০৮:২২ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৫
নতুন ড্রোন মডেলে নিষেধাজ্ঞা আরও কড়াকড়ি যুক্তরাষ্ট্রে, তালিকায় ডিজেআইসহ সব বিদেশি ড্রোন জবি কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ নির্বাচন: নারী-বান্ধব ক্যাম্পাস গড়তে জেসিডির ১৩ দফা ইশতেহার ক্রীড়াপ্রেমী প্রকৌশলী মাসুদ হাসান জামালীর ইন্তেকাল বাংলাদেশ–ভারত সম্পর্কে রাজনীতির ঊর্ধ্বে বাণিজ্যকে গুরুত্ব দিচ্ছে ঢাকা: ড. সালেহউদ্দিন হাতিয়ায় চর দখল নিয়ে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ, প্রাণ গেল পাঁচজনের রমজান সামনে রেখে ভারত ও পাকিস্তান থেকে এক লাখ টন চাল আমদানির অনুমোদন সরকারের শুরুর উত্থান ধরে রাখতে পারল না ডিএসই, চট্টগ্রাম বাজারে ঊর্ধ্বগতি অব্যাহত অনলাইন ভ্যাট সেবায় নতুন পরিচয়, আইভাসের নাম বদলে ইভ্যাট সিস্টেম চালু এনবিআরের জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে তিন ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ দলীয় মনোনয়ন না মিললেও ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হচ্ছেন রুমিন ফারহানা

জীবন আমার বোন (পর্ব-৭৭)

  • Sarakhon Report
  • ০৮:০০:০০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৩ অগাস্ট ২০২৪
  • 82

মাহমুদুল হককে বাদ দিয়ে বাংলা উপন্যাসকে ভাবা ভুল হবে। বাংলাদেশে কেন মাহমুদুল হক বহু পঠিত নয় বা তাঁকে নিয়ে কম আলোচনা হয় এ সত্যিই এক প্রশ্ন। 

মাহমুদুল হকের সাহিত্য নিসন্দেহে স্থান নিয়েছে চিরায়ত সাহিত্যের সারিতে। 

তার উপন্যাস জীবন আমার বোন শুধু সময়ের চিত্র নয়, ইতিহাসকে গল্পের মধ্যে দিয়ে আনা নয় সেখানে রয়ে গেছে আরো অনেক কিছু। 

তরুণ প্রজম্মের পাঠকের কাজে তাই তুলে দেয়া হলো মাহমুদুল হকের এই অনবদ্য উপন্যাস জীবন আমার বোন। আর আগের প্রজম্ম নিশ্চয়ই নতুন করে আরেকবার গ্রহন করুক এক অমৃত সাহিত্য। – সম্পাদক

