০২:৫৮ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ০৯ নভেম্বর ২০২৫

ব্রিটিশ রাজত্বে সুন্দরবন (পর্ব-৪৪)

  • Sarakhon Report
  • ১২:০০:৩৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ৬ অক্টোবর ২০২৪
  • 21

শশাঙ্ক মণ্ডল

শিল্প-বাণিজ্য

তৃতীয় অধ্যায়

বিংশ শতকের তৃতীয় দশক থেকে ভাঙর এলাকা তাঁতশিল্পের একটা উল্লেখযোগ্য কেন্দ্র হিসাবে গড়ে ওঠে। এখানকার তাঁতিরা গামছা, লুঙ্গি, মশারি, তৈরি করত এবং হাওড়ার বিখ্যাত মঙ্গলাহাটে এসব মাল পাইকাররা নিয়ে যেত। বসিরহাটের সোলাদানা, ইটিন্ডা, পিফা, ধোকড়া, গোবিন্দপুর, হাড়োয়া, পুড়া, খোড়গাছি, বাদুড়িয়া, কলসুর বিখ্যাত তাঁতবস্ত্রের কেন্দ্র হিসাবে গড়ে ওঠে। খুলনার বাগেরহাট, কলরোয়া, সাতক্ষীরার বিভিন্ন অঞ্চলে তাঁতের প্রচুর কাজ হত। বরিশাল জেলার বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে বিশেষ করে গৌরনদী, পটুয়াখালি, ভোলা সুতালরী তাঁত- শিল্পের কেন্দ্র হিসাবে গড়ে উঠেছিল।

বসিরহাটের ইটিন্ডায় মুনসির গামছার খ্যাতি ২য় মহাযুদ্ধ সমকালে প্রতিষ্ঠিত হলেও আজও তার বংশধররা এই সুনাম অক্ষুন্ন রেখেছেন। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধ সমকালে বসিরহাটে বারাসাত যশোর খুলনার কোন কোন অঞ্চলের তাঁতিদের মধ্যে গজ ব্যান্ডেজ তৈরির প্রচেষ্টা লক্ষ করা গেল। এর পূর্বে এ সব এলাকায় গজ ব্যান্ডেজ তৈরি হত না। যুদ্ধের সময় আহত মানুষদের সেবা শুশ্রূষার প্রয়োজনে হাসপাতালগুলিতে এর ব্যাপকচাহিদা তৈরি হয়। আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়ের পরামর্শে বলহরি সর্দার হাসনাবাদের লস্করনগরে কারখানা তৈরি করেন এবং তাঁতিদের দিয়ে গজ ব্যান্ডেজ তৈরি করাতে লাগলেন।

পরবর্তীকালে বসিরহাট সাতক্ষীরার বিস্তীর্ণ অঞ্চলে তাঁতিদের মধ্যে তা ছড়িয়ে পড়ল। বলহরি সর্দার তাঁর এজেন্ট মারফৎ বিভিন্ন এলাকা থেকে গজ ব্যান্ডেজ সংগ্রহ করতেন এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে এই কাপড় একটা বড় ভূমিকা নেয়। তাঁতিরা গজ ব্যান্ডেজ তৈরিতে এতটা উৎসাহিত হয়ে ওঠে যে পরবর্তী কালে অন্য ধরনের কাপড় তৈরির ব্যাপারে তারা আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। ২য় মহাযুদ্ধ-পরবর্তী কালে তাঁতিদের নিয়ে বেশ কিছু সমবায় সমিতি গড়ে উঠতে দেখা গেল। বসিরহাট ইন্ডাসট্রিয়াল ইউনিয়ন, ইটিল্ডা ইউনিয়ন কো-অপারেটিভ, পিফা ইউনিয়ন কো-অপারেটিভ এ ধরনের অনেক সমবায় সমিতি গড়ে ওঠে।

এসব সমবায় সমিতি মধ্যস্বত্বভোগীদের সংগঠনে পরিণত হয় সাধারণ তাঁতিরা কিছু কাজ করার সুযোগ পেলেও আর্থিক সুবিধার সিংহভাগ ফড়ে পাইকার মহাজনদের হাতে চলে যায়। তাঁত শিল্পীদের অবর্ণনীয় দুঃখ-দুর্দশার অবসান ঘটে না এবং পরবর্তীকালে স্বাধীনতার ফল হিসাবে বঙ্গবিভাগের মধ্য দিয়ে অসংখ্য উদ্বাস্ত এবং এদের মধ্যে বরিশাল খুলনা যশোরের তাঁতশিল্পীদের একটা বড় অংশ পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন স্থানে আশ্রয়ের সন্ধানে আসেন এবং সুন্দরবণের আলোচ্য ভূ-খণ্ডে প্রবেশ করে। সে এক অন্য প্রসঙ্গ।

