একটু পরে খোকা বললে, ‘বেলীটা নিছক ঝামেলা। আপদটাকে কেন যে বিদায়ের ব্যবস্থা করছে না বুঝি না। সেজখালার উচিত দড়াম ক’রে ওটাকে বিয়ে দিয়ে পার করা। দাঁড়া, এবারে এলে আমি নিজেই তুলবো–‘
•পাত্র দেখে দিতে পারবি?’
*সেটাও একটা কথা। গোল্লায় যাক। বেলীফেলী নিয়ে মাথা ঘামিয়ে তোর কোনো লাভ নেই, ওর ইস্কুল আলাদা, কালিকলম বইগ্রেট আলাদা; ওর ব্যাপার তুই বুঝবি না।’
রজু বললে, ‘পাড়ার কতোগুলো ছেলে এসে আজ ঝামেলা বাধিয়েছিলো। আমাদের ছাদে ফ্ল্যাগ নেই, খুব চোটপাট করছিলো ছেলেরা, বলছিলো বোমা মেরে উড়িয়ে দেবো–
‘যে যার নিজের ছাদে একটা ফ্ল্যাগ ওড়ালেই সব হ’য়ে গেল আর কি! কারা যে এইসব চ্যাংড়াদের বুদ্ধি জোগায়! কি বললি ওদের?’
‘দশ টাকা দিয়ে একটা ফ্ল্যাগ কিনতে হ’লো ওদের কাছ থেকে। ছাদে উড়িয়ে দিয়েছে লেবু।’
‘ঝক্কি চুকেছে। নে এখন শুয়ে পড়।’
খোকা নিজের ঘরে চ’লে এলো।
চারপাশে বইপত্র ছড়ানো। বিছানার চাদরও এলোমেলো, লন্ডভন্ড। এখানে বই, ওখানে খাতা, ঘরে পা দিয়ে একটু অবাকই হ’লো খোকা। ভূতপ্রেতের দল ফাঁকা পেয়ে মনের সাধ মিটিয়ে একচোট নাচানাচি ক’রে গিয়েছে ঘরময়। কেবল দলামোচড়া কতগুলো কাগজ ভাঁজ ক’রে সযত্নে কাটগ্লাসের ভারী এ্যাশটেটা চাপা দিয়ে রাখা। একটির পিছনে লেখা’ কেন লেখো, কেনই বা ধ্বংস করো, তুমি কি?’
এক সময় বিছানার চাদর ঠিক করতে গিয়ে বালিশ সরাতেই চোখে পড়ে একটি চারভাঁজের কাগজ:
খুব শিগগির আমরা বাঞ্ছারামপুর যাচ্ছি। তুমি যাবে না? যদি না যাও, হয়তো আর কোনোদিন দেখা হবে না। দেখা কোরো, ভয় নেই। তোমার কথা সর্বসময় মনে হয়। বড় নিষ্ঠুর তুমি। পায়ে পড়ি দেখা কোরো। তোমাকে তো পারেনি, তাই তোমার একলা বিছানাটাকেই এলোমেলো তছনছ ক’রে দিয়ে গেল বেলী।
বেড়ে লিখেছে ছুঁড়ি, বিড়বিড় করতে থাকে খোকা। একলা বিছানা, খাসা খাসা! ভিতরে ভিতরে একেবারে ঝুনো হ’য়ে গিয়েছে, শাঁস বলতে কিছু নেই, সব ফোঁপল হ’য়ে গিয়েছে, ফোঁপল ফোঁপল।
Leave a Reply