শ্রী নিখিলনাথ রায়
বিশে- যতঃ তৎকালে ভাগীরথী বড়নগর হইতে আরও দূরে প্রবাহিতা ছিলেন। এরূপ অবস্থায় সিরাজের তরণী হইতে তারাকে দর্শন করার সম্ভাবনা থাকিতে পারে কি না? তবে যদি সিরাজের দূরবীক্ষণ ব্যবহারের কথা বলা হয়, তাহা হইলে সম্ভব হইতে পারে। তৃতীয়তঃ সিরাজ, যদি তারাকে বাস্তবিকই হরণ করিবার ইচ্ছা করিতেন, তাহা হইলে যুদ্ধে অশিক্ষিত কয়েকজন বৈষ্ণবের ভয়ে, তিনি স্বীয় লোকজনদিগকে প্রতি- নিবৃত্ত হইতে আদেশ দিতেন কি না? যেরূপে হউক, তিনি স্বীয় ইচ্ছা- পূরণের জন্য কি চেষ্টা পাইতেন না?
কৃতকার্য্য হউন বা না হউন, অন্ততঃ 1 চেষ্টা করিতে কি তিনি ক্ষান্ত হইতেন? সিরাজের চরিত্রহীনতার কথা আমরা বরাবরই বলিয়া আসিতেছি; সে বিষয়ের সমর্থন করার অধিক আমাদের কিছুই নাই। কিন্তু তাই বলিয়া, তাঁহার নামে যে সমস্ত প্রবাদ ও গল্পের রসৃষ্টি হইয়াছে, তৎসমুদায় বিশ্বাস করিতে আমরা প্রস্তুত নহি।
যে সমুদায় ‘গ্রন্থে সিরাজের চরিত্রহীনতার, উল্লেখ দেখা যায়, তাহাদের কোন স্থানে সিরাজকর্তৃক কোন ব্যক্তিবিশেষের ধর্ম্ম বা সম্মান হানির উল্লেখ নাই; কেবল তাঁহার সাধারণ চরিত্রহীনতা মাত্রই উল্লিখিত হইয়াছে। যাঁহারা সিরাজের শতনিন্দা করিয়াছেন, কোন সম্ভ্রান্তবংশের প্রতি অত্যাচার করিলে, তাঁহারা কি তাহার উল্লেখ করিতে বিস্তৃত হইতেন? বরং তাহা তাঁহাদিগের মতেরই পরিপোষক হইয়া উঠিত। তবে এই প্রবাদ যেরূপ ভাবে বিস্তৃত, তাহাতে ইহার কিছু মূল ছিল বলিয়া বোধ হয়।
কিন্তু তৎসম্বন্ধে প্রকৃত ঘটনা কি, তাহা বুঝিবার উপায়, নাই। ঘটনাটি আলিবর্দ্দদী খাঁর জীবিতকালে ঘটিয়াছিল বলিয়া বোধ হয়; সম্ভবতঃ সিরাজের ঐরূপ কোন ইচ্ছা হইয়া থাকিলেও, আলিবর্দীর জন্য। তাহার চেষ্টামাত্রও হয় নাই, ইহাই আমাদের ধারণ।। প্রবাদ কিন্তু তাহাকে নানা আকারে পল্লবিত করিয়া তুলিয়াছে। হায়! এই চরিত্রহীনতার জন্য একমাত্র সিরাজই কেবল নিন্দিত হইয়াছেন, কিন্তু, তদপেক্ষা সয়তানপ্রকৃতি কয়জনের নাম বাঙ্গলার এইরূপ প্রবাদ- কাহিনীর মধ্যে গ্রথিত আছে?