জনপ্রিয় সংবাদ

জেন জি এখন সুগন্ধি খুঁজছে

ব্রিটিশ রাজত্বে সুন্দরবন (পর্ব-৪৪)

১২:০০:৩৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ৬ অক্টোবর ২০২৪

শশাঙ্ক মণ্ডল

শিল্প-বাণিজ্য

তৃতীয় অধ্যায়

বিংশ শতকের তৃতীয় দশক থেকে ভাঙর এলাকা তাঁতশিল্পের একটা উল্লেখযোগ্য কেন্দ্র হিসাবে গড়ে ওঠে। এখানকার তাঁতিরা গামছা, লুঙ্গি, মশারি, তৈরি করত এবং হাওড়ার বিখ্যাত মঙ্গলাহাটে এসব মাল পাইকাররা নিয়ে যেত। বসিরহাটের সোলাদানা, ইটিন্ডা, পিফা, ধোকড়া, গোবিন্দপুর, হাড়োয়া, পুড়া, খোড়গাছি, বাদুড়িয়া, কলসুর বিখ্যাত তাঁতবস্ত্রের কেন্দ্র হিসাবে গড়ে ওঠে। খুলনার বাগেরহাট, কলরোয়া, সাতক্ষীরার বিভিন্ন অঞ্চলে তাঁতের প্রচুর কাজ হত। বরিশাল জেলার বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে বিশেষ করে গৌরনদী, পটুয়াখালি, ভোলা সুতালরী তাঁত- শিল্পের কেন্দ্র হিসাবে গড়ে উঠেছিল।

বসিরহাটের ইটিন্ডায় মুনসির গামছার খ্যাতি ২য় মহাযুদ্ধ সমকালে প্রতিষ্ঠিত হলেও আজও তার বংশধররা এই সুনাম অক্ষুন্ন রেখেছেন। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধ সমকালে বসিরহাটে বারাসাত যশোর খুলনার কোন কোন অঞ্চলের তাঁতিদের মধ্যে গজ ব্যান্ডেজ তৈরির প্রচেষ্টা লক্ষ করা গেল। এর পূর্বে এ সব এলাকায় গজ ব্যান্ডেজ তৈরি হত না। যুদ্ধের সময় আহত মানুষদের সেবা শুশ্রূষার প্রয়োজনে হাসপাতালগুলিতে এর ব্যাপকচাহিদা তৈরি হয়। আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়ের পরামর্শে বলহরি সর্দার হাসনাবাদের লস্করনগরে কারখানা তৈরি করেন এবং তাঁতিদের দিয়ে গজ ব্যান্ডেজ তৈরি করাতে লাগলেন।

পরবর্তীকালে বসিরহাট সাতক্ষীরার বিস্তীর্ণ অঞ্চলে তাঁতিদের মধ্যে তা ছড়িয়ে পড়ল। বলহরি সর্দার তাঁর এজেন্ট মারফৎ বিভিন্ন এলাকা থেকে গজ ব্যান্ডেজ সংগ্রহ করতেন এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে এই কাপড় একটা বড় ভূমিকা নেয়। তাঁতিরা গজ ব্যান্ডেজ তৈরিতে এতটা উৎসাহিত হয়ে ওঠে যে পরবর্তী কালে অন্য ধরনের কাপড় তৈরির ব্যাপারে তারা আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। ২য় মহাযুদ্ধ-পরবর্তী কালে তাঁতিদের নিয়ে বেশ কিছু সমবায় সমিতি গড়ে উঠতে দেখা গেল। বসিরহাট ইন্ডাসট্রিয়াল ইউনিয়ন, ইটিল্ডা ইউনিয়ন কো-অপারেটিভ, পিফা ইউনিয়ন কো-অপারেটিভ এ ধরনের অনেক সমবায় সমিতি গড়ে ওঠে।

এসব সমবায় সমিতি মধ্যস্বত্বভোগীদের সংগঠনে পরিণত হয় সাধারণ তাঁতিরা কিছু কাজ করার সুযোগ পেলেও আর্থিক সুবিধার সিংহভাগ ফড়ে পাইকার মহাজনদের হাতে চলে যায়। তাঁত শিল্পীদের অবর্ণনীয় দুঃখ-দুর্দশার অবসান ঘটে না এবং পরবর্তীকালে স্বাধীনতার ফল হিসাবে বঙ্গবিভাগের মধ্য দিয়ে অসংখ্য উদ্বাস্ত এবং এদের মধ্যে বরিশাল খুলনা যশোরের তাঁতশিল্পীদের একটা বড় অংশ পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন স্থানে আশ্রয়ের সন্ধানে আসেন এবং সুন্দরবণের আলোচ্য ভূ-খণ্ডে প্রবেশ করে। সে এক অন্য প্রসঙ্গ।