১২:২৩ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ০৯ নভেম্বর ২০২৫
আলোকে শিল্পে রূপ দেওয়া লিন্ডসি অ্যাডেলম্যান পৃথিবীর সবচেয়ে বিষাক্ত সাপ ‘ইনল্যান্ড টাইপ্যান’: প্রাণঘাতী বিষ, শান্ত স্বভাবের এই সরীসৃপের অজানা বিস্ময় কুমিল্লায় দায়িত্ব পালনকালে অসুস্থ হয়ে পুলিশের মৃত্যু রবিবার থেকে কর্মবিরতিতে যাচ্ছেন প্রাথমিক শিক্ষকরা ভিয়েতনামী ঔপন্যাসিক ড. ফান কুয়ে মাই শারজাহ বইমেলায় পাঠকদের মুগ্ধ করলেন মংলায় নৌকাডুবিতে নিখোঁজ প্রবাসী নারী পর্যটক ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি আরও ৮৩৪ জন পাকিস্তানের দুর্ভিক্ষের বছর? প্রতিবন্ধী চাকরিপ্রত্যাশীদের আমরণ অনশন ৬৫ ঘণ্টা অতিক্রম, সরকারের নীরবতা অব্যাহত গণভোটের কোনো সাংবিধানিক ভিত্তি নেই: বিএনপি নেতা আমীর খসরু

মুর্শিদাবাদ-কাহিনী (পর্ব-১৬৬)

  • Sarakhon Report
  • ১০:৫৫:৩৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • 27

শ্রী নিখিলনাথ রায়

ডুমরীপাহাড়ের দক্ষিণে কিছুদূরে কয়েকটি ক্ষুদ্র পাহাড় দেখিতে পাওয়া যায়; তাহাদিগকে চাতরাডিহি পাহাড় বলে। ডুমরী ও চাতরাডিহির মধ্যে একটি বিল। ডুমরীর পশ্চাৎ দিয়াই বর্ত- মান উধুয়ানালা প্রবাহিত। ডুমরীর নিকটেই বকাইয়ের দাঁড়ার সহিত উধুয়ানালা মিলিত হইয়াছে। ইহার নিকটেই নালার উপরে একটি সেতু। এই সেতুই অষ্টাদশ শতাব্দীতে মীর কাশেম কর্তৃক নিম্মিত হইয়াছিল এবং ইহাই সেই যুদ্ধকালীন সেতু। গিয়াছে; বর্ষাকালীন উধুয়ার খরস্রোতঃ এক্ষণে তাহা ভগ্ন হইয়া তাহা চূর্ণ-বিচূর্ণ করিয়া ফেলিয়াছে। উধুয়ার একটি তীরে তাহার কতক চিহ্ন আজিও বিদ্যমান রহিয়াছে। সেই সেতু হইতে বৃহৎ বৃহৎ প্রস্তরখণ্ড বিচ্যুত হইয়া উধুয়াগর্ভে পতিত হইয়াছে; জলাপসরণে সেই সমস্ত প্রস্তরখণ্ড দেখিতে পাওয়া যায়। এখন তাহার যেরূপ চিহ্ন আছে, তাহা দেখিয়া কিরূপ সুদৃঢ়ভাবে উক্ত সেতু নির্মিত হইয়াছিল, তাহা বেশ বুঝিতে পারা যায়।

এই সেতু হইতে উত্তর-পূর্ব্ব দিকে আর একটি সেতু দেখিতে পাওয়া যায়; তাহারও অনেকাংশ ভাঙ্গিয়া গিয়াছে; অবশিষ্টাংশ অম্লাপি বিরাজ করিতেছে। ইহা পূর্ব্বোল্লিখিত সেতুর ধ্বংসের পর নির্মিত হইয়াছিল বলিয়া কথিত হইয়া থাকে। যে স্থান দিয়া ইংরেজেরা প্রথমে কামান দাগিয়াছিলেন, সে স্থানও লোকে, নির্দেশ করিয়া থাকে। এক্ষণে তাহাকে জঙ্গলপাড়া কহে। চৌর্যবৃত্তি অবলম্বন করিয়া উধুয়াশিবির আক্রমণ করার কথা ইহার নিকটস্থ স্থানীয় লোকেরা অবগত আছে। কুকিপুর বা কাঁঠাল- বাড়ীর যে স্থানে ইংরেজদিগের পরিখা ও বুরুজ নিম্মিত হইয়াছিল, অদ্যাপি তাহাদের চিহ্ন বর্তমান আছে।