মাহমুদুল হক

‘ঘুম হচ্ছে না আমার–‘
‘বেলীকে দেখলে তো তাই মনে হয়।’
‘ওর একটা দস্তুরমতো হাতেম আলী দরকার, বুঝলি না!’
‘তোর মুখটা একটা নরদমা।’
‘তোর মুখ একটা ফুলের বাগান।’
একটু পরে খোকা বললে, ‘বেলীটা নিছক ঝামেলা। আপদটাকে কেন যে বিদায়ের ব্যবস্থা করছে না বুঝি না। সেজখালার উচিত দড়াম ক’রে ওটাকে বিয়ে দিয়ে পার করা। দাঁড়া, এবারে এলে আমি নিজেই তুলবো–‘
•পাত্র দেখে দিতে পারবি?’
*সেটাও একটা কথা। গোল্লায় যাক। বেলীফেলী নিয়ে মাথা ঘামিয়ে তোর কোনো লাভ নেই, ওর ইস্কুল আলাদা, কালিকলম বইগ্রেট আলাদা; ওর ব্যাপার তুই বুঝবি না।’
রজু বললে, ‘পাড়ার কতোগুলো ছেলে এসে আজ ঝামেলা বাধিয়েছিলো। আমাদের ছাদে ফ্ল্যাগ নেই, খুব চোটপাট করছিলো ছেলেরা, বলছিলো বোমা মেরে উড়িয়ে দেবো–
‘যে যার নিজের ছাদে একটা ফ্ল্যাগ ওড়ালেই সব হ’য়ে গেল আর কি! কারা যে এইসব চ্যাংড়াদের বুদ্ধি জোগায়! কি বললি ওদের?’
‘দশ টাকা দিয়ে একটা ফ্ল্যাগ কিনতে হ’লো ওদের কাছ থেকে। ছাদে উড়িয়ে দিয়েছে লেবু।’
‘ঝক্কি চুকেছে। নে এখন শুয়ে পড়।’
খোকা নিজের ঘরে চ’লে এলো।
চারপাশে বইপত্র ছড়ানো। বিছানার চাদরও এলোমেলো, লন্ডভন্ড। এখানে বই, ওখানে খাতা, ঘরে পা দিয়ে একটু অবাকই হ’লো খোকা। ভূতপ্রেতের দল ফাঁকা পেয়ে মনের সাধ মিটিয়ে একচোট নাচানাচি ক’রে গিয়েছে ঘরময়। কেবল দলামোচড়া কতগুলো কাগজ ভাঁজ ক’রে সযত্নে কাটগ্লাসের ভারী এ্যাশটেটা চাপা দিয়ে রাখা। একটির পিছনে লেখা’ কেন লেখো, কেনই বা ধ্বংস করো, তুমি কি?’
এক সময় বিছানার চাদর ঠিক করতে গিয়ে বালিশ সরাতেই চোখে পড়ে একটি চারভাঁজের কাগজ:
খুব শিগগির আমরা বাঞ্ছারামপুর যাচ্ছি। তুমি যাবে না? যদি না যাও, হয়তো আর কোনোদিন দেখা হবে না। দেখা কোরো, ভয় নেই। তোমার কথা সর্বসময় মনে হয়। বড় নিষ্ঠুর তুমি। পায়ে পড়ি দেখা কোরো। তোমাকে তো পারেনি, তাই তোমার একলা বিছানাটাকেই এলোমেলো তছনছ ক’রে দিয়ে গেল বেলী।
বেড়ে লিখেছে ছুঁড়ি, বিড়বিড় করতে থাকে খোকা। একলা বিছানা, খাসা খাসা! ভিতরে ভিতরে একেবারে ঝুনো হ’য়ে গিয়েছে, শাঁস বলতে কিছু নেই, সব ফোঁপল হ’য়ে গিয়েছে, ফোঁপল ফোঁপল।
জনপ্রিয় সংবাদ

নতুন ড্রোন মডেলে নিষেধাজ্ঞা আরও কড়াকড়ি যুক্তরাষ্ট্রে, তালিকায় ডিজেআইসহ সব বিদেশি ড্রোন

জীবন আমার বোন (পর্ব-৭৭)

০৮:০০:০০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৩ অগাস্ট ২০২৪

মাহমুদুল হককে বাদ দিয়ে বাংলা উপন্যাসকে ভাবা ভুল হবে। বাংলাদেশে কেন মাহমুদুল হক বহু পঠিত নয় বা তাঁকে নিয়ে কম আলোচনা হয় এ সত্যিই এক প্রশ্ন। 

মাহমুদুল হকের সাহিত্য নিসন্দেহে স্থান নিয়েছে চিরায়ত সাহিত্যের সারিতে। 

তার উপন্যাস জীবন আমার বোন শুধু সময়ের চিত্র নয়, ইতিহাসকে গল্পের মধ্যে দিয়ে আনা নয় সেখানে রয়ে গেছে আরো অনেক কিছু। 

তরুণ প্রজম্মের পাঠকের কাজে তাই তুলে দেয়া হলো মাহমুদুল হকের এই অনবদ্য উপন্যাস জীবন আমার বোন। আর আগের প্রজম্ম নিশ্চয়ই নতুন করে আরেকবার গ্রহন করুক এক অমৃত সাহিত্য। – সম্পাদক

