’সে থাকা কাকে বলে জানে না বললেই হয়, খোকা নিজেই বরং কিছুটা ঘাড়গোঁজা
স্বভাবের।
‘এই আহাদী!’
পকেট থেকে চটকানো রুমাল বের ক’রে রঞ্জুর মুখের ওপর ছুড়ে দিলো খোকা।
‘এই পান্তাবুড়ি, কি হয়েছে কি তোর? ওঠ না, বেশি আদিখ্যেতা
করলে গায়ে পানি ঢেলে দেবো।’
হঠাৎ মনে হ’লো খোকার পাঁতে দাঁত চেপে ঢোক গিলে গিলে রঞ্জু কাঁদছে।
‘লেবু, একটা লগি নিয়ে আয়, ওকে আমপাড়া করবো–‘
শেষে বিছানায় হামাগুড়ি দিয়ে ওর কাছে গেল। হাত ধ’রে টেনে ঘুরিয়ে দিলো। সত্যিই গুমরে গুমরে কাঁদছে রঞ্জু।
‘খেয়েছে রে! এইনে, কানমলা খাচ্ছি, আর রাত করবো না কখনো, ঘাট মানছি, আচ্ছা ডালু তো! বুদ্দুর মতো কাঁদছিস কেন, এই বুড়ি!’
খোকা ওর গালে হাত বুলিয়ে দিলো। চোখের পানিতে ভিজে গেল হাত। হেসে আঙুলের ডগা জিভে ছুঁইয়ে টকাশ ক’রে একটা শব্দ তুলে সে বললে, ‘না তেমন নোনতা নয়, ফিকে হ’য়ে এসেছে নুনটা; তার মানে অনেকক্ষণ ধ’রে কাঁদছিস। বালিশটাও ভিজিয়ে ফেলেছিস। বালিশে দানা লাগিয়েছিস নাকি, চারা তুলবি?’
বালিশে চোখ-মুখ ড’লে দেয়ালের দিকে তাকিয়ে রইলো রঞ্জু।
খোকা বললে, ‘বুঝলাম, আমার চেয়ে দেয়ালটাই তোর কাছে ভালো এখন। ঠিক হ্যায়, এখন থেকে ওটাকেই দাদা ব’লে ডাকিস।’
‘সিদ্ধেশ্বরী থেকে চাচা এসেছিলেন, সাড়ে ন’টা পর্যন্ত ছিলেন, জরুরী কথা আছে। কালকেই দেখা করতে বলেছেন–‘
‘গুলিমার!’
‘বারবার বলেছেন, কালই যেতে; খুব চ’টে গিয়েছেন তোর ওপর।’
‘খুব চোটপাট করেছে তাহলে?’
‘আমরা বাড়ি ছেড়ে অন্য কোথাও যাবো কিনা জানতে এসেছিলেন, সবাইকে দেশে পাঠাচ্ছেন। আমাদেরও যেতে বলছেন সঙ্গে!’
‘যতোসব গুবলেটমার্কা কথা। বাড়ি ফেলে রেখে যাই, আর সবকিছু লুটপাট হ’য়ে যাক, ভালো করতে পারি না মন্দ করতে পারি, কি দিবি তা বল্!’
‘সেজখালাও এসেছিলেন–‘
‘বলিস কি! কতোক্ষণ ছিলো?’

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

kjhdf73kjhykjhuhf
© All rights reserved © 2024