মীর কাশেমের পরিখা অপেক্ষা ইংরেজ- দিগের পরিখা অনেক স্পষ্টভাবে বুঝা যায়। উধুয়ার ভূমি খনন বা কর্ষণ করিলে মধ্যে মধ্যে গোলাগুলি পাওয়া গিয়া থাকে। উধুয়ার প্রাকৃতিক দৃশ্য অতীব চমৎকারজনক; বিশেষতঃ বর্ষাকালে ইহা পরম রমণীয় রূপ ধারণ করে। উধুয়ানালা ও গঙ্গা জলে পরিপূর্ণ হইয়া অপূর্ব্ব শোভা বিস্তার করিয়া থাকে। সেই সময় সমস্ত বিল ও জলাভূমি জলে পরিপূর্ণ হইয়া যায়; অনেক জলচর পক্ষী আসিয়া কলরবে উদ্বুয়াকে প্রতিধ্বনিত করিয়া তুলে। পাহাড়শ্রেণীর উপরিভাগে বৃক্ষরাজি বর্ষাসলিলমাত শ্যামল পত্ররাশিতে সুশোভিত হওয়ায় দূর হইতে বড়ই রমণীয় বলিয়া বোধ হয়।

তৎকালে পীরপাহাড় বা ডুমরীপাহাড় প্রভৃতির উপর আরোহণ করিয়া চতুদ্দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করিলে, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যে মনঃপ্রাণ মোহিত হইয়া যায়। এক দিকে উধুয়ানালা খরবেগে প্রবাহিত হইতেছে, অপর পার্শ্বে গঙ্গা উত্তাল তরঙ্গমালা দ্বারা তীরে আঘাত করিতেছেন। চারিদিকে বসুন্ধরা বর্ষার জলপ্লাবনে আপনাকে আচ্ছাদিত করিয়া ফেলিয়াছেন। নানাবিধ পক্ষী মধুর তানে চতুদিক মুখরিত করিয়া শূন্যপথে বিচরণ করিতেছে। বর্ষার নূতন জলে অঙ্কুরিত পর্ব্বতগাত্রস্থিত তৃণরাশিমধ্যে গো, মহিষ দলে দলে বিচরণ করিতেছে। এইরূপ নানাবিধ সুন্দর দৃশ্য নয়নপথে পতিত হয়। উধুয়ায় নানাবিধ জলচর পক্ষী দেখিতে পাওয়া যায়। সাহেবেরা শিকার করিবার জন্ম মধ্যে মধ্যে উধুয়ায় আগমন করিয়া থাকেন। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যে বিভূষিত হইয়া ঐতিহাসিক স্মৃতির সহিত বিজড়িত হওয়ায়, উধুয়া -রাজমহল প্রদেশের একটি প্রসিদ্ধ দর্শনীয় স্থান মধ্যে গণ্য।

জনপ্রিয় সংবাদ

আলোকে শিল্পে রূপ দেওয়া লিন্ডসি অ্যাডেলম্যান

মুর্শিদাবাদ-কাহিনী (পর্ব-১৬৬)

১০:৫৫:৩৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪

শ্রী নিখিলনাথ রায়

ডুমরীপাহাড়ের দক্ষিণে কিছুদূরে কয়েকটি ক্ষুদ্র পাহাড় দেখিতে পাওয়া যায়; তাহাদিগকে চাতরাডিহি পাহাড় বলে। ডুমরী ও চাতরাডিহির মধ্যে একটি বিল। ডুমরীর পশ্চাৎ দিয়াই বর্ত- মান উধুয়ানালা প্রবাহিত। ডুমরীর নিকটেই বকাইয়ের দাঁড়ার সহিত উধুয়ানালা মিলিত হইয়াছে। ইহার নিকটেই নালার উপরে একটি সেতু। এই সেতুই অষ্টাদশ শতাব্দীতে মীর কাশেম কর্তৃক নিম্মিত হইয়াছিল এবং ইহাই সেই যুদ্ধকালীন সেতু। গিয়াছে; বর্ষাকালীন উধুয়ার খরস্রোতঃ এক্ষণে তাহা ভগ্ন হইয়া তাহা চূর্ণ-বিচূর্ণ করিয়া ফেলিয়াছে। উধুয়ার একটি তীরে তাহার কতক চিহ্ন আজিও বিদ্যমান রহিয়াছে। সেই সেতু হইতে বৃহৎ বৃহৎ প্রস্তরখণ্ড বিচ্যুত হইয়া উধুয়াগর্ভে পতিত হইয়াছে; জলাপসরণে সেই সমস্ত প্রস্তরখণ্ড দেখিতে পাওয়া যায়। এখন তাহার যেরূপ চিহ্ন আছে, তাহা দেখিয়া কিরূপ সুদৃঢ়ভাবে উক্ত সেতু নির্মিত হইয়াছিল, তাহা বেশ বুঝিতে পারা যায়।