মাহমুদুল হক

‘ঘুম হচ্ছে না আমার–‘
‘বেলীকে দেখলে তো তাই মনে হয়।’
‘ওর একটা দস্তুরমতো হাতেম আলী দরকার, বুঝলি না!’
‘তোর মুখটা একটা নরদমা।’
‘তোর মুখ একটা ফুলের বাগান।’
একটু পরে খোকা বললে, ‘বেলীটা নিছক ঝামেলা। আপদটাকে কেন যে বিদায়ের ব্যবস্থা করছে না বুঝি না। সেজখালার উচিত দড়াম ক’রে ওটাকে বিয়ে দিয়ে পার করা। দাঁড়া, এবারে এলে আমি নিজেই তুলবো–‘
•পাত্র দেখে দিতে পারবি?’
*সেটাও একটা কথা। গোল্লায় যাক। বেলীফেলী নিয়ে মাথা ঘামিয়ে তোর কোনো লাভ নেই, ওর ইস্কুল আলাদা, কালিকলম বইগ্রেট আলাদা; ওর ব্যাপার তুই বুঝবি না।’
রজু বললে, ‘পাড়ার কতোগুলো ছেলে এসে আজ ঝামেলা বাধিয়েছিলো। আমাদের ছাদে ফ্ল্যাগ নেই, খুব চোটপাট করছিলো ছেলেরা, বলছিলো বোমা মেরে উড়িয়ে দেবো–
‘যে যার নিজের ছাদে একটা ফ্ল্যাগ ওড়ালেই সব হ’য়ে গেল আর কি! কারা যে এইসব চ্যাংড়াদের বুদ্ধি জোগায়! কি বললি ওদের?’
‘দশ টাকা দিয়ে একটা ফ্ল্যাগ কিনতে হ’লো ওদের কাছ থেকে। ছাদে উড়িয়ে দিয়েছে লেবু।’
‘ঝক্কি চুকেছে। নে এখন শুয়ে পড়।’
খোকা নিজের ঘরে চ’লে এলো।
চারপাশে বইপত্র ছড়ানো। বিছানার চাদরও এলোমেলো, লন্ডভন্ড। এখানে বই, ওখানে খাতা, ঘরে পা দিয়ে একটু অবাকই হ’লো খোকা। ভূতপ্রেতের দল ফাঁকা পেয়ে মনের সাধ মিটিয়ে একচোট নাচানাচি ক’রে গিয়েছে ঘরময়। কেবল দলামোচড়া কতগুলো কাগজ ভাঁজ ক’রে সযত্নে কাটগ্লাসের ভারী এ্যাশটেটা চাপা দিয়ে রাখা। একটির পিছনে লেখা’ কেন লেখো, কেনই বা ধ্বংস করো, তুমি কি?’
এক সময় বিছানার চাদর ঠিক করতে গিয়ে বালিশ সরাতেই চোখে পড়ে একটি চারভাঁজের কাগজ:
খুব শিগগির আমরা বাঞ্ছারামপুর যাচ্ছি। তুমি যাবে না? যদি না যাও, হয়তো আর কোনোদিন দেখা হবে না। দেখা কোরো, ভয় নেই। তোমার কথা সর্বসময় মনে হয়। বড় নিষ্ঠুর তুমি। পায়ে পড়ি দেখা কোরো। তোমাকে তো পারেনি, তাই তোমার একলা বিছানাটাকেই এলোমেলো তছনছ ক’রে দিয়ে গেল বেলী।
বেড়ে লিখেছে ছুঁড়ি, বিড়বিড় করতে থাকে খোকা। একলা বিছানা, খাসা খাসা! ভিতরে ভিতরে একেবারে ঝুনো হ’য়ে গিয়েছে, শাঁস বলতে কিছু নেই, সব ফোঁপল হ’য়ে গিয়েছে, ফোঁপল ফোঁপল।