এই সেতু হইতে উত্তর-পূর্ব্ব দিকে আর একটি সেতু দেখিতে পাওয়া যায়; তাহারও অনেকাংশ ভাঙ্গিয়া গিয়াছে; অবশিষ্টাংশ অম্লাপি বিরাজ করিতেছে। ইহা পূর্ব্বোল্লিখিত সেতুর ধ্বংসের পর নির্মিত হইয়াছিল বলিয়া কথিত হইয়া থাকে। যে স্থান দিয়া ইংরেজেরা প্রথমে কামান দাগিয়াছিলেন, সে স্থানও লোকে, নির্দেশ করিয়া থাকে। এক্ষণে তাহাকে জঙ্গলপাড়া কহে। চৌর্যবৃত্তি অবলম্বন করিয়া উধুয়াশিবির আক্রমণ করার কথা ইহার নিকটস্থ স্থানীয় লোকেরা অবগত আছে। কুকিপুর বা কাঁঠাল- বাড়ীর যে স্থানে ইংরেজদিগের পরিখা ও বুরুজ নিম্মিত হইয়াছিল, অদ্যাপি তাহাদের চিহ্ন বর্তমান আছে।

মীর কাশেমের পরিখা অপেক্ষা ইংরেজ- দিগের পরিখা অনেক স্পষ্টভাবে বুঝা যায়। উধুয়ার ভূমি খনন বা কর্ষণ করিলে মধ্যে মধ্যে গোলাগুলি পাওয়া গিয়া থাকে। উধুয়ার প্রাকৃতিক দৃশ্য অতীব চমৎকারজনক; বিশেষতঃ বর্ষাকালে ইহা পরম রমণীয় রূপ ধারণ করে। উধুয়ানালা ও গঙ্গা জলে পরিপূর্ণ হইয়া অপূর্ব্ব শোভা বিস্তার করিয়া থাকে। সেই সময় সমস্ত বিল ও জলাভূমি জলে পরিপূর্ণ হইয়া যায়; অনেক জলচর পক্ষী আসিয়া কলরবে উদ্বুয়াকে প্রতিধ্বনিত করিয়া তুলে। পাহাড়শ্রেণীর উপরিভাগে বৃক্ষরাজি বর্ষাসলিলমাত শ্যামল পত্ররাশিতে সুশোভিত হওয়ায় দূর হইতে বড়ই রমণীয় বলিয়া বোধ হয়।

তৎকালে পীরপাহাড় বা ডুমরীপাহাড় প্রভৃতির উপর আরোহণ করিয়া চতুদ্দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করিলে, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যে মনঃপ্রাণ মোহিত হইয়া যায়। এক দিকে উধুয়ানালা খরবেগে প্রবাহিত হইতেছে, অপর পার্শ্বে গঙ্গা উত্তাল তরঙ্গমালা দ্বারা তীরে আঘাত করিতেছেন। চারিদিকে বসুন্ধরা বর্ষার জলপ্লাবনে আপনাকে আচ্ছাদিত করিয়া ফেলিয়াছেন। নানাবিধ পক্ষী মধুর তানে চতুদিক মুখরিত করিয়া শূন্যপথে বিচরণ করিতেছে। বর্ষার নূতন জলে অঙ্কুরিত পর্ব্বতগাত্রস্থিত তৃণরাশিমধ্যে গো, মহিষ দলে দলে বিচরণ করিতেছে। এইরূপ নানাবিধ সুন্দর দৃশ্য নয়নপথে পতিত হয়। উধুয়ায় নানাবিধ জলচর পক্ষী দেখিতে পাওয়া যায়। সাহেবেরা শিকার করিবার জন্ম মধ্যে মধ্যে উধুয়ায় আগমন করিয়া থাকেন। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যে বিভূষিত হইয়া ঐতিহাসিক স্মৃতির সহিত বিজড়িত হওয়ায়, উধুয়া -রাজমহল প্রদেশের একটি প্রসিদ্ধ দর্শনীয় স্থান মধ্যে গণ